৪২.৪৬ শতাংশ খেলাপি নিয়ে সোনালীতে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৪, ১৯: ০৮
আপডেট : ১২ মে ২০২৪, ২০: ২১

অনেকটা নাটকীয়তার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে অবশেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চুক্তি করল বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল)। এর ফলে বিডিবিএলের ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ খেলাপি ঋণের দায় এখন সোনালী ব্যাংকের ওপর বর্তাবে। যেখানে সোনালী ব্যাংকের বিদ্যমান খেলাপি ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। 

আজ রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঞ্চালনায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ও সরকার পরিচালিত বিডিবিএলের একীভূতকরণের লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়। এ সময় সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও আফজাল করিম, বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান গাজীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। 

বিডিবিএলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, একীভূতকরণ ইস্যুতে আমরা জোর প্রতিবাদ করে আসছিলাম। প্রথমে বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চ মহলের বরাত দিয়ে একীভূত করতে মারাত্মক চাপ দিয়ে আসছিল। অবশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপানো সিদ্ধান্তে পর্ষদ একীভূত বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। আর গত বুধবার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সভায়। দুটো সরকারি ব্যাংক একমত হওয়ায় একীভূত হবে। 

একীভূতকরণের ফলে বিডিবিএলের কর্মীরা ছাঁটাইয়ের আশঙ্কার কথা বললে সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘অনেক চিন্তা ভাবনা করেই একীভূতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের দুই ব্যাংকের দুই ধরনের অভিজ্ঞতা আছে। সেগুলা কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। কোনো কর্মীর চাকরি যাবে না।’ 

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে বিডিবিএলের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৯৮২ কোটি টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ৪২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অন্যদিকে, একই সময় সোনালী ব্যাংকের ঋণ ছিল ৯৩ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ১৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। 

এতে সোনালী ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতিতে দুর্বলতর হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে আইএমএফের ঋণের শর্ত হিসেবে জুড়ে দেওয়া খেলাপি ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য পূরণও কঠিন হয়ে যাবে। 

 ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গড় খেলাপি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। যেখানে ইতিমধ্যে আইএমএফের ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ ছাড়ে রিজার্ভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য পূরণে বারবার ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে সুদের হার বাস্তবায়ন, রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যও পূরণ হচ্ছে। সর্বশেষ বাজার ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

তবে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের বিডিবিএলের বেশি প্রভাব পড়বে না। আর বিডিবিএলের এমপ্লয়িদের শঙ্কা বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের প্রায় ৮ হাজার কর্মী আছে। এরপরও অনেক লোকবল শর্ট আছে। আর বিডিবিএলের ছয় শর মতো কর্মী আছে। সুতরাং তাঁদের শঙ্কার কিছু নাই।’ 

যদিও সোনালী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিডিবিএলের কর্মীরা যুক্ত হলে তাঁদের পদোন্নতিতে জটিলতা সৃষ্টি হবে। কেননা, বিডিবিএলের পদোন্নতি স্বাভাবিক হওয়ায় তাঁদের পরে একই পদে যোগদান করে বড় পদে পদোন্নতি হয়েছে। এটা সোনালী ব্যাংকের নীতি নির্ধারকদের মাথায় রাখতে হবে। তা না হলে ব্যাংকে অসন্তোষ বাড়বে। 

ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিডিবিএলের চেয়ারম্যান শামীমা নার্গিস বলেন, ‘বিডিবিএলের চারটি ইনডিকেটরের মধ্যে তিনটিই ভালো আছে। শুধু দুর্বল অবস্থায় খেলাপি ঋণ। আগে যেটা ৪১ শতাংশ ছিল, আমরা সেটা কমিয়ে ৩৪ শতাংশে নিয়ে এসেছি। ছয় মাসে ৩৪ থেকে ৫ বা ১০ কিংবা ১৫–তে আসা সম্ভব না। কারণ খেলাপি আদায়ে জামানত বিক্রি, অর্থঋণ আদালতে মামলার মতো অনেক এসব ধাপ অতিক্রম করে আসতে হবে। যেটা কোনোভাবেই ছয় মাসে সম্ভব না। বাংলাদেশ ব্যাংক তো আর আমাকে ৫–১০ বছর সময় দেবে না। সময় দিলে এটা কমানো যেত।’ 

 ২০০৯ সালে শিল্প ঋণ সংস্থা এবং শিল্প ব্যাংক মিলে গঠিত হয় বিডিবিএল। এরপর ব্যাংকটি অনিয়মে ডুবতে থাকে। বেড়ে যায় খেলাপি। বিশেষ ক্ষমতাধরদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে না পারছিল না ব্যাংকটি। তবে খেলাপি ছাড়া অন্য সব ভালোই ছিল। সম্প্রতি খেলাপি আদায়ও বেড়েছিল। এরপরও একীভূতকরণে নাম আসার পর কর্মীরা প্রতিবাদসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে খোলা চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা আমলে নেয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত