লোকসানে পেঁয়াজচাষিরা

রাশেদুজ্জামান, মেহেরপুর
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২২, ০৭: ০৩
আপডেট : ২৭ মার্চ ২০২২, ১১: ১৯

বৈরী আবহাওয়ায় এবার ফলন ভালো হয়নি পেঁয়াজের। অন্যদিকে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় লোকসানের মুখে পড়েছে মেহেরপুরের পেঁয়াজচাষিরা। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে প্রতিনিয়তই কমছে এর দাম।

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের চাষি কামাল হোসেন। লাভের আশায় ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন। প্রথম দিকে দামও ভালো ছিল। মণপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা দরে এক বিঘা জমির পেঁয়াজও বিক্রি করেছিলেন। দাম বাড়তে থাকায় বাকি ২ বিঘা জমির পেঁয়াজ রেখে দিয়েছিলেন জমিতেই। এখন উত্তোলনের সময়। কিন্তু বর্তমান বাজারদরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে গেলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাঁকে। তাই ফসল জমি থেকে তুলতে পারছেন না। আবার বেশি দিন জমিতে ফেলেও রাখতে পারবেন না। রাখলে ফাটল ধরবে পেঁয়াজে। ফলে পেঁয়াজ নিয়ে উভয় সংকটে পড়েছেন এ চাষি।

কামাল হোসেন বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগেও বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল মণপ্রতি ১ হাজার টাকার ওপরে। কিন্তু কিছুদিন ধরে অব্যাহত পেঁয়াজের দাম কমে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা মণ। এতে উৎপাদন খরচই উঠবে না।’

 কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, বিঘাপ্রতি জমিতে ১০০ থেকে ১৫০ মণ ফলন হওয়ায় এ অঞ্চলের বেশির ভাগ চাষি ভারতীয় সুখসাগর জাতের পেঁয়াজের আবাদ করে থাকেন। চলতি মৌসুমে জেলায় ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে, যা থেকে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজে উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কাঙ্ক্ষিত ফলন পাননি চাষিরা। অন্যদিকে বাজারদর প্রতিনিয়তই কমছে।

মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি হায়দার গাজী বলেন, ‘৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম। ভালো দাম পাওয়ায় আগেই আড়াই বিঘা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম রমজানের আগে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়বে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। সঙ্গে বেড়েছে সার ও সেচ খরচ। ফলে ভালো দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেও উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন বাকি ১০ কাঠা জমির পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছি না। আবার এ জাতের পেঁয়াজের সংরক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এভাবে চলতে থাকলে কৃষক কীভাবে বাঁচবেন?’

পেঁয়াজ ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, এখানকার উৎপাদিত পেঁয়াজ চলে যায় রাজধানী, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায়। সোনা মসজিদ ও ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রতিনিয়তই আসছে ভারতীয় পেঁয়াজ। ফলে পড়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম। এতে আমরা লোকসানের মুখে পড়ছি। তার প্রভাব পড়ছে চাষিদের ওপর। কারণ এখান থেকে পেঁয়াজ কিনে বাইরে বিক্রি করাতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। লোকসান দিয়েতো আর ব্যবসা করা যায় না। এখনো মাঠে চাষিদের ৪০ ভাগ পেঁয়াজ পড়ে আছে। দ্রুত পেঁয়াজ বিক্রি করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন চাষিরা।’

মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির বিষয়টি সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত। আমরা মন্ত্রণালয়ে পরামর্শ দিয়েছি, ভরা মৌসুমে যাতে পেঁয়াজ আমদানি না করা হয়। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, এ সময় যাতে জমিতে সার ও সেচ না দেওয়া হয়। তাহলে জমিতে আরও কিছুদিন পেঁয়াজ রেখে দিতে পারবেন। রমজানে চাহিদা বাড়লে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়তে পারে। অন্যদিকে পেঁয়াজ উত্তোলনের পর ঘরোয়াভাবে কিছুদিন কীভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়, চাষিদের সে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত