শিক্ষাজীবন দীর্ঘ হলে প্রত্যাশিত আয়ু বাড়ে: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ২২: ৩৫

স্কুল বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো প্রতিটি বছর আমাদের গড় প্রত্যাশিত আয়ু বাড়ায়। স্কুলে না যাওয়া ধূমপান বা মদ্যপানের মতোই ক্ষতিকর। দীর্ঘায়ুর সঙ্গে শিক্ষাকে সরাসরি যুক্ত করে তৈরি প্রথম পদ্ধতিগত গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে এ গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। দ্য ল্যানসেট পাবলিক হেলথ সাময়িকীতে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো শিল্পোন্নত দেশসহ চীন ও ব্রাজিলের মতো উন্নয়নশীল দেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে এ গবেষণা করা হয়েছে। দেখা গেছে, পূর্ণকালীন শিক্ষায় প্রতিবছরের জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্কের মৃত্যুর ঝুঁকি ২ শতাংশ কমে যায়।

গবেষণা অনুসারে, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা আজীবন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার সমতুল্য! এতে যারা কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেনি, তাদের তুলনায় মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৪ শতাংশ কমে যায়।

তেমনি জীবনে কখনো স্কুলে না যাওয়া প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এক দশক ধরে প্রতিদিন পাঁচ বা ততোধিক অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পান করা বা প্রতিদিন ১০টি সিগারেট পান করার মতোই ক্ষতিকর।

গবেষণা প্রতিবেদনে ইংল্যান্ডে শিশুদের স্কুলে থাকা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবেষণার ফলাফলে স্কুলে উপস্থিতি এবং সুস্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে।

এর মানে হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্ক যত দীর্ঘ হবে এবং যত বেশি দিন শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকবে, ততই প্রত্যাশিত আয়ু বাড়তে থাকবে।

গড় আয়ুর সঙ্গে শিক্ষার সুবিধাগুলো সম্পর্কিত থাকার বিষয়টি দীর্ঘকাল ধরেই স্বীকৃত। নরওয়েজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এনটিএনইউ) এবং সিয়াটেলের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদদের গবেষণাটিই প্রথম দেশে মৃত্যুহার হ্রাসের সঙ্গে শিক্ষার সংস্পর্শে থাকা সময়ের সংযোগ বের করেছে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মেডিকেল পরিসংখ্যানের অধ্যাপক এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মধ্যে সংযোগের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নিল ডেভিস এ গবেষণাকে একটি উৎকৃষ্ট কাজ বলেছেন।

তবে ডেভিস সতর্ক করে বলেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মধ্যে আগে যে সংযোগ দেখা গিয়েছিল, তা এখন পরিবর্তিত হয়ে থাকতে পারে। কারণ, যুক্তরাজ্যে সম্প্রতি উচ্চশিক্ষা ও অধূমপায়ীর হার বেড়েছে।

ডেভিস বলেন, স্কুলে না যাওয়ার বর্ধিত হারের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াও আরো অনেক অসুবিধা রয়েছে।

শিক্ষায় ব্যয় করা সময় ও উপার্জনের মধ্যে সম্পর্ক খুব ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে গবেষণায়। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে এর প্রভাব অনেক বেশি নেতিবাচক। শিক্ষার অভাবের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে শ্রমবাজারে।

গবেষকেরা বলছেন, শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহারে পার্থক্য কমানো সম্ভব এবং তাঁরা এর পক্ষে প্রমাণও দিয়েছেন।

গবেষণা প্রতিবেদনটির সহ-লেখক এবং এনটিএনইউর অধ্যাপক ড. তেরজে আন্দ্রেয়াস একেমো বলেন, ‘শিক্ষা শুধু স্বাস্থ্যসচেতনতাই বাড়ায় না, নিজের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন করে। তবে এখন এই সুবিধার মাত্রা নির্ধারণ করতে পারাই হবে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।’

এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, শিক্ষার সঙ্গে দীর্ঘায়ুর এ সম্পর্ক ধনী-দরিদ্রনির্বিশেষে সব দেশে একই।

হেলথ ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালক ডেভিড ফিঞ্চ বলেন, ‘শিক্ষা মানুষকে আরও ভালো সামাজিক যোগাযোগ তৈরিতে সহায়তা করে। এটি তথ্য লাভ এবং তথ্য বোঝার ক্ষেত্রে আরও দক্ষ করে তোলে, যা মানুষকে আরও ভালো কিছু বেছে নিতে সাহায্য করতে পারে। শিক্ষা ক্ষমতায়ন এবং নিজেকে মূল্যায়ন করার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত