নজরুল আছেন যেভাবে

বিনোদন প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২১, ১৩: ০৪
আপডেট : ২৫ মে ২০২১, ২২: ১৪

মূল্য যদি বুঝত, আরও কাজ হতো
মতিন রহমান, চিত্র পরিচালক
আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে কাজের সংখ্যা তো এখন আরো কমছে। কর্পোরেট দৌরাত্ম্যতে ওই পুরনো গল্পে পন্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। কোন গল্পটি চলচ্চিত্রের জন্য উপযোগী, সেটা নিয়ে কারও কোনো ভাবনা নেই। তাঁর সাহিত্য নিয়ে অনেক কাজ করার সুযোগ আছে।

নজরুলসাহিত্য নিয়ে আরও সিনেমা হওয়া উচিত। জাতীয় কবির কাজের মূল্য যদি তারা বুঝত, হয়তো তাঁকে নিয়েও কাজ করত। বাঙালি নারীর ভালোবাসা নিয়ে প্রচুর সিনেমা হয়েছে। শাবানা, ববিতা অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘রাক্ষুসী’ র গল্পে দেখলাম একটু ভিন্ন রকম ভাবনা।

অন্য রকম ক্লাইমেক্স ছিল, সাধারণ বাংলাদেশের অন্য কোনো সিনেমায় এ রকম দেখিনি। তাই গল্পটা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। আমি ব্যবসায়ীকভাবে সফলতা না পেলেও প্রচুর প্রশংসা ও পুরস্কার পেয়েছি।

তারিন জাহান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকেবিদ্রোহী ঘরানার বলে এড়িয়ে যাচ্ছি?
তারিন জাহান, অভিনয়শিল্পী
কাজী নজরুলের ‘শিউলিমালা’ গল্প অবলম্বনে সবচেয়ে বেশি নাটক নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু সত্যি বলতে নজরুলের নাটক নিয়ে সেভাবে চর্চা হয় না। আমি নিজেও একাধিকবার ‘শিউলিমালা’ গল্পে অভিনয় করেছি। তার নাটক একটু বিদ্রোহী ঘরানার বলে কি তবে আমরা এড়িয়ে যাচ্ছি? তবে তার নাটকে চরিত্র রূপায়ণের ক্ষেত্রে অনেক বিষয় মাথায় রেখে কাজ করতে হয়।

শুধু অভিনেত্রী বা অভিনেতাকে চরিত্রায়নের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হয় এমনটা নয়। পুরো শুটিং ইউনিটকে সময়কাল এবং স্থান সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। নজরুলের নাটকে বেশকিছু প্রতিবাদী নারী চরিত্রও আছে। কিন্তু আমরা সেগুলো পর্দায় দেখতে পাই না। এসব গল্প নিয়ে আরও বেশি বেশি কাজ করা উচিত বলে মনে করি। আর নির্দিষ্ট কিছু গল্প নিয়েই বেশি কাজ হয়।

সুমাইয়া শিমু। ছবি: ফেসবুক থেকেরূপসজ্জা আর পোশাক নিয়ে সতর্ক থাকতে হয়
সুমাইয়া শিমু, অভিনয়শিল্পী
সাহিত্য নিয়ে কাজের লোভ সামলাতে পারি না কখনও। বলতে পারেন মুখিয়ে থাকি। এসব চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে অন্য আট-দশটা নাটকের চেয়ে অনেক বেশি সময় ব্যয় করতে হয়। অন্য নাটকগুলোয় নিজের মতো চরিত্র সাজিয়ে নিই। কিন্তু সাহিত্য নিয়ে নির্মিত নাটকে অভিনয়ের সময় বর্ণনা অনুযায়ী ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি। বিশেষ করে রূপসজ্জা আর পোশাক নিয়ে বেশ সতর্ক থাকি। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, 'আগে দর্শনধারী পরে গুণবিচারী'। ঠিক কেমন অভিনয় করলাম সেটা পরে ভাবি, আগে আমার সাজসজ্জা কেমন হবে তা নিয়েই ভাবনায় মশগুল থাকি। ‘বাঁধনহারা’, ‘রিক্তের বেদন’, ‘শিউলিমালা’ নাটকগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে মনে পড়ে 'রিক্তের বেদন' নাটকের কথা। এতে এক আরবের বেদুইন রমণীর চরিত্রে অভিনয় করেছি। নাটকটির বেশিরভাগ দৃশ্যেই আমাকে কালো বোরখা পরতে হয়েছে। একে তো কালো পোশাক, অন্যদিকে চৈত্র মাসের কাঠফাটা রোদ্দুর। এত কষ্ট করেছি একমাত্র সাহিত্যপ্রীতির জন্য।

আফরান নিশো। ছবি: ফেসবুক থেকেজন্ম বা মৃত্যুদিবসেই এসব নাটক নির্মাণ হয়
আফরান নিশো, অভিনয়শিল্পী
কাজী নজরুল ইসলামের বেশ কয়েকটি নাটকে আমি কাজ করেছি। শুধু তার জন্ম বা মৃত্যুদিবসেই এসব নাটক নির্মাণ হয়। তার গল্পগুলো আধুনিক রুপ দিয়েও কিন্তু নির্মাণ করা যায়। যাঁরা ব্যবসায়িক মনোভাব নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের উচিত বিশেষ ব্যক্তিদের গল্পে নির্মাতাদের উৎসাহিত করা।

তাহলে কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে এখন পাঁচজন নির্মাতা কাজ করলেও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অনেক নির্মাতা কাজ করতে উৎসাহিত হবেন। ‘আমায় নহে গো ভালোবাসো শুধু/ ভালোবাসো মোর গান’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি একটি নাটকে অভিনয় করেছিলাম। নাটকটির নাম ‘ধুমকেতু’। নাটকটিতে আমি একটি ব্যান্ডের ভোকালিস্ট চরিত্রে অভিনয় করেছি। নতুনভাবে কাজী নজরুল ইসলামের গানগুলো গাই। চরিত্রটির একটি বিপ্লবী সত্তা আছে। এমন চরিত্রের সৃষ্টিও কিন্তু করা যায়।

সংগীতশিল্পী ফাতেমা তুজ জোহরা। ছবি: ফেসবুক থেকেনজরুলের গান চিরকালই আধুনিক
ফাতেমা তুজ জোহরা, নজরুল সংগীতশিল্পী
এখনকার সময়ে যেটা হচ্ছে সেটা হলো, সবাই আদি রেকর্ড মেনে চলছে। ১৯৪২ সালের আগ পর্যন্ত যে রেকর্ডগুলো করা হয়েছে, ওই রেকর্ডগুলোকে আদি রেকর্ড বলা হয়। কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৪২-এ অসুস্থ হয়ে গেলেন। তার আগ পর্যন্ত যতগুলো রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলোই আদি রেকর্ড। আমাদের সৌভাগ্য যে আদি রেকর্ডটার অনেকটাই উদ্ধার এবং সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। যার ফলে গানে বিধিবদ্ধতা চলে আসছে। আদি রেকর্ডটাই হচ্ছে আসল সুর।

এখনকার ছেলেমেয়েরা নিজ দায়িত্বেই সেটা ফলো করছে। তারা বেশ পড়াশুনা করেই কাজ করছে। আমি মনে করি, যতগুলো রেকর্ড এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, সেগুলো যদি সঠিকভাবে শিখে বা চর্চা করে গাইতে পারি, তাতেই চলবে। সেটার সংখ্যা যদি এক-দেড় হাজারও হয়, তাতে কী! ভেজাল সুরে তিন চার হাজার গাওয়ার চেয়ে কম সংখ্যক থাকুক। সঠিক শুদ্ধটাই থাকুক।

সেই রেকর্ডগুলো ছিল সম্পূর্ণভাবে কবির তত্ত্বাবধানে করা। আমরা চেষ্টা করি, আদি রেকর্ডগুলো অনুসরণ বা অনুকরণ করে গাইতে। কারণ সেটাই আসল সুর। ১৯৪২-এর পর থেকে যেসব গান রেকর্ড করা হয়েছে, সেগুলোকে আদি রেকর্ড বলা হয় না। আমি মনে করি, সেই আদি রেকর্ডে যদি ১৫০০ গানও হয়, তাহলে সেটাই শুদ্ধভাবে চর্চা করা হোক।

আসলে তখন তো কোনো কিছুই গোছানো ছিল না। আর তখন এই সুযোগটাই লুফে নিয়েছিল কেউ কেউ। তারা কবির গান চুরি করে নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছে। সে সময় একটা মহল কারসাজি করে নজরুলের প্রচুর রেকর্ড নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল।

নতুন ছেলেমেয়েদের বলতে চাই, যতই রঙচঙে বা চটকদার হোক, যেটা হয়তো নিজের ভালো লাগছে। তারপরও সেটা যদি নজরুলের আসল সুর না হয়, তাহলে সেটা গাইবার চেষ্টা করো না।

ফিউশন আমি নিজেও করেছি। এটাকে কেউ যদি দোষের মনে করে, তাহলে আমিও দোষি। আর এই দোষটা আমি মাথা পেতে নিতে রাজি। কারণ আমি যা করছি, তা জেনেই করছি। আমি গানে কোনো রকম পরিবর্তন বা পরিমার্জন করিনি। আর মিউজিক ততোটুকুই যতোটুকু সঙ্গত। নজরুলের গান হচ্ছে চিরকালীন আধুনিক।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণে ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত