সীমা লঙ্ঘন করে আগ্রাসী ঋণ দিয়েছে ৯ ব্যাংক

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
প্রকাশ : ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮: ৩৪

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করে আগ্রাসী ঋণ দিয়েছে ৯টি ব্যাংক। এতে ব্যাংকের গ্রাহকের জন্য বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করা ব্যাংকগুলো হলো পদ্মা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে সীমার বাইরে ঋণ দিলে ঋণশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়। তা ছাড়া ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ের চিত্রও এখন খুব একটা সন্তোষজনক নয়। এমতাবস্থায় অতিরিক্ত ঋণ দিয়ে যদি খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে যায়, তাহলে ব্যাংকের পাশাপাশি আমানতকারীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ দরকার।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, বর্তমানে প্রচলিত ধারার ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৭ টাকা এবং ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ৯২ টাকা পর্যন্ত ঋণ বা বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু ৯টি ব্যাংক অ্যাডভান্স ডিপোজিট রেসিও (এডিআর) বা ঋণ-আমানত অনুপাত সীমার বেশি ঋণ দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত নভেম্বরের ১০ তারিখ পর্যন্ত প্রচলিত ধারার পদ্মা ব্যাংকের এডিআর দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংকের ৯২ দশমিক ৪৫ শতাংশ, এবি ব্যাংকের ৯২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংকের ৮৭ দশমিক ৩২ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংকের ৮৭ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ওয়ান ব্যাংকের ৮৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ ছাড়া ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সীমার বাইরে বিনিয়োগের তালিকায় থাকা এক্সিম ব্যাংকের এডিআর ৯৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৯৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।

ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত আইনে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে টানা পাঁচবার এডিআর সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও অনেক ব্যাংক এটি সমন্বয় করতে পারেনি। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহে গতিশীলতা আনা, ব্যাংকিং খাতের সার্বিক তারল্য পরিস্থিতির উন্নয়নে এডিআর ২ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ আমানতকারীদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করা হয়েছে।

এডিআর সীমা অতিক্রম করার বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কয়েকজন বড় গ্রাহককে ঋণ দিতে গিয়ে আমাদের এডিআর সীমা অতিক্রম করেছিল। তবে পরবর্তীকালে আমরা তা সমন্বয় করে নিয়েছি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের আমানতকারীদের ব্যাংকের জন্য অতিরিক্ত কোনো ঝুঁকি নেই। আশা করছি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী প্রতিবেদনে এডিআর সীমার মধ্যেই থাকবে।’

আর এক্সিম ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, নিয়ম মেনে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে এডিআর প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ দেওয়ার যে সীমা বেঁধে দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে অনেক হিসাব-নিকাশ করে দিয়েছে এবং তা যথেষ্ট বৈশ্বিক মানের। সেই সীমা অতিক্রম করা ঠিক নয়। এতে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি তৈরি করবে। বিশেষ করে আমানতকারীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকবে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘আমানতের বিপরীতে কত টাকা ঋণ দিতে পারবে, এর একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। তবে ব্যাংকগুলোর এ অনুপাত বিভিন্ন সময় ওঠানামা করে। এটা সাময়িক হতে পারে। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ব্যাংক এডিআর সীমার বাইরে থাকলে সে ব্যাংককে অবশ্যই চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হবে। অস্বাভাবিক কিছু ঘটলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত