মৃণালের ‘কলকাতা’ এবং বাহারি ছবির পসরা

সংস্কৃতি প্রতিবেদক
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৩, ১১: ২৯
Thumbnail image

মফস্বল থেকে আসা এক যুবক কলকাতায় এসেই হকচকিয়ে গেলেন। কলকাতায় নিজেকে মনে হতে লাগল বহিরাগত। ধীরে ধীরে যেন বদলাতে লাগলেন তিনি। পড়াশোনা করতে এলেও কখন যেন এই শহরের মায়ায় পড়ে গেলেন। আড্ডা, রাজনীতি আর আন্দোলন—গ্রামের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন, হয়ে উঠলেন কলকাতারই একজন। মৃণাল সেন। বাংলা চলচ্চিত্রের সেরা ত্রয়ী পরিচালকদের একজন।

আউটসাইডার মৃণালের কাছে কলকাতাই একদিন হয়ে উঠল সেই পুরাণের আকাঙ্ক্ষিত শহর ‘এলডোরাডো’। কলকাতা মানেই তাঁর কাছে তারুণ্য, আবেগ, যৌবন আর বিপ্লবের শহর। নিজের দেখা সেই কলকাতাকে নিয়ে এলেন সেলুলয়েডে। বানালেন কলকাতাত্রয়ী—‘ইন্টারভিউ’, ‘কলকাতা ৭১’ ও ‘পদাতিক’।

 
মৃণাল বেঁচে থাকলে এ বছর হতেন শতবর্ষী। শারীরিকভাবে বেঁচে নেই, তাতে কী? সিনেমা তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবে সহস্র বর্ষ। এ বছর মৃণালের শততম জন্মদিন উদ্‌যাপনে তাই চলচ্চিত্রের কাঙ্ক্ষিত আয়োজন। এমন শুভক্ষণে এই ষাটের দশকের কলকাতাকে দেখা যাবে মৃণালের চোখে, এই তিন ছবি দেখার মধ্য দিয়ে। এমন সুযোগ করে দিয়েছে ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটি। শুধু মৃণাল তো নয়, এই আয়োজনে থাকছে এক কুড়ি প্রথিতযশা চলচ্চিত্রকারের বিখ্যাত ৬০টি ছবি। থাকছে ২০টি আলোচনাও। আর এগুলো দেখা যাবে একেবারেই বিনা মূল্যে।

মৃণালের শততম জন্মদিনের কারণে তাঁর ত্রয়ী ছবি দিয়েই শুরু হচ্ছে এই উৎসব। আজ শুক্রবার ৭ জুলাই বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে হবে উদ্বোধন। তারপরে দেখা যাবে ‘ইন্টারভিউ’। আর পরের দিন দেখা যাবে ‘কলকাতা ৭১’ ও ‘পদাতিক’। সঙ্গে থাকবে ‘কলকাতা ট্রিলজি: মৃণাল সেনের রাজনীতি’ শিরোনামে বক্তৃতা। উদ্বোধনী আয়োজন ছাড়া বাকি সব প্রদর্শনী হবে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটারে।

ম্যুভিয়ানার এই আয়োজন যেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের পসরা নিয়ে হাজির হয়েছে। কার ছবি নেই এখানে! ষাটের দশকের কলকাতার চিরন্তন জীবনযাপন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় তাঁর অপুত্রয়ী নিয়ে। ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ দেখা যাবে। শুধু তা-ই নয়, থাকছে সত্যজিতের চোখে দেখা কলকাতাও। ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘জনঅরণ্য’ও থাকছে এই তালিকায়। মৃণাল, সত্যজিৎ ছাড়া বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক দিকপাল ঋত্বিক কুমার ঘটক। দেশভাগ আর ঋত্বিক যেন সমান্তরাল। দেশভাগের যন্ত্রণা সেলুলয়েডে এসেছিল ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’ আর ‘সুবর্ণরেখা’য়। দেখা যাবে এই ছবিগুলোও।

জাপানকে সবচেয়ে কাছ থেকে দেখেছিলেন ইয়াসুজিরো ওজু। এশিয়ার এই পণ্ডিত চলচ্চিত্রকার তাঁর ‘নরিকো ট্রিলজি’তে জাপানের চিরায়ত জীবনযাপন তুলে এনেছিলেন ‘টোকিও স্টোরি’, ‘আরলি সামার’ আর ‘লেট স্প্রিং’-এ। থাকছে এই ছবিগুলোও। থাকছে ফরাসি জাতীয়তাবাদের পটভূমিতে করা পোলিশ পরিচালক ক্রিস্তফ কিয়োসলভস্কির বিখ্যাত থ্রি কালারস ট্রিলজি ‘ব্লু’, ‘হোয়াইট’ ও ‘রেড’। দক্ষিণ কোরীয় চলচ্চিত্রকার পার্ক চ্যান উকের প্রতিশোধস্পৃহা আর নৈতিকতার প্রেক্ষাপটে তৈরি বিখ্যাত ভেঞ্জেন্স ট্রিলজিও থাকছে। দেখা যাবে ‘সিমপ্যাথি ফর মিস্টার ভেঞ্জেন্স’, ‘ওল্ড বয়’ আর ‘লেডি ভেঞ্জেন্স’। ইরানের একটি গ্রাম কোকের। সেই কোকের মানুষের জীবনযাপন ঘিরে ছবি তৈরি করেছিলেন সিনেমার কবিখ্যাত নির্মাতা আব্বাস কিয়ারোস্তামি। ‘হোয়্যার ইজ দ্য ফ্রেন্ডস হোম’, ‘অ্যান্ড লাইফ গোজ অন’, ‘থ্রো দ্য অলিভ ট্রিজ’ও থাকছে এই তালিকায়।

ছবির তালিকা বেশ লম্বা। বিখ্যাত সব চলচ্চিত্রকার আর তাঁদের ত্রয়ী ছবি থাকছে এখানে। দেখা যাবে ফ্রান্সিস ফোর্ড কপোলার ‘গডফাদার ট্রিলজি’, আলেহান্দ্রো গঞ্জালেস ইনারিতুর ‘ডেথ ট্রিলজি’, রয় এন্ডারসনের ‘লিভিং ট্রিলজি’, গডফ্রে রিজ্জিওর ‘কাটসি ট্রিলজি’, ইংমার বারিমনের ‘ফেইথ ট্রিলজি’, আকি কিওরাসম্যাকির ‘ফিনল্যান্ড ট্রিলজি’, মাইকেল অ্যাঞ্জেলো আন্তনিওনির ‘মডার্নিটি অ্যান্ড ইটস ডিসকনটেন্ট ট্রিলজি’, ফেদেরিকো ফেলিনির ‘লোনলিনেস ট্রিলজি’, আন্দ্রে ভাইদার ‘ওয়ার ট্রিলজি’, রিচার্ড লিঙ্কলেটারের ‘বিফোর ট্রিলজি’, থিও অ্যাঞ্জেলোপালাসের ‘বর্ডার ট্রিলজি’ এবং ওং কার ওয়াইয়ের বিখ্যাত ‘লাভ ট্রিলজি’।

বিখ্যাত এসব ছবি দেখা যাবে একেবারে পয়সাটি ছাড়া। তাই আর দেরি নয়। কবে দেখা যাবে কোন ছবিগুলো, তা জানতে, কেবল চোখ-কান খোলা রাখা চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত