Ajker Patrika

দেশে ৯ মাসে ১০ ভূমিকম্প কি বড় আঘাতের আভাস

সৌগত বসু, ঢাকা
দেশে ৯ মাসে ১০ ভূমিকম্প কি বড় আঘাতের আভাস

রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ৫ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে আজ সোমবার। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের আসাম থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে গোয়ালপাড়ায়। চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০টি হালকা ও মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে দেশে। এর মধ্যে দুটির মাত্রা ছিল পাঁচের ওপরে। এ ধরনের ভূমিকম্প সাধারণত ১০ বছরে তিনবার হয়ে থাকে। ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আভাস দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া ৫ মাত্রার ওপরের ভূমিকম্প দেশের জন্য আশঙ্কার বলেও জানিয়েছেন তাঁরা। 

বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে এক গবেষণায় দেখা গেছে, টাঙ্গাইলের মধুপুর ফল্টে (টেকটনিক ফল্ট) দিনের বেলা ৬ দশমিক ৯ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হলে রাজধানীতে কমপক্ষে ৮ লাখ ৬৪ হাজার ৬১৯ ভবন ধসে পড়তে পারে। প্রাণ হারাতে পারে ২ লাখ মানুষ। অন্যদিকে সিলেটের ফল্ট লাইনে দিনের বেলা ৭ দশমিক ১ মাত্রার একটি ভূমিকম্প হলে কমপক্ষে ৪০ হাজার ৯৩৫ ভবন ধসে পড়তে পারে। ১৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক (বর্তমানে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য) সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘এমন ছোট ছোট ভূমিকম্প মূলত বড় শক্তি নিয়ে ভূমিকম্প হওয়ার প্রাথমিক ধাপ। এই অঞ্চলে বড় ভূমিকম্পের শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। আর বড় কোনো কিছু হলে আগে ছোট কিছু বিষয় ধরা পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ তিনটি (টেকটনিক) প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এসব অংশে শক্তি জমা আছে, সেটা যদি একসঙ্গে বের হয়, তাহলে ৮ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’ 

এ যাবতকালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প আঘাত হানে ১৮৯৭ সালে। ৮ দশমিক ৩ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গ্রেট ইন্ডিয়ান আর্থকোয়েক নামে পরিচিত এ ভূমিকম্পে মারা যান প্রায় দেড় হাজার মানুষ। 

এদিকে চলতি বছর দুইবার পাঁচ মাত্রার বেশি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। যা সাধারণত ১০ বছরে তিনবার হয়ে থাকে। এই দুই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের ডাউকি ফল্ট। এই ফল্টে সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় ২০০৩ সালের ২৬ জুলাই। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬। 

গত সেপ্টেম্বরেই দেশে তিনটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর প্রথমটি অনুভূত হয় ৯ সেপ্টেম্বর। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৪। এ ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে বাংলাদেশের সিলেট জেলা। এরপর ১১ সেপ্টেম্বর সিলেট অঞ্চলে আবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারত–মিয়ানমার সীমান্ত। এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর দেশে ৪ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ঢাকা থেকে ৫৯ কিলোমিটার উত্তর–পশ্চিমে টাঙ্গাইলে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে প্রায় ২০টি ছোট ও মাঝারি মানের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম আট মাসে আঘাত হানা ৭টি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশ। এর মধ্যে আগস্টের ৯ দিনেই আঘাত হানে তিনটি। এগুলোর উৎপত্তিস্থল ছিল নারায়ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ঢাকা। আর এর বাইরের বেশির ভাগের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেট সীমান্ত কেন্দ্রিক।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ১০ বছরের মধ্যে গত এক বছরেই দেশের ভেতরে ২৫টি আর দেশের আশেপাশে অঞ্চলে প্রায় ৫০টি ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পের কম্পন বা ভয়াবহতার মাত্রা নির্ভর করে গভীরতার ওপরে। সিলেটে উৎপত্তিস্থল ছিল যে ভূমিকম্পের সেটির গভীরতা ছিল ১৬ কিলোমিটার আর টাঙ্গাইলেরটির ছিল ১০ কিলোমিটার।’

অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ বলেন, ‘১৮৭০ থেকে শুরু করে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত দেশে ৭ দশমিক ৫ ও ৮ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্পের রিটার্ন পিরিয়ড ধরা হয় ১৫০–২৫০ বছর। ফলে দেশে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে এই ভূমিকম্প ঠিক কোন সময়ে হবে, তা নিশ্চিত নয়। সাধারণত প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ বছর পর এমন ভূমিকম্প হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. সুব্রত কুমার সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চার বা সাড়ে চার মাত্রার ভূমিকম্পে দেশে তেমন কিছু হবে না। এটা স্বল্পমাত্রার। তবে পাঁচ মাত্রার (মাঝারি) ওপরে গেলে সেটি দেশের জন্য চিন্তার বিষয়। এই অঞ্চলে ভূমিকম্পের মূল যে জায়গা ধরা হয়, সেটি হচ্ছে উত্তর–পূর্ব অঞ্চল যা সিলেটের অন্তর্গত। এটি টেকটনিক প্লেটের কাছাকাছি। এ ছাড়া আসাম, শিলংয়ে প্লেট আছে। এসব জায়গায় ভূমিকম্প হলে সেটির প্রভাব দেশে ও ঢাকায় পড়বে। আর একটি ভূমিকম্প হয় প্লেট বাউন্ডারি ছাড়া ফল্ট লাইনে।’

গত ১৭ সেপ্টেম্বরের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল টাঙ্গাইলের ফল্ট লাইনে ছিল উল্লেখ করে অধ্যাপক সুব্রত কুমার আরও বলেন, ‘এর মধ্যে একটা আছে মধুপুর ফল্ট লাইন। এ ছাড়া সিলেটের ডাউকি ফল্ট আছে। আবার প্রতিটা নদীর নিচেই ছোট ছোট ফল্ট লাইন আছে। এসব ফল্টে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫টি কম্পন হয়। আর ২০০১ থেকে যদি দেখা হয় তাহলে, বুড়িগঙ্গা, পদ্মা, মেঘনা আর ব্রহ্মপুত্রের আশপাশে উৎপত্তিস্থল ছিল কয়েকটি ভূমিকম্পের।’

এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ভূমিকম্প আগে থেকে জানা বা অনুমান করার কোনো পদ্ধতি নেই। সাধারণত ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর দেশে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে মাত্রা ও উৎপত্তি স্থান জানানো হয়। এর বাইরে রয়েছে আমেরিকান ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ফলাফল।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ভেতরে ও সীমান্তের কাছাকাছি ৫টি ফল্ট জোন (ভূ–চ্যুতি অঞ্চল) সক্রিয় আছে। এগুলো হলো— বগুড়া ফল্ট জোন, ত্রিপুরা ফল্ট জোন, ডাউকি ফল্ট জোন, আসাম ফল্ট জোন এবং শিলং মালভূমি ফল্ট জোন। এর মধ্যে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক হতে পারে ডাউকি ফল্ট জোন।’

ভূতত্ত্ববিদেরা বলছেন, ঢাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে যেসব ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, সেগুলোর অধিকাংশের উৎপত্তিস্থলই ছিল বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে সিলেট বা চট্টগ্রাম অঞ্চলে। অনেকগুলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ভারতের মিজোরাম বা ত্রিপুরা রাজ্য।  

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ২০২২ সাল পর্যন্ত সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় মোট ভবন ২১ লাখ ৪৭ হাজার ২১৯টি। এর মধ্যে পাকা ভবন ৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৭টি। আর নির্মাণাধীন ২০ হাজার ৩২টি। 

নগর পরিকল্পনাবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর–অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ‘ভূমকম্প হবে ধরে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রথম ধাপ হচ্ছে, ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ও কাঠামোগত যেসব দিক নির্দেশনা আছে—তা মেনে ভবন নির্মাণ করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক ড. খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন বলেন, ‘দেশে মাত্র ৩ শতাংশ ভবন ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে। নজরদারির অভাব ও বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সমন্বয়হীনতা ঢাকায় দিন দিন ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে।’

সম্প্রতি তুরস্ক, সিরিয়া, আফগানিস্থানের ভূমিকম্পের মাত্রা ও প্রাণহানি দেশের মানুষের মধ্যে এক ভীতি তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকার এখন জনসচেতনতার চেয়ে অবকাঠামোগত বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে সম্প্রতি আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো এনামুর রহমান।

তিনি বলেন, ‘তিনটি বিষয় মাথায় রেখে আগানো হচ্ছে। এক, পুরোনো ভবন ভেঙে ফেলা হবে। মালিকদের সহজ শর্তে বা বিনা সুদে ঋণ দিয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। দুই, যেগুলো ভবন আছে তা পরীক্ষা করে রেট্রোফিটিং করা হবে। তিন, নতুন ভবন বিধিমালা মেনে করতে হবে। মন্ত্রণালয় এখন জাপানের মতো ভূমিকম্প সহনশীল দেশ বানাতে জাইকার সঙ্গে কাজ করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় আজ সকালে তাপমাত্রা ১৬.৬

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ২৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ঢাকায় আকাশ আজ বুধবার ভোর থেকে ছিল হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন। তবে হাড়কাঁপানো শীত পড়েনি।

আজ সারা দিন ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল মঙ্গলবার ছিল ১৬ দশমিক ৬। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮০ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকায় পড়েছে হালকা শীত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ০৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবসের ছুটির দিনে আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানী ঢাকায় অনুভূত হচ্ছে হালকা শীত। তাপমাত্রাও গতকালের মতো রয়েছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ সকাল ৬টায় ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকাল সোমবার ছিল ১৭ দশমিক ১। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৮৯ শতাংশ।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের সকাল ৭টায় পরবর্তী ছয় ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আকাশ পরিষ্কার থাকবে। আবহাওয়া থাকতে পারে শুষ্ক। এ সময় উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, আজ সূর্যাস্ত ৫টা ১৪ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয় ৬টা ৩৫ মিনিটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নতুন তথ্য বলছে, আমাদের ধারণার চেয়েও বেশি উষ্ণ হয়েছে পৃথিবী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবী ঠিক কতটা উষ্ণ হয়ে উঠেছে—এই প্রশ্নের উত্তর নতুন এক বৈজ্ঞানিক তথ্যভান্ডার সামনে এনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একদল বিজ্ঞানীর প্রকাশিত নতুন তাপমাত্রা ডেটা-সেট দেখাচ্ছে—শিল্পবিপ্লব শুরুর আগের তুলনায় পৃথিবীর উষ্ণতা হয়তো আমরা এত দিন যতটুকু ভেবেছি, তার চেয়েও বেশি বেড়েছে।

সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, সাধারণত আধুনিক জলবায়ু বিশ্লেষণে ১৮৫০ সালের তাপমাত্রাকে ‘প্রাক-শিল্পযুগ’ বা শিল্পযুগ শুরুর আগের তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। সেই হিসেব অনুযায়ী, বিশ্ব এখন প্রাক শিল্প যুগের আগের তুলনায় প্রায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। কিন্তু ‘গ্লোসেট’ (GloSAT) নামে নতুন ডেটা-সেট প্রাক-শিল্পযুগের তাপমাত্রার হিসেবটিকে নিয়ে গেছে আরও পেছনে, ১৭৮১ সাল পর্যন্ত। গবেষকদের মতে, এই বাড়তি সময়কাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যেই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ২.৫ শতাংশ বেড়েছিল, যা ওই সময়ের মধ্যেও কিছুটা উষ্ণতা বাড়িয়েছিল।

গ্লোসেট ডেটা দেখাচ্ছে—১৮ শতকের শেষভাগ থেকে ১৮৪৯ সাল পর্যন্ত পৃথিবী ১৮৫০–১৯০০ সময়কালের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ঠান্ডা ছিল। ফলে সেই সময়ের বিপরীতে বর্তমান উষ্ণতা হিসেব করতে গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি আরও বেশি মাত্রায় ঘটেছে। তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, প্রাক শিল্প যুগে যে উষ্ণতাটুকু বেড়েছিল, তার সবটাই মানুষের কারণে নয়। ১৮০০ সালের শুরুর দিকে তাম্বোরা সহ একাধিক বড় আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত পৃথিবীকে সাময়িকভাবে ঠান্ডা করে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে সেই শীতলতার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বিরাজ করেছে, সেটিও উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।

জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্যানেল (আইপিসিসি) আগেই জানিয়েছিল, ১৭৫০ থেকে ১৮৫০ সালের মধ্যে মানুষের কারণে উষ্ণতা বেড়েছিল ০ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। নতুন গবেষণাগুলো সেই সীমার মাঝামাঝি অবস্থান করছে—প্রায় ০.০৯ থেকে ০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এই গবেষণার বড় দিক হলো—পুরোনো তাপমাত্রা রেকর্ড। ইউরোপের বিভিন্ন শহর যেমন, সুইডেনের উপসালা, জার্মানির হোহেনপাইসেনবার্গের মতো স্থানে শত শত বছর ধরে সংরক্ষিত তথ্য এবং ১৮ শতকের জাহাজযাত্রার সময় নথিভুক্ত সামুদ্রিক বায়ুর তাপমাত্রা একত্র করে তৈরি হয়েছে এই বৈশ্বিক চিত্র। যদিও প্রাচীন তথ্যগুলো অসম্পূর্ণ এবং অনিশ্চয়তা বেশি, তবু বিজ্ঞানীদের মতে একটি বিষয় স্পষ্ট—পৃথিবী তখন আরও ঠান্ডা ছিল।

তাহলে এর অর্থ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন তথ্যের প্রেক্ষাপটে প্যারিস চুক্তির মতো বর্তমান জলবায়ু লক্ষ্যগুলো অর্থাৎ প্রাক শিল্প যুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করে রাখার নৈতিক সিদ্ধান্ত অকার্যকর হয়ে যায় না। এই উপলব্ধি ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বোঝা ও মোকাবিলায় আরও সতর্ক হওয়ার বার্তাই দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দূষণ বাড়ছে বাতাসে, যেসব সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

অগ্রহায়ণের শেষ দিন আজ। বাতাসে শীতের আমেজ। তবে শীতল আবহাওয়া নিয়ে আসা শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই ঢাকার বাতাসে বেড়ে যায় দূষণের মাত্রা। বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ সোমবার ঢাকার অবস্থান ৮ম।

আজ সকাল ৮টা ৪৩ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৫৮, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।

বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্‌রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।

অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। শহরটির বায়ুমান ৩৪৬, যা দুর্যোগপূর্ণ বাতাসের নির্দেশক।

শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— পাকিস্তানের করাচি, কুয়েতের কুয়েত সিটি, মিশরের কায়রো ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২০১, ১৮৯, ১৮৯ ও ১৮১।

বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।

বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।

দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।

পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাতাসের এই পরিস্থিতিতে করণীয়

অত্যন্ত সংবেদনশীল গোষ্ঠী: শিশু, বয়স্ক, হৃদ্‌রোগ বা শ্বাসকষ্টের রোগীরা সব ধরনের ঘরের বাইরে না যাওয়াই ভালো।

সাধারণ সুস্থ ব্যক্তি: তাদের উচিত বাইরে কাটানো সময় সীমিত করা এবং শারীরিক পরিশ্রমের কাজ এড়িয়ে চলা।

যদি বাইরে বের হতে হয়, তবে অবশ্যই দূষণ রোধে কার্যকর মাস্ক ব্যবহার করুন।

ঘরের ভেতরের বাতাস পরিষ্কার রাখতে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করুন এবং দূষিত বাতাস প্রবেশ ঠেকাতে জানালা ও দরজা বন্ধ রাখুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত