সরকারি আজিজুল হক কলেজ: ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ

নাজমুল হাসান আনান
প্রকাশ : ১৭ মে ২০২২, ১৫: ০০
আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১৬: ৩৫

প্রাচীন পুণ্ড্র জনপদের রাজধানী ছিল পুণ্ড্রনগর। কালের বিবর্তনে আজ তা বগুড়া জেলায় পরিণত হয়েছে। এই শহরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি অন্য শহর থেকে অনেক প্রাচীন। বাংলার প্রাচীন নিদর্শন পুণ্ড্রনগর বা মহাস্থানগড়ের ইতিহাস জড়ানো বগুড়া জেলা হয়ে উঠেছে শিক্ষার নগরী। সেই সঙ্গে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গৌরব অর্জন করেছে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ। ১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি, যার বর্তমান অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক শাহজাহান আলী।  

কলেজের অবস্থান 
বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথা থেকে নতুন ভবন ১ দশমিক ৭ কিলোমিটার দূরে কামারগাড়ীতে এবং পুরোনো ভবন সাতমাথা থেকে ৩ দশমিক ৪ কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ি বটতলায় অবস্থিত। নতুন ভবনে অনার্স, ডিগ্রি ও মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে আর পুরোনো ভবনে উচ্চমাধ্যমিক চালু রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অন্যতম সেরা কলেজ হিসেবে সারা দেশের মধ্যে ষষ্ঠ স্থান করে নিয়েছে আজিজুল হক কলেজ।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস 
বগুড়ায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৩৮ সালের ৪ এপ্রিল খান বাহাদুর মোহাম্মদ আলীকে সভাপতি ও মৌলভি আব্দুস সাত্তারকে সাধারণ সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। অবিভক্ত বঙ্গে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব স্যার আজিজুল হকের নামে কলেজের নামকরণ হয়। তিনি সে সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। ১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ড. এস এম মুখার্জি এবং উপাধ্যক্ষ ছিলেন শ্রী এস পি সেন। কলেজ শুরুর দুই বছর পর্যন্ত সুবিল (বর্তমান নাম) প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছিল, পরে ফুলবাড়ি বটতলায় স্থানান্তরিত করা হয়। ১৯৬৮ সালের ১৫ এপ্রিল কলেজটি সরকারীকরণ হয়।

শিক্ষাব্যবস্থার যাত্রা
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়। এই ২০০ জনের মধ্যে ১৫২ জন পরীক্ষা দিলে ১০৭ জন পাস করে, পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ। বাংলা (সাধারণ), বাংলা (দ্বিতীয় ভাষা), ইংরেজি (আবশ্যিক), ইংরেজি (অতিরিক্ত), ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, যুক্তিবিদ্যা, পৌরনীতি, সাধারণ গণিত, আরবি/ফারসি—এই কয়েকটি বিষয় নিয়েই শুরু হয় যাত্রা।

শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা 
সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষক বর্তমানে প্রায় ১৭৮ জন। কলেজপড়ুয়াদের সংখ্যা শুরুতে কম থাকলেও দিনে দিনে সেই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রায় ২৪ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।

কলেজের অবকাঠামো 
কলেজের নতুন ভবনে তিন তলাবিশিষ্ট একটি কলা ভবন, চার তলাবিশিষ্ট একটি বিজ্ঞান ভবন, পাঁচ তলাবিশিষ্ট একটি ব্যবসায় শিক্ষা ভবন, দোতলা একটি গ্রন্থাগার ভবন। আরও রয়েছে দোতলায় অধ্যক্ষ ভবন, ছাত্র সংসদ, মসজিদ, অডিটরিয়াম, রোভার স্কাউট, শহীদ মিনার, ক্যানটিন, খেলার মাঠ, শ্রেণিকক্ষ ৭১টি এবং গবেষণাগার ১৮টি।  

ছাত্রাবাস ও লাইব্রেরি
নতুন ক্যাম্পাসে ছাত্রদের জন্য তিতুমীর হল, শেরেবাংলা হল, শহীদ আকতার আলী মুন হল এবং ছাত্রীদের জন্য আবাসিক রোকেয়া হল রয়েছে। তিনটি ছাত্র হল থাকলেও পুরোনো হওয়ার কারণে সেগুলো বন্ধ হয়ে আছে।

কলেজ লাইব্রেরিতে একাডেমিক বই ছাড়াও দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার বই রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য পড়াশোনার জন্য রয়েছে সুষ্ঠু পরিবেশ।

উল্লেখযোগ্য শিক্ষক: কবি, দার্শনিক, ভাষাবিজ্ঞানীদের পদচারণা ছিল সরকারি আজিজুল হক কলেজে।

প্রখ্যাত ভাষাবিজ্ঞানী মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং বাংলা সাহিত্যের অন্যতম লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী এই কলেজের শিক্ষক ছিলেন।

মৌলিক অনুষঙ্গ 
‘মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে মানবতার সেবক হও’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে শিক্ষা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—এ চারটি মৌলিক অনুষঙ্গ ঘিরে সরকারি আজিজুল হক কলেজের চলছে এক অনবদ্য পথচলা। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক সম্মান, সৌহার্দ্য ও শ্রদ্ধা-স্নেহের রসায়নে আবদ্ধ। দেশ-বিদেশে সরকারি আজিজুল হক কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বমহিমায় নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। সবার সৃষ্টিশীল কর্ম দিয়ে প্রাক্তন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী কলেজকে অনন্য ভূমিকায় তুলে ধরেছেন।  

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত