আমাকে স্যামন মাছ পরিষ্কার করতে বলা হয়

মুসাররাত আবির
Thumbnail image

প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া অনেক দীর্ঘ একটা পথ পাড়ি দেওয়ার মতো। কারণ, গত দেড় বছর ধরে আমি যা করছি, তা হলো: আমেরিকার জনগণের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো, কেন আমি প্রেসিডেন্ট পদে স্থলাভিষিক্ত হতে চাই, আমার কাজগুলো কী হবে–তা বোঝানো।

আমি ফার্স্ট লেডি, মার্কিন সিনেটর এবং সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতায় গর্বিত। তবে যেকোনো কাজের মতোই, প্রেসিডেন্ট পদের প্রস্তুতি নেওয়া জীবনবৃত্তান্তের এক লাইনের চেয়েও বেশি কিছু। বিশ্বাস করুন বা না-করুন, আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে যেই শিক্ষাগুলো আমি পেয়েছি, সেগুলোই আমাকে আজকের হিলারি ক্লিনটন হিসেবে তৈরি করেছে। আমার প্রথম দিকের চাকরিগুলো বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতি সম্পর্কে না শেখালেও আমার ব্যক্তিত্বকে অনেকাংশে তৈরি করে দিয়েছে।

আমার বাবার একটা ছোট্ট ছাপাখানা ছিল। সেটাই ছিল আমাদের পারিবারিক ব্যবসা। আমিও পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো তাঁদের সাহায্য করতাম। প্রিন্টিংয়ের কাজগুলো করতে প্রচুর ধৈর্যের প্রয়োজন ছিল। সেখান থেকেই আমার মধ্যে ধৈর্যশক্তি প্রকটভাবে কাজ করে।

ছোট ব্যবসা থাকার একটা অসুবিধা হচ্ছে, আপনার সমস্যাগুলো আপনাকে একাই সমাধান করতে হবে, কেউ এসে সমাধান করে দিয়ে যাবে না। এমনকি এখনো যখন নিজের পরিকল্পনামতো কোনো কাজ হয় না এবং আমি হাল ছেড়ে দিতে চাই, তখন আমি মনে করি, আমার বাবা কী কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। তখন আমি গভীর শ্বাস নিয়ে একই পরিশ্রমে কাজগুলো করে সামনে এগিয়ে যাই।

আমার দ্বিতীয় চাকরি আমাকে বিশ্ব সম্পর্কে অনেক কিছু শিখিয়েছে। স্নাতক শেষে আমি ও আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে গ্রীষ্মকালটা আলাস্কায় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিই। সেখানে আমি এক খাদ্য ক্যানিংয়ের কারখানায় চাকরি নিই। আমার কাজ ছিল আলাস্কান স্যামন মাছ পরিষ্কার করে কাটা। প্রথম যেদিন চাকরিতে যাই, সেদিনই আমাকে একজোড়া বুট, অ্যাপ্রোন ও চামচ হাতে ধরিয়ে দিয়ে স্যামন মাছ পরিষ্কার করতে বলা হয়। যদি কাজ ধীরে করতাম কিংবা মাছগুলো ঠিকমতো না কাটতাম, তাহলে সুপারভাইজার প্রচুর বকাঝকা করতেন।

একদিন লক্ষ করলাম, মাছগুলোয় কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এগুলোর রং ধীরে ধীরে বেগুনি ও কালোয় রূপান্তর হচ্ছে এবং সেগুলো খুবই নরম হয়ে গলে গেছে। এই সমস্যা যখন ম্যানেজারকে বললাম, তিনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বরখাস্ত করেন এবং বলেন: আগামীকাল বিকেলে এসে যেন বেতন নিয়ে চলে যাই। কিন্তু যখন আমি গেলাম, পুরো কারখানাটিই খালি হয়ে গেল। সেদিনই আমি শিখলাম, কখনো কখনো সঠিক কাজ করার জন্য ক্ষমতাধরদের বিপক্ষেও দাঁড়াতে হয়।

আমার ল-স্কুলের প্রথম বছরে আমি এমন একটি চাকরি খুঁজে পেলাম, যা করে অনুভব করলাম, এটা আমার ক্যারিয়ারে পরিণত হতে পারে। মারিয়ান রাইট এডেলম্যান নামে এক নাগরিক অধিকারকর্মী ক্যাম্পাসে এসেছিলেন এবং একটি বক্তব্য দিয়েছিলেন, যা আমার জীবনের পথকে চিরতরে বদলে দেয়। তিনি বিশ্বাস, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং জনসেবা সম্পর্কে কথা বলেছেন, যা আমার মনকে নাড়া দেয়। এরপর আমি তাঁকে গিয়ে বললাম: আমি তাঁর কোনো কাজে আসতে পারি কি না। তিনি বলেছিলেন, আমি অবশ্যই কাজ করতে পারি, তবে আমাকে পারিশ্রমিক দেওয়ার মতো অর্থ তাঁর ছিল না। তাছাড়া ল-স্কুলের খরচ মিটিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে চাকরি করাও আমার জন্য সঠিক ছিল না। তবে পরের গ্রীষ্মেই আমি বৃত্তি পেয়ে যাওয়ায় মারিয়ানের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাই। আমার কাজ ছিল অভিবাসী শ্রমিকদের জীবন এবং কাজের পরিস্থিতি সম্পর্কে সাক্ষাৎকার নেওয়া। এই অবৈতনিক চাকরিই আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করেছিল। যদিও আমি আর কখনোই আমার ওই আগের চাকরিগুলোয় ফেরত যাব না, তবে ওই অভিজ্ঞতাগুলো না থাকলে আমি হয়তো আজকের এই অবস্থানে থাকতাম না। সেই তিনটি কাজ আমাকে শিখিয়েছে: কঠোর পরিশ্রম করা, যা সঠিক তার জন্য লড়াই করা এবং অন্যের জন্য কিছু করা। এই অভিজ্ঞতাগুলোই আমাকে ভবিষ্যতে গাইড করবে।

অনুবাদ: মুসাররাত আবির

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত