এখন আত্মজীবনী লিখছি: আবুল হায়াত

শিহাব আহমেদ
প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭: ৪৭
আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০: ৪৬

বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্মাতা আবুল হায়াতের জন্মদিন আজ। ৭৯ পার করে ৮০ বছরে পা দিলেন তিনি। এখনো অভিনয় ও লেখালেখি করে যাচ্ছেন। জন্মদিন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আবুল হায়াতের সঙ্গে কথা বলেছেন শিহাব আহমেদ

জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। বিশেষ এই দিনটি নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে?
অনেক ধন্যবাদ। জন্মদিন নিয়ে আমার আলাদা কোনো পরিকল্পনা থাকে না। পরিবারের সদস্যরাই ঘরোয়াভাবে আয়োজন করে। সকালে চ্যানেল আইয়ে একটা অনুষ্ঠান আছে। বিকেলে পরিবারের সবাই মিলে ঘুরে বেড়াব, খাওয়াদাওয়া করব। এ ছাড়া রাত থেকেই আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষীরা ফোন করে, খুদে বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানায়। 

আজ আপনার নাতনিরও জন্মদিন। সাধারণত একই দিনে পরিবারের দুজনের জন্মদিন হলে ছোটদের জন্মদিন নিয়েই আগ্রহ থাকে বেশি। আপনার পরিবারে কী হয়? 
আমাদের পরিবারেও একই ঘটনা ঘটে। শ্রীষার জন্মদিনে আমি ভাগ বসাই। জন্মদিনের আমেজটা রাত থেকেই শুরু হয়ে যায়। ১২টা বাজলেই আমি ফোন করি, তারাও আমাকে ফোন করে। নাতনি ও আমি দুজনে একসঙ্গে কেক কাটি। এবারও এ রকম পরিকল্পনা আছে। 

ছোটবেলায় জন্মদিন উদ্‌যাপন করতেন? 
না না, ছোটবেলায় কখনো আয়োজন করে জন্মদিন করা হয়নি। বড় হওয়ার পরেই উদ্‌যাপন করা হয়। মেয়েরা বড় হওয়ার পর থেকেই জন্মদিন পালন শুরু করেছে।  

৮০-তে পা দিলেন। জীবনের এ পর্যায়ে এসে কী অনুধাবন হয়?  
জীবন নিয়ে আমি তৃপ্ত। নিজেকে সুখী মানুষ মনে করি। এক জীবনে এত মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, যা সবকিছুর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। সব সময়ই আমার চাওয়া কম ছিল, যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। সাফল্য পাওয়ার চেয়ে বরং শিল্পকে ভালোবেসেছি। শিল্পের পথে হাঁটার চেষ্টা করেছি, এখনো শিল্পের পথেই হাঁটছি।

সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘১৯৭১: সেই সব দিন’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আপনিও সিনেমাটি দেখেছেন। দর্শক হিসেবে কেমন লেগেছে?
মনে হয়েছে সত্যিকারের একটা সিনেমা দেখলাম। হলে বসে সেই সময়ের দিনগুলো ফিল করেছি। মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, যে বিষয় নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি, সেটা অনুভব করেছি। আমার মনে হয়, নতুন প্রজন্মের যারা সিনেমাটি দেখবে, তারাও সময়টা অনুভব করবে। এটাই এ সিনেমার সার্থকতা। সিনেমার সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই ভালো একটি কাজের জন্য।

আপনার অভিনীত আরও দুটি নতুন সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। 
সরকারি অনুদানে নির্মিত দুটি সিনেমার কাজ শেষ করেছি। একটি বদিউল আলম খোকনের ‘দায়মুক্তি’, অন্যটি অরুণা বিশ্বাসের ‘অসম্ভব’। দুই নির্মাতাই অনেক পরিশ্রম করেছেন। আমি দুই সিনেমায়ই কাজ করে তৃপ্ত।

ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’-এ অভিনয় করেছেন। সম্প্রতি সিনেমাটি ৫০ বছর পূর্ণ করল। সিনেমাটি নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা জানতে চাই।
সে সময় মঞ্চে অভিনয় করতাম। এক রাতে হাসান ইমাম ভাই এসে বললেন, ‘সিনেমায় অভিনয় করবা?’ বড় পর্দায় অভিনয়, সেও আবার ঋত্বিক ঘটকের সিনেমা। না বলার কোনো কারণ ছিল না। সে রাতেই আমাকে নিয়ে গেলেন প্রযোজক হাবিবুর রহমানের বাসায়। আমাকে দেখে ঋত্বিক দাদা বললেন, ‘এটাকে কাল এফডিসিতে নিয়ে যাইস।’ পরের দিন এফডিসিতে যাওয়ার অনেকক্ষণ পরে তিনি এসে জানতে চাইলেন, ওইটি কই হাসান? যে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছ, সে কই? সামনে যেতেই আমার থুতনি ধরে বললেন, ‘এটাকে একটি উইগ লাগিয়ে মেকআপ করা।’ ঘণ্টাখানেক পর আমাকে ভালোভাবে দেখার পর মাথার উইগটা টান মেরে ফেলে দিয়ে বললেন, ‘চুল ছাড়াই এটাকে জমিদারের মতো লাগে। যা পাস।’ এরপরে অভিনয় করলাম। সে মাসেই রাজেন তরফদারের ‘পালঙ্ক’ সিনেমার প্রস্তাব এল। সেটাতেও অভিনয় করলাম। এভাবেই সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম। 

একসময় এ দেশে উপমহাদেশীয় সিনেমা দেখা যেত। সম্প্রতি আবারও উপমহাদেশীয় সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। এটি আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে কেমন প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয়?
সে সময়ের সঙ্গে এখনকার প্রেক্ষাপটের মিল নেই। প্রভাব তো কিছুটা হলেও পড়বে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এমনটা হতেই পারে। বিদেশি সিনেমার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে আমাদের দেশের সিনেমার মান বৃদ্ধি করতে হবে। আর একটা বিষয় হলো, বলিউডের সিনেমা যেমন একই সময়ে আমাদের দেশে মুক্তি পাচ্ছে, তেমনি যথাযথভাবে আমাদের সিনেমাও সেখানে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।  

অভিনয়ের পাশাপাশি নিয়মিত লেখালেখি করেন। এখন কী নিয়ে লিখছেন? 
লেখালেখিটা আমার কাছে নেশার মতো। নিয়মিত লেখালেখি চলছে। আমি এখন আত্মজীবনী লিখছি। জীবনের অনেক কিছুই উঠে আসবে। আগামী বছরের বইমেলায় আত্মজীবনী প্রকাশ করার ইচ্ছা আছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত