সিলেটসহ পাঁচ জেলায় পানিবন্দী ১৪ লাখ মানুষ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৪, ১০: ০৩
আপডেট : ২০ জুন ২০২৪, ১০: ২৬

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দ্রুত বাড়ছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, করোতায়া, কুশিয়ারা, সোমেশ্বরীসহ দেশের প্রধান নদ-নদীর পানি। এরই মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ পাঁচ জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ। ঝুঁকিতে আছে রংপুর, গাইবান্ধা, শেরপুর, নেত্রকোনাসহ উত্তরাঞ্চলের ছয়টি জেলা। এসব জেলার কয়েকটিতে এরই মধ্যে নদীভাঙন শুরু হয়েছে।

সিলেটে পানিবন্দী প্রায় ৯ লাখ মানুষ
গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিলেট নগর এবং জেলার বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৮ লাখের বেশি মানুষ। সিলেট সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন সূত্র বলেছে, সিলেট নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের ২৮টি ওয়ার্ডের ৮০ হাজার মানুষ বন্যাকবলিত। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নের ১ হাজার ৫৪৮টি গ্রামের ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন বন্যাকবলিত। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় জেলার সব পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, মোটামুটি সিলেটের সব জায়গা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাটে সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যাকবলিত। এই উপজেলার সব সড়ক ডুবে যাওয়ায় জেলা শহরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জে বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে সব সড়ক ডুবে গেছে।

সিলেট নগরের উপশহরের এইচ ব্লকের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি আমির হোসেন (৩৮) বলেন, ঈদের আগের দিন রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়। বাসায় পানি উঠে যায়।

এখন ঘরে কোমরপানি। পরিবারের আট সদস্য নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। উপশহরের প্রতিটি ব্লকেই পানি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলেছে, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি-গোয়াইনঘাটের পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস বলেন, বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। তাই পরিস্থিতির উন্নতি হতে সময় লাগবে।

সুনামগঞ্জে পানিবন্দী ৭০ হাজারের বেশি মানুষ
সুনামগঞ্জে ১২টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলার চারটি পৌরসভা ও ৭৪টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার ৭০ হাজার মানুষ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা। পুরো জেলায় হাওর ও নিম্নাঞ্চল এখন জলমগ্ন।

ছাতকের মণ্ডলীভোগ এলাকার বাসিন্দা পারভিন বেগম বলেন, ‘ঘরের ভিতরে কোমরপানি। তাই আশ্রয়কেন্দ্রে আইচ্ছে সবকিছু ফালাইয়া রাখিয়া।’

সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্র বলেছে, ছাতক সদরে সুরমার পানি বিপৎসীমার ১৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী, অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। পানি আরও বাড়তে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, প্রশাসনের সবাইকে এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সব রকমের নির্দেশনা দেওয়া আছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী রয়েছে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের মুজিবনগর। ছবি: আজকের পত্রিকামৌলভীবাজারে পানিবন্দী ৩ লাখ মানুষ
মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলার সব কটির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ৩ লাখ মানুষ। মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধলাই নদের পানি বেড়ে চৈতন্যগঞ্জ, খুশালপুর, চৈত্রঘাট, শ্যামেরকোনা এলাকায় ফসল রক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কের ছয়কুট এলাকা এবং আদমপুর ইউনিয়নের কাঠালকান্দি-আধাকানি সড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি বইছে।

জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মৌলভীবাজারের সব কটি উপজেলায় মানুষ পানিবন্দী। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করা হচ্ছে।’

হবিগঞ্জে বন্যাকবলিত ১ লাখ মানুষ
টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জ জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। নবীগঞ্জে কুশিয়ারার পানি বাঁধ উপচে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১ লাখের বেশি মানুষ। জেলা প্রশাসন সূত্র বলেছে, নবীগঞ্জের প্রায় ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ১৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

পাহাড়ি ঢলে ডুবছে রৌমারী
ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলায়ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুরু হয়েছে ব্রক্ষপুত্র ও তিস্তায় ভাঙন। কুড়িগ্রাম পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলেছে, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলাগুলোয় ত্রাণসহায়তা প্রস্তুত রয়েছে।’

ঝুঁকিতে রংপুরসহ উত্তরের কয়েকটি জেলা
রংপুরে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রংপুরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে রংপুর পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে। তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়ার কারণে রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা উপজেলা ছাড়াও লালমনিরহাট সদর, জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নেত্রকোনায় সোমেশ্বরী নদীর পানিও বাড়ছে। শেরপুরে বাড়ছে সব নদ-নদীর পানি। পাউবো সূত্র বলেছে, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি ও সোমেশ্বরী, নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী এবং সদর উপজেলার মৃগী ও পুরাতন ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বাড়ছে। মহারশির পানি নিম্নাঞ্চলে ঢুকতে শুরু করেছে। চেল্লাখালীর পানিও বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শেরপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ), মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ), কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার), নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ), দুর্গাপুর (নেত্রকোনা), চিলমারী (কুড়িগ্রাম) ও গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত