কোথাও চালের সংকট নেই, তবু বাড়ছে দাম

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ৩৭
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২২, ০৮: ৪০

দেশের মোকাম, পাইকারি ও খুচরা বাজারসহ কোথাও চালের সংকট নেই। এরপরও বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ছে চালের দাম। তিন-চার দিনের ব্যবধানে রাজধানী ও আশপাশের বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে চালের দাম কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা বাজারের মেসার্স মায়ের দোয়া রাইস এজেন্সি থেকে গতকাল বুধবার বিকেলে ৬০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি হাসকি নাজিরশাইল চাল কেনেন বাসাবাড়িতে কাজ করা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, তিন দিন আগেও একই চাল ৫৭ টাকায় কিনেছিলেন।

দাম বাড়ার কারণ কী, জানতে চাইলে দোকানি সবুজ মিয়া বলেন, ‘গত দুই-তিন দিনে সব চালের দামই বস্তাপ্রতি ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে আমাদের আগের কেনা থাকায় দাম বাড়াইনি। কিন্তু এখন বাড়াতে হচ্ছে।’

রাজধানীর খুচরা চাল বিক্রেতারা জানান, তিন-চার দিন আগেও প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬৬-৭২ টাকা। বর্তমানে তা ৭০-৭৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৫৬-৫৭ টাকার লতা (বিআর-২৮) চাল বিক্রি হয়েছে ৬০-৬১ টাকা। আর ৫০ টাকার স্বর্ণা চাল ৫২-৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানীর বাবুবাজার ও বাদামতলী এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক দিন আগেও তাঁদের বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম ছিল ৬৬ থেকে ৬৭ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৬৮-৭০ টাকায়। ৫৩-৫৪ টাকার লতা চাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৬ টাকায় এবং ৪৩-৪৩ টাকার আমদানি করা গুটি চাল ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের বাজারে বর্তমানে যেসব চাল সরবরাহ রয়েছে, তা বোরো মৌসুমের। বোরোর শেষ পর্যায় ও আমন ওঠার আগে বাজারে চালের একটা ঘাটতি থাকে। আর এ সময়ে চালের দাম বাড়ে। সরকার সংকট মোকাবিলায় বেসরকারিভাবে আমদানির অনুমোদন দিলেও ডলার-সংকটে আমদানি হচ্ছে না। এ ছাড়া দেশের কিছু জেলায় আগাম জাতীয় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমন চাল বাজারে সরবরাহ বাড়লেও দাম কিছুটা থামবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে আগামী বছরে বিশ্বে এবং দেশে খাদ্যসংকটের আশঙ্কা থেকে অনেকেই বেশি পরিমাণে চাল কিনে রাখছেন বলে জানা গেছে।

পুরান ঢাকার বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মেসার্স রশিদ রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী আবদুর রশিদ জানান, বাজারে চালের কোনো সংকট নেই। বিক্রিও তুলনামূলক অনেক কম। এরপরও সব ধরনের চালের দাম কেজিপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মোকামে দাম বাড়ায় তাঁরাও বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছেন।

দেশের উত্তরাঞ্চলের মোকামমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে চালের কোনো সংকট বা ঘাটতি নেই। বাজারে বর্তমানে বিক্রি হওয়া চাল প্রায় ছয়-সাত মাস আগের। মজুতও প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে আমন চাল বাজারে সরবরাহ বাড়লেও দাম খুব একটা কমবে বলে মনে করছেন না মোকামমালিকেরা।

নওগাঁ জেলা ধান-চাল আড়তদার সমিতির সভাপতি নিরদ বরণ সাহা বলেন, আগামী বোরো মৌসুমে উৎপাদন ভালো হলে দেশে ধান-চালের সংকট হবে না।

দেশে ধান-চালের সংকট না হলেও দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংকট না থাকলেও অসৎ ব্যবসায়ীর সংকট নেই। নাই নাই শব্দের কারণে দাম বাড়ছে। অনেকেই চাহিদার চেয়ে বেশি চাল কিনছে। দেশে ধান-চালের কোনো সংকট হবে না। মানুষকে আশ্বস্ত করতে গণমাধ্যমকেও দায়িত্ব নিতে হবে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সারা বছরে মোট চালের চাহিদা ৩ কোটি ৬০ লাখ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৭৬ লাখ টন। আর ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মোট চাল আমদানি হয় ১০ লাখ ৬৭ হাজার টন।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৮ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে চাল মজুত রয়েছে ১৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬৮৮ টন এবং ধান ১১ হাজার ৬৩২ টন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত