Ajker Patrika

‘যেখানেই পাঠাগার হবে, আমি ১০ হাজার করে দেব’

জি এম এমদাদ
আপডেট : ১১ মে ২০২১, ২২: ২৩
‘যেখানেই পাঠাগার হবে, আমি ১০ হাজার করে দেব’

এই যে এক্সপ্লোর করামানুষ, মাটি, ঐতিহ্য, যেখানে থাকেন তার আশপাশ, আশপাশের জনপদ, লোকালয়, বিখ্যাত মানুষ, এখানকার সংস্কৃতি, কৃষ্টি দীর্ঘদিন ধরে আপনার লেখায়, আপনার গবেষণায় এক্সপ্লোর করে চলেছেন। এই চিন্তা কবে থেকে হলো? কেন?

জি এম এমদাদ: মূলত আমি তো তোমাদের শিক্ষক হিসেবেই ছিলাম। তখন থেকে আমার মনের মধ্যে একটা ইয়ে হলো, সাংবাদিকতা করতে গেলাম। চিন্তা করলাম প্রচলিত সাংবাদিকতার বাইরে যেয়ে সাংবাদিকতাটা করার।

ভাবলাম ফিচারধর্মী কোনো নিউজ, যা এলাকার উন্নয়নের কাজে লাগে (এ রকম কিছু করা যায় কিনা)! ধরা যাক—এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল নেই, কলেজ নেই, সেটার জন্য বছরের পর বছর নিরক্ষর থেকে যাচ্ছে। অথচ সেখানে একটা স্কুল করা যায় কিনা—তা নিয়ে কেউ লেখে না।

অসংখ্য গুণীজন পড়ে আছে। অবহেলিত গুণীজন যারা, তাঁদের খোঁজ কেউ নেয় না। খুঁজে খুঁজে দেখতে লাগলাম; ধরো এই মানিকতলা (স্থানীয় বাজার) কীভাবে হলো, এর মূলে কে কে ছিল? ধীরাজতুল্ল সরদার এখানে প্রথম স্কুল করিচে। বসিরগাজী নামে একজন ছিলেন, এখানে এই বাজারের জন্য জমিটমি দিয়েছেন।

তাঁদের পঞ্চাশ বছর এক শ বছর আগের দান করা জমিতে আজ আমরা ফলাফল ভোগ করতিছি। এই ইতিহাসটা তো কেউ জানে না। কেউ লেখে না। তখন আমি এই বিষয়ের ওপর ফিচার করতে শুরু করলাম। একটা নিউজ এল—‘অবহেলিত এক গ্রামের নাম রামনগর’…

[এতক্ষণ ধরে চলা প্রথম ধাপের চা-পর্বের রেশ নেতিয়ে এসেছে। চায়ের কাপ নিতে এসেছিল দোকানদার। জি এম এমদাদ পানটা মুখে দিয়ে কাগজে আঙুলের অগ্রভাগ মুছে নিলেন। ‘একটা পান নিয়ে আসো দি’ আমার দিকে ইঙ্গিত—পান খেতে চাই কিনা! না চাওয়ার যেহেতু কোনো কারণই নেই, ফলে আরেক দফা অর্ডার হয়—‘আর দুটো পান নিয়ে আসো।’ কথা শুরু করেন জি এম এমদাদ]

আমার রামনগর গ্রাম নিয়েও তো নিউজ আসে! এবং সেটা বড় আকারে! ভাবলাম, রামনগর গ্রাম নিয়ে যদি নিউজ আসে, তাহলে প্রতিডা গ্রামের ওপর নিউজ করা লাগবে। তখন আমি বিভিন্ন জায়গায় যাতি (যেতে) লাগলাম। কাজী ইমদাদুল হককে খুঁজতে লাগলাম, মেহের মুসুল্লীকে খুঁজতে লাগলাম। ইদানীং আমি আবার একটা ফিচার লেখার ইয়ে করিচি (করেছি), এখনকার যে বিলুপ্ত হাটবাজার, এখানে ওই যে ঘোষের হাট ছিল, সেই হাটটা নেই।

এখানে দুবোডাঙ্গার হাট ছিল। বিলের মাথায় একটা হাট ছিল দুবোডাঙ্গার হাট, সেটা তোমরা দ্যাখোনি। হাটটা এইরাম (এ রকম) সময় মানে সন্ধ্যার সময় বসত। রাত দশটার দিকে হাট ভাঙলে মানুষজন টেমি (কেরোসিনের ল্যাম্প) মাথায়–টাথায় করে নিয়ে বাড়ি ফিরত। রাত্তিরি রান্নাবান্না করে খেয়ে রাত বারোটার দিকে ঘুমাত।

তাহলে কিছু হাট বিলুপ্ত হয়েছে, এবং বিনিময়ে নতুন নতুন কিছু হাটও জন্মাইছে। একচড়ের হাট, এই হাট সেই হাট… এসব নাম জানি, যেগুলো আছে। কিন্তু বিলুপ্ত হয়ে গেছে যেগুলো, সেগুলো জানার কোনো উপায় নেই।

তারপর দেখলাম আমাদের বাড়ির পাশে একটা নদী ছিল; আদাসুর। খলিলনগর যাতি (যাওয়ার) পথে একটা খাল পড়ে না? ওটা হচ্ছে আদাসুর নদীর অবশিষ্ট অংশ। ওই নদীটা যদি না থাকত, তাহলে এখানে দমদমা হতো না। ধনপতি সওদাগর ব্যবসা–বাণিজ্য করে, মালটাল কিনে এনে যে জায়গায় রাখত, সেই জায়গাডার নাম হয়িচে (হচ্ছে) দমদমা। চাঁদসওদাগর, ধনপতি সওদাগর বাস করত এখানে।

এসব তথ্য আমরা একটু একটু করে পাওয়া শুরু করেছি মাধ্যমিকে। আপনার একটা বইয়ের দোকান ছিল মাদ্রাসার নিচে। ওখানে গেলেই দেখতাম, আপনি নানা পেপার কাটিং ফাইলবন্দী করছেন। টিচারস রুমে বসে লিখছেন। এর পর আমাদের কাছে অনেকখানি বিস্ময়ের মতো করে সাদা সোনার রাজ্য এল

জি এম এমদাদ: এ রকমভাবে ইতিহাস খুঁজদি খুঁজদি (খুঁজতে খুঁজতে) দেখলাম, একটা বেশ কালেকশন হয়ে গেছে। মাথায় এল এইগুলো দিয়েই তো আমি বই করতে পারি! তখন বের করলাম ‘সাদা সোনার রাজ্য’। বাইরিত্তি (বাইরে থেকে) যাঁরা আসেন, তাঁরা পাইকগাছাকে জানার জন্য এই একটা বই-ই পায়। বইটা যদি না করতাম, তাহলে কী হতো? হয়তো কপিলমুনি একজন আসলো এই এলাকাটা সম্পর্কে জানার জন্য। বিশিষ্ট যারা শিক্ষাবিদ আছেন, তাঁদের কাছে জিজ্ঞেস করলে তাঁরা সন্ধান দেবে, এখানে রায়সাহেব (বিনোদ বিহারী) আছেন। আরও যদি দেখতে চান, তাহলে পিসি রায়ের ওখানে যান। পিসি রায়ের বাড়ি কোথায়? ওই যে, খুলনার পাইকগাছার বাড়ুলিতে।

এখানে বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক কাজী ইমদাদুল হকের জন্মস্থান। এখানে একজন বৃক্ষপ্রেমী মানুষ ছিলেন (মেহের মুসল্লী) তিনি রাস্তার ধারে গাছ লাগাইছেন, তালা থেকে পাইকগাছা পর্যন্ত (প্রায় ২৩ কিলোমিটার)। এ রকম অনেক কথাই বলে দিল বিশিষ্টজনরা। কিন্তু লেখা আকারে তো আর তাঁদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে না। পরে ভাবলাম এই ইতিহাস-ঐতিহ্যকে কবিতা আকারে, ছন্দ আকারে রূপ দেওয়া যায় কিনা! ওই বইটার নাম দিলাম ‘পাইকগাছার পাসওয়ার্ড’।

আপনার জন্ম তো এখানে; রামনগরে (খুলনার পাইকগাছা উপজেলার একটি গ্রাম)। আপনি কি আগাগোড়া এখানেই ছিলেন? নাকি পড়াশোনার জন্য বা অন্য কোনো কারণে অন্য কোথাও ছিলেন?

জি এম এমদাদ: আমার আগাগোড়া কেটেছে এখানেই। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সচক্ষে উপলদ্ধি করেছি। একষট্টিতে জন্ম। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ক্লাস ফাইভের ছাত্র। কপিলমুনি হসপিটালে আব্বা যখন চাকরি করত, ওখানেই ছিলাম। আব্বা এইটটি টুতে মারা যাওয়ার পর রামনগর এসে বাড়ি করলাম। তার আগ পর্যন্ত কপিলমুনি (পাইকগাছা উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান) ছিলাম। এখানকার সবাই মনে করত, আমি কপিলমুনির ছেলে। গ্রামীণ ব্যাংকে চাকরি নিলাম, পোস্টিং হলো বরগুনা।

ওই সময় আপনি কেমন ছিলেন? কারণ হচ্ছে, এই যে কপিলমুনি এলাকাটা, এর প্রতি আপনার সবসময় প্রচুর টান ছিল। পরে আপনি একটা ঐতিহাসিকের ভূমিকা পালন করছেন। খনন করে ইতিহাসগুলো বের করে আনছেন। এলাকা ছেড়ে থাকার সময়ের খারাপ লাগাগুলোই কি আপনার এত সব উদ্যোগের গোপন শক্তি হিসেবে কাজ করেছে?

জি এম এমদাদ: যেখানেই যাই না কেন সার্বিকভাবে মেশার চেষ্টা করি। দেখার চেষ্টা করি। ওখানে যে এক বছর ছিলাম, বরগুনার অনেক গ্রাম ঘুরেছি। সেখানকার মানুষের সাথে মিশেছি। ওই সময় এ রকম নিষেধাজ্ঞা—কোনো গ্রাহকের কাছ থেকে একগ্লাস পানিও খাওয়া যাবে না। আমার ওপরের যে অফিসার ছিলেন, তাঁর সঙ্গে একবার একটা জায়গায় গেলাম। ব্যাংকের টাকা নিয়ে গাভী কিনেছেন এক মহিলা। সে খুব অনুরোধ করল, ‘আমার নতুন গাইয়ের দুধ হয়িচে (হয়েছে), আপনাদের দুই স্যারের জন্যি (জন্য) আমি দুই গ্লাস দুধ নিয়ে আসছি।’

আমার অফিসার আপত্তি করল, এই দুধ আমরা খেতে পারব না। চাকরি চলে যাবে। বললাম যে, আমি খাব। এতে যদি আমার চাকরি যায়, তো যাক! সে আমাকে আদর আপ্যায়ন করে ডিম খাওয়াচ্ছে আর একগ্লাস দুধ খাওয়াচ্ছে! অফিসারকে বললাম, খান। আমি খেয়েছি আপনি খান। একজন ভালোবেসে কিছু খেতে দিচ্ছে। সামাজিকতা বলে তো একটা কথা আছে!

এটা কত সালের দিকে?

জি এম এমদাদ: পঁচাশি সাল। এত কঠিন নিয়ম ছিল ওই সময়! এখন এটা আর নেই। যে ব্রাঞ্চে ছিলাম, সেখানে প্রতি বছর দুটো করে অনুষ্ঠান হতো। সেখানে মাইক ধরার মতো কেউ ছিল না। আমি একদিন একটু মাইক ধরলাম। দুটো–চারটে কথা বলার পর ম্যানেজার বলতে লাগল, ‘এমদাদ সাহেব, এখন থেকে আপনিই মাইক ধরবেন।’ সারাদিন মাইক ধরে আমার এমন অবস্থা! মাইক আর ছাড়ার কায়দা নেই!

এইভাবে ওখানকার লোকজনের সঙ্গে আমার বেশ সুসম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। তারপর একদিন বোরহান সাহেব (কপিলমুনি জাফর আউলিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার তৎকালিন অধ্যক্ষ) বললেন, ‘মাদরাসায় একটা পোস্ট খালি হয়েছে। তুমি চলে আস।’ এইটটি সিক্সে জয়েন করে বেতন চালু হলো এইটটি নাইনে গিয়ে।

নিশ্চিত চাকরি ছেড়ে তখনো বেতন চালু হয়নি—এমন একটা চাকরিতে এলেন কেন? এলাকার টানে?

জি এম এমদাদ: তখন আমার ফাদার নেই। মা আছে। ফ্যামিলি আছে। এদের জন্য। এসে ভালোই হয়েছে, লেখালেখিটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। ওই পেশায় যদি বহাল থাকতাম, হয়তো লিখতে পারতাম। কিন্তু আঞ্চলিকতা নিয়ে এত কিছু করতে পারতাম না। ওখানে থেকেও সাংবাদিকতা করতে পারতাম। কিন্তু সেই সাংবাদিকতা হতো শুধুমাত্র সাংবাদিকতা। আমার এলাকার কোনো উপকারে আসত না। এখানে যখন আসলাম, ভাবলাম সেই জীবনটাই যখন মাটি করে দিলাম এলাকায় বসে, তাহলে এলাকার জন্য কিছু করি!

[জি এম এমদাদের টেবিলে একটা চিরকুটে হাতে লেখা দুলাইনের ছড়া। আলাপের ধারাবাহিকতা ডিঙ্গিয়ে চিরকুটের ব্যাখ্যায় মনোযোগী হয়ে পড়েন তিনি। মজিদ হুজুরের বাড়ি আছে ওখানে। সেই বাড়ির দেয়ালে নানান ছড়া, গুরুত্বপূর্ণ বাণী ইত্যাদি লিখে রাখার পরিকল্পনা করেছেন জি এম এমদাদ। এই যেমন, ‘নিজের ছেলে মেয়েকে করতে হবে আদর, তবে অধিক আদরে আবার হয়ে যায় বাঁদর’ অথবা ‘নামাজ বেহেস্তের চাবি, লোক দেখানো নামাজ হলে দোযখে তুই যাবি’। আরও একটা শোনালেন স্মৃতি থেকে- ‘মাতব্বরের সংখ্যা যে ঘরে বাড়ে, সে ঘরের দফা সারে (সর্বনাশ হয়)!]

আপনি কখনো লিটল ম্যাগ করছেন, কখনো পল্লী বিদ্যুতের পরিচালক হচ্ছেন, স্টেজে উঠে গান গাইছেন, বেতারে গান লিখছেন। নানামাত্রিক কাজে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন।

জি এম এমদাদ: এর মধ্যে আবার স্কুল করলাম। আরেকটা আন্দোলন শুরু করতে যাচ্ছি, গ্রামে গ্রামে পাঠাগার। যেকোনো জায়গায় যদি কেউ পাঠাগার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়, আমার দশ হাজার টাকা অনুদান থাকবে সেখানে। জায়গা খুঁজছি। কিছু না করতে পারলেও যেন একটা লাইব্রেরি করে যেতে পারি! চাকরি শেষে যে বিশ-পঁচিশ লাখ টাকা পাব, ওই টাকা দিয়ে এসব করব।

মানুষ তো প্রতি বছর দান করে, জাকাত দেয়, নানান কিছু করে। আমি প্রতি বছর বইয়ের পারপাসে পঞ্চাশ হাজার-এক লাখ টাকা খরচ করলাম, তাতে অসুবিধে কী!

তাতে আমার একটা সৃষ্টি থেকে গেল! আমি চলে যাব। বইটা তো থেকে যাবে। রায় সাহেবকে (বিনোদ বিহারী) নিয়ে একটা বই করলাম। আমি একটা মুসলমান মানুষ কেন হিন্দুকে নিয়ে লিখলাম? এ নিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়েছে।

বিনোদের ইতিহাস যদি আমি না লিখতাম, আরও ২০ বছর পর্যন্ত কেউ লিখত না। এমনিভাবে চিন্তা করতেছি, জাফর আউলিয়া নিয়ে অনেক কিছু ছড়ায়ে আছে। সেগুলো একত্রিত করে, অন্তুত দু–চারডা (দু–চারটি) কথা তো আমি লিপিবদ্ধ করে রাখি। মেহের মুসল্লী নিয়ে এ রকম কোনো বই বেরোয়নি। যদি কেউ ভবিষ্যতে গবেষণা করতে চায়, বা লিখতে চায়… অন্তত ইতিহাস খোঁজার প্রথম সূত্রটা আমার কাছ থেকে পাক!

[রাত বাড়ছে। একটু একটু করে ভাংতে শুরু করেছে সন্ধ্যার হাট। শেষ বাজারে বাড়ি ফেরে যারা, তারা সঙ্গী খোঁজে। নানান গল্পের সাঁকো বেয়ে চলতে পারলে পথ এগোয় ভালো। জি এম এমদাদের চেম্বারে বাড়ি ফেরত মুখের উঁকিঝুঁকি বাড়ে। দু–একজন নিয়মিত রোগী পরবর্তী কোর্সের ওষুধ নিতে আসে। রেডিও অন করে খবর শোনেন এমদাদ। আরেক দফা চা-পান চক্র চলে। গল্পে ফেরা হয় আবার]

এখন যে অবস্থায় পড়ে আছি আমরা। আসলে এখানে তো আমরা পড়ে থাকব না। বিশ বছর পঞ্চাশ বছর পর আরও ডেভলপ হবে। তখন মানুষ ইতিহাসগুলো খোঁজবে (খুঁজবে)। আমি না খুঁজলে, তুমি না খুঁজলে, খোঁজবে একসময় কেউ। মন তৈরি হয়ে যাবে। আমি সেই পথটাকে একটু পরিস্কার করে দিতে চাই।

কোনো প্রকাশনা বের করে এর মধ্যে আর্থিক কোনো কিছু খুঁজতে চাই না। অনেকে, আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়রা এসে বলে—ফালতু এইডা লেখেন কেন! ওই সময়টা আপনি অন্য কাজে ব্যয় করলে তো টাকা আসে!

আপনি কী বলেন তখন?

জি এম এমদাদ: তাঁদের এ প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারব না। যারা টাকাকে ভালোবেসেছে একবার, অর্থকে ভালোবেসে ফেলেছে; তাঁদের দ্বারা অন্য কোনো কাজ হয়নি।

জি এম এমদাদের চেম্বার মানে ‘গাজী ফার্মেসী’ এক অর্থে তাঁর লেখালেখি ও গবেষণার জায়গা। ওখানে রোজ কিছু অপরিচিত মুখের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। নানা সমস্যাগ্রস্ত মুখ। তাঁদের সেবা দিতে পারলে এমদাদের ভালো লাগে। পনেরো, বিশ, পঞ্চাশ—যে যা দিয়ে যায়… টাকা চেয়ে নেন না কারও কাছে।

শেষ বিকেলে, সন্ধ্যার একটু আগ দিয়ে তিনি সাইকেলটা বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে, গাজী ফার্মেসীর তালা খোলেন।

আমরা যারা বছরে এক–দুবার নিয়মিত সংগ্রামে খানিকটা ইস্তফা দিয়ে শেকড়ের কাছে ফিরে যাই, অতীতের কাছে; অবধারিতভাবে তাদের জানাই থাকে- সন্ধ্যায় জি এম এমদাদকে ওখানেই পাওয়া যাবে!

আমাদের পেলে তিনি অনেকটা শিশুর মতো হয়ে পড়েন। নানা ডায়েরি বের করেন, কবিতা-গানের খাতা বের করেন; শোনাতে থাকেন একের পর এক। ইদানীং তিনি আঞ্চলিক গান-কবিতা লিখছেন।

এই যেমন ‘দাদি আমার সেকালি মানুষ, ভাসুরের নাম নেয় না/ স্বামীর নাম বুধুই বলি বুধবার আর হয় না’ অথবা ‘ভাত দেবার মুরোদ নেই, কিল মারার গোঁসাই/ কাল বিয়ানে উঠি দেহিস তোর মুহে মারবো ছাই’ অথবা ‘ভাসুর আনে চানাচুর কিনে, নোন্দাই আনে রসমালাই/ চ্যাংড়া দেওর ঘুরঘুর করে এহন আমি কনে যাই!’

আলাপে বারবার যাদের নাম এসেছে-

কাজী ইমদাদুল হক: ব্রিটিশ ভারতের একজন বাঙালি লেখক ও শিক্ষাবিদ। ‘আব্দুল্লাহ’ উপন্যাসের লেখক তিনি।

পি সি রায় (আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়) : প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দার্শনিক, কবি। তিনি বেঙ্গল কেমিকেলসের প্রতিষ্ঠাতা ও মারকিউরাস নাইট্রাইট-এর আবিষ্কারক। দেশি শিল্পায়নের উদ্যোক্তা।

বিনোদ বিহারী রায়: দানবীর হিসেবেই তাঁর খ্যাতি। সফল ব্যবসায়ী। তৎকালীন সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তৈরি করেছেন দক্ষিণ খুলনার অন্যতম বড় ব্যবসাকেন্দ্র বিনোদগঞ্জসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও মন্দির।

মেহের মুসল্লী: লোকে তাঁর নাম জানে বৃক্ষপ্রেমী হিসেবে। সাতক্ষীরার তালা থেকে খুলনার পাইকগাছা পর্যন্ত প্রায় ২৩ কিলোমিটারজুড়ে রাস্তার ধারে বৃক্ষ রোপন করেছেন নিজ উদ্যোগে। ছিলেন সমাজসেবক ও দানবীর।

জাফর আউলিয়া: ‘জাগ্রত পির’ জাফর আউলিয়া; দক্ষিণবঙ্গে যে কয়েকজন পির-আউলিয়া আছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সাধনার জন্য কপিলমুনিতে আসেন। তখন ওই অঞ্চল ছিল বনজঙ্গলে ভরা সুন্দরবনের একটি অংশ। খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনিতে তাঁর মাজার আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তিন বছর পর বিচ্ছেদের খবর দিলেন বিন্দু

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬: ২৮
বিন্দু। ছবি: সংগৃহীত
বিন্দু। ছবি: সংগৃহীত

২০১৪ সালে ব্যবসায়ী আসিফ সালাহউদ্দিন মালিককে বিয়ে করেন অভিনেত্রী আফসান আরা বিন্দু। বিয়ের পর শোবিজ থেকে পুরোপুরি নিজেকে গুটিয়ে নেন তিনি। অভিনয় ছেড়ে হয়ে ওঠেন সংসারী। বিয়ের চার বছর পর গুঞ্জন রটে, সংসার ভেঙেছে বিন্দুর। তবে বিচ্ছেদ নিয়ে তখন কোনো কথা বলেননি বিন্দু কিংবা তাঁর স্বামী। অবশেষে নিজের বিচ্ছেদের বিষয়টি নিশ্চিত করলেন অভিনেত্রী। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিন্দু জানান, ২০২২ সালে বিচ্ছেদ হয়েছে তাঁর।

২০২২ সালে বিচ্ছেদ হলেও ২০১৭ সাল থেকেই স্বামীর সঙ্গে সেপারেশনে ছিলেন বিন্দু। পাঁচ বছর পর তাঁরা চূড়ান্তভাবে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন। বিন্দু বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন, আমি এখনো বিবাহিত। কিন্তু না, আমার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। আমার সংসারের জার্নিটা অনেক ছোট ছিল।’

বিচ্ছেদের কারণ জানিয়ে বিন্দু বলেন, ‘আলাদা হওয়ার জন্য অনেক সময় বড় কারণ থাকে, বড় ঘটনা ঘটে। অনেক সময় আবার তেমন কোনো কারণও দরকার হয় না। আমার এই জার্নিতে আরও একজন মানুষ জড়িত। তারও ব্যক্তিগত জীবন আছে। বিচ্ছেদ নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিয়ে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাই না।’

২০০৬ সালে লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতা দিয়ে শোবিজে যাত্রা শুরু হয় বিন্দুর। অল্প দিনেই হয়ে ওঠেন মিডিয়ার নিয়মিত মুখ। অভিনয় থেকে বিরতি নেওয়ার আগে ২০১৪ সালের শুধু কোরবানির ঈদেই প্রচারিত হয় তাঁর অভিনীত ৫২টি নাটক। ছোট পর্দার পাশাপাশি বিন্দু অভিনয় করেছেন সিনেমাতেও।

ক্যারিয়ারের শুরুতে আরিফিন শুভর সঙ্গে জুটি বেঁধে অনেক নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। পর্দায় তাঁদের জুটি অনেক জনপ্রিয় ছিল। অনস্ক্রিন কেমেস্ট্রির প্রভাব পড়েছিল দুজনের বাস্তব জীবনেও। একসময় শুভর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান বিন্দু। সেই প্রেমের কথা স্বীকারও করেছেন অভিনেত্রী। কেন তাঁদের সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল? বিন্দুর সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘এর উত্তর আমার কাছে নেই। দুটি মানুষের জার্নি যে একসঙ্গে একই গন্তব্যে শেষ হবে, এমন তো কোনো কথা নেই।’

প্রায় এক দশকের বিরতি কাটিয়ে ২০২৩ সালে ‘উনিশ ২০’ ওয়েব ফিল্ম দিয়ে অভিনয়ে ফেরেন বিন্দু। মিজানুর রহমান আরিয়ানের পরিচালনায় এতে বিন্দুর বিপরীতে ছিলেন সেই আরিফিন শুভই। তবে এরপর আর কোনো কাজে দেখা যায়নি বিন্দুকে। তবে তিনি নিয়মিত অভিনয় করতে চান। বিন্দু বলেন, ‘শিল্পী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত। এখন আমাকে নিয়ে কাজ করার চিন্তা, আমার পেছনে ইনভেস্ট করার বিষয়গুলো ভাবতে হবে। এমন ধরনের কাজ করতে চাই, যেগুলো এখনো করিনি। আমি চাই, নির্মাতারা আমাকে নিয়ে এমনভাবে ভাবুক, যেমনটা আগে ভাবা হয়নি।’

অভিনয় ছেড়ে দিয়ে বছর পাঁচেক আগে ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়েছেন বিন্দু। গুলশানে রয়েছে তাঁর একটি বুটিক হাউস। ‘আফসান বিন্দু ডিজাইনার স্টুডিও’ নামের এ ব্র্যান্ডের পোশাক বিন্দু নিজেই ডিজাইন করেন। ২০২০ সালে যখন প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেন বিন্দু, তখন তাঁর কর্মীর সংখ্যা ছিল মাত্র একজন। তবে এখন তাঁর সঙ্গে ১৫ জন কাজ করেন বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘ইত্যাদি’র নতুন পর্ব এবার চুয়াডাঙ্গায়

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র দৃশ্য
ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র দৃশ্য

নব্বইয়ের দশক থেকে স্টুডিওর চারদেয়ালের বাইরে বেরিয়ে শিকড়ের সন্ধানে দেশের নানা প্রান্তে শুটিং করা হচ্ছে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির। তারই ধারাবাহিকতায় ইত্যাদির নতুন পর্ব ধারণ করা হয়েছে ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ প্রাচীন জনপদ চুয়াডাঙ্গায়।

এবারের ইত্যাদির মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে তৈরি শতাধিক বছরের প্রাচীন হাজারদুয়ারি নামে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী স্কুল নাটুদা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। এবারের পর্বে গান রয়েছে দুটি। একটি গান গেয়েছেন লোকসংগীতশিল্পী বিউটি ও পান্থ কানাই। গানটির কথা লিখেছেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানের শুরুতে চুয়াডাঙ্গার কৃষ্টিকথা ও ইতিহাসগাথা নিয়ে রয়েছে শাহ আলম সনির কথায় একটি পরিচিতিমূলক গানের সঙ্গে নৃত্য। গানটির সুর করেছেন হানিফ সংকেত, সংগীতায়োজন করেছেন মেহেদী। পরিবেশন করেছেন স্থানীয় নৃত্যশিল্পীরা। এ ছাড়া ইত্যাদির নতুন পর্বে থাকছে চুয়াডাঙ্গা নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন। রয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ এর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান-স্থাপনার ওপর একটি তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন।

ইত্যাদির নিয়মিত আয়োজন চিঠিপত্র পর্বে উঠে এসেছে চুয়াডাঙ্গার একজন ব্যতিক্রমী ছড়াকারের গল্প। আরও রয়েছে সামাজিক অসংগতি ও সমসাময়িক প্রসঙ্গনির্ভর নাটিকা। দানের নামে ফটোসেশন, সংসারের ভারে স্বপ্নভঙ্গ, মিষ্টি নিয়ে অনাসৃষ্টি, ইংরেজির দাপটে অসহায় বাংলা ভাষা, বোঝা না বোঝার বোঝা, স্টাইলিশ আইকনের বিপত্তি, লোম বাছতে কম্বল উজাড়সহ কয়েকটি নাট্যাংশে অভিনয় করেছেন সোলায়মান খোকা, সুভাশিষ ভৌমিক, আবদুল্লাহ রানা, আমিন আজাদ, কাজী আসাদ, মুকিত জাকারিয়া, আনোয়ার শাহী, শাহেদ আলী, জামিল হোসেন, আনন্দ খালেদ, তারিক স্বপন, আবু হেনা রনি প্রমুখ।

ইত্যাদির এই পর্ব দেখা যাবে ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশনে রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘মহাশূন্যে সাইকেল’ নাটকের চার দিনে সাত প্রদর্শনী

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকা
‘মহাশূন্যে সাইকেল’ নাটকের দৃশ্য
‘মহাশূন্যে সাইকেল’ নাটকের দৃশ্য

গত বছর ডিসেম্বরে মঞ্চে এসেছিল অনুস্বর নাট্যদলের নাটক ‘মহাশূন্যে সাইকেল’। বাংলাদেশ মহিলা সমিতিতে পাঁচ দিনে নাটকটির আটটি প্রদর্শনী হয়েছিল। বছর ঘুরে আবারও মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে মহাশূন্যে সাইকেল নাটকের প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে অনুস্বর। ২৪ থেকে ২৭ ডিসেম্বর টানা চার দিন দেখা যাবে নাটকের সাতটি প্রদর্শনী।

কথাসাহিত্যিক শাহাদুজ্জামানের লেখা একই শিরোনামের গল্প অবলম্বনে এর নাট্যরূপ দিয়েছেন লেখক নিজে। নির্দেশনায় সাইফ সুমন। ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দেখা যাবে মহাশূন্যে সাইকেল। ২৫ থেকে ২৭ ডিসেম্বর প্রতিদিন বিকেল ৫টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মঞ্চস্থ হবে আরও ছয়টি প্রদর্শনী।

নাট্যকার শাহাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা কিছু কথা অনেকের সঙ্গে বলি, কিছু কথা নির্দিষ্ট মানুষের সঙ্গে বলি আর কিছু কথা শুধু নিজের সঙ্গে বলি। যেকোনো ক্রান্তির সময় নিজের সঙ্গে এই বোঝাপড়ার মাত্রা এবং ব্যাপ্তি সম্ভবত বেড়ে যায়। মহাশূন্যে সাইকেলের মূল ভাবনাটা এ রকম। গত বছর এই গল্পের নাট্যরূপ দিই। একজন ব্যক্তি নিজেকে দুই ভাগ করে তার এই দুই সত্তার সঙ্গে মঞ্চে কথোপকথন করছে। দর্শক হিসেবে একজন ব্যক্তির এই একান্ত বিভক্ত সত্তার ভেতরে এই কথোপকথন দেখার ভেতরে একটা গোপন কৌতূহল হয়তো আছে। কিংবা নিজের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়ার আনন্দ আছে।’

নির্দেশক সাইফ সুমন বলেন, ‘ভোগবাদিতা আর ব্যক্তিস্বার্থের কারণে মানুষ এখন প্রতিনিয়তই পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। পরিবার, বন্ধু, সমাজ থেকে ক্রমেই বিচ্ছিন্ন হচ্ছি আমরা। কখনো কখনো মানুষের মধ্যে বাস্তবের চেয়ে কল্পনা বা অলৌকিক জগৎ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরিবারের সঙ্গে থেকেও একা অনুভব করে। সেই কথাই বলার চেষ্টা হয়েছে নাটকে।’

মহাশূন্যে সাইকেল নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোহাম্মদ বারী, এস আর সম্পদ, প্রশান্ত হালদার, নুরুজ্জামান সরকার, রীমা প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন লুকে চমকে দিলেন কিয়ারা আদভানি

বিনোদন ডেস্ক
কিয়ারা আদভানি। ছবি: সংগৃহীত
কিয়ারা আদভানি। ছবি: সংগৃহীত

‘কেজিএফ’ সিনেমার দুই পর্বের ব্যাপক সাফল্যের পর কন্নড় সুপারস্টার ইয়াশ যুক্ত হয়েছেন মালয়ালম নির্মাতা গিতু মোহনদাসের সিনেমায়। ‘টক্সিক: আ ফেয়ারিটেল ফর গ্রোনআপস’ নামের কন্নড় ভাষার এ সিনেমায় প্রথমবারের মতো ইয়াশের নায়িকা হয়েছেন কিয়ারা আদভানি। টক্সিকে কিয়ারার চরিত্রের নাম নাদিয়া। গতকাল প্রকাশ করা হয়েছে এ সিনেমায় কিয়ারার চরিত্রের লুক।

শোবিজে কিয়ারার এক যুগ হতে চলেছে। ২০১৪ সালে ‘ফুগলি’ দিয়ে যাত্রা শুরুর পর এ পর্যন্ত ২০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। প্রতিটিতেই দেখা দিয়েছেন বৈচিত্র্যময় চরিত্রে। তবে টক্সিকে কিয়ারার চরিত্রটি যে একেবারেই আলাদা হতে চলেছে, সে আভাস পাওয়া গেল সদ্য মুক্তি পাওয়া ফার্স্ট লুক পোস্টারে। এতে তাঁকে দেখা যাবে একজন সার্কাসশিল্পী হিসেবে।

ফার্স্ট লুক পোস্টারে আলো ঝলমলে সার্কাসের সেটে অফ-শোল্ডার ভেলভেট গাউন পরে দাঁড়িয়ে আছে কিয়ারা অভিনীত নাদিয়া চরিত্রটি। চোখে-মুখে বিষণ্নতা, ক্লান্তির ছাপ। সার্কাসের মঞ্চে জাঁকজমক আবহে নৃত্যরত যে শিল্পীকে দেখা যায় দর্শকের সামনে, তার মনের ভেতরে অনেক সময় চলে দুঃখের দোলাচল। ভেতরে জমাট কষ্ট নিয়েই হাসিমুখে দর্শকের সামনে পারফর্ম করে তারা। টক্সিকের পোস্টারে তেমনটাই ধরা পড়েছে। এমনই এক জটিল চরিত্র নিয়ে দর্শকের সামনে আসবেন কিয়ারা।

ভিএন প্রোডাকশন এবং মনস্টার মাইন্ড ক্রিয়েশনসের ব্যানারে নির্মিত বিগ-বাজেট সিনেমা টক্সিক মুক্তি পাবে ২০২৬ সালের ১৯ মার্চ। দক্ষিণি মেগাস্টার যশ ও কিয়ারার এই নতুন রসায়ন বড় পর্দায় দেখার জন্য এখন থেকেই অপেক্ষায় অনুরাগীরা। এতে আরও অভিনয় করেছেন নয়নতারা, তারা সুতারিয়া, হুমা কুরেশি, অক্ষয় ওবেরয় প্রমুখ।

ইংরেজি ও কন্নড়—দুই ভাষাতেই টক্সিক সিনেমার শুটিং করা হয়েছে। পাশাপাশি হিন্দি, তেলুগু, তামিল, মালয়ালমসহ বিভিন্ন ভাষায় ডাব করা হবে। এতে কিয়ারার পারফরম্যান্স নিয়ে নির্মাতা গিতু মোহনদাস বলেন, ‘কিছু পারফরম্যান্স শুধু পর্দায় নয়, প্রভাব ফেলে শিল্পীর জীবনেও। টক্সিক সিনেমায় কিয়ারা যা করেছে, তার কোনো তুলনা হয় না। সিনেমাটি নিয়ে আমাদের প্রথম আলাপের মুহূর্ত থেকেই তিনি চরিত্রটির প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করেছেন। তিনি শুধু নাদিয়া চরিত্রে অভিনয় করেননি, নিজেও চরিত্রটির মতো করেই যাপন করেছেন।’

প্রসঙ্গত, বলিউডের তারকা দম্পতি কিয়ারা আদভানি ও সিদ্ধার্থ মালহোত্রার সংসারে নতুন সদস্য এসেছে গত ১৫ জুলাই। এখন সন্তানকে নিয়েই পুরো সময়টা কাটছে অভিনেত্রীর। আর একটু একটু করে নিচ্ছেন আবার শোবিজে ফেরার প্রস্তুতি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত