ক্যাম্পাসে গণতন্ত্রচর্চার রাজনীতি চাই

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৭: ২৭
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ৫৫

গত ১৮ সেপ্টেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিয়োগ পেয়েছেন রেজাউল করিম। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে নিয়োগ পাওয়া প্রথম উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমসাময়িক বিষয় নিয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আজকের পত্রিকার জবি প্রতিনিধি আহনাফ তাহমিদ ফাইয়াজ

আজকের পত্রিকা: দীর্ঘ এক মাস শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আপনার অনুভূতি কী?
উপাচার্য: জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর শহীদদের এবং আহতদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার শহীদ ও আহতদের বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রত্যাশা পূরণে আমাকে এখানে দায়িত্ব দিয়েছে। শহীদদের প্রত্যাশা পূরণের মতো একটি জায়গায় আমি আসায় ভালো অনুভব করছি। এটি আমার জন্য বড় পাওয়া। 

আজকের পত্রিকা: এ মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার প্রধান চ্যালেঞ্জ কী বলে মনে করেন?
উপাচার্য: আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় চ্যালেঞ্জ শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনব্যবস্থা। এর আগে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি করে গেছেন, তা বলা যাবে না। একটি ছাত্রী হল আছে। সেটাও নানান সমস্যায় জর্জরিত। আরেকটি চ্যালেঞ্জ হলো, শিক্ষার্থীরা যাতে দুর্নীতিমুক্ত একটি স্বচ্ছ পরিবেশে পড়ালেখা ও গবেষণা কার্যক্রম চালাতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করা। 

আজকের পত্রিকা: ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আপনার চিন্তাভাবনা কী?
উপাচার্য: আমি রাজনীতি বলতে বুঝি গণতান্ত্রিক অনুশীলন। এতে আমাদের শিক্ষার্থীরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুক, এটাই চাই। আমি সে রাজনীতি চাই, যেখানে শিক্ষার্থীরা গণতন্ত্র চর্চা করতে পারবে।

আজকের পত্রিকা: শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিয়ে আপনার মত কী?
উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা নিষিদ্ধ। 

আজকের পত্রিকা: বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন কবে হবে?
উপাচার্য: আমাদের পরিস্থিতি ও পরিবেশ যদি অনুকূলে থাকে, ইনশা আল্লাহ সম্ভাব্য কম সময়ের মধ্যে জকসু নির্বাচন হবে। এ বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমি আশাবাদী, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়নে কাজ করতে পারব।

আজকের পত্রিকা: বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকনিয়োগ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন প্রয়োজন আছে কি?
উপাচার্য: অবশ্যই আছে। আমি মনে করি, যাঁরা মেধাবী, তাঁরা যাতে নিয়োগ পান। অন্য কোনো ক্রাইটেরিয়া এখানে কাজ করবে না। মেধাবীদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

আজকের পত্রিকা: এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সমস্যা আবাসন, এ নিয়ে কী পরিকল্পনা আপনার?
উপাচার্য: আমাদের পুরোনো দুটি হলের জায়গায় স্থাপনা তৈরির জন্য ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছি। যদি অনুমতি পাই, এখানে কিছু সংকুলান হবে। আমার আগ্রহ দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ভূমি উন্নয়ন যদি সঠিকভাবে হয়ে থাকে, সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য স্থায়ী থাকার ব্যবস্থা করব। একটু কষ্ট হলেও নিজের জায়গায় থাকার আনন্দ তো অন্য রকম।

আজকের পত্রিকা: নতুন ক্যাম্পাসের কাজ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে কি না?
উপাচার্য: আমার মনে হয়, একপর্যায়ে এটার তদন্ত করা উচিত। আমরা এটা করব। কিন্তু এখন আমাদের লক্ষ্য, থেমে থাকা কাজগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। 

আজকের পত্রিকা: ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ক্যাম্পাসে আসছেন না। তাঁদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত? 
উপাচার্য: আমাদের আইনগত কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। তবে আমার একটাই কথা, যাঁরা স্বৈরাচারের প্রত্যক্ষ সহযোগী ছিলেন, তাঁদের বিষয়ে বিধিসম্মতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। 

আজকের পত্রিকা: জুলাই বিপ্লবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষার্থী ইকরামুল হক সাজিদের স্মরণে নতুন একাডেমিক ভবনের নাম পরিবর্তন করা হবে কি?
উপাচার্য: এটা আমাদের পরিকল্পনায় আছে। প্রশাসনিক নিয়মকানুন মেনে আমরা এটা করব। ছাত্র আন্দোলনে সাজিদ শহীদ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সাজিদ গর্বের। এ গর্ব ধরে রাখতে হবে।

আজকের পত্রিকা: বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আপনার চিন্তাভাবনা কী?
উপাচার্য: অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলমান থাকবে। আমরা বলব, পরিশীলিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চলবে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষেও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ২ ঘণ্টা সময় রাখা হয়েছে।  

আজকের পত্রিকা: বিশ্ববিদ্যালয়ের মাপকাঠি হলো গবেষণা। এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? 
উপাচার্য: সবাইকে গবেষণায় উৎসাহিত করা। পাশাপাশি শিক্ষকদের গবেষণায় শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা। দেশ ও দেশের বাইরে যত রিসোর্স আছে, সেগুলোকে পুল করে শিক্ষকদের গবেষণায় উৎসাহিত করা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত