ভারতের বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান ছিলেন হিমালয়ের এক যোগীর হাতের পুতুল!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০: ১৩

ভারতের বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন প্রধান এক যোগীর সঙ্গে অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য শেয়ার করেছিলেন। শুধু তাই নয়, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর পরামর্শ নিতেন। নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ হতো ওই যোগীর পরামর্শ অনুযায়ীই। ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইবিআইয়ের তদন্তে এর প্রমাণ মিলেছে।

ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (সেবি) জানিয়েছে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (এনএসই) প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী চিত্রা রামকৃষ্ণার ‘অদ্ভুত অসদাচরণ’-এর প্রমাণ মিলেছে। তিনি স্পর্শকাতর প্রবিধান লঙ্ঘন করেছিলেন। তিনি কথিত এক আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে আর্থিক প্রাক্কলন, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং বোর্ডের এজেন্ডাসহ শেয়ারবাজারের সব তথ্য শেয়ার করতেন। 

এ সম্পর্কিত এক আদেশে সেবি বলেছে, এনএসই-এর আর্থিক এবং ব্যবসায়িক পরিকল্পনা শেয়ার করা...দৃষ্টিকটু , এমন কাজ স্টক এক্সচেঞ্জের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিতে পারে। আদেশে চিত্রা রামকৃষ্ণা, ওই সময়ের বোর্ড এবং অন্য শীর্ষস্থানীয়দের জরিমানা করেছে সেবি। 

রামকৃষ্ণা ২০১৬ সালে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ উল্লেখ করে এনএসই ছাড়েন। সেবির এ আদেশের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে তাঁর পক্ষ থেকে সাড়া মেলেনি। এনএসই এবং সেবিও মন্তব্যের জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। 

করপোরেট গভর্ন্যান্সে ত্রুটির অভিযোগে বেশ কয়েক বছর ধরে এনএসইর লেনদেন বন্ধ রেখেছে সেবি। এক্সচেঞ্জটি ২০১৭ সালে আইপিও ছাড়ার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু কর্মকর্তাদের সন্দেহজনক আচরণের কারণে সেটি আটকে যায়। 

তিন বছর তদন্তের পর সেবি ওই এক্সচেঞ্জকে ৯ কোটি ডলারের বেশি জরিমানা করেছে এবং ছয় মাসের জন্য শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ নিষিদ্ধ করেছে। তবে এনএসই এই আদেশকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং নতুন আইপিও ফাইল করার জন্য সেবির অনুমোদন চেয়েছে। 

তদন্তের সময় সেবি এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির কাছে চিত্রা রামকৃষ্ণার ই-মেইলে পাঠানো নথিপত্র খুঁজে পায়। চিত্রা জিজ্ঞাসাবাদের সময় বলেছিলেন, ওই গুরু তাঁর কাছে ‘আধ্যাত্মিক শক্তি’ ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে তিনি ২০ বছর ধরে দিক নির্দেশনা নিয়েছেন। 

চিত্রা রামকৃষ্ণা সেবিকে বলেন, আধ্যাত্মিক গুরুর সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা গোপনীয়তা বা সততার সঙ্গে আপস বলে গণ্য হতে পারে না। 

সেবি অবশ্য আদেশে বলেছে, লভ্যাংশ ও পে-আউট অনুপাত, ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং এনএসই কর্মীদের কর্মদক্ষতা মূল্যায়নের মতো সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করা ক্ষতিকর কিছু নয় বলে চিত্রার দাবি ‘অবাস্তব’। 

সেবির তদন্তে আরও পাওয়া গেছে, কথিত আধ্যাত্মিক গুরু মধ্য-স্তরের এক নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব রেখেছিলেন। পুঁজিবাজার সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই সরাসরি চিত্রার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন ওই যোগী। এনএসইয়ের বেশির ভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চেয়ে বেশি বেতনও পেতেন তিনি। যদিও এ সম্পর্কিত যথেষ্ট নথিপত্র ছিল না। অর্থাৎ চিত্রা বিষয়টি অনেকটা অনানুষ্ঠানিকভাবে চালিয়ে নিয়েছেন। 

সেবির ভাষায়, গুরু এক্সচেঞ্জ চালাচ্ছিলেন আর চিত্রা ছিলেন ‘নিছক তাঁর হাতের পুতুল’। 

সেবি আরও বলেছে, এনএসই এবং বোর্ড ওই যোগীর সঙ্গে গোপনীয় তথ্যের আদান-প্রদান সম্পর্কে জানত। কিন্তু তারা বিষয়টি গোপন রেখেছিল। এ কারণে এনএসইকে ২ কোটি ৭০ লাখ রুপি জরিমানা করা হয়েছে এবং ছয় মাসের জন্য এক্সচেঞ্জকে কোনো নতুন প্রোডাক্ট আনতে নিষেধ করে দিয়েছে। 

এ ছাড়া চিত্রা রামকৃষ্ণাকে ৩ কোটি রুপি জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে তিন বছরের জন্য কোনো শেয়ার ও সেবিতে নিবন্ধিত ব্রোকারদের সঙ্গে লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে এনএসইর যাত্রা শুরু হয়। নির্বাহীদের যে দলটি এ স্টক এক্সচেঞ্জের হর্তাকর্তা ছিলেন চিত্রা রামকৃষ্ণা অন্যতম। তখন বিএসই লিমিটেডের (তৎকালীন বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ) প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে এ স্টক এক্সচেঞ্জ। ২০০৯ সালে চিত্রা এনএসইর যুগ্ম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৩ সালে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত