কবরীর তুলনা তিনি নিজেই

বিনোদন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২১, ১৭: ৪৯
Thumbnail image

কবরী আপা একজন কিংবদন্তি। তাঁকে আমরা এত তাড়াতাড়ি হারাব আশা করিনি। তাঁর চলে যাওয়াটা খুব দুঃখজনক টোটাল ইন্ডাস্ট্রির জন্য। শিল্পী হিসেবে, মানুষ হিসেবে তিনি অতুলনীয়। আমার প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবি ‘আমার জন্মভূমি’। ১৯৭৩ সালের কথা সেটা। ছবিটি পরিচালনা করেন শ্রদ্ধেয় আলমগীর কুমকুম। এর আগে ১৯৭২ সালের ২৪ জুন এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য আমি প্রথম ক্যামেরার সামনে দাঁড়াই। ছবিতে কবরী আপা ছিলেন রাজ্জাক ভাইয়ের নায়িকা। কিন্তু প্রথম ছবিতেই সহশিল্পী হিসেবে তাঁকে পেয়েছিলাম।

এরপর আলমগীর কুমকুমের ‘মমতা’ ছবির কাজ শুরু করি ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি। তখনো আমার প্রথম ছবি ‘আমার জন্মভূমি’ মুক্তি পায়নি। ‘মমতা’য় অভিনেত্রী কবরীকে পেয়েছিলাম আমার নায়িকা হিসেবে। ছবির শুটিং হয়েছিল চট্টগ্রামে। আগ্রাবাদ হোটেলে উঠেছিলাম আমরা। আমার সঙ্গে ছিলেন চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খান। একদিন হোটেলের ক্লাবে একটা পার্টি ছিল। পার্টিতে যাওয়ার জন্য আমি ও মাহফুজ রেডি হয়েছি। কবরী আপার সঙ্গে দেখা। তিনি জানতে চাইলেন পার্টিতে যাব কি না। বললাম, ‘হ্যাঁ, রেডি হয়ে এলাম তো।’ তিনি ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘এভাবে? এভাবে যাওয়া যাবে না। যান দুটো শার্ট কিনে নিয়ে আসেন। আর বিলের কথা জিজ্ঞেস করলে আমার রুম নাম্বার বলে দিবেন।’ এই হচ্ছেন কবরী আপা। বড় বোনের মতো সম্মান করতাম তাঁকে।

 অভিনেতা আলমগীর

‘আমার জন্মভূমি’ ছবির একটি ঘটনা শেয়ার করি। তখন তো আমি ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন। সবে কাজ শুরু করেছি। ‘আমার জন্মভূমি’র আউটডোর শুটিং ছিল কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে। সেখানে ইউনিটের জন্য দুটোমাত্র রুম পাওয়া গিয়েছিল। আমাদের কয়েকজনের থাকার জায়গা হয়নি। একটা বড় বারান্দা ছিল, সেখানে খড় বিছিয়ে বিছানা বানিয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছিলাম। প্রথম রাত ওভাবেই ঘুমিয়েছি। পরের রাতেও একইভাবে ঘুমাতে গেছি, কবরী আপা দেখেই আমাদের জন্য বিছানা–বালিশ–চাদর কেনার ব্যবস্থা করলেন। এভাবে শুটিংয়ের প্রত্যেকেরই খোঁজখবর নিতেন তিনি। ঢাকার বাইরে কোথাও শুটিংয়ে গেলে তিনি সবাইকে আগলে রাখার চেষ্টা করতেন। কে কখন কী করছে, কে কী খেল, কে কোথায় ঘুমাল–সবই তদারকি করতেন।

কবরী আপার সঙ্গে আমার দীর্ঘ ৫০ বছরের স্মৃতি। কত অসাধারণ মানুষ ছিলেন তিনি! আমরা তিনজনের একটা গ্রুপ ছিলাম। কবরী, আমি ও চিত্রগ্রাহক মাহফুজ। কত আড্ডা দিয়েছি আমরা একসঙ্গে! বেশির ভাগ সময় আড্ডা হতো উনার বাসাতেই। তারপর আমরা গাড়ি নিয়ে বের হতাম। তিনি আমাদের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে খাওয়াতে নিয়ে যেতেন। তখন আমাদের কাছে পয়সা ছিল না। এফোর্ট করতে পারতাম না। কবরী আপাই বিল দিতেন।

কবরীব্যস্ততার কারণেই জীবনের শেষদিকে তাঁর সঙ্গে আমার কম দেখা হতো। তবে যখনই দেখা হতো বা কথা হতো, তিনি সেই চিরাচরিত হাসি দিয়ে আন্তরিকতা নিয়েই কথা বলতেন। খোঁজখবর নিতেন। কবরী আপার একটা বড় গুণ ছিল তিনি মানুষকে আপন করে নিতে জানতেন। আপন করে রাখতে জানতেন। প্রতিটি মানুষের জীবনেই কোনো কোনো কষ্ট থাকে, বেদনা থাকে। নিশ্চয়ই কবরী আপার মাঝেও ছিল। কিন্তু ওসব তিনি লুকিয়ে রাখতেন হাসির আড়ালে। বুঝতেই দিতেন না।

একনজরে কবরী

জন্ম: ১৯ জুলাই ১৯৫০, চট্টগ্রাম
আসল নাম: মিনা পাল
প্রথম ছবি: ‘সুতরাং’ (১৯৬৪)
টিভিতে প্রথম: ধারাবাহিক ‘সংশপ্তক’ (১৯৭০)
প্রথম পরিচালনা: স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘একাত্তরের মিছিল’ ও পূর্ণদৈর্ঘ্য ‘আয়না’ (২০০৬)
প্রথম প্রযোজনা: ‘শীত বসন্ত’ (১৯৬৯), প্রতিষ্ঠানের নাম কবরী প্রোডাকশন
সন্তান: পাঁচ ছেলে
পুরস্কার: জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দুইবার। প্রথমবার ‘সারেং বৌ’–তে (১৯৭৮) 
সেরা অভিনেত্রী ও 
আজীবন সম্মাননা। বাচসাস পুরস্কার ছয়বার ও মেরিল–প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার।
মৃত্যু: ১৭ এপ্রিল ২০২১, ঢাকা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত