রাশেদ নিজাম ও শাহরিয়ার হাসান
ঢাকা: ঠিক পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষ দেখেছিল পথভ্রষ্টের বিকৃত এক রূপ। এই দেশেরই একদল তরুণ ভুলপথের দীক্ষা নিয়ে হামলা চালিয়েছিল গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারিতে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে জঙ্গিদের নৃশংস সেই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন বিদেশি নাগরিক।
হোলি আর্টিজানের পর জঙ্গি দমনে জোরেশোরে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ গত ৫ বছরে ৫৪৬ জন বিভিন্ন সংগঠনের জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করেছে। অন্তত ২০টি অভিযানে মারা গেছেন ৬৩ জন জঙ্গি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২ হাজার ৫৫১ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শুধু হোলি আর্টিজান হামলা–পরবর্তী সময়ে তাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ৪১৬ জন।
বাহিনীটির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন ১৬ জন। এ ছাড়া অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট (এটিইউ) গত ২ বছরে ৭১টি অভিযান চালিয়ে ১১৯ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে।
তাহলে কি একেবারেই নিয়ন্ত্রণে জঙ্গিরা? উগ্রবাদীদের নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সবশেষ প্রতিবেদন অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। দেশে যেকোনো স্থানে বড় ধরনের হামলা করে আবারও আলোচনায় আসতে চায় আইএস মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি। এ জন্য তারা এঁকেছে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি হামলার পরিকল্পনার ছক। চলতি বছরেই পুলিশের ওপর শক্তিশালী আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণ ঘটানোর মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন নতুন পরিকল্পনা আটছে নিষিদ্ধঘোষিত এই সংগঠনটি। জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে করা একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে মিলেছে এসব তথ্য।
সংগঠনটির নতুন আমির নিজেদের অর্থায়নে তৈরি ড্রোন দিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পাশাপাশি কথিত ইসলামবিদ্বেষী নেতা, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা করার পরিকল্পনা করেছেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের শেষের দিকে নব্য জেএমবির হাল ধরেছেন মাহাদী হাসান জন। যাঁর সাংগঠনিক নাম আবুল আব্বাস আল বাঙালি। তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তবে সামরিক প্রধান হিসেবে কাজ করছেন দেশে অবস্থান করা আবু আহসান হাবিব আল বাঙালি ওরফে লায়ন, যিনি পাঁচ সদস্যের শুরা বোর্ডেরও প্রধান। সর্বোচ্চে এ বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন রফিক রুহাম (বাংলার মুখপাত্র), আবু দুজানা আল বাঙালি, আবু আদনান আল বাঙালি, আবু উনাইস আল বাঙালি।
জঙ্গিদের এসব পরিকল্পনা নিয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জঙ্গিদের যত পরিকল্পনায় থাকুক না কেন, তাদের সব কার্যক্রম আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তা ছাড়া অনলাইননির্ভর এই জঙ্গিদের এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠনের যোগাযোগের তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
নব্য জেএমবির পরিকল্পনা নিষিদ্ধঘোষিত এই জঙ্গি সংগঠনের আমির হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর আবুল আব্বাস আল বাঙালি বেশ কিছু হামলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। কোনো একটি হামলা সফল করে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতে চায় নব্য জেএমবি। অর্থসংকটের কারণে তা বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তবে গোয়েন্দাদের শঙ্কা, অদূরভবিষ্যতে তারা এই হামলা চালাতে পারে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে সাংগঠনিক কাজে নিহত ও গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যদের প্রতিশোধ নেওয়া, সংগঠনের অর্থায়নে ড্রোন তৈরি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করা, তথাকথিত ইসলামবিদ্বেষী নেতা বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কর্মীদের টার্গেট করে হামলা করা, কেবল নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করে জঙ্গিদের দাওয়াত প্রচার চালানো, খ্রিষ্টান মিশনারি গির্জা, হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মের বিশেষ ব্যক্তি, দরবারি আলেম (সরকারি বেতনভুক্ত), এনজিওকর্মীদের টার্গেট করে হামলা করা। তা ছাড়া দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পরিকল্পনার কথাও এই প্রতিবেদনে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জঙ্গিরা ২০২২ সালের মধ্যে ঘাঁটি প্রস্তুত করে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের কোনো একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা করতে চায়। ২০২৪ সালের রমজান মাসের মধ্যে আরাকানে (মিয়ানমার) হিজরত করে সেখানের কোনো সামরিক ঘাঁটিতে হামলার মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে আসারও পরিকল্পনা করেছে তারা।
সিটিটিসির উপকমিশনার পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের ১৭ মে নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার ‘ইদাত সেল’ নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড মোড়ে পুলিশ ট্রাফিক রুমের সামনে একটি শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে উদ্যোগ সফল হয়নি। পরবর্তী সময়ে ডিএমপির বোম ডিসপোজাল ইউনিট সেটি নিষ্ক্রিয় করে দেয়। সংগঠনটির সামরিক শাখার সদস্যরা ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলায় এমন বেশ কয়েকটি হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের দাবি, দেশে জঙ্গিদের এ মুহূর্তে বড় কোনো হামলার সক্ষমতা নেই। জঙ্গিদের চেয়ে র্যাব এগিয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে দেশের জঙ্গিদের যোগসূত্র নিয়ে গোয়েন্দাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
র্যাবের মহাপরিচালক আরও বলেন, তাঁদের ভূমিকার কারণে উগ্রবাদে জড়িত ১৬ জন তরুণ–তরুণী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। সবার পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। অভিভাবকদের অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘আপনার সন্তান কোথায় কী করছে, মোবাইল ফোনে কী দেখছে, সেটি আপনাদের নজর দিতে হবে।’
অপ্রচলিত ও আধুনিক অ্যাপে যোগাযোগ বার্তা, ছবি ও ভিডিও আদান–প্রদানের জন্য সর্বাধুনিক সব মাধ্যম ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। তারা ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো বার্তা আদান–প্রদান মাধ্যমগুলো একেবারেই বাদ দিয়েছে। টেলিগ্রাম, সিগন্যালের পাশাপাশি টাম টাম, জেল্লো, রকেট, উইকার মি ও প্লাস মেসেঞ্জার এখন তাদের যোগাযোগের বড় মাধ্যম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়াতে অপ্রচলিত এবং নতুন এসব অ্যাপ ব্যবহারের মূল কারণ। ভিসিএম নামে একটি করপোরেট বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যমেরও খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
যোগাযোগের জন্য জেলখানা নিরাপদ জঙ্গিরা আপাতত জেলখানাকেই নিরাপদ যোগাযোগের জায়গা বলে মনে করছেন। সংগঠনের আমির আবুল আব্বাস আল বাঙালি, শুরা সদস্য আবু রুহাম ও আবু আহসান হাবীবের সঙ্গে কারাগারে থাকা সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইরে থেকে তাঁরা নিয়মিত জেলে থাকা সদস্যদের কাছে বিকাশ, নগদসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ পাঠান। শুরা সদস্য আবু রুহাম তাঁর পরিচিত লোক দিয়ে নানা কৌশলে বন্দী জঙ্গিদের কাছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল পৌঁছে দেন এবং বিভিন্ন নিরাপদ অ্যাপস (টেলিগ্রাম, সিগন্যাল)–এর মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। কারাগারে বসে মোবাইল ব্যবহার করছেন এমন দুজন জঙ্গির নাম উঠে আসে গোয়েন্দাদের তদন্তে। তাঁরা হলেন এমডি সাদ, আবু রাহিক (খালেদ)।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শতভাগ নিশ্চিত উত্তর দিতে পারেননি আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি জঙ্গিদের হাতে কোনোভাবেই যেন মোবাইল ফোন না পৌঁছায়। কোনো কারারক্ষী কিংবা কর্মকর্তা যদি এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন, কঠোর শাস্তির আওতায় আসবেন। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উগ্রবাদ মোকাবিলায় সুপারিশ কারাগারে আরও নজরদারি বৃদ্ধি করা এবং জামিনে থাকা উগ্রবাদীদের ওপর নজরদারি বাড়াতে সুপারিশ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। বলা হয়, পার্বত্য অঞ্চলে পুলিশি তৎপরতা বাড়াতে হবে এবং সন্দেহভাজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মিয়ানমার সীমান্তে পুলিশের নজরদারি বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন গোয়েন্দারা। পাশাপাশি উগ্রবাদবিরোধী কার্যক্রম ও সামাজিক আন্দোলন বেগবান করা দরকার বলেও মত দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদারের মতে, সরাসরি আক্রমণে হয়তো জঙ্গিরা এখন যাচ্ছে না। কিন্তু তারা নতুন কৌশল তৈরি করে রাখছে। আমাদের বাহিনীগুলো সেভাবে নিজেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না সেটা দেখতে হবে।
ঢাকা: ঠিক পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশের মানুষ দেখেছিল পথভ্রষ্টের বিকৃত এক রূপ। এই দেশেরই একদল তরুণ ভুলপথের দীক্ষা নিয়ে হামলা চালিয়েছিল গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত হোলি আর্টিজান বেকারিতে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে জঙ্গিদের নৃশংস সেই হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগ ছিলেন বিদেশি নাগরিক।
হোলি আর্টিজানের পর জঙ্গি দমনে জোরেশোরে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ গত ৫ বছরে ৫৪৬ জন বিভিন্ন সংগঠনের জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করেছে। অন্তত ২০টি অভিযানে মারা গেছেন ৬৩ জন জঙ্গি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২ হাজার ৫৫১ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শুধু হোলি আর্টিজান হামলা–পরবর্তী সময়ে তাদের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে ১ হাজার ৪১৬ জন।
বাহিনীটির কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন ১৬ জন। এ ছাড়া অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট (এটিইউ) গত ২ বছরে ৭১টি অভিযান চালিয়ে ১১৯ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে।
তাহলে কি একেবারেই নিয়ন্ত্রণে জঙ্গিরা? উগ্রবাদীদের নিয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সবশেষ প্রতিবেদন অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। দেশে যেকোনো স্থানে বড় ধরনের হামলা করে আবারও আলোচনায় আসতে চায় আইএস মতাদর্শের জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি। এ জন্য তারা এঁকেছে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি হামলার পরিকল্পনার ছক। চলতি বছরেই পুলিশের ওপর শক্তিশালী আইইডি (ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণ ঘটানোর মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় তা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন নতুন পরিকল্পনা আটছে নিষিদ্ধঘোষিত এই সংগঠনটি। জঙ্গিদের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে করা একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে মিলেছে এসব তথ্য।
সংগঠনটির নতুন আমির নিজেদের অর্থায়নে তৈরি ড্রোন দিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার পাশাপাশি কথিত ইসলামবিদ্বেষী নেতা, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের লক্ষ্য করে হামলা করার পরিকল্পনা করেছেন।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের শেষের দিকে নব্য জেএমবির হাল ধরেছেন মাহাদী হাসান জন। যাঁর সাংগঠনিক নাম আবুল আব্বাস আল বাঙালি। তিনি তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে যাবতীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। তবে সামরিক প্রধান হিসেবে কাজ করছেন দেশে অবস্থান করা আবু আহসান হাবিব আল বাঙালি ওরফে লায়ন, যিনি পাঁচ সদস্যের শুরা বোর্ডেরও প্রধান। সর্বোচ্চে এ বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন রফিক রুহাম (বাংলার মুখপাত্র), আবু দুজানা আল বাঙালি, আবু আদনান আল বাঙালি, আবু উনাইস আল বাঙালি।
জঙ্গিদের এসব পরিকল্পনা নিয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জঙ্গিদের যত পরিকল্পনায় থাকুক না কেন, তাদের সব কার্যক্রম আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তা ছাড়া অনলাইননির্ভর এই জঙ্গিদের এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠনের যোগাযোগের তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
নব্য জেএমবির পরিকল্পনা নিষিদ্ধঘোষিত এই জঙ্গি সংগঠনের আমির হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর আবুল আব্বাস আল বাঙালি বেশ কিছু হামলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। কোনো একটি হামলা সফল করে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিতে চায় নব্য জেএমবি। অর্থসংকটের কারণে তা বাস্তবায়নে বিলম্ব হচ্ছে। তবে গোয়েন্দাদের শঙ্কা, অদূরভবিষ্যতে তারা এই হামলা চালাতে পারে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে সাংগঠনিক কাজে নিহত ও গ্রেপ্তার হওয়া সদস্যদের প্রতিশোধ নেওয়া, সংগঠনের অর্থায়নে ড্রোন তৈরি করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা করা, তথাকথিত ইসলামবিদ্বেষী নেতা বিশেষ করে আওয়ামী লীগের কর্মীদের টার্গেট করে হামলা করা, কেবল নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করে জঙ্গিদের দাওয়াত প্রচার চালানো, খ্রিষ্টান মিশনারি গির্জা, হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মের বিশেষ ব্যক্তি, দরবারি আলেম (সরকারি বেতনভুক্ত), এনজিওকর্মীদের টার্গেট করে হামলা করা। তা ছাড়া দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র কেনার পরিকল্পনার কথাও এই প্রতিবেদনে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জঙ্গিরা ২০২২ সালের মধ্যে ঘাঁটি প্রস্তুত করে ২০২৩ সালে বাংলাদেশের কোনো একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঘাঁটিতে হামলা করতে চায়। ২০২৪ সালের রমজান মাসের মধ্যে আরাকানে (মিয়ানমার) হিজরত করে সেখানের কোনো সামরিক ঘাঁটিতে হামলার মধ্য দিয়ে প্রকাশ্যে আসারও পরিকল্পনা করেছে তারা।
সিটিটিসির উপকমিশনার পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, চলতি বছরের ১৭ মে নিষিদ্ধ এই জঙ্গি সংগঠনের সামরিক শাখার ‘ইদাত সেল’ নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড মোড়ে পুলিশ ট্রাফিক রুমের সামনে একটি শক্তিশালী আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে উদ্যোগ সফল হয়নি। পরবর্তী সময়ে ডিএমপির বোম ডিসপোজাল ইউনিট সেটি নিষ্ক্রিয় করে দেয়। সংগঠনটির সামরিক শাখার সদস্যরা ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলায় এমন বেশ কয়েকটি হামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের দাবি, দেশে জঙ্গিদের এ মুহূর্তে বড় কোনো হামলার সক্ষমতা নেই। জঙ্গিদের চেয়ে র্যাব এগিয়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে দেশের জঙ্গিদের যোগসূত্র নিয়ে গোয়েন্দাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
র্যাবের মহাপরিচালক আরও বলেন, তাঁদের ভূমিকার কারণে উগ্রবাদে জড়িত ১৬ জন তরুণ–তরুণী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। সবার পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। অভিভাবকদের অনুরোধ করে তিনি বলেন, ‘আপনার সন্তান কোথায় কী করছে, মোবাইল ফোনে কী দেখছে, সেটি আপনাদের নজর দিতে হবে।’
অপ্রচলিত ও আধুনিক অ্যাপে যোগাযোগ বার্তা, ছবি ও ভিডিও আদান–প্রদানের জন্য সর্বাধুনিক সব মাধ্যম ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। তারা ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো বার্তা আদান–প্রদান মাধ্যমগুলো একেবারেই বাদ দিয়েছে। টেলিগ্রাম, সিগন্যালের পাশাপাশি টাম টাম, জেল্লো, রকেট, উইকার মি ও প্লাস মেসেঞ্জার এখন তাদের যোগাযোগের বড় মাধ্যম। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ এড়াতে অপ্রচলিত এবং নতুন এসব অ্যাপ ব্যবহারের মূল কারণ। ভিসিএম নামে একটি করপোরেট বার্তা আদান–প্রদানের মাধ্যমেরও খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
যোগাযোগের জন্য জেলখানা নিরাপদ জঙ্গিরা আপাতত জেলখানাকেই নিরাপদ যোগাযোগের জায়গা বলে মনে করছেন। সংগঠনের আমির আবুল আব্বাস আল বাঙালি, শুরা সদস্য আবু রুহাম ও আবু আহসান হাবীবের সঙ্গে কারাগারে থাকা সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইরে থেকে তাঁরা নিয়মিত জেলে থাকা সদস্যদের কাছে বিকাশ, নগদসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অর্থ পাঠান। শুরা সদস্য আবু রুহাম তাঁর পরিচিত লোক দিয়ে নানা কৌশলে বন্দী জঙ্গিদের কাছে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল পৌঁছে দেন এবং বিভিন্ন নিরাপদ অ্যাপস (টেলিগ্রাম, সিগন্যাল)–এর মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। কারাগারে বসে মোবাইল ব্যবহার করছেন এমন দুজন জঙ্গির নাম উঠে আসে গোয়েন্দাদের তদন্তে। তাঁরা হলেন এমডি সাদ, আবু রাহিক (খালেদ)।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শতভাগ নিশ্চিত উত্তর দিতে পারেননি আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করি জঙ্গিদের হাতে কোনোভাবেই যেন মোবাইল ফোন না পৌঁছায়। কোনো কারারক্ষী কিংবা কর্মকর্তা যদি এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন, কঠোর শাস্তির আওতায় আসবেন। দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উগ্রবাদ মোকাবিলায় সুপারিশ কারাগারে আরও নজরদারি বৃদ্ধি করা এবং জামিনে থাকা উগ্রবাদীদের ওপর নজরদারি বাড়াতে সুপারিশ করা হয়েছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে। বলা হয়, পার্বত্য অঞ্চলে পুলিশি তৎপরতা বাড়াতে হবে এবং সন্দেহভাজনদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মিয়ানমার সীমান্তে পুলিশের নজরদারি বাড়াতে পরামর্শ দিয়েছেন গোয়েন্দারা। পাশাপাশি উগ্রবাদবিরোধী কার্যক্রম ও সামাজিক আন্দোলন বেগবান করা দরকার বলেও মত দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদারের মতে, সরাসরি আক্রমণে হয়তো জঙ্গিরা এখন যাচ্ছে না। কিন্তু তারা নতুন কৌশল তৈরি করে রাখছে। আমাদের বাহিনীগুলো সেভাবে নিজেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না সেটা দেখতে হবে।
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১৫ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১৫ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১৫ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১৯ দিন আগে