Ajker Patrika

দুই সপ্তাহের বৈঠকেও সমুদ্র সুরক্ষায় একমত হতে ব্যর্থ বিশ্ব নেতারা

অনলাইন ডেস্ক
দুই সপ্তাহের বৈঠকেও সমুদ্র সুরক্ষায় একমত হতে ব্যর্থ বিশ্ব নেতারা

বৈশ্বিক সমুদ্র সুরক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিউইয়র্কে বৈঠকে বসেছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্যভুক্ত দেশের নেতারা। নতুন একটি চুক্তির লক্ষ্যে ১৬৮টি দেশের নেতারা একত্রিত হয়েছিলেন। দুই সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠক গত শুক্রবার কোনো চুক্তি সম্পাদন ছাড়াই শেষ হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চলা নতুন একটি চুক্তির চেষ্টা ফের ব্যর্থতার মুখ দেখল। এটিকে ‘সুযোগ হাতছাড়া’ বলছেন পরিবেশবাদীরা। শনিবার (২৭ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি ও এএফপি। 

জাতিসংঘের এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন রেনা লি। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত ফল পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।’ 

এনজিও পিউ চ্যারিটেবল ট্রাস্টের লিজ কারান বছরের শেষ নাগাদ নতুন একটি অধিবেশনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, গত দুই সপ্তাহের বৈঠকেও চুক্তি চূড়ান্ত হয়নি, এটি হতাশাজনক। তবে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে, এটি উৎসাহ জোগাবে। 

সমুদ্র সুরক্ষা আন্দোলন সঙ্গে যুক্ত পরিবেশবাদী সংস্থা গ্রিনপিসের লরা মিলার বলেন, ‘সময় চলে যাচ্ছে। যত দেরি হবে সমুদ্র তত দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে। আমরা হতাশ ও ব্যথিত। যেসব দেশ সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাসাগরগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যে পড়েছে, এর মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ সুরক্ষিত। সর্বশেষ ১৯৮২ সালে জাতিসংঘ সমুদ্র আইনের অধীনে ‘মহাসাগর আইন’ চুক্তি হয়। এই চুক্তির আওতায় গভীর সমুদ্র অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে সব দেশ মাছ শিকার, জাহাজ পরিচালনা এবং গবেষণার অধিকার পায়। এই ১ দশমিক ২ শতাংশ সুরক্ষিত সীমার বাইরে জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মাছ শিকার এবং জাহাজ চলাচলে হুমকি ও শোষণের ঝুঁকি রয়েছে। 

জাতিসংঘের অধিবেশনে চারটি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। এক. সমুদ্রের সংরক্ষিত এলাকা স্থাপন। দুই. পরিবেশগত প্রভাবের মূল্যায়নের উন্নতি। তিন. উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ প্রদান এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। চার. সামুদ্রিক সম্পদের জিন বৈশিষ্ট্যের ডেটা বিনিময়। যেখান থেকে ফার্মাসিউটিক্যাল, রাসায়নিক এবং প্রসাধনী কোম্পানিগুলো প্রয়োজনীয় উপাদান পেতে পারে, যা সমাজের জন্য উপকারী। 

বৈঠকে গভীর সমুদ্র বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ক্রিস্টিনা ইয়ার্দে সমুদ্র সুরক্ষায় চুক্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ‘গভীর সমুদ্র পৃথিবীর নীল হৃদয়। গভীর সমুদ্রের যে কোনো পরিবর্তন আমাদের উপকূলীয় সম্প্রদায়, মৎস্যসম্পদ ও জীববৈচিত্র্যে প্রভাব ফেলে। বিষয়গুলো আমাদের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’ 

বৈঠকের আগে যুক্তরাজ্যসহ ৭০ টিরও বেশি দেশ মহাসাগরের ৩০ শতাংশ এলাকা সংরক্ষিত ঘোষণা করতে সম্মত হয়। যেই অংশে থাকবে মাছ শিকার, মাছ শিকারের রুট এবং গভীর সমুদ্রে খনির মতো অনুসন্ধান কার্যক্রম। গভীর সমুদ্র খনন বলতে বোঝায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার গভীরের তলদেশ থেকে খনিজ সংগ্রহ। এই খনিজগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কোবাল্ট। এটি ইলেকট্রনিকস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তবে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) বলছে, খনিজ সংগ্রহের এই প্রক্রিয়া সমুদ্রকে বিষাক্ত করে তুলতে পারে। ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ইন্টারন্যাশনাল সি-বেড অথোরিটি খনিজ সংগ্রহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় পর্যন্ত ৩১টি নির্দেশনা জারি করা হয়। কিন্তু দেশগুলো এতে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মত হতে ব্যর্থ হয়। মূলত মাছ শিকারের অধিকার, উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হতে পারেনি দেশগুলো। 

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তি না হওয়ার ফলে সমুদ্রের নানা প্রজাতির মৎস্য সম্পদ অরক্ষিত থাকবে এবং যেসব প্রজাতি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি সেগুলো আমাদের জানার আগেই বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অর্থায়নে চলতি বছরের শুরুতে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখা যায়, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সামুদ্রিক প্রজাতি এরই মধ্যে বিলুপ্তির পথে রয়েছে। বিলুপ্ত হতে পারে এমন তালিকায় হাঙর এবং রে (শাপলা পাতা মাছ প্রজাতি) রয়েছে। 

আইইউসিএনের তথ্য মতে, এই দুই প্রজাতিই বিশ্বব্যাপীই বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে এবং বিশ্বে বিলুপ্তির সর্বাধিক হুমকিতে থাকা প্রজাতিগুলোর মধ্যে এরা অন্যতম। হাঙরের মতো অন্যান্য যেসব প্রজাতি পরিযায়ী, যেমন: কচ্ছপ, তিমি—সেগুলো জাহাজ চলাচলসহ মানুষের নানা কর্মকাণ্ডে জখম বা প্রাণ হারাতে হতে পারে। এছাড়া নির্বিচারে শিকারের কারণেও এগুলোর সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। আবার অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে সৃষ্ট খাদ্য সংকটেও এরা হুমকির মুখে পড়ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

মাগুরার শিশুটি এখনো অচেতন, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত