কামরুল হাসান
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত আনোয়ারুল ইকবাল তখন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান। খুলনার এরশাদ শিকদারকে জেলে পুরে ঢাকায় এসেছেন। ঠান্ডা মাথার মানুষ হিসেবে তাঁর বেশ নামডাক। তাঁর সঙ্গে চেনাজানাও অনেক দিনের। পুরোনো সম্পর্কের সুবাদে একদিন তাঁর কক্ষে ঢুকতেই একটু অস্বাভাবিক হাসি দিয়ে বললেন, ‘আপনার নিউজ পাওয়ার পথ তো বন্ধ হয়ে গেছে, আপনার সোর্সকে সরিয়ে দিয়েছি।’ কে আমার সোর্স? তিনি আর খোলাসা করলেন না। আমিও তাঁর কথার মাথামুণ্ডু বোঝার চেষ্টায় ক্ষান্ত দিয়ে চা-বিস্কুট খেয়ে বেরিয়ে এলাম।
মালিবাগে এসবি অফিসের দোতলায় দক্ষিণ দিকের একটি রুমে বসতেন ওসি ওয়াচ রওনকুল হক চৌধুরী। এসবিতে ‘ওসি ওয়াচ’ পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রওনকুল হকের রুমে ঢুকে দেখি, তাঁর মন খুব খারাপ। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ তাঁকে সিলেটে বদলি করা হয়েছে। এবার আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। দুদিন আগে আমি তাঁর রুমে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। সে সময় গ্রেপ্তার হওয়া আশিষ দেব বর্মাকে এসবিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। পরদিন আশিষের জবানবন্দি নিয়ে বড় একটা নিউজ ছাপা হয়েছিল। অতিরিক্ত আইজির সন্দেহ, রওনকুল এ খবর আমাকে দিয়েছেন। আমার মন খুব খারাপ হলো। কোনো কারণ ছাড়াই ভদ্রলোক বলির পাঁঠা হলেন।
শুরু করেছিলাম আশিষ দেব বর্মার গল্প বলব বলে। তার মধ্যে ঢুকে পড়লেন রওনকুল হক। সেই গল্প আরেক দিন হবে। আজ বরং আশিষ দেব বর্মাতেই থাকি। আশিষ ছিলেন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতা। থাকতেন হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া সীমান্তের একটি গ্রামে। ২০০৩ সালের ২৭ জুন বগুড়ার কাহালুতে ট্রাকভর্তি গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধারের কথা মনে আছে? এই আশিষ ছিলেন সেই চালানের হোতা।
চালানটির গল্প ছিল এ রকম, ২০০৩ সালের ২৬ জুন বিকেলে বগুড়ার কাহালু উপজেলার নাগর নদের পারে জোগাড়পাড়া গ্রামে মালবোঝাই একটি ট্রাক এসে থামে। জায়গাটি কাহালু ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার সীমান্তে। নাগর নদের পুব দিকে কাহালু আর পশ্চিমে দুপচাঁচিয়া। একদিন ট্রাকটি পড়ে থাকে কোনো লোকজন ছাড়াই। এরপর ট্রাক থেকে আনারসের গন্ধ বেরোতে থাকে। ২৭ জুন সন্ধ্যার পর কয়েকজন যায় সেই আনারস চুরি করতে। তারা ট্রাকের ত্রিপল সরিয়ে দেখে, ভেতরে কাঠের বাক্স। দামি জিনিস থাকতে পারে মনে করে যে যার মতো বাক্স তুলে নিয়ে যায়। খবর রটে যায় গ্রামে। দলে দলে মানুষ গিয়ে সবকিছু নিয়ে ট্রাকটি খালি করে দেয়। কিন্তু বাড়িতে নেওয়ার পর সবার ভুল ভাঙে। তারা দেখে, দামি জিনিস বলে যা এনেছে, তা আসলে গুলি ও বিস্ফোরক। লোকজন ভয় পেয়ে সেগুলো রাতের আঁধারেই হয় লুকিয়ে ফেলে, নয়তো পুকুরে ফেলে দেয়। খবর আর চাপা থাকে না। পুলিশের কানেও চলে যায়। শুরু হয় তল্লাশি। ৯৯ হাজার ৯৬৯টি গুলি এবং ১৭৩ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ।
কিন্তু এত গুলি-বিস্ফোরক বগুড়ায় কীভাবে এল, তা নিয়ে বিস্ময়ের সীমা থাকে না। তল্লাশি চালাতে গিয়ে তার সূত্রও মেলে। ট্রাকের ভেতরে পাওয়া যায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের এক চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র। রোগীর নাম আলতু মিয়া। এবার সব স্পষ্ট হয়ে যায় পুলিশের কাছে। চিকিৎসককে পাওয়ার পর রোগীরও খোঁজ মেলে। আলতু মিয়া নামের সেই রোগীকে গ্রেপ্তার করা হয় হবিগঞ্জ থেকে। তাঁর কথামতো গ্রেপ্তার করা হয় ট্রাকচালকের সহকারী স্বপনকেও।
এদিকে জোগাড়পাড়ায় থামার পর কয়েকজন চতুর লোক ট্রাকটি তাঁদের হেফাজতে থাকার দাবি করে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিলেন। গুলি-বিস্ফোরক উদ্ধারের পর তাঁরা ফেঁসে যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আখলাকুর রহমান পিন্টু ও তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা খানম বিথি।
পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করে গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ, আশরাফ আলী ও আবদুর রশিদকে। পরে ছামেদ আলী, আলতাফ হোসেনসহ ১৪ জন ধরা পড়েন। তাঁদের ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আলতুকে ঢাকায় আনা হয়। যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের কাছে আলতু স্বীকার করেন, ট্রাকটির মালিক উলফা সদস্য আশিষ দেব বর্মা। ২৫ জুন দুপুরে হবিগঞ্জের সাতছড়ি থেকে শ্রীমঙ্গলে তাঁর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মালিক তাঁকে পথ থেকে ফিরিয়ে এনে ট্রাক থেকে নামিয়ে দেন। এরপর মাল বোঝাই করে নিজেই চালিয়ে শেরপুরের দিকে যান আশিষ। ট্রাকে মালপত্র তোলা হয় সাতছড়ির একটি স্থান থেকে। কী তোলা হয়েছে, তা-ও তিনি জানতেন না। কয়েক মাস পর আশিষও ধরা পড়েন। যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের কাছে আশিষ স্বীকার করেন, এই গুলি ও বিস্ফোরক ছিল উলফার। পশ্চিমবঙ্গের অন্য একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাছে সেগুলো পাঠানো হচ্ছিল। কথা ছিল, আশিষ ট্রাকটি চালিয়ে বগুড়া পর্যন্ত নিয়ে যাবেন, এরপর সেখানে থাকা অন্য একটি দল মালপত্র বুঝে নিয়ে দার্জিলিংয়ে পৌঁছে দেবে। কিন্তু বগুড়ায় আশিষ এলেও অন্য দলের কেউ সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। তখন হরতাল চলছিল। আশিষ একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার কাছে ট্রাকটি রেখে কাঙ্ক্ষিত লোকের অপেক্ষায় থাকেন। এরই মধ্যে ট্রাক লুট হলে সব ফাঁস হয়ে যায়।
গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে চারটি মামলা হয়েছিল—দুটি কাহালু আর দুটি দুপচাঁচিয়া থানায়। সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান চারটি মামলারই অভিযোগপত্র দেন। প্রতিটি মামলাতেই এই ছয়জনকে আসামি করেন। তাঁরা হলেন আশিষ দেব বর্মা, আলতু মিয়া, আখলাকুর রহমান পিন্টু ও তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা খানম বিথি, জালাল ও হাবিবুর। অভিযোগ গঠনের সময় আদালত জালালকে অব্যাহতি দেন। হাবিবুর অব্যাহতি পান হাইকোর্টে রিট করে। বিথি জামিন নিলেও পিন্টু পলাতক থাকেন। মামলার তদন্তকারী মুন্সি আতিকুর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজা খেটে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হন।
গতকাল আজকের পত্রিকার বগুড়া প্রতিনিধি গনেশ দাস বললেন, মুন্সি আতিক সাক্ষ্য দিতে হাজির না হওয়ায় মামলাটির বিচার আটকে আছে। সব আসামিও জামিনে বেরিয়ে গেছেন।
ঘটনার ছয় বছর পর ২০০৯ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও মেজর (অব.) এম লিয়াকত হোসেন যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাতে তাঁরা বলেন, কাহালুতে উদ্ধার করা গুলি ও বিস্ফোরকের চালানের সঙ্গে বাংলাদেশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। চালানটি এনেছিলেন উলফার সদস্যরা। গুলি ও বিস্ফোরক বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নেওয়ার কথা ছিল।
পাঠক, এর আগেও একাধিক অস্ত্র চালানের ঘটনার কথা বলেছি। লক্ষ করুন, সব একই সূত্রে গাঁথা। সবখানেই ‘পেটের ছুরিতেই পেট কাটা’র গল্প।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত আনোয়ারুল ইকবাল তখন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান। খুলনার এরশাদ শিকদারকে জেলে পুরে ঢাকায় এসেছেন। ঠান্ডা মাথার মানুষ হিসেবে তাঁর বেশ নামডাক। তাঁর সঙ্গে চেনাজানাও অনেক দিনের। পুরোনো সম্পর্কের সুবাদে একদিন তাঁর কক্ষে ঢুকতেই একটু অস্বাভাবিক হাসি দিয়ে বললেন, ‘আপনার নিউজ পাওয়ার পথ তো বন্ধ হয়ে গেছে, আপনার সোর্সকে সরিয়ে দিয়েছি।’ কে আমার সোর্স? তিনি আর খোলাসা করলেন না। আমিও তাঁর কথার মাথামুণ্ডু বোঝার চেষ্টায় ক্ষান্ত দিয়ে চা-বিস্কুট খেয়ে বেরিয়ে এলাম।
মালিবাগে এসবি অফিসের দোতলায় দক্ষিণ দিকের একটি রুমে বসতেন ওসি ওয়াচ রওনকুল হক চৌধুরী। এসবিতে ‘ওসি ওয়াচ’ পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রওনকুল হকের রুমে ঢুকে দেখি, তাঁর মন খুব খারাপ। কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ তাঁকে সিলেটে বদলি করা হয়েছে। এবার আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে গেল। দুদিন আগে আমি তাঁর রুমে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম। সে সময় গ্রেপ্তার হওয়া আশিষ দেব বর্মাকে এসবিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল। পরদিন আশিষের জবানবন্দি নিয়ে বড় একটা নিউজ ছাপা হয়েছিল। অতিরিক্ত আইজির সন্দেহ, রওনকুল এ খবর আমাকে দিয়েছেন। আমার মন খুব খারাপ হলো। কোনো কারণ ছাড়াই ভদ্রলোক বলির পাঁঠা হলেন।
শুরু করেছিলাম আশিষ দেব বর্মার গল্প বলব বলে। তার মধ্যে ঢুকে পড়লেন রওনকুল হক। সেই গল্প আরেক দিন হবে। আজ বরং আশিষ দেব বর্মাতেই থাকি। আশিষ ছিলেন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার নেতা। থাকতেন হবিগঞ্জের তেলিয়াপাড়া সীমান্তের একটি গ্রামে। ২০০৩ সালের ২৭ জুন বগুড়ার কাহালুতে ট্রাকভর্তি গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধারের কথা মনে আছে? এই আশিষ ছিলেন সেই চালানের হোতা।
চালানটির গল্প ছিল এ রকম, ২০০৩ সালের ২৬ জুন বিকেলে বগুড়ার কাহালু উপজেলার নাগর নদের পারে জোগাড়পাড়া গ্রামে মালবোঝাই একটি ট্রাক এসে থামে। জায়গাটি কাহালু ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার সীমান্তে। নাগর নদের পুব দিকে কাহালু আর পশ্চিমে দুপচাঁচিয়া। একদিন ট্রাকটি পড়ে থাকে কোনো লোকজন ছাড়াই। এরপর ট্রাক থেকে আনারসের গন্ধ বেরোতে থাকে। ২৭ জুন সন্ধ্যার পর কয়েকজন যায় সেই আনারস চুরি করতে। তারা ট্রাকের ত্রিপল সরিয়ে দেখে, ভেতরে কাঠের বাক্স। দামি জিনিস থাকতে পারে মনে করে যে যার মতো বাক্স তুলে নিয়ে যায়। খবর রটে যায় গ্রামে। দলে দলে মানুষ গিয়ে সবকিছু নিয়ে ট্রাকটি খালি করে দেয়। কিন্তু বাড়িতে নেওয়ার পর সবার ভুল ভাঙে। তারা দেখে, দামি জিনিস বলে যা এনেছে, তা আসলে গুলি ও বিস্ফোরক। লোকজন ভয় পেয়ে সেগুলো রাতের আঁধারেই হয় লুকিয়ে ফেলে, নয়তো পুকুরে ফেলে দেয়। খবর আর চাপা থাকে না। পুলিশের কানেও চলে যায়। শুরু হয় তল্লাশি। ৯৯ হাজার ৯৬৯টি গুলি এবং ১৭৩ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ।
কিন্তু এত গুলি-বিস্ফোরক বগুড়ায় কীভাবে এল, তা নিয়ে বিস্ময়ের সীমা থাকে না। তল্লাশি চালাতে গিয়ে তার সূত্রও মেলে। ট্রাকের ভেতরে পাওয়া যায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের এক চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র। রোগীর নাম আলতু মিয়া। এবার সব স্পষ্ট হয়ে যায় পুলিশের কাছে। চিকিৎসককে পাওয়ার পর রোগীরও খোঁজ মেলে। আলতু মিয়া নামের সেই রোগীকে গ্রেপ্তার করা হয় হবিগঞ্জ থেকে। তাঁর কথামতো গ্রেপ্তার করা হয় ট্রাকচালকের সহকারী স্বপনকেও।
এদিকে জোগাড়পাড়ায় থামার পর কয়েকজন চতুর লোক ট্রাকটি তাঁদের হেফাজতে থাকার দাবি করে সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছিলেন। গুলি-বিস্ফোরক উদ্ধারের পর তাঁরা ফেঁসে যান। তাঁদের মধ্যে ছিলেন আখলাকুর রহমান পিন্টু ও তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা খানম বিথি।
পুলিশ প্রথমে গ্রেপ্তার করে গ্রামের বাসিন্দা আবদুল হামিদ, আশরাফ আলী ও আবদুর রশিদকে। পরে ছামেদ আলী, আলতাফ হোসেনসহ ১৪ জন ধরা পড়েন। তাঁদের ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আলতুকে ঢাকায় আনা হয়। যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের কাছে আলতু স্বীকার করেন, ট্রাকটির মালিক উলফা সদস্য আশিষ দেব বর্মা। ২৫ জুন দুপুরে হবিগঞ্জের সাতছড়ি থেকে শ্রীমঙ্গলে তাঁর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মালিক তাঁকে পথ থেকে ফিরিয়ে এনে ট্রাক থেকে নামিয়ে দেন। এরপর মাল বোঝাই করে নিজেই চালিয়ে শেরপুরের দিকে যান আশিষ। ট্রাকে মালপত্র তোলা হয় সাতছড়ির একটি স্থান থেকে। কী তোলা হয়েছে, তা-ও তিনি জানতেন না। কয়েক মাস পর আশিষও ধরা পড়েন। যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলের কাছে আশিষ স্বীকার করেন, এই গুলি ও বিস্ফোরক ছিল উলফার। পশ্চিমবঙ্গের অন্য একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের কাছে সেগুলো পাঠানো হচ্ছিল। কথা ছিল, আশিষ ট্রাকটি চালিয়ে বগুড়া পর্যন্ত নিয়ে যাবেন, এরপর সেখানে থাকা অন্য একটি দল মালপত্র বুঝে নিয়ে দার্জিলিংয়ে পৌঁছে দেবে। কিন্তু বগুড়ায় আশিষ এলেও অন্য দলের কেউ সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। তখন হরতাল চলছিল। আশিষ একটি পরিত্যক্ত ইটভাটার কাছে ট্রাকটি রেখে কাঙ্ক্ষিত লোকের অপেক্ষায় থাকেন। এরই মধ্যে ট্রাক লুট হলে সব ফাঁস হয়ে যায়।
গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে চারটি মামলা হয়েছিল—দুটি কাহালু আর দুটি দুপচাঁচিয়া থানায়। সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান চারটি মামলারই অভিযোগপত্র দেন। প্রতিটি মামলাতেই এই ছয়জনকে আসামি করেন। তাঁরা হলেন আশিষ দেব বর্মা, আলতু মিয়া, আখলাকুর রহমান পিন্টু ও তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা খানম বিথি, জালাল ও হাবিবুর। অভিযোগ গঠনের সময় আদালত জালালকে অব্যাহতি দেন। হাবিবুর অব্যাহতি পান হাইকোর্টে রিট করে। বিথি জামিন নিলেও পিন্টু পলাতক থাকেন। মামলার তদন্তকারী মুন্সি আতিকুর রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজা খেটে বেরিয়ে নিরুদ্দেশ হন।
গতকাল আজকের পত্রিকার বগুড়া প্রতিনিধি গনেশ দাস বললেন, মুন্সি আতিক সাক্ষ্য দিতে হাজির না হওয়ায় মামলাটির বিচার আটকে আছে। সব আসামিও জামিনে বেরিয়ে গেছেন।
ঘটনার ছয় বছর পর ২০০৯ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী ও মেজর (অব.) এম লিয়াকত হোসেন যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাতে তাঁরা বলেন, কাহালুতে উদ্ধার করা গুলি ও বিস্ফোরকের চালানের সঙ্গে বাংলাদেশের একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। চালানটি এনেছিলেন উলফার সদস্যরা। গুলি ও বিস্ফোরক বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নেওয়ার কথা ছিল।
পাঠক, এর আগেও একাধিক অস্ত্র চালানের ঘটনার কথা বলেছি। লক্ষ করুন, সব একই সূত্রে গাঁথা। সবখানেই ‘পেটের ছুরিতেই পেট কাটা’র গল্প।
রাজধানীর উত্তরায় প্রকাশ্যে এক দম্পতিকে কুপিয়ে আহত করার ঘটনায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ৩ ‘কিশোর গ্যাং’ সদস্যকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন রেজা রিমান্ডে নেওয়ার এ আদেশ দেন।
৫ দিন আগেরাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নির্যাতনের শিকার কল্পনা (১৩) সাড়ে তিন মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা মেডিকেল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট থেকে তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
১৮ দিন আগেগণহত্যার সংজ্ঞা ও বিচার নিয়ে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত সনদ হলো Genocide Convention বা গণহত্যা সনদ, যা ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হয়। এই সনদের আওতায় একটি জাতি, নৃগোষ্ঠী, বর্ণ বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস করার লক্ষ্যে সংঘটিত অপরাধকেই গণহত্যা বলা হয়। এর মধ্যে হত্যা, শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি,
২২ দিন আগেচাঁদপুর-মুন্সিগঞ্জ নৌ সীমানার মোহনপুর এলাকায় মেঘনা নদীতে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে দুই জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরও একজন। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মুন্সিগঞ্জ ও চাঁদপুর মতলব উত্তর মোহনপুরের চড় আব্দুল্লাহপুর নাছিরার চরে নদীতে এ ঘটনা ঘটে।
২৪ দিন আগে