অনলাইন ডেস্ক
১৯৭০ সালের এক মধ্যরাতে আব্দুল জলিল মির্ধার গ্রামে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সাইক্লোন ভোলা’। নিমেষেই বিধ্বস্ত হয় অসংখ্য ঘরবাড়ি, প্রাণ হারায় কয়েক ডজন মানুষ। তখন মির্ধার বয়স ছিল ১২ বছর। তাকেসহ সব ভাইবোনকে ঘরের মধ্যে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন বাবা-মা, যাতে উজানের ঢেউ তাঁদের ভাসিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। সেই যাত্রায় জলিল বেঁচে গেলেও দেশের কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
সেই ঘূর্ণিঝড় দেখেছিলেন বরিশালের মির্ধা বেগমও। আজ তাঁর বয়স ৬৫ বছর। ঘূর্ণিঝড়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘সকালে চারপাশে অনেক লাশ ভেসে উঠছিল, মানুষ কাঁদছিল। গবাদিপশু মারা গিয়েছিল। সেই কষ্ট আপনি কোনোভাবেই কল্পনা বা অনুভব করতে পারবেন না।’
সাইক্লোন ভোলা ছিল ক্যাটাগরি-৩ ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৫০ মাইল পর্যন্ত। এটি এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে মারাত্মক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়। বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়গুলোর একটি। বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুপার সাইক্লোন আরও ঘন ঘন আঘাত হানছে। ১৯৭০ সালের পর এ ধরনের ঘটনা পাঁচ গুণ বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ এমনভাবে মোকাবিলা করতে শিখেছে, যা ইউরোপসহ বিশ্বের বহু দেশ পারেনি। নিচু উপক্রান্তীয় এলাকা হওয়ার পরও বিশ্বের সবচেয়ে জোরালো প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে দুর্যোগে প্রাণহাণি ১ শতাংশের নিচে নেমেছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় দেশটির অগ্রগতি ইউরোপের ঠিক উল্টো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আকস্মিক বন্যায় ১৮০ জন জার্মান মারা গেছে। ফ্রান্স, স্পেন, গ্রীসেও দাবানলে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এক ঐতিহাসিক দাবদাহে ইউরোপ মহাদেশজুড়ে ৬১ হাজারেরও বেশি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ এখনো দুর্যোগ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপনের চেষ্টায় রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে চাইছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ঝুঁকি ও দুর্যোগ বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. বায়েস আহমেদ বলেন, ‘অনেক দেশ বাংলাদেশের সাফল্য থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটি বিশ্বমানের উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।’
‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’ মোকাবিলায় বাংলাদেশ
সর্বশেষ গত ১৪ মে বাংলাদেশের উপকূলে ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’ আঘাত হানে। এই শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ সফল হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ মাইল বাতাসের বেগে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মিয়ানমারে এটি আঘাত হানে।
এই ঘূর্ণঝড়ে মিয়ানমারে শত শত লোক মারা গেছে। বাংলাদেশের ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ ক্যাটাগরি-৫-এর এই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। ১৩ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়। তবু কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাইক্লোন প্রিপারেডনেস প্রোগ্রামের (সিপিপি) পরিচালক আহমেদুল হক বলেন, ‘আমরা আগেই জানতে পেরেছিলাম ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে যাচ্ছে। ফলে মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।’
আহমেদুল হকের মতে, সরকার এপ্রিলের শেষের দিকে প্রাক্ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ শুরু করে। ৪ মে নাগাদ সতর্কবার্তা পেতে শুরু করে। ৯ মে উপকূল থেকে ১ হাজার মাইল দূরে নিম্নচাপটি তৈরি হওয়ায় আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দেয়। মোখা আঘাত হানার দুই দিন আগে ১২ মে রাতে লাল সতর্কতাসংকেত দেওয়া হয়। পাশাপাশি ৭ লাখ ৫০ হাজার লোককে স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
আহমেদুল হক বলেন, ‘আমাদের খুব ভালো একটি প্রাথমিক অ্যাকশন প্রোটোকল আছে। এখানে ৭১টি পূর্বনির্ধারিত কাজ রয়েছে, যা সঠিক পূর্বাভাস, সময়মতো সতর্কতা জারি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।’
বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে মোখার মতো ঘূর্ণিঝড়ে লাখো মানুষ প্রাণ হারাত। বিশেষ করে দেশটির উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে।
‘ঘূর্ণিঝড় ভোলার’ পরে ১৯৭২ সালে সরকার বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় অত্যন্ত কার্যকরী আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করে। এরপর আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রযুক্তি, দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও গণ প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করে।
বাংলাদেশে এই সফলতা এসেছিল চারটি মৌলিক স্তম্ভ ব্যবহার করে। এগুলো ছিল- প্রস্তুতি, প্রশমন, প্রতিক্রিয়া এবং পুনরুদ্ধার।
ঢাকায় অবস্থিত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক। বাংলাদেশি-ব্রিটিশ এই জলবায়ু বিজ্ঞানী বলেন, ‘এই কয়েক বছর ধরে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা এবং উচ্ছেদ ব্যবস্থা তৈরি করেছি।’
আগে বাংলাদেশে মাত্র তিনটি উপকূলীয় রাডার ছিল, যা উপকূল থেকে ২০০ মাইল দূরে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারত। এখন সেখানে ২৫৬টি স্থানীয় আবহাওয়া স্টেশন রয়েছে। এগুলো বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ডেটাসহ আগত ঝড় শনাক্ত ও নিরীক্ষণে সহায়তা করে।
প্রয়োজনে টিভি ও রেডিওতে সম্প্রচার, এসএমএস বিজ্ঞপ্তি এবং ২৪ ঘন্টা হেল্পলাইনের মাধ্যমে সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়। সবচেয়ে প্রত্যন্ত এবং অরক্ষিত মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য ৭৬ হাজারেরও বেশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের একটি বাহিনী মেগাফোন এবং সাইরেনসহ উপকূলীয় গ্রামে যায়। তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সতর্কীকরণ পতাকা তোলে এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাড়িগুলোর দ্বারে দ্বারে গিয়ে সতর্কবার্তা দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের ১৫ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়। ১৯৭০ সালে যা মাত্র ৪৪টি ছিল।
১৯৭৬ সালে মিরধা বেগমের বয়স হয় ১৮ বছর। তখন তিনি স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ওঠেন। এখন তিনি বরিশালে ইউনিট টিম লিডারের পাশাপাশি একজন কৃষক। মিরধা বেগম বলেন, ‘সাইক্লোন ভোলায় অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল, কারণ আমরা প্রস্তুতি বা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন ছিলাম না। তাই মানুষকে বাঁচাতে আমি স্বেচ্ছাসেবকের কাজ শুরু করেছি।’
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের কাজগুলো হলো- প্রাথমিক সতর্কবার্তা প্রচার করা, গ্রামবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র নেওয়া, উদ্ধার করা, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ ঘূর্ণিঝড়ের সময় এবং পরে শুকনো খাবার বিতরণ করা।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পশ্চিমা বিশ্বকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারে। ইমারজেন্সি ইভেন্ট ডেটাবেজ অনুসারে, গত বছর বিশ্বব্যাপী ৩৮৭টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিপর্যয় আঘাত হেনেছে। এতে ৩০ হাজার ৭০৪ জন মারা গেছে এবং ১৮৫ মিলিয়ন মানুষ এসব দুর্যোগের কবলে পড়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘হারিকেন ইয়ান’ এর আঘাতে ১৩০ জনকে মারা গেছেন, পাকিস্তানে বন্যায় ১ হাজার ৭৩৯ জন মারা গেছেন, আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ১ হাজার ৩৬ জন নিহত হয়েছেন এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় ‘মেগি’র আঘাতে ফিলিপাইনে ৩৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৫৬০টি মাঝারি বা বড় আকারের বিপর্যয় ঘটবে।
অধ্যাপক আহমেদুল হক বলেছেন, ‘এটি বড় চ্যালেঞ্জ, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলোর জন্যও। যখন আপনি হারিকেন ক্যাটরিনার মতো বিপর্যয়ের কথা ভাবেন। আমরা জানি কীভাবে জীবন রক্ষা করতে হয়। আমাদের এই শেখা জ্ঞান বিশ্বের অন্যান্য জাতি-দেশের সঙ্গে বিনিময় করতে ইচ্ছুক।’
২০২২ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে ২০২৭ সালের মধ্যে ‘পৃথিবীর সবাইকে’ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই কোনো আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা নেই। জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষক সংস্থা গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন এক প্রতিবেদনে বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ৮০ কোটি ডলার খরচ করলে বছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের ক্ষতি এড়ানো যাবে।
তবুও ইতালির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। স্পেনের লা পালমার ক্যানারি দ্বীপে একটি দাবানলের সঙ্গে লড়ছে, যা ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি পুড়িয়ে দিয়েছে। দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে ইউরোপ। বিষয়টি নিয়ে মহাদেশটিতে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মহাদেশটির জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় নেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। ঠিক যেমন বাংলাদেশ ছিল ১৯৭০ এর দশকে।
এই পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ পরিণতি হবে আরও মারাত্মক এবং ব্যয়বহুল। বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের গত সপ্তাহে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, কার্যকরী অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি গ্রীষ্মে প্রায় ৬৮ হাজার ইউরোপীয় প্রচণ্ড গরমে মারা যাবে। ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি জানিয়েছে, বিপর্যয়ের কারণে ১৯৮০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১৩ বিলিয়ন ইউরো মূল্যমানের ক্ষতি হয়েছে, এই অঙ্ক সামনে আরও বাড়বে।
জাতিসংঘের অধীন থাকা বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মহাসচিব পেটেরি তালাস বলেছেন, ‘এই প্রধান জলবায়ু ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির প্রারম্ভিক সতর্কতা এবং পূর্বাভাসমূলক পদক্ষেপ জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর জন্য অত্যাবশ্যক।’
সৌভাগ্যক্রমে মহাদেশটির দুর্যোগ পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এপ্রিলে যুক্তরাজ্য প্রথমবারের মতো চরম আবহাওয়া সম্পর্কে জরুরি বার্তা সম্প্রচারের জন্য একটি সিস্টেম পরীক্ষা করে। মে মাসে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে নতুন ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ করা হয়েছে। প্যারিস, মিলান এবং রটারডামের মতো অন্য শহরগুলো ‘এক্সট্রিম হিট’ অ্যাপ চালু করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয় মোকাবিলায় ইউরোপকে প্রস্তুতি আরও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রাকটিক্যাল অ্যাকশনের ‘বন্যা প্রতিরোধী’ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তামান্না রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্প, ভূমিধস, অগ্নিকাণ্ড এবং আকস্মিক বন্যা মোকাবিলা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে কাজ করছে। এটি স্মার্ট, অত্যাধুনিক সতর্কতা ব্যবস্থা ক্ষয়ক্ষতি কতটা কমিয়ে আনতে পারে তা দেখিয়েছে।
তামান্না রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের মডেল দুর্যোগকালে জীবন বাঁচাতে সফল হয়েছে। এখন আমাদের এটিতে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে হবে এবং আরও এগিয়ে নিতে হবে।’
যুক্তরাজ্যের ‘দ্য টেলিগ্রাফে’ প্রকাশিত পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক পিটার ইয়ংয়ের প্রতিবেদন অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক মুহম্মদ আবদুল বাছেদ।
১৯৭০ সালের এক মধ্যরাতে আব্দুল জলিল মির্ধার গ্রামে আঘাত হানে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ‘সাইক্লোন ভোলা’। নিমেষেই বিধ্বস্ত হয় অসংখ্য ঘরবাড়ি, প্রাণ হারায় কয়েক ডজন মানুষ। তখন মির্ধার বয়স ছিল ১২ বছর। তাকেসহ সব ভাইবোনকে ঘরের মধ্যে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন বাবা-মা, যাতে উজানের ঢেউ তাঁদের ভাসিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। সেই যাত্রায় জলিল বেঁচে গেলেও দেশের কয়েক লাখ মানুষ প্রাণ হারায়।
সেই ঘূর্ণিঝড় দেখেছিলেন বরিশালের মির্ধা বেগমও। আজ তাঁর বয়স ৬৫ বছর। ঘূর্ণিঝড়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘সকালে চারপাশে অনেক লাশ ভেসে উঠছিল, মানুষ কাঁদছিল। গবাদিপশু মারা গিয়েছিল। সেই কষ্ট আপনি কোনোভাবেই কল্পনা বা অনুভব করতে পারবেন না।’
সাইক্লোন ভোলা ছিল ক্যাটাগরি-৩ ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৫০ মাইল পর্যন্ত। এটি এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে মারাত্মক গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়। বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়গুলোর একটি। বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুপার সাইক্লোন আরও ঘন ঘন আঘাত হানছে। ১৯৭০ সালের পর এ ধরনের ঘটনা পাঁচ গুণ বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ এমনভাবে মোকাবিলা করতে শিখেছে, যা ইউরোপসহ বিশ্বের বহু দেশ পারেনি। নিচু উপক্রান্তীয় এলাকা হওয়ার পরও বিশ্বের সবচেয়ে জোরালো প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশে দুর্যোগে প্রাণহাণি ১ শতাংশের নিচে নেমেছে।
দুর্যোগ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় দেশটির অগ্রগতি ইউরোপের ঠিক উল্টো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আকস্মিক বন্যায় ১৮০ জন জার্মান মারা গেছে। ফ্রান্স, স্পেন, গ্রীসেও দাবানলে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এক ঐতিহাসিক দাবদাহে ইউরোপ মহাদেশজুড়ে ৬১ হাজারেরও বেশি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ এখনো দুর্যোগ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা স্থাপনের চেষ্টায় রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে চাইছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ঝুঁকি ও দুর্যোগ বিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক ড. বায়েস আহমেদ বলেন, ‘অনেক দেশ বাংলাদেশের সাফল্য থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করছে। এটি বিশ্বমানের উদাহরণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।’
‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’ মোকাবিলায় বাংলাদেশ
সর্বশেষ গত ১৪ মে বাংলাদেশের উপকূলে ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা’ আঘাত হানে। এই শতাব্দীর সবচেয়ে শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায়ও বাংলাদেশ সফল হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় ১৬০ মাইল বাতাসের বেগে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মিয়ানমারে এটি আঘাত হানে।
এই ঘূর্ণঝড়ে মিয়ানমারে শত শত লোক মারা গেছে। বাংলাদেশের ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মানুষ ক্যাটাগরি-৫-এর এই ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। ১৩ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়। তবু কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাইক্লোন প্রিপারেডনেস প্রোগ্রামের (সিপিপি) পরিচালক আহমেদুল হক বলেন, ‘আমরা আগেই জানতে পেরেছিলাম ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে যাচ্ছে। ফলে মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি।’
আহমেদুল হকের মতে, সরকার এপ্রিলের শেষের দিকে প্রাক্ঘূর্ণিঝড় পর্যবেক্ষণ শুরু করে। ৪ মে নাগাদ সতর্কবার্তা পেতে শুরু করে। ৯ মে উপকূল থেকে ১ হাজার মাইল দূরে নিম্নচাপটি তৈরি হওয়ায় আবহাওয়া অধিদপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা দেয়। মোখা আঘাত হানার দুই দিন আগে ১২ মে রাতে লাল সতর্কতাসংকেত দেওয়া হয়। পাশাপাশি ৭ লাখ ৫০ হাজার লোককে স্থায়ী ও অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
আহমেদুল হক বলেন, ‘আমাদের খুব ভালো একটি প্রাথমিক অ্যাকশন প্রোটোকল আছে। এখানে ৭১টি পূর্বনির্ধারিত কাজ রয়েছে, যা সঠিক পূর্বাভাস, সময়মতো সতর্কতা জারি এবং স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।’
বাংলাদেশের দুর্যোগ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা শক্তিশালী না হলে মোখার মতো ঘূর্ণিঝড়ে লাখো মানুষ প্রাণ হারাত। বিশেষ করে দেশটির উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে।
‘ঘূর্ণিঝড় ভোলার’ পরে ১৯৭২ সালে সরকার বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় অত্যন্ত কার্যকরী আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা চালু করে। এরপর আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রযুক্তি, দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক ও গণ প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ করে।
বাংলাদেশে এই সফলতা এসেছিল চারটি মৌলিক স্তম্ভ ব্যবহার করে। এগুলো ছিল- প্রস্তুতি, প্রশমন, প্রতিক্রিয়া এবং পুনরুদ্ধার।
ঢাকায় অবস্থিত একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক অধ্যাপক সালিমুল হক। বাংলাদেশি-ব্রিটিশ এই জলবায়ু বিজ্ঞানী বলেন, ‘এই কয়েক বছর ধরে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা এবং উচ্ছেদ ব্যবস্থা তৈরি করেছি।’
আগে বাংলাদেশে মাত্র তিনটি উপকূলীয় রাডার ছিল, যা উপকূল থেকে ২০০ মাইল দূরে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান চিহ্নিত করতে পারত। এখন সেখানে ২৫৬টি স্থানীয় আবহাওয়া স্টেশন রয়েছে। এগুলো বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ডেটাসহ আগত ঝড় শনাক্ত ও নিরীক্ষণে সহায়তা করে।
প্রয়োজনে টিভি ও রেডিওতে সম্প্রচার, এসএমএস বিজ্ঞপ্তি এবং ২৪ ঘন্টা হেল্পলাইনের মাধ্যমে সতর্কবার্তা প্রচার করা হয়। সবচেয়ে প্রত্যন্ত এবং অরক্ষিত মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য ৭৬ হাজারেরও বেশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের একটি বাহিনী মেগাফোন এবং সাইরেনসহ উপকূলীয় গ্রামে যায়। তাঁরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সতর্কীকরণ পতাকা তোলে এবং ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাড়িগুলোর দ্বারে দ্বারে গিয়ে সতর্কবার্তা দেয়। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের ১৫ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়। ১৯৭০ সালে যা মাত্র ৪৪টি ছিল।
১৯৭৬ সালে মিরধা বেগমের বয়স হয় ১৮ বছর। তখন তিনি স্বেচ্ছাসেবক হয়ে ওঠেন। এখন তিনি বরিশালে ইউনিট টিম লিডারের পাশাপাশি একজন কৃষক। মিরধা বেগম বলেন, ‘সাইক্লোন ভোলায় অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল, কারণ আমরা প্রস্তুতি বা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন ছিলাম না। তাই মানুষকে বাঁচাতে আমি স্বেচ্ছাসেবকের কাজ শুরু করেছি।’
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের কাজগুলো হলো- প্রাথমিক সতর্কবার্তা প্রচার করা, গ্রামবাসীদের আশ্রয়কেন্দ্র নেওয়া, উদ্ধার করা, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানসহ ঘূর্ণিঝড়ের সময় এবং পরে শুকনো খাবার বিতরণ করা।
বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পশ্চিমা বিশ্বকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারে। ইমারজেন্সি ইভেন্ট ডেটাবেজ অনুসারে, গত বছর বিশ্বব্যাপী ৩৮৭টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিপর্যয় আঘাত হেনেছে। এতে ৩০ হাজার ৭০৪ জন মারা গেছে এবং ১৮৫ মিলিয়ন মানুষ এসব দুর্যোগের কবলে পড়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘হারিকেন ইয়ান’ এর আঘাতে ১৩০ জনকে মারা গেছেন, পাকিস্তানে বন্যায় ১ হাজার ৭৩৯ জন মারা গেছেন, আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে ১ হাজার ৩৬ জন নিহত হয়েছেন এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় ‘মেগি’র আঘাতে ফিলিপাইনে ৩৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘ জানিয়েছে, উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিলে ২০৩০ সালের মধ্যে বছরে ৫৬০টি মাঝারি বা বড় আকারের বিপর্যয় ঘটবে।
অধ্যাপক আহমেদুল হক বলেছেন, ‘এটি বড় চ্যালেঞ্জ, এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলোর জন্যও। যখন আপনি হারিকেন ক্যাটরিনার মতো বিপর্যয়ের কথা ভাবেন। আমরা জানি কীভাবে জীবন রক্ষা করতে হয়। আমাদের এই শেখা জ্ঞান বিশ্বের অন্যান্য জাতি-দেশের সঙ্গে বিনিময় করতে ইচ্ছুক।’
২০২২ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে ২০২৭ সালের মধ্যে ‘পৃথিবীর সবাইকে’ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বলছে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশেই কোনো আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা নেই। জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষক সংস্থা গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন এক প্রতিবেদনে বলেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এই ধরনের ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় ৮০ কোটি ডলার খরচ করলে বছরে ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের ক্ষতি এড়ানো যাবে।
তবুও ইতালির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই সপ্তাহে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। স্পেনের লা পালমার ক্যানারি দ্বীপে একটি দাবানলের সঙ্গে লড়ছে, যা ৪ হাজার ৬০০ হেক্টর জমি পুড়িয়ে দিয়েছে। দ্রুত উষ্ণ হয়ে উঠছে ইউরোপ। বিষয়টি নিয়ে মহাদেশটিতে নতুন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। মহাদেশটির জলবায়ু বিপর্যয় মোকাবিলায় নেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। ঠিক যেমন বাংলাদেশ ছিল ১৯৭০ এর দশকে।
এই পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ পরিণতি হবে আরও মারাত্মক এবং ব্যয়বহুল। বার্সেলোনা ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের গত সপ্তাহে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, কার্যকরী অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি গ্রীষ্মে প্রায় ৬৮ হাজার ইউরোপীয় প্রচণ্ড গরমে মারা যাবে। ইউরোপিয়ান এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি জানিয়েছে, বিপর্যয়ের কারণে ১৯৮০ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১৩ বিলিয়ন ইউরো মূল্যমানের ক্ষতি হয়েছে, এই অঙ্ক সামনে আরও বাড়বে।
জাতিসংঘের অধীন থাকা বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মহাসচিব পেটেরি তালাস বলেছেন, ‘এই প্রধান জলবায়ু ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলির প্রারম্ভিক সতর্কতা এবং পূর্বাভাসমূলক পদক্ষেপ জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর জন্য অত্যাবশ্যক।’
সৌভাগ্যক্রমে মহাদেশটির দুর্যোগ পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। এপ্রিলে যুক্তরাজ্য প্রথমবারের মতো চরম আবহাওয়া সম্পর্কে জরুরি বার্তা সম্প্রচারের জন্য একটি সিস্টেম পরীক্ষা করে। মে মাসে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে নতুন ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ করা হয়েছে। প্যারিস, মিলান এবং রটারডামের মতো অন্য শহরগুলো ‘এক্সট্রিম হিট’ অ্যাপ চালু করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয় মোকাবিলায় ইউরোপকে প্রস্তুতি আরও বাড়াতে হবে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রাকটিক্যাল অ্যাকশনের ‘বন্যা প্রতিরোধী’ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তামান্না রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্প, ভূমিধস, অগ্নিকাণ্ড এবং আকস্মিক বন্যা মোকাবিলা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে কাজ করছে। এটি স্মার্ট, অত্যাধুনিক সতর্কতা ব্যবস্থা ক্ষয়ক্ষতি কতটা কমিয়ে আনতে পারে তা দেখিয়েছে।
তামান্না রহমান আরও বলেন, ‘আমাদের মডেল দুর্যোগকালে জীবন বাঁচাতে সফল হয়েছে। এখন আমাদের এটিতে সঠিকভাবে বিনিয়োগ করতে হবে এবং আরও এগিয়ে নিতে হবে।’
যুক্তরাজ্যের ‘দ্য টেলিগ্রাফে’ প্রকাশিত পুরস্কারজয়ী সাংবাদিক পিটার ইয়ংয়ের প্রতিবেদন অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহ-সম্পাদক মুহম্মদ আবদুল বাছেদ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ ও প্রাণ প্রকৃতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে গ্লোবাল ক্লাইমেট মিডিয়া নেটওয়ার্ক (জিসিএমএন)। হাবিবুর রহমানকে (একাত্তর টিভি, বাংলাদেশ) আহ্বায়ক এবং আশেকিন প্রিন্সকে (চ্যানেল ২৪, বাংলাদেশ) সদস্যসচিব করে জিসিএমএন ১১ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি গঠ
৬ ঘণ্টা আগেএবারের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনকে ‘কপ অব দ্য ফিন্যান্স’ বা অর্থায়নের কপ বলা হলেও সেটি কেবল কাগজে-কলমেই ঠেকেছে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে উন্নয়নশীল দেশগুলো বার্ষিক ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের জলবায়ু ক্ষতিপূরণের যে দাবি জানিয়েছিল, সম্মেলনের ১১তম দিনেও সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়নি। এমনকি বিগত বছরগুলোর ক্ষতিপূ
১৪ ঘণ্টা আগেকার বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়েছে। বাতাসের মান সূচকে আজ ঢাকা দূষণের মাত্রা ১৯৫, যা অস্বাস্থ্যকর। অন্যদিকে একদিন পরই আবারও বায়ুদূষণের শীর্ষে ভারতের রাজধানী দিল্লি। এর পরে আছে পাকিস্তানের লাহোর। এ ছাড়া শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে রয়েছে ইজিপট ও চীন...
১৫ ঘণ্টা আগেপাঁচ বছর আগে প্লাস্টিক দূষণ রোধের লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের এক জোট গড়ে তুলেছিল বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় তেল ও রাসায়নিক কোম্পানিগুলো। কিন্তু নতুন তথ্য বলছে, এই সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলো যে পরিমাণ নতুন প্লাস্টিক উৎপাদন করেছে, তা তাদের অপসারিত বর্জ্যের তুলনায় ১ হাজার গুণ বেশি।
১ দিন আগে