সাক্ষাৎকার

ততটা দায়িত্ব নিতে চাই না, যতটা নিলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি

Thumbnail Image

১৩ ডিসেম্বর সারা দেশের সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পলিটিক্যাল স্যাটায়ার ‘৮৪০: দ্য গ্রেট বেঙ্গল ডেমোক্রেসি প্রাইভেট লিমিটেড’। সিনেমায় কাজী ডব্লিউ নামের একজন মেয়রের চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাসির উদ্দিন খান। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন এম এস রানা

‘৮৪০: দ্য গ্রেট বাংলা ডেমোক্রেসি প্রাইভেট লিমিটেড’ সিনেমার গল্পটা কী নিয়ে?

১৩ তারিখে সিনেমাটা মুক্তি পাচ্ছে। তখনই পুরো গল্পটা দেখতে পাব। তবে অল্প কথায় বলা যায়, এটা একটা রাজনৈতিক স্যাটায়ার। একটা দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, যা আমরা দেখতে পাই বা আমাদের দেশে দেখে এসেছি বিগত দিনগুলোতে, সেই ঘটনাগুলোরই কিছু কিছু আমরা দেখতে পাব একটা শহরকে কেন্দ্র করে।

সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পার করলাম, এই বিষয়গুলো কি এসেছে সিনেমায়?

হ্যাঁ, এটা একটা আশ্চর্যের বিষয়। কারণ সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল আরও আগে। শুটিং শেষ হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। এর মাস ছয়েক পর আমরা বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করলাম আমাদের দেশে। এই যে পরিবর্তনগুলো লক্ষ করলাম, তার অনেক কিছুই আমাদের গল্পে উঠে এসেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখলাম, পরিচালক লিখেছেন, এমনটা যে হবে আমি সত্যিই জানতাম না, কিন্তু মিরাকেলি এটা মিলে গেছে...

হ্যাঁ, এ রকম তো হয়। আর ডিরেক্টররা, বিশেষ করে ক্রিয়েটিভ কাজ যাঁরা করেন, তাঁরা তো অনেক কিছু দেখতে পান বা আঁচ করতে পারেন। স্বাভাবিকভাবে একজন সাধারণ মানুষ যা দেখবে, তার চেয়ে হয়তো একটু বিস্তৃতভাবে দেখতে পান। সেগুলো তিনি তুলে আনেন, পরে হয়তো আমরা ঘটনাগুলো বাস্তবের সঙ্গে মিলাই।

ট্রেলার প্রচার হওয়ার পর থেকে দর্শকের বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। যতটুকু দেখা গেল, আপনি বোধ হয় মেয়রের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি ১০৩ পার্সেন্ট ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন!

হ্যাঁ, এটাও হয় আরকি! কত কিছুই তো হয় রাজনীতিতে!

সহশিল্পী হিসেবে কার সঙ্গে কাজ করে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেন?

আমার সহশিল্পী ছিলেন ফজলুর রহমান বাবু, মারজুক রাসেল, বিজরী বরকতউল্লাহ, জাকিয়া বারী মম, আশুতোষ সুজনসহ অনেকেই। সব সহশিল্পীর কাছ থেকেই আমি বেশ কমফোর্ট পেয়েছি। এর মূল কারণ হয়তো ফারুকী ভাই সবাইকে এত সুন্দর করে গুছিয়ে দিয়েছেন। আর যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা অনেক অভিজ্ঞ। উনারা জানেন, যে কাজটা করছি, এটা যদি সবাই মিলেমিশে করি, তাহলেই ভালো একটা কাজ হবে। ফলে আমরা সবাই ওরকম মাস্তি নিয়ে কাজটা করেছি। শুধু অভিনয়শিল্পীরাই নয়, পরিচালক থেকে শুরু করে প্রোডাকশন বয় পর্যন্ত সবাই আমরা মাস্তি নিয়ে কাজ করেছি। যদিও পরিচালক অনেক টেনশনে ছিলেন।

কিসের টেনশন?

যেহেতু এটা একটা রাজনৈতিক স্যাটায়ার এবং এখানে রাজনৈতিক অনেক ব্যাপার-স্যাপার উঠে আসবে, এটা না আবার জানাজানি হয়ে যায় আগে। তাহলে হয়তো সিনেমা রিলিজ দেওয়াটাই মুশকিল হয়ে পড়ত, যদিও তিনি ওই সময়ে আমাদের এসব টেনশন বুঝতেই দেননি।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী যখন সিনেমা বানান, যত দূর শুনেছি স্ক্রিপ্টটা উনি নিজের মাথায় বেশি রাখেন এবং যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁদেরকে চরিত্র হয়ে ওঠানোর চেষ্টা করেন। আপনি তো তাঁর সঙ্গে প্রথম কাজ করলেন। কেমন অভিজ্ঞতা হলো আপনার?

উনার সঙ্গে প্রথম কাজ হলেও উনার ঘরানার কাজ আমি করেছি উনার শিষ্য আশফাক নিপুণের সঙ্গে। তবে ফারুকী ভাইয়ের সঙ্গে কাজ করার সময় কিন্তু আমরা স্ক্রিপ্ট পেয়েছি। যদিও পরে এর পরিবর্তন হয়েছে, পরিমার্জন হয়েছে। কিন্তু বেসিক জিনিসটা ঠিক ছিল। তা ছাড়া কাজী ডব্লিউ চরিত্রটার জন্য আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি, রিহার্সালও করেছি। যখনই কোনো বিষয় মাথায় এসেছে, আমরা ফোনে কথা বলে নিয়েছি। পরিচালক হিসেবে উনি ওয়ান্ডারফুল।

আপনার চরিত্রের নাম তাহলে ডব্লিউ?

কাজী ডব্লিউ।

সিনেমায় একটা সংলাপ দেখলাম, ‘আমি এত উন্নয়ন করেছি, তবু কেউ আমায় ভালোবাসল না কেন?’ সংলাপটা কী আমাদের রাজনীতিবিদদের প্রতিনিধিত্ব করে?

অবশ্যই করে। দেখুন এটা পলিটিক্যাল স্যাটায়ার বা যা-ই হোক না কেন, মানুষ তো বিনোদন পাবেই। আমার ধারণা, আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের এখন থেকে একটা বিশাল শিক্ষা পাওয়া উচিত। যদিও আমরা সবাই সবকিছু জানি, তবু চোখের সামনে যখন দেখতে পাই, তখন বিবেককে একটু তো নাড়া দেয় আসলে।

৮৪০-কে বলা হচ্ছে ৪২০ ধারাবাহিকের ডাবলআপ। কেন বলা হচ্ছে?

দুটোই আসলে পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। সে জন্যই এমনটা বলা হচ্ছে। তবে এটা কোনোভাবেই ৪২০-এর সিকুয়াল নয়, এর গল্প বা চরিত্রগুলো একেবারেই ভিন্ন, নতুন। কিন্তু ঘরানাটা হয়তো এক।

‘৮৪০: দ্য গ্রেট বাংলা ডেমোক্রেসি প্রাইভেট লিমিটেড’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
‘৮৪০: দ্য গ্রেট বাংলা ডেমোক্রেসি প্রাইভেট লিমিটেড’ সিনেমার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

এই যে একটা শহরকে ঘিরে গল্প। এটা কোন শহর?

এটা কাল্পনিক একটা শহর।

মাইশেলফ অ্যালেন স্বপনে দেখেছি হাসতে হাসতে ভয়ংকর সব কাজ করে যাচ্ছেন। এই সিনেমায়ও কি তেমনটাই করেছেন?

অ্যালেন স্বপনের যে ঘটনা ওখানে রাজনৈতিক কোনো ব্যাপার ছিল না, কিন্তু এখানে পুরো ঘটনাই সরাসরি রাজনৈতিক এবং কাজী ডব্লিউ একজন রাজনীতিবিদ। একজন রাজনীতিবিদকে আমরা যে রকম দেখি, তেমনটাই এখানে দেখতে পাব কাজী ডব্লিউর মাঝে।

নানা রকম ছলচাতুরী, আগুন লাগিয়ে দিয়ে ত্রাণ নিয়ে যাওয়া, এই সব?

হ্যাঁ, যেটা আমরা ট্রেলারে দেখলাম।

সিনেমার বেলায় গ্ল্যামারটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নাকি অভিনয়টা?

এগুলো প্রায় কাছাকাছি। তবে আমার মনে হয়, যেকোনো বিষয়ে ঘাটতি থাকলে সেটা অভিনয় দিয়ে পূরণ করা যায়। কিন্তু অভিনয় না জানলে সেটা পূরণ করা মুশকিল।

আপনি তো থিয়েটার করা মানুষ। সাম্প্রতিক সময়ে থিয়েটারে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা, যেমন প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া, অভিনয় না করার অনুরোধ বা শিল্পীদের গায়ে ডিম ছুড়ে মারা—এসব ঘটনা কি আপনাকে পীড়া দেয়?

অবশ্যই পীড়া দেয়। অনেক কিছুই পীড়া দেয়। কিন্তু যখন আমি এসব নিতে পারি না, তখন চোখটা বন্ধ করে রাখি। আমি ততটা দায়িত্ব নিতে চাই না, যতটা নিলে আমি নিজে অসুস্থ হয়ে পড়ি।

আপনার অভিনীত ‘বলি: দ্য রেসলার’ বুসানে পুরস্কার জিতেছে। অস্কার প্রতিযোগিতার জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। বাংলাদেশে কবে মুক্তি পাবে সিনেমাটি?

নির্মাতা ইকবাল হোসেন চৌধুরী সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছেন। সেন্সর সনদ পেলেই দেশে মুক্তি দেবেন, তবে কবে দেবেন সেটা তিনিই ভালো জানেন, আমি না। তবে সিনেমাটা কানাডায় মুক্তি পেয়েছিল।

গত বছরের তুলনায় এ বছর স্ক্রিনে আপনার উপস্থিতি কম ছিল। কারণ কী?

আমি তো কাজ করেছি। কিন্তু মুক্তি পায়নি বলে হয়তো স্ক্রিন উপস্থিতি কম ছিল।

‘৮৪০’ সিনেমায় কাজী ডব্লিউ চরিত্রে নাসির উদ্দিন খান। ছবি: সংগৃহীত
‘৮৪০’ সিনেমায় কাজী ডব্লিউ চরিত্রে নাসির উদ্দিন খান। ছবি: সংগৃহীত

নতুন আর কী কাজ করলেন?

রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিতের ‘মাস্টার’, এটাও পলিটিক্যাল গল্প নিয়ে কাজ। সপ্তাহ দুয়েক আগে অনন্য প্রতীক চৌধুরী নামের একজন নতুন পরিচালকের একটি ওয়েব ফিল্মের কাজ করলাম। আমার সহশিল্পী ছিলেন দীপা খন্দকার, পার্থসহ অনেকেই।

আপনার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাই।

আমার পরিবার অনেক বড়। আমরা পাঁচ ভাই, এক বোন। আমরা ভাইয়েরা সবাই এক জায়গায় থাকি, যদিও আমাদের রান্নার হাঁড়ি ভিন্ন। আমার একান্ত পরিবারের মাঝে আছে আমার স্ত্রী আর আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে কলেজে পড়ে আর মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে।

ছেলে-মেয়েরা কী অভিনয় করে?

না, তারা আছে তাদের মতো, পড়াশোনা নিয়ে।

আপনার থিয়েটার লাইফ সম্পর্কে বলুন।

আমার দলের নাম তীর্যক নাট্যগোষ্ঠী চট্টগ্রাম, ওখানে আমি ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত নিয়মিত কাজ করেছি। এখনো আছি গ্রুপের সঙ্গে, তবে নিয়মিত সময় দিতে পারি না।

এই সময়ে আমাদের সিনেমা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

যেমন হওয়া উচিত, তেমন সিনেমা এখন তৈরি হচ্ছে। ভালো গল্প হচ্ছে, ভালো চরিত্র তৈরি হচ্ছে। মেধাবী অনেক পরিচালক, অভিনেতা পাওয়া যাচ্ছে, সিনেমার প্রায় সব সেক্টরেই মেধাবীদের পাওয়া যাচ্ছে। আমার মনে হয়, আমরা রাইট ট্র্যাকেই আছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত