জাহীদ রেজা নূর
কিশোর কুমারকে নিয়ে লিখতে গেলে প্রথমেই চোখে ভাসে ‘লুকোচুরি’ সিনেমার সেই আমুদে নায়কটিকে—যিনি সিনেমার পরিচালক–প্রযোজকদের বোকা বানিয়ে গেয়ে চলেছেন, ‘শিং নেই তবু নাম তার সিংহ’। আবার একটু পর জমজ ভাই হয়ে গাইছেন ‘এই তো হেথায় কুঞ্জছায়ায় স্বপ্নমধুর মোহে’। একেবারে দুই ধরনের দুই মানুষ। একজন দুরন্ত, গতিশীল, আরেকজন শান্ত–স্নিগ্ধ। বাস্তবজীবনের কিশোর কুমারের সঙ্গে কোনজনের মিল, সে কথা বোধ করি কাউকে বলে দিতে হবে না।
কিশোর কুমার মানেই পূর্ণ–দেহ প্রাণ। দেহজুড়েই তাঁর প্রাণের অস্তিত্ব। তাই তারুণ্যের সেই অদম্য সময়ে ‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর বেদনার বালুচরে’ বা এ ধরনের কোনো গান শুনলে কিশোর কুমার যেন তাঁর পূর্ণ দেহ–মন নিয়ে ঢুকে পড়তেন শরীরে। এক ধরনের জ্বলন্ত আগুন আর বরফখণ্ডের মিলিত অবগাহনে অস্তিত্ব পেত পারিজাতের সন্ধান। সে দিনগুলো ভুলবে কে?
সে রকমই কিছু কথা বলব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ রুশ এক পত্রিকায় দেখলাম বেশ মজা করে একটি শিরোনাম করা হয়েছে কিশোর কুমারকে নিয়ে। ‘বিয়ে করাটাই ছিল যার অভ্যাস: কিশোর কুমারের চার বউ।’ শিরোনাম দেখে মাথার চাঁদি একটু একটু করে গরম হচ্ছিল। বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘রে পামর! কিশোর কুমারের চার বউটাই দেখলি, কিশোর কুমারকে দেখলি না?’ রাগ করেই পড়তে শুরু করার পর মনে হলো, আরে! লেখার সময় তো বেশ খেটেছে লোকটা! ঠিক আছে, এ রকম একটা বাজে শিরোনাম দেওয়ার পরও তাকে ক্ষমা করে দেওয়া গেল। সেই সঙ্গে মনে হলো, আসলেই তো! কিশোর কুমারের বউয়েরা প্রত্যেকেই তো এক একজন তারকা। তাঁরা কেন কিশোরকে ভালো বেসেছিলেন?
একটু অতীত ঘুরে আসতে মন চাইছে।
দুই.
এ কথা কে না জানে, গানই ছিল কিশোর কুমারের প্রাণ। কুঞ্জলাল সায়গল ছিলেন তাঁর আত্মার আত্মীয়। তাঁর গানেই মজেছিলেন কিশোর। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না গানের, কিন্তু গানের জগতে ‘অশিক্ষিত’ কিশোর জয় করেছিলেন গোটা ভারতবর্ষ। কণ্ঠ যে এতটা প্রাণময় হতে পারে, তা কিশোর কুমারের গান না শুনলে বোঝা কঠিন। কী আনন্দ, কী বেদনা—মনে হয় তার প্রকাশ ঘটছে অনায়াসে।
চার স্ত্রী তাঁর, কেমন ছিল তাঁদের সঙ্গে কিশোরের সম্পর্ক, সেটা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। আমরা একটু একটু করে সেগুলো শুনব বটে, কিন্তু মনে রাখব, বড় মানুষেরা তাদের সৃজনশীলতার গুণেই বড় মানুষ হন। কিশোর কুমার মানেই গানের সুধা। সেভাবেই তাঁকে দেখতে হবে।
কিশোর কুমারের বড় ভাই অশোক কুমার যখন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন, তখন কিশোর কুমার ছিলেন নিতান্তই কিশোর। ১৯৪০ সালে তখনকার বোম্বেতে আসেন কিশোর। অর্থাৎ, ১১ বছর বয়সে। অশোক কুমার তাঁকে গানের দলে জায়গা করে দেন, কোরাস গানে কণ্ঠ দিতেন কিশোর। ‘শিকারি’ নামের চলচ্চিত্রে অশোক কুমার ছিলেন নায়ক। সে ছবিরই একটি ছোট্ট ভূমিকায় ঠাঁই হয়েছিল কিশোরের। সেটা ১৯৪৬ সাল। ১৯৪৮ সালে চলচ্চিত্রের গানে ডেব্যু হলো কিশোরের। ১৯৫১ সালে ‘আন্দোলন’ ছবির নায়ক কিশোর কুমার। পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে তিনি ডাকসাঁইটে অভিনেতায় পরিণত হয়েছেন।
১৯৫০ সালে কিশোর কুমার প্রথমবার বিয়ে করেন। রুমা গুহ ঠাকুরতা ছিলেন তাঁর স্ত্রী। ১৯৫২ সালে এই সংসারে জন্ম হয় অমিত কুমারের। দুই পরিবারের সম্মতিক্রমেই হয়েছিল বিয়ে। ১৯৫৮ সালের দিকে কিশোর আর মধুবালার প্রেমের গুঞ্জন ভেসে বেড়াত বাতাসে। তাতে চিড় ধরল কিশোর–রুমার সংসারে। সে বছরই বিবাহবিচ্ছেদ। অনেকে বলেন, কিশোর চেয়েছিলেন, রুমা ঘরে থাকুক, সংসার দেখুক। রুমা চেয়েছিলেন তাঁর স্বাভাবিক জীবন অব্যাহত রাখতে। সেটাই নাকি বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ। কিন্তু কিশোর–মধুবালার সম্পর্ক তখন গড়ে উঠছে, এটাও তো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সে সময় রুমার পক্ষে কিশোরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা কঠিনই ছিল। রুমাও খুব বেশি দেরি করেননি। তিনি অপূর্ব গুহ ঠাকুরতাকে বিয়ে করেন এবং সিনেমায় অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকেন। আমরা সবাই জানি, কিশোর–রুমার ছেলে অমিতও বাবার মতো গায়ক হয়েছিলেন, যদিও বাবার মতো খ্যাতি পাননি। আর রুমা গুহ ঠাকুরতার কলকাতা ইয়ুথ কয়্যারের সুনামের কথা তো সবাই জানে।
রুমা গুহ ঠাকুরতা সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে কিশোর বলেছিলেন, ‘রুমা খুবই প্রতিভাবান। কিন্তু আমরা দুজন একসঙ্গে থাকতে পারিনি, কারণ আমরা দুজন জীবনকে দুভাবে দেখতাম। সে কয়্যার আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবত। আমি ভাবতাম, সে আমাকে বাড়ি গড়ে দেবে। তাই আমাদের মধ্যে মিল হবে কী করে? আমি খুবই সাদাসিধে গ্রাম্য টাইপের মানুষ। মেয়েদের ক্যারিয়ার ব্যাপারটা বোঝা আমার কম্ম নয়। কী করে ঘর তৈরি করতে হয়, সেটাই স্ত্রীদের প্রধান কাজ। ক্যারিয়ার আর ঘর গড়া একসঙ্গে হয় না। তাই আমাদের আলাদা হয়ে যেতে হলো।’
তিন.
পঞ্চাশ দশকের শেষার্ধে মধুবালার সঙ্গে অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করেন কিশোর কুমার। ছবিপাড়ায়ই তাঁদের মন দেওয়া–নেওয়া চলছিল। এ সময় হঠাৎ করেই মঞ্চে আসেন দিলীপ কুমার। কিন্তু দিলীপ কুমারের সঙ্গে রোমান্স শেষ হয়ে গেলে খুবই অসহায় হয়ে পড়েন মধুবালা। সে সময় কিশোর কুমারই হয়ে ওঠেন মধুবালার আশ্রয়। পত্র–পত্রিকায় লেখা হয়, কিশোরের সঙ্গে মধুবালা নিজেকে জড়িয়েছিলেন স্রেফ দিলীপ কুমারকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য, একধরনের ঈর্ষা থেকে। ১৯৬০ সালে তাঁরা দুজন কোর্টে বিয়ে করেন। এটা দুই পরিবারের কেউ পছন্দ করেনি। ফলে এর পর মুসলমান মতে তাঁরা একবার বিয়ে করেন, হিন্দুমতে আরেকবার। প্রথমটি করতে হয় মধুবালার পরিবারের জন্য, দ্বিতীয়টি কিশোরের পরিবারের জন্য। মুসলমান মতে বিয়ে করার সময় নামও বদলাতে হয় কিশোরের। সেখানে তাঁর নাম রাখা হয় আবদুল করিম!
এত কিছুর পরও কিশোরের পরিবার মধুবালাকে মেনে নেয়নি। জন্ম থেকেই অসুস্থ ছিলেন মধুবালা। বিয়ের কিছুদিন পর তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। ষাটের দশকের মাঝামাঝি তা খুব খারাপ আকার ধারণ করে। হৃৎপিণ্ডে ফুটো ছিল তাঁর। লন্ডনে গিয়েছিলেন অপারেশন করতে। কিন্তু বড়দের দেহে এই অপারেশন তখনো ইউরোপে কেউ করেনি। তাই ফিরে আসতে হয় তাঁকে।
এ সময় স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। সহ্য করতে না পেরে মধুবালা চলে যান মায়ের কাছে। সেখানেই অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
কিশোর অবশ্য মধুবালা সম্পর্কে প্রিতীশ নন্দীকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বিয়ের আগে থেকেই জানতাম, মধুবালা খুবই অসুস্থ। আমি কথা দিয়েছিলাম। তাই আমি আমার কথা রেখেছি এবং তাঁকে বিয়ে করেছি। আমি তখনও জানতাম, সে হৃৎপিণ্ডের অসুখেই মারা যাবে। দীর্ঘ ৯টি বছর আমি ওর পাশে থেকে সেবা করেছি। আমি নিজের চোখে ওকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে দেখেছি। নিজে এটার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউ বুঝতে পারবে না, কতটা কষ্টকর এই সময়টা। কষ্টে চিৎকার করত সে, কাঁদত। কীভাবে এ রকম একজন সক্রিয় মানুষ ৯ বছর বিছানায় পড়ে থাকতে পারে? আমি ওর সঙ্গে সবসময় রসিকতা করতে চেষ্টা করতাম। ডাক্তাররাই আমাকে রসিকতা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওর শেষ নিশ্বাস নেওয়া পর্যন্ত আমি সে চেষ্টা করে গেছি। আমি ওর সঙ্গে হেসেছি, কেঁদেছি।’
১৯৬৯ সালে মধুবালা মারা যান।
চার.
কিশোরের তৃতীয় বিয়ে খুব বেশিদিন টেকেনি। এ রকম একটা বিয়ে হবে, সেটাও কেউ ভাবেনি। যোগিতাবালির সঙ্গে কিশোরের বিয়েটা ছিল আকস্মিক। ১৯৭৬ সালে এই বিয়ে হয়। যোগিতাবালি ছিলেন কিশোর কুমারের চেয়ে ২৩ বছরের ছোট। অভিনেতা শা্ম্মী কাপুরের স্ত্রী গীতা বালির ভাগ্নি ছিলেন যোগিতা বালি। কীভাবে তাঁদের পরিচয় হয়েছিল, কীভাবে তা রোমান্সের রূপ নিল, সে সম্পর্কে খুব কম কথাই শোনো যায়। তবে বয়সের এই ব্যবধানই তাঁদের একসঙ্গে বেশিদিন থাকতে দেয়নি। বিয়ের দু বছরের মাথায় বিয়ে ভেঙে যায়। ১৯৭৮ সালেই সাঙ্গ হয় রোমান্সের খেলা। তাঁরা আলাদা হয়ে যান।
এখানে বলা দরকার, বহু পরে এক সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, যোগিতা বালি তাদের বিয়েটাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেননি। খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর প্রেমে পড়েন। কিশোরের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটার পরপরই যোগিতা বিয়ে করেন মিঠুন চক্রবর্তীকে।
এর পর কিশোর কুমার মিঠুন অভিনীত কোনো ছবিতে কণ্ঠ দেননি। ফলে মিঠুনের সুপারহিট ছবিগুলোয় বাপ্পি লাহিড়ি কণ্ঠ দেওয়ার সুযোগ পান এবং সুরকার ও গায়ক হিসেবে বলিউডে উচ্চ আসন লাভ করেন।
পাঁচ.
চতুর্থ বিয়েই ছিল কিশোরের শেষ বিয়ে। কন্যা লীনা চান্ডাভারকার। তিনিও ছিলেন অভিনয়শিল্পী। তৃতীয় বিয়ের মতোই চতুর্থ বিয়েতে কনে ছিলেন বরের চেয়ে অনেক ছোট। দুজনের বয়সের পার্থক্য ছিল একুশ বছর। লীনার আগে আরেকটা বিয়ে ছিল সিদ্ধার্থ ব্যান্ডোটকার নামের একজনের সঙ্গে। তাঁদের পরিবার ছিল রাজনীতির মাঠে শক্তিশালী। সিদ্ধার্থ ছিলেন কিশোর কুমারের ভক্ত। একবার লোনাভালায় যাওয়ার পর কিশোর কুমারকে দেখেছিলেন তাঁরা। কিশোরের সঙ্গে ছিলেন তাঁর তৃতীয় স্ত্রী যোগিতা বালি। সিদ্ধার্থ লীনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘যদি কিশোর কুমার তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়, তুমি কি তাঁকে বিয়ে করবে?’
লীনা বলেছিলেন, ‘কখনোই না।’
বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধার্থ এক দুর্ঘটনায় মারা যান। ফলে লীনা তখন একেবারেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। লীনার কাছে তাঁর ট্র্যাজেডির কথা শুনে খুবই কষ্ট পান কিশোর। এবং তিনি হৃদয় থেকেই লীনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। লীনার সায় ছিল তাতে, কিন্তু লীনার অভিভাবকেরা একেবারেই কিশোরকে জামাই হিসেবে দেখতে চাননি। কী করে তাঁরা মেয়েকে এমন একজন পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেবেন, যিনি এর আগে তিনবার বিয়ে করেছেন এবং বয়সের তারতম্যও ২১ বছর!
এক সাক্ষাৎকারে লীনা বলেছিলেন, ‘একদিন কিশোর কুমারের গাড়িচালক আবদুল আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে কিশোর কুমারের ফোন নম্বর দিয়ে বলল, তাঁকে ফোন করতে। আমি ফোন করতেই কিশোর বললেন, “লীনা, তোমার কণ্ঠ শোনার জন্যই বসে আছি!”’
প্রতিদিন সকালেই তিনি আমাকে ফোন করতেন এবং কোনো ভনিতা না করেই কথা বলতে শুরু করতেন। তাঁর কথা শুনে আমার বিষণ্নতা কেটে যেতে লাগল, হাসতে শুরু করলাম আমি। সেটা আমার বাবার চোখে পড়ল। আমি শুরুতেই তাঁর প্রেমে পড়িনি, কিন্তু বুঝতে পারতাম, তিনি পাশে থাকলে আমি নিজেকে নিরাপদ বোধ করি। তিনি মদ খেতেন না, কিন্তু তাঁর স্ত্রী কাজ করুক, তিনি সেটা চাইতেন না। আমি তাঁর মধ্যকার শিশুটিকে পছন্দ করতাম, যে বৃষ্টি ভালোবাসত, যে প্রকৃতি ভালোবাসত। তাঁর পৃথিবীটা ছিল আসলে স্বপ্নের পৃথিবী। একবার তিনি বাজারে গিয়ে দেখলেন মসুরের ডাল। ঘরে ফিরেই বললেন, “চলো, এক্ষুণি মৌসরী চলে যাই!” তাঁর যাযাবর জীবন পছন্দ করতাম। আমি সেই জীবনের অংশ হয়ে গেলাম।’
কিশোর হার মেনে নেননি। নিজে এসেছেন লীনার অভিভাবকদের কাছে। অনুমতি নেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন। এমনকি গানও শুনিয়েছেন। একসময় কী করে ‘না’–টা ‘হ্যাঁ’ হয়ে গেল, সেটা তাঁরা টেরও পাননি। ১৯৮০ সালে বিয়ে হলো এই জুটির।
এবং অবাক কাণ্ড, তাঁদের বিয়েটা ছিল খুবই শান্তিময়। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁরা খুবই সুখী পারিবারিক জীবনযাপন করেছেন।
এ সংসারে সুমিত নামে একটি ছেলে হয় তাঁদের।
ছয়.
শেষ করি একেবারে অন্য এক প্রসঙ্গ দিয়ে।
পুলক বন্দোপাধ্যায় অন্য এক শিল্পীকে দিয়ে গাওয়াবেন বলে লিখেছিলেন ‘তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার মরণ যাত্রা যেদিন যাবে’ গানটি। কিন্তু মরণ যাত্রা শব্দগুলোর জন্য সেই খ্যাতনামা শিল্পী এই গান গাইতে রাজি হলেন না। মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় গানটির সুর করেছিলেন। পড়েই ছিল গানটা। এ সময় মনোজ বাবু মৃণালের কাছে গানটি শুনে তাঁর নির্মিয়মাণ ছবিতে গানটি নিতে চাইলেন। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘গানটি দিতে পারি, কিন্তু গাওয়াতে হবে কিশোর কুমারকে দিয়ে।’
রাজি হলেন তিনি। খুবই দরদ দিয়ে গাইলেন কিশোর কুমার। গানটি গাওয়ার পর কিশোর কুমার বললেন, ‘পোলাওবাবু (পুলককে এই নামেই ডাকতেন কিশোর), একেবারে আমার মরণ যাত্রা করে দিলেন?’
অন্য আরেকটি ছবির ডেট নিয়ে পুলক ফিরেছেন কলকাতায়। সেখান থেকে ফোন করেছেন কিশোরকে। একজন ফোন ধরে বললেন, ‘ও তো চলা গিয়া।’
কিশোর কুমার এ ধরনের রসিকতা অনেক করেছেন। তাই পুলক তাড়া দিলেন, ‘বলুন, আমি কলকাতা থেকে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছি।’
তখন এক ভদ্রলোক পরিষ্কার বাংলা ভাষায় বললেন, ‘কিশোরদা কিছুক্ষণ আগেই দেহ রেখেছেন।’
কিশোর কুমারকে নিয়ে লিখতে গেলে প্রথমেই চোখে ভাসে ‘লুকোচুরি’ সিনেমার সেই আমুদে নায়কটিকে—যিনি সিনেমার পরিচালক–প্রযোজকদের বোকা বানিয়ে গেয়ে চলেছেন, ‘শিং নেই তবু নাম তার সিংহ’। আবার একটু পর জমজ ভাই হয়ে গাইছেন ‘এই তো হেথায় কুঞ্জছায়ায় স্বপ্নমধুর মোহে’। একেবারে দুই ধরনের দুই মানুষ। একজন দুরন্ত, গতিশীল, আরেকজন শান্ত–স্নিগ্ধ। বাস্তবজীবনের কিশোর কুমারের সঙ্গে কোনজনের মিল, সে কথা বোধ করি কাউকে বলে দিতে হবে না।
কিশোর কুমার মানেই পূর্ণ–দেহ প্রাণ। দেহজুড়েই তাঁর প্রাণের অস্তিত্ব। তাই তারুণ্যের সেই অদম্য সময়ে ‘কী আশায় বাঁধি খেলাঘর বেদনার বালুচরে’ বা এ ধরনের কোনো গান শুনলে কিশোর কুমার যেন তাঁর পূর্ণ দেহ–মন নিয়ে ঢুকে পড়তেন শরীরে। এক ধরনের জ্বলন্ত আগুন আর বরফখণ্ডের মিলিত অবগাহনে অস্তিত্ব পেত পারিজাতের সন্ধান। সে দিনগুলো ভুলবে কে?
সে রকমই কিছু কথা বলব বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ রুশ এক পত্রিকায় দেখলাম বেশ মজা করে একটি শিরোনাম করা হয়েছে কিশোর কুমারকে নিয়ে। ‘বিয়ে করাটাই ছিল যার অভ্যাস: কিশোর কুমারের চার বউ।’ শিরোনাম দেখে মাথার চাঁদি একটু একটু করে গরম হচ্ছিল। বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘রে পামর! কিশোর কুমারের চার বউটাই দেখলি, কিশোর কুমারকে দেখলি না?’ রাগ করেই পড়তে শুরু করার পর মনে হলো, আরে! লেখার সময় তো বেশ খেটেছে লোকটা! ঠিক আছে, এ রকম একটা বাজে শিরোনাম দেওয়ার পরও তাকে ক্ষমা করে দেওয়া গেল। সেই সঙ্গে মনে হলো, আসলেই তো! কিশোর কুমারের বউয়েরা প্রত্যেকেই তো এক একজন তারকা। তাঁরা কেন কিশোরকে ভালো বেসেছিলেন?
একটু অতীত ঘুরে আসতে মন চাইছে।
দুই.
এ কথা কে না জানে, গানই ছিল কিশোর কুমারের প্রাণ। কুঞ্জলাল সায়গল ছিলেন তাঁর আত্মার আত্মীয়। তাঁর গানেই মজেছিলেন কিশোর। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না গানের, কিন্তু গানের জগতে ‘অশিক্ষিত’ কিশোর জয় করেছিলেন গোটা ভারতবর্ষ। কণ্ঠ যে এতটা প্রাণময় হতে পারে, তা কিশোর কুমারের গান না শুনলে বোঝা কঠিন। কী আনন্দ, কী বেদনা—মনে হয় তার প্রকাশ ঘটছে অনায়াসে।
চার স্ত্রী তাঁর, কেমন ছিল তাঁদের সঙ্গে কিশোরের সম্পর্ক, সেটা নিয়ে নানা আলোচনা আছে। আমরা একটু একটু করে সেগুলো শুনব বটে, কিন্তু মনে রাখব, বড় মানুষেরা তাদের সৃজনশীলতার গুণেই বড় মানুষ হন। কিশোর কুমার মানেই গানের সুধা। সেভাবেই তাঁকে দেখতে হবে।
কিশোর কুমারের বড় ভাই অশোক কুমার যখন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছিলেন, তখন কিশোর কুমার ছিলেন নিতান্তই কিশোর। ১৯৪০ সালে তখনকার বোম্বেতে আসেন কিশোর। অর্থাৎ, ১১ বছর বয়সে। অশোক কুমার তাঁকে গানের দলে জায়গা করে দেন, কোরাস গানে কণ্ঠ দিতেন কিশোর। ‘শিকারি’ নামের চলচ্চিত্রে অশোক কুমার ছিলেন নায়ক। সে ছবিরই একটি ছোট্ট ভূমিকায় ঠাঁই হয়েছিল কিশোরের। সেটা ১৯৪৬ সাল। ১৯৪৮ সালে চলচ্চিত্রের গানে ডেব্যু হলো কিশোরের। ১৯৫১ সালে ‘আন্দোলন’ ছবির নায়ক কিশোর কুমার। পঞ্চাশের দশকের শেষদিকে তিনি ডাকসাঁইটে অভিনেতায় পরিণত হয়েছেন।
১৯৫০ সালে কিশোর কুমার প্রথমবার বিয়ে করেন। রুমা গুহ ঠাকুরতা ছিলেন তাঁর স্ত্রী। ১৯৫২ সালে এই সংসারে জন্ম হয় অমিত কুমারের। দুই পরিবারের সম্মতিক্রমেই হয়েছিল বিয়ে। ১৯৫৮ সালের দিকে কিশোর আর মধুবালার প্রেমের গুঞ্জন ভেসে বেড়াত বাতাসে। তাতে চিড় ধরল কিশোর–রুমার সংসারে। সে বছরই বিবাহবিচ্ছেদ। অনেকে বলেন, কিশোর চেয়েছিলেন, রুমা ঘরে থাকুক, সংসার দেখুক। রুমা চেয়েছিলেন তাঁর স্বাভাবিক জীবন অব্যাহত রাখতে। সেটাই নাকি বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারণ। কিন্তু কিশোর–মধুবালার সম্পর্ক তখন গড়ে উঠছে, এটাও তো এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। সে সময় রুমার পক্ষে কিশোরের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা কঠিনই ছিল। রুমাও খুব বেশি দেরি করেননি। তিনি অপূর্ব গুহ ঠাকুরতাকে বিয়ে করেন এবং সিনেমায় অভিনয় চালিয়ে যেতে থাকেন। আমরা সবাই জানি, কিশোর–রুমার ছেলে অমিতও বাবার মতো গায়ক হয়েছিলেন, যদিও বাবার মতো খ্যাতি পাননি। আর রুমা গুহ ঠাকুরতার কলকাতা ইয়ুথ কয়্যারের সুনামের কথা তো সবাই জানে।
রুমা গুহ ঠাকুরতা সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে কিশোর বলেছিলেন, ‘রুমা খুবই প্রতিভাবান। কিন্তু আমরা দুজন একসঙ্গে থাকতে পারিনি, কারণ আমরা দুজন জীবনকে দুভাবে দেখতাম। সে কয়্যার আর ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবত। আমি ভাবতাম, সে আমাকে বাড়ি গড়ে দেবে। তাই আমাদের মধ্যে মিল হবে কী করে? আমি খুবই সাদাসিধে গ্রাম্য টাইপের মানুষ। মেয়েদের ক্যারিয়ার ব্যাপারটা বোঝা আমার কম্ম নয়। কী করে ঘর তৈরি করতে হয়, সেটাই স্ত্রীদের প্রধান কাজ। ক্যারিয়ার আর ঘর গড়া একসঙ্গে হয় না। তাই আমাদের আলাদা হয়ে যেতে হলো।’
তিন.
পঞ্চাশ দশকের শেষার্ধে মধুবালার সঙ্গে অনেকগুলো ছবিতে অভিনয় করেন কিশোর কুমার। ছবিপাড়ায়ই তাঁদের মন দেওয়া–নেওয়া চলছিল। এ সময় হঠাৎ করেই মঞ্চে আসেন দিলীপ কুমার। কিন্তু দিলীপ কুমারের সঙ্গে রোমান্স শেষ হয়ে গেলে খুবই অসহায় হয়ে পড়েন মধুবালা। সে সময় কিশোর কুমারই হয়ে ওঠেন মধুবালার আশ্রয়। পত্র–পত্রিকায় লেখা হয়, কিশোরের সঙ্গে মধুবালা নিজেকে জড়িয়েছিলেন স্রেফ দিলীপ কুমারকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য, একধরনের ঈর্ষা থেকে। ১৯৬০ সালে তাঁরা দুজন কোর্টে বিয়ে করেন। এটা দুই পরিবারের কেউ পছন্দ করেনি। ফলে এর পর মুসলমান মতে তাঁরা একবার বিয়ে করেন, হিন্দুমতে আরেকবার। প্রথমটি করতে হয় মধুবালার পরিবারের জন্য, দ্বিতীয়টি কিশোরের পরিবারের জন্য। মুসলমান মতে বিয়ে করার সময় নামও বদলাতে হয় কিশোরের। সেখানে তাঁর নাম রাখা হয় আবদুল করিম!
এত কিছুর পরও কিশোরের পরিবার মধুবালাকে মেনে নেয়নি। জন্ম থেকেই অসুস্থ ছিলেন মধুবালা। বিয়ের কিছুদিন পর তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। ষাটের দশকের মাঝামাঝি তা খুব খারাপ আকার ধারণ করে। হৃৎপিণ্ডে ফুটো ছিল তাঁর। লন্ডনে গিয়েছিলেন অপারেশন করতে। কিন্তু বড়দের দেহে এই অপারেশন তখনো ইউরোপে কেউ করেনি। তাই ফিরে আসতে হয় তাঁকে।
এ সময় স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগেই থাকত। সহ্য করতে না পেরে মধুবালা চলে যান মায়ের কাছে। সেখানেই অসুস্থ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
কিশোর অবশ্য মধুবালা সম্পর্কে প্রিতীশ নন্দীকে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বিয়ের আগে থেকেই জানতাম, মধুবালা খুবই অসুস্থ। আমি কথা দিয়েছিলাম। তাই আমি আমার কথা রেখেছি এবং তাঁকে বিয়ে করেছি। আমি তখনও জানতাম, সে হৃৎপিণ্ডের অসুখেই মারা যাবে। দীর্ঘ ৯টি বছর আমি ওর পাশে থেকে সেবা করেছি। আমি নিজের চোখে ওকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে দেখেছি। নিজে এটার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউ বুঝতে পারবে না, কতটা কষ্টকর এই সময়টা। কষ্টে চিৎকার করত সে, কাঁদত। কীভাবে এ রকম একজন সক্রিয় মানুষ ৯ বছর বিছানায় পড়ে থাকতে পারে? আমি ওর সঙ্গে সবসময় রসিকতা করতে চেষ্টা করতাম। ডাক্তাররাই আমাকে রসিকতা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ওর শেষ নিশ্বাস নেওয়া পর্যন্ত আমি সে চেষ্টা করে গেছি। আমি ওর সঙ্গে হেসেছি, কেঁদেছি।’
১৯৬৯ সালে মধুবালা মারা যান।
চার.
কিশোরের তৃতীয় বিয়ে খুব বেশিদিন টেকেনি। এ রকম একটা বিয়ে হবে, সেটাও কেউ ভাবেনি। যোগিতাবালির সঙ্গে কিশোরের বিয়েটা ছিল আকস্মিক। ১৯৭৬ সালে এই বিয়ে হয়। যোগিতাবালি ছিলেন কিশোর কুমারের চেয়ে ২৩ বছরের ছোট। অভিনেতা শা্ম্মী কাপুরের স্ত্রী গীতা বালির ভাগ্নি ছিলেন যোগিতা বালি। কীভাবে তাঁদের পরিচয় হয়েছিল, কীভাবে তা রোমান্সের রূপ নিল, সে সম্পর্কে খুব কম কথাই শোনো যায়। তবে বয়সের এই ব্যবধানই তাঁদের একসঙ্গে বেশিদিন থাকতে দেয়নি। বিয়ের দু বছরের মাথায় বিয়ে ভেঙে যায়। ১৯৭৮ সালেই সাঙ্গ হয় রোমান্সের খেলা। তাঁরা আলাদা হয়ে যান।
এখানে বলা দরকার, বহু পরে এক সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, যোগিতা বালি তাদের বিয়েটাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেননি। খুব কম সময়ের মধ্যেই তিনি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর প্রেমে পড়েন। কিশোরের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটার পরপরই যোগিতা বিয়ে করেন মিঠুন চক্রবর্তীকে।
এর পর কিশোর কুমার মিঠুন অভিনীত কোনো ছবিতে কণ্ঠ দেননি। ফলে মিঠুনের সুপারহিট ছবিগুলোয় বাপ্পি লাহিড়ি কণ্ঠ দেওয়ার সুযোগ পান এবং সুরকার ও গায়ক হিসেবে বলিউডে উচ্চ আসন লাভ করেন।
পাঁচ.
চতুর্থ বিয়েই ছিল কিশোরের শেষ বিয়ে। কন্যা লীনা চান্ডাভারকার। তিনিও ছিলেন অভিনয়শিল্পী। তৃতীয় বিয়ের মতোই চতুর্থ বিয়েতে কনে ছিলেন বরের চেয়ে অনেক ছোট। দুজনের বয়সের পার্থক্য ছিল একুশ বছর। লীনার আগে আরেকটা বিয়ে ছিল সিদ্ধার্থ ব্যান্ডোটকার নামের একজনের সঙ্গে। তাঁদের পরিবার ছিল রাজনীতির মাঠে শক্তিশালী। সিদ্ধার্থ ছিলেন কিশোর কুমারের ভক্ত। একবার লোনাভালায় যাওয়ার পর কিশোর কুমারকে দেখেছিলেন তাঁরা। কিশোরের সঙ্গে ছিলেন তাঁর তৃতীয় স্ত্রী যোগিতা বালি। সিদ্ধার্থ লীনাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘যদি কিশোর কুমার তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়, তুমি কি তাঁকে বিয়ে করবে?’
লীনা বলেছিলেন, ‘কখনোই না।’
বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধার্থ এক দুর্ঘটনায় মারা যান। ফলে লীনা তখন একেবারেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। লীনার কাছে তাঁর ট্র্যাজেডির কথা শুনে খুবই কষ্ট পান কিশোর। এবং তিনি হৃদয় থেকেই লীনাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। লীনার সায় ছিল তাতে, কিন্তু লীনার অভিভাবকেরা একেবারেই কিশোরকে জামাই হিসেবে দেখতে চাননি। কী করে তাঁরা মেয়েকে এমন একজন পুরুষের সঙ্গে বিয়ে দেবেন, যিনি এর আগে তিনবার বিয়ে করেছেন এবং বয়সের তারতম্যও ২১ বছর!
এক সাক্ষাৎকারে লীনা বলেছিলেন, ‘একদিন কিশোর কুমারের গাড়িচালক আবদুল আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে কিশোর কুমারের ফোন নম্বর দিয়ে বলল, তাঁকে ফোন করতে। আমি ফোন করতেই কিশোর বললেন, “লীনা, তোমার কণ্ঠ শোনার জন্যই বসে আছি!”’
প্রতিদিন সকালেই তিনি আমাকে ফোন করতেন এবং কোনো ভনিতা না করেই কথা বলতে শুরু করতেন। তাঁর কথা শুনে আমার বিষণ্নতা কেটে যেতে লাগল, হাসতে শুরু করলাম আমি। সেটা আমার বাবার চোখে পড়ল। আমি শুরুতেই তাঁর প্রেমে পড়িনি, কিন্তু বুঝতে পারতাম, তিনি পাশে থাকলে আমি নিজেকে নিরাপদ বোধ করি। তিনি মদ খেতেন না, কিন্তু তাঁর স্ত্রী কাজ করুক, তিনি সেটা চাইতেন না। আমি তাঁর মধ্যকার শিশুটিকে পছন্দ করতাম, যে বৃষ্টি ভালোবাসত, যে প্রকৃতি ভালোবাসত। তাঁর পৃথিবীটা ছিল আসলে স্বপ্নের পৃথিবী। একবার তিনি বাজারে গিয়ে দেখলেন মসুরের ডাল। ঘরে ফিরেই বললেন, “চলো, এক্ষুণি মৌসরী চলে যাই!” তাঁর যাযাবর জীবন পছন্দ করতাম। আমি সেই জীবনের অংশ হয়ে গেলাম।’
কিশোর হার মেনে নেননি। নিজে এসেছেন লীনার অভিভাবকদের কাছে। অনুমতি নেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন। এমনকি গানও শুনিয়েছেন। একসময় কী করে ‘না’–টা ‘হ্যাঁ’ হয়ে গেল, সেটা তাঁরা টেরও পাননি। ১৯৮০ সালে বিয়ে হলো এই জুটির।
এবং অবাক কাণ্ড, তাঁদের বিয়েটা ছিল খুবই শান্তিময়। ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর কিশোরের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁরা খুবই সুখী পারিবারিক জীবনযাপন করেছেন।
এ সংসারে সুমিত নামে একটি ছেলে হয় তাঁদের।
ছয়.
শেষ করি একেবারে অন্য এক প্রসঙ্গ দিয়ে।
পুলক বন্দোপাধ্যায় অন্য এক শিল্পীকে দিয়ে গাওয়াবেন বলে লিখেছিলেন ‘তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার মরণ যাত্রা যেদিন যাবে’ গানটি। কিন্তু মরণ যাত্রা শব্দগুলোর জন্য সেই খ্যাতনামা শিল্পী এই গান গাইতে রাজি হলেন না। মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায় গানটির সুর করেছিলেন। পড়েই ছিল গানটা। এ সময় মনোজ বাবু মৃণালের কাছে গানটি শুনে তাঁর নির্মিয়মাণ ছবিতে গানটি নিতে চাইলেন। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘গানটি দিতে পারি, কিন্তু গাওয়াতে হবে কিশোর কুমারকে দিয়ে।’
রাজি হলেন তিনি। খুবই দরদ দিয়ে গাইলেন কিশোর কুমার। গানটি গাওয়ার পর কিশোর কুমার বললেন, ‘পোলাওবাবু (পুলককে এই নামেই ডাকতেন কিশোর), একেবারে আমার মরণ যাত্রা করে দিলেন?’
অন্য আরেকটি ছবির ডেট নিয়ে পুলক ফিরেছেন কলকাতায়। সেখান থেকে ফোন করেছেন কিশোরকে। একজন ফোন ধরে বললেন, ‘ও তো চলা গিয়া।’
কিশোর কুমার এ ধরনের রসিকতা অনেক করেছেন। তাই পুলক তাড়া দিলেন, ‘বলুন, আমি কলকাতা থেকে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় বলছি।’
তখন এক ভদ্রলোক পরিষ্কার বাংলা ভাষায় বললেন, ‘কিশোরদা কিছুক্ষণ আগেই দেহ রেখেছেন।’
অডিও অ্যালবামের যুগ শেষ হওয়ার পর হারিয়ে যেতে বসেছে মিক্সড অ্যালবামের প্রচলন। ইউটিউবে যে যার মতো একক কিংবা দ্বৈত গান প্রকাশ করছেন। এমন সময় ৫৪ শিল্পীকে নিয়ে ৬৩ গানের উদ্যোগ নিয়েছেন স্থপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা এনামুল করিম নির্ঝর। নাম দিয়েছেন ‘যেটা আমাদের নিজের মতোন’।
৫ মিনিট আগেএকটি ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে নাটক ‘হৃদয়ে বসবাস’। জামিউর রহমান লেমনের রচনায় হৃদয়ে বসবাস নাটকটি প্রযোজনা করেছেন নাজমুল হক। আজ রাত ৯টা ৫ মিনিটে বিটিভিতে প্রচারিত হবে নাটকটি।
১০ মিনিট আগেচলতি সপ্তাহে দেশের কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি প্রেক্ষাগৃহে। তবে স্টার সিনেপ্লেক্সে শুক্রবার মুক্তি পেল দুটি হলিউড সিনেমা। সিনেপ্লেক্সের বিভিন্ন শাখায় চলছে উইকড ও রেড ওয়ান।
২৭ মিনিট আগেপ্রতি সপ্তাহেই নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খবর থাকছে এই প্রতিবেদনে।
১১ ঘণ্টা আগে