স্বপ্নের পাইলট হতে চাইলে

তানভীর হায়দার নিলয়
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৩, ০৯: ২৬

ডাক্তার হতে হলে মেডিকেল কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে হয়। ইঞ্জিনিয়ার হতে হলে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হয়। এসব আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না, পাইলট কীভাবে হতে হয়! পাইলট হওয়ার উপায় বাতলে দিয়েছেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ফার্স্ট অফিসার তানভীর হায়দার নিলয়। 

পাইলট মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে—সামরিক পাইলট ও বেসামরিক পাইলট। বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকেন সামরিক পাইলটরা। আর বিভিন্ন এয়ারলাইনস কোম্পানিতে কর্মরত থাকেন বেসামরিক পাইলটরা। বেসামরিক বিমান চালানোর সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে ‘সিভিল অ্যাভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশ ’।

শিক্ষাগত যোগ্যতা 
পাইলট হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়। এসএসসি/ও-লেভেল, এইচএসসি/ এ-লেভেলে অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাস হতে হবে। ভালো হতে হবে গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে। এখানে জিপিএ কত হবে, সেটা ক্ষেত্রবিশেষে রকমফের হয়। তবে এটা মুখ্য নয় যে আপনাকে গোল্ডেন এ প্লাস বা জিপিএ ফাইভ পেতেই হবে। যাঁরা ইতিমধ্যে স্নাতক পাস করেছেন, তাঁরাও এই পাইলট কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন। থাকতে হবে ইংরেজি ভাষায় কথা বলা ও লেখার দক্ষতা।

পাইলট কোর্সে যা থাকে
পাইলট কোর্সটিতে আপনাকে ভর্তি হতে হলে প্রথমত, আপনাকে আগে ফ্লাইং স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হলে তারপর মেডিকেলের বিষয়টা আসবে। মেডিকেল অনুমোদন করবে ক্যাব। চোখের ভিশন ৬/৬, ভালো শ্রবণশক্তি, স্বাভাবিক হার্টরেট, ব্লাড পরীক্ষাসহ বেশ কিছু টেস্টে উত্তীর্ণ হতে হয়। এ ছাড়া উচ্চতা, ওজন ও বিএমআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী হতে হবে। উচ্চতা-ওজন কত হবে, সেটা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী আলাদা হতে পারে। কিন্তু ক্যাব থেকে অবশ্যই অনুমোদন হয়ে আসতে হবে। মেডিকেল সম্পন্ন হওয়ার পর প্রার্থীকে ফ্লাইং স্কুলের অধীনে গ্রাউন্ড ক্লাস করতে হবে প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের জন্য। স্বাভাবিকভাবে তিন-পাঁচ মাস সময়ে এই ক্লাস হয়ে থাকে। এখানে নয়টা বিষয়ের ওপর সবিস্তারে পড়ানো হয়।

প্রথমে স্কুলে ওই বিষয়গুলোর ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়। প্রার্থী এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ক্যাব এর অধীনে একই বিষয়ের ওপর পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষায় এমসিকিউ ও বর্ণনামূলক উভয় ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর শুরু হয় ফ্লাইং। বাংলাদেশের ফ্লাইং স্কুলগুলোতে Cessna-152 বা Cessna-172 সিরিজের এয়ারক্রাফট দিয়ে ট্রেনিং করানো হয়। শুরু থেকেই ফ্লাইট ইন্সট্রাক্টররা হাতেকলমে ফ্লাইং শেখান।  প্রাইভেট পাইলট লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজন ৪০ ঘণ্টা আর কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্সের জন্য প্রয়োজন ১১০ ঘণ্টা—মোট ১৫০ ঘণ্টা। কয়েক ধাপে পরীক্ষা শেষে ১১০ ঘণ্টা ফ্লাইং করা হলে ক্যাবের ইন্সপেক্টরকে দিয়ে চেক করে সিপিএল লাইসেন্স দেওয়া হয়। সিপিএল লাইসেন্স পাওয়ার পর বিভিন্ন এয়ারলাইনের সার্কুলার অনুয়ায়ী আবেদন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে দেশ-বিদেশের এয়ারলাইনসে ফার্স্ট অফিসার বা কো-পাইলট হিসেবে আবেদন করা যায়। 

কোর্সের সময়কাল
বৈমানিক কোর্স করতে দুই থেকে সর্বোচ্চ তিন বছর লাগে। এটা নির্ভর করে ব্যক্তিভেদে দক্ষতার ওপর। বছরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি ও জুলাই-আগস্ট দুটি সেশনে বৈমানিক কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। 

যেখানে করবেন প্রশিক্ষণ
বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি ও গ্যালাক্সি ফ্লাইং একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। ফিলিপাইন, আমেরিকা, কানাডাসহ বাইরের কোনো দেশ থেকেও করা যাবে, তবে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে ক্যাব কর্তৃক বিদেশি লাইসেন্সটি বাংলাদেশি লাইসেন্সে রূপান্তর করতে হবে। সব মিলিয়ে খরচ পড়বে ৩২ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মতো।

বিভিন্ন বিমান সংস্থা বিভিন্ন সময় পাইলট নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। ফার্স্ট অফিসার বা কো-পাইলট হিসেবে যোগদান করে তারপর কিছু সময়ের জন্য ট্রেনিং করতে হয়। ট্রেনিং শেষে তিনি কর্মক্ষেত্রে যোগদান করে থাকেন।

অনুলিখন: মো. আশিকুর রহমান

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত