পুঁজিবাজারের বেহাল দশার নেপথ্য কারণ জানাল মন্ত্রণালয়

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা 
Thumbnail image

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ এরই মধ্যে ২ মাস ১১ দিন অতিবাহিত হয়েছে। পুঁজিবাজার পরিস্থিতির দীর্ঘ হতাশা কাটিয়ে এই সময় প্রথম কিছুদিন ইতিবাচক স্বপ্ন দেখাচ্ছিল বিনিয়োগকারীদের। তবে সেটি বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। পরে সময় যত গড়িয়েছে, সেই পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম কমার পাশাপাশি সমানতালে কমেছে বাজার মূলধন ও সূচক। এই সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকাণ্ড নিয়েও আছে নানা সমালোচনা।

ঠিক এমন পরিস্থিতিতে গতকাল রোববার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে একটি স্পষ্টীকরণ বিবৃতি জারি হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের পাঠানো এই স্পষ্টীকরণে পুঁজিবাজারের চলমান ঘোলাটে পরিস্থিতির নেপথ্য কারণের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ও অবস্থানও বিশদভাবে উঠে এসেছে। অতীতের দুরবস্থা ও শেয়ার কেলেঙ্কারির মাধ্যমে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সরকার তাদের সুবিধা দেবে বলেও অর্থ মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পষ্টীকরণ বিবৃতিতে বলা হয়, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছর মেয়াদে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের মতো পুঁজিবাজারেও অবাধ লুটতরাজ হয়েছে। এ সময়ে অসংখ্য দুর্বল ও অস্তিত্বহীন কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়েছে। এসব কোম্পানিই এখন পুঁজিবাজারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার আসল চেহারা এখন প্রকাশ পাচ্ছে।

এতে বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে দাবি করা হয়, পুঁজিবাজারে লাগামহীন কারসাজি হয়েছে। এর মাধ্যমে দুর্বল মৌলভিত্তির, জাঙ্ক কোম্পানির শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস আরোপ, সার্কিট ব্রেকারের ঊর্ধ্বসীমা ও নিম্নসীমার মতো কৃত্রিম ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই অবস্থা ঢেকে রাখার চেষ্টা হয়েছে। এখন ওই কৃত্রিম চেষ্টা তুলে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ধারাবাহিক অনিয়ম, দুর্নীতি, কারসাজির অনিবার্য পরিণতি আগের চেয়েও বেশি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নেওয়া নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, বিগত সময়ের অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্তে ইতিমধ্যে একটি ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। যেখানে বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের ১৭টি কার্যপরিধি নির্ধারিত আছে। এগুলো হলো: রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্কের সংস্কার, রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স ও প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতকরণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন, পণ্য ও বাজার উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, বিনিয়োগ শিক্ষার প্রসার ও ব্যাপ্তি বৃদ্ধি, বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, পেশাজীবীদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার, বাজারের বৈচিত্র্য আনতে নতুন পণ্য আনা, সর্বোপরি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং গঠনমূলক ও টেকসই সংস্কার।

এ ছাড়া টাস্কফোর্স কার্যক্রমের বাইরেও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন ও সংস্কারে পথনকশা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। যেখান থেকে বাজারের বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় বিষয়ে নানা সুপারিশ উঠে এসেছে। যাচাই-বাছাইয়ের পর যেসব সুপারিশ বাজারের স্বার্থে গ্রহণযোগ্য হবে, দীর্ঘ মেয়াদে সুফলের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করবে।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারে ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর অংশ হিসেবে বড় বড় শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করা হচ্ছে। পুঁজিবাজারের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন, তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানির ভ্যালুয়েশন, আইপিও অনুমোদন ও প্রক্রিয়া সহজীকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছে কমিশন। এ লক্ষ্যে পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫-এর সংস্কারের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো যাতে যৌক্তিক মূল্য পায়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে দেশীয় কোম্পানির পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানির তালিকাভুক্তিও সহজ হবে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে তালিকাভুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে করে এসব প্রতিষ্ঠানের করপোরেট অনুশীলন নিশ্চিত হয়। নিয়মিতভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের তথ্য প্রকাশ পায়, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত