বিসিএস ক্যাডার শুভ ছিলেন বাসের সুপারভাইজার

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪, ০৭: ৫৯

মো. আব্দুল আউয়াল শুভ ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে (প্রাণিবিদ্যা) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁর জন্ম সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে হলেও বেড়ে ওঠা কক্সবাজারে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে বিসিএসের আবেদন করেন। ইচ্ছা পূরণে একসময় বাসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর বিসিএস জয়ের পেছনের গল্প বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম। 

প্রথম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পেলেন, অনুভূতি কেমন? 
শুরুতে বিশ্বাস হচ্ছিল না! পরে রোল মিলিয়ে দেখি আসলেই ক্যাডার পেয়েছি। মা-বাবা ও বন্ধুরা সবাই অনেক খুশি হয়েছেন। 

শৈশব ও পড়াশোনা সম্পর্কে বলুন? 
আমার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে হলেও মায়ের সরকারি চাকরির সুবাদে শৈশব কেটেছে কক্সবাজারে। ছোট থেকেই বাসভ্রমণ ভালো লাগত। ঈদের ছুটিতে যখন গাড়িতে বাড়ি যেতাম, ৩৬ ঘণ্টা সময় লাগত যেতে। তখন জেগে জেগে গাড়ি দেখতাম আর ভাবতাম আমিও একদিন বাসের ড্রাইভার বা সুপারভাইজার হব। এই অদ্ভুত ভাসনা আমার মনে ছিল। ২০১২ সালে কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। এরপর ২০১৪ সালে উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ, সিরাজগঞ্জ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাইনি, দ্বিতীয় পছন্দের তালিকায় ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সৃষ্টিকর্তা নিরাশ করেননি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক সম্পন্ন করি।  

বিসিএসের স্বপ্ন দেখেছিলেন কখন থেকে বা বিসিএস দেওয়ার ভাবনা মাথায় এল কীভাবে?  
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ক্যাম্পাসে সুশান্ত পালের সেমিনারে যোগ দিয়েছিলাম। সে দিনই বিসিএস দেব বলে ঠিক করি। এরপর বিসিএস নিয়েই পড়ে ছিলাম। ইউটিউব ও ফেসবুক পর্যন্ত বিসিএসময় ছিল। ক্যাম্পাসে টিউশন মিডিয়া খুলেছিলাম। স্কুল-কলেজে টিউশন মিডিয়ার কার্ড বিলি করতাম। নিজেও ১০-১২টি টিউশন করাতাম। এতে আমার বেসিক শক্তিশালী হয়, সঙ্গে কমিউনিকেশন দক্ষতারও উন্নতি হয়। অ্যাপিয়ার্ড সনদ দিয়ে বিসিএসের প্রিলিমিনারি পাস করি। বিসিএসের দিকে ফোকাস ছিল, তাই স্নাতক পর্যন্ত করিনি। মজার বিষয় হলো, আমার সেশনের সবাই স্নাতকের ফল পেয়ে পাস করল। আর আমি বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হলাম। 

দেশ ট্রাভেলস বাস কোম্পানিতে ‘সুপারভাইজার পদে চাকরির অভিজ্ঞতা বলুন? 
‘সময় গেলে সাধন হবে না, সঙ্গে শখের জিনিস পূরণ হবে না’—তাই বাসকে ভালোবেসে শখ পূরণের জন্য স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ‘দেশ ট্রাভেলস’-এর সঙ্গে বিসিএস ভাইভার আগে যুক্ত হই। ৬ মাস চাকরিও করি। তবে এই যাত্রা সহজ ছিল না। আমি ১০ বন্ধুর কাছে ২০ হাজার টাকা ধার করি এবং জামানত জমা দেই। শখের পূর্ণতা নিশ্চিত করি। সেই ২০ হাজার টাকা শোধ করতে আমার ৫ মাস লেগেছিল। এই চাকরি থেকে শিখেছি অনেক কিছু। ট্রেনিং পিরিয়ডে শিখেছি শুদ্ধ উচ্চারণ, সঙ্গে সাবলীল শব্দচয়ন। আর ডিউটি টাইমে ম্যানেজ করতে শিখেছি মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সব যাত্রীকে। এগুলো আমার বিসিএস ভাইভায়ও কাজে দিয়েছিল। 

বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই, পাশাপাশি প্রস্তুতি নিয়েছেন কীভাবে?  
প্রথম বর্ষ থেকে বিসিএসের বীজ বপন করি। পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম চতুর্থ বর্ষ থেকে। ২০২০ সালে করোনাকালে বাড়িতে বসে প্রিলির পড়া পড়েছি। তখন শুধু খেতাম, পড়তাম আর ঘুমাতাম। পুরোপুরি ফোকাস ছিল একদিকে। এক বিষয়ে একটাই বই পড়তাম। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা হয়। তখন কাছের বন্ধুদের ছেড়ে ফার্মগেটে এসে হোস্টেলে উঠি। ১০-১২টি টিউশন সব ছেড়ে দেই। আসলে বড় কিছু পেতে হলে ছোট ছোট অনেক কিছুতে ছাড় দিতে হয়। প্রিলিমিনারি পাস করি যথারীতি। লিখিত পরীক্ষার শুরুতে সিলেবাসই বুঝতাম না। পরে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি কোচিংয়ের লাইব্রেরিতে গ্রুপ করে পড়েছি। অনেক মডেল টেস্ট দিয়েছি। তাই ফাইনাল লিখিত পরীক্ষায় অনেক কনফিডেন্ট ছিলাম। আর ভাইভার ক্ষেত্রে নিজেকে সব বিষয়ে স্মার্ট করার চেষ্টা করেছিলাম। দেশ ট্রাভেলসে চাকরির পাশাপাশি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।  

বিসিএস যাত্রায় অনুপ্রেরণা দিতেন কারা? 
একটা গান অনেকবার শুনতাম। যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে হবে হবেই দেখা, দেখা হবে বিজয়ে’। এই গান শুনে ভাবতাম, ভালো কিছু না করতে পারলে সমাজে কেউ মূল্যায়ন করবে না। আমাকে এ বিষয়টি অনেক অনুপ্রেরণা দিত।  

চাকরির পাশাপাশি যাঁরা বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়ে চান, তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন? 
চাকরির সময় আর পড়ার সময়ের মধ্যে ব্যালেন্স করে পড়তে হবে। প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা হলেও পড়ুন। তবে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। প্রতি সপ্তাহের জন্য টার্গেট করুন এবং সেটা সফল করুন। নিজের সঙ্গে সৎ থাকুন। একসময় দেখবেন সিলেবাস সম্পন্ন হয়ে গেছে।  

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? 
সামনের বিসিএসগুলো থেকে আমার পুলিশ ক্যাডারে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। পাশাপাশি কারাতে ও সাওলিন কুংফুতে ব্লাক বেল্ট নেব। সৃষ্টিকর্তা চাইলে এ শখটাও পূরণ করব। তবে শিক্ষা ক্যাডারে থাকাকালে সৎ ও বিনয়ী থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করব। পরিবহন জগতের মানুষগুলোর কাছে আমি অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। ভবিষ্যতে তাঁদের জন্যও কাজ করার চেষ্টা করব। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত