সৈয়দা সাদিয়া শাহরীন
সেদিন সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল একটি কোমল পানীয়র বিজ্ঞাপন নিয়ে। কোরবানির ঈদ এলেই এই বিজ্ঞাপনের কথা সবার মনে পড়ে যায়—‘এক বোতলে দুই-এক খুশি আমরা মুসলমান/ একখান হইল রমজানের ঈদ, আরেকখান কুরবান...’। তো আমাদের আলোচনা ছিল এই বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত জিঙ্গেলের লিরিক নিয়ে। ছোটকাল থেকে আমরা শুনে এসেছি এর প্রথম লাইন, ‘ভাইসাব খবর একখান, খবর একখান দেরি হইয়া যায়...’। সহকর্মী নতুন তথ্য দিলেন, ওইটা ‘খবর একখান’ হবে না, হবে ‘সবুরে খান’! তিনিও আরেকজনের কাছে এ তথ্য পেয়েছেন। কিন্তু আমরা দুজনেই খুব চিন্তিত হয়ে আলোচনা করছিলাম আসলে কোনটি সঠিক। এত দিন তাহলে ভুল জেনে এলাম!
নিশ্চিত হতে ইউটিউব ঘেঁটে পুরোনো সেই বিজ্ঞাপন বের করলাম। মাথায় হেডফোন গুঁজেও মগজে গেঁথে যাওয়া সেই আগের লিরিকসই শুনতে পেলাম। মনেই হলো না ‘সবুরে খান’ বলছে। যাই হোক, ঈদটাও মনে হয় যেন পুরোনো দিনে ভালো ছিল, আনন্দময় ছিল। এখন যে সবাই আনন্দ করে না, তেমনটা নয়। তবে এ ক্ষেত্রে হলফ করে বলা যায়, সবাই নিজেদের ছোটবেলা কিংবা আগেকার দিনের ঈদকেই প্রাধান্য দেবে। ওই যে কথায় বলে, ‘যায় দিন ভালো...’। তবু কেউ ‘খবর একখান’ নিয়ে আর কেউ ‘সবুরে খান’ নিয়ে খুশি থাকেন। খুশি থাকাতে নিশ্চয়ই কারও কোনো আপত্তি নেই। কেননা, ঈদ মানেই যে ‘খুশি’!
আমরা কোরবানি ঈদে একটু অন্য রকমই খুশি পেতাম। এই যেমন আমার চাচাতো ভাই মন্টু আর সেন্টুকে পশুর হাটে না নিয়ে গেলে হাত-পা ছুড়ে উথাল-পাতাল কান্না জুড়ে দিত। দেখতাম আশপাশের প্রতিবেশী বাচ্চারাও একই কাজ করত। এটা হাটে যাওয়ার একটা ‘বাচ্চা টেকনিক’ হতে পারে! তো, এইভাবে প্রতিদিন তাদের হাটে যাওয়াই লাগত। বড়দের সঙ্গে ওরা যেত। আর যখন খানিকটা বড় হলো ওরাই, তখন বন্ধুরা মিলে যাওয়া শুরু করে। এর মধ্যেই যে কী আনন্দ ওদের! আর মেয়েশিশুরা সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির পশু দেখত, ঘাস-কাঁঠালপাতা খাইয়ে দিত। কাদের পশু কত সুন্দর, তা নিয়ে হতো আলোচনা। মোটেও দাম নিয়ে নয়। ছেলেরাও যেত প্রতিবেশীর বাড়ি। তবে এ ক্ষেত্রে ছেলেদের বাড়তি সুবিধা ও আনন্দ ছিল হাটে যাওয়ার ব্যাপারটা।
ইদানীং ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাই কোরবানির পশুর হাটে যেতে পারছে। ব্যবস্থাটা ওই রকম করেই করা হয় এখন। বিশেষ করে খামারগুলোতে। এটা ভালো। তবে ছোটবেলায় যারা হাটে গিয়ে গরু-ছাগলের লাথি-গুঁতো খেয়ে বাড়ি ফিরেছে, তারা হাসিমুখেই থাকত। এ যেন ছিল অদ্ভুত রকমের আনন্দ! কারও কারও বিবেচনায় থাকত—যে গরু লাথি দেয়, সে গরুই কিনতে হবে!
আজকাল অনেকে ‘লাথি’ বা ‘গুঁতো’ খাওয়ার ভয়ে আর পশুর হাটে যেতে চান না। অনলাইনেই নাকি ছবি আর ভিডিও দেখে কোরবানির পশু কেনা যায়। আবার অনেকে পশু জবাইয়ের তদারকিটাও ঝামেলা মনে করেন। বিশেষ করে খামার বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পশু জবাই থেকে শুরু করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করিয়ে বাড়িতে মাংস আনেন। এতেই হয়তো তাঁদের আনন্দ। ঈদের আনন্দের মাপকাঠি থাকলে অবশ্য মেপে দেখা যেত কোন দলের ‘খুশি’ বেশি!
কোরবানির ঈদ যে আলাদা একটা তাৎপর্য বহন করে—এ কথা তো কারও অজানা নয়। শুধু প্রিয় পশু কোরবানি করাই এই ঈদের উদ্দেশ্য নয়, কোরবানি করতে হয় নিজেদের মনের ময়লা আর স্বার্থপরতা; সব হিংসা-বিদ্বেষ, আর যত নেতিবাচক দিক। আমরা কি পারি সেই সব ত্যাগ করতে? শুধু তো এই ঈদেই নয়, সারা বছরের জন্য এসব ত্যাগ করতে হয়, শুধু শুরুটা করে দেয় এই কোরবানির ঈদটা। আর এই ত্যাগের বিনিময়েই মেলে সত্যিকারের ‘খুশি’।
বছর ঘুরে আরেকখান কোরবানির ঈদ চলে এসেছে। আসুন না, আমরা প্রিয় পশুর সঙ্গে নিজেদের নেতিবাচক দিকগুলোও কোরবানি দিয়ে দিই, মনটাকে খুশি করি।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
সেদিন সহকর্মীর সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল একটি কোমল পানীয়র বিজ্ঞাপন নিয়ে। কোরবানির ঈদ এলেই এই বিজ্ঞাপনের কথা সবার মনে পড়ে যায়—‘এক বোতলে দুই-এক খুশি আমরা মুসলমান/ একখান হইল রমজানের ঈদ, আরেকখান কুরবান...’। তো আমাদের আলোচনা ছিল এই বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত জিঙ্গেলের লিরিক নিয়ে। ছোটকাল থেকে আমরা শুনে এসেছি এর প্রথম লাইন, ‘ভাইসাব খবর একখান, খবর একখান দেরি হইয়া যায়...’। সহকর্মী নতুন তথ্য দিলেন, ওইটা ‘খবর একখান’ হবে না, হবে ‘সবুরে খান’! তিনিও আরেকজনের কাছে এ তথ্য পেয়েছেন। কিন্তু আমরা দুজনেই খুব চিন্তিত হয়ে আলোচনা করছিলাম আসলে কোনটি সঠিক। এত দিন তাহলে ভুল জেনে এলাম!
নিশ্চিত হতে ইউটিউব ঘেঁটে পুরোনো সেই বিজ্ঞাপন বের করলাম। মাথায় হেডফোন গুঁজেও মগজে গেঁথে যাওয়া সেই আগের লিরিকসই শুনতে পেলাম। মনেই হলো না ‘সবুরে খান’ বলছে। যাই হোক, ঈদটাও মনে হয় যেন পুরোনো দিনে ভালো ছিল, আনন্দময় ছিল। এখন যে সবাই আনন্দ করে না, তেমনটা নয়। তবে এ ক্ষেত্রে হলফ করে বলা যায়, সবাই নিজেদের ছোটবেলা কিংবা আগেকার দিনের ঈদকেই প্রাধান্য দেবে। ওই যে কথায় বলে, ‘যায় দিন ভালো...’। তবু কেউ ‘খবর একখান’ নিয়ে আর কেউ ‘সবুরে খান’ নিয়ে খুশি থাকেন। খুশি থাকাতে নিশ্চয়ই কারও কোনো আপত্তি নেই। কেননা, ঈদ মানেই যে ‘খুশি’!
আমরা কোরবানি ঈদে একটু অন্য রকমই খুশি পেতাম। এই যেমন আমার চাচাতো ভাই মন্টু আর সেন্টুকে পশুর হাটে না নিয়ে গেলে হাত-পা ছুড়ে উথাল-পাতাল কান্না জুড়ে দিত। দেখতাম আশপাশের প্রতিবেশী বাচ্চারাও একই কাজ করত। এটা হাটে যাওয়ার একটা ‘বাচ্চা টেকনিক’ হতে পারে! তো, এইভাবে প্রতিদিন তাদের হাটে যাওয়াই লাগত। বড়দের সঙ্গে ওরা যেত। আর যখন খানিকটা বড় হলো ওরাই, তখন বন্ধুরা মিলে যাওয়া শুরু করে। এর মধ্যেই যে কী আনন্দ ওদের! আর মেয়েশিশুরা সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির পশু দেখত, ঘাস-কাঁঠালপাতা খাইয়ে দিত। কাদের পশু কত সুন্দর, তা নিয়ে হতো আলোচনা। মোটেও দাম নিয়ে নয়। ছেলেরাও যেত প্রতিবেশীর বাড়ি। তবে এ ক্ষেত্রে ছেলেদের বাড়তি সুবিধা ও আনন্দ ছিল হাটে যাওয়ার ব্যাপারটা।
ইদানীং ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাই কোরবানির পশুর হাটে যেতে পারছে। ব্যবস্থাটা ওই রকম করেই করা হয় এখন। বিশেষ করে খামারগুলোতে। এটা ভালো। তবে ছোটবেলায় যারা হাটে গিয়ে গরু-ছাগলের লাথি-গুঁতো খেয়ে বাড়ি ফিরেছে, তারা হাসিমুখেই থাকত। এ যেন ছিল অদ্ভুত রকমের আনন্দ! কারও কারও বিবেচনায় থাকত—যে গরু লাথি দেয়, সে গরুই কিনতে হবে!
আজকাল অনেকে ‘লাথি’ বা ‘গুঁতো’ খাওয়ার ভয়ে আর পশুর হাটে যেতে চান না। অনলাইনেই নাকি ছবি আর ভিডিও দেখে কোরবানির পশু কেনা যায়। আবার অনেকে পশু জবাইয়ের তদারকিটাও ঝামেলা মনে করেন। বিশেষ করে খামার বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পশু জবাই থেকে শুরু করে ভাগ-বাঁটোয়ারা করিয়ে বাড়িতে মাংস আনেন। এতেই হয়তো তাঁদের আনন্দ। ঈদের আনন্দের মাপকাঠি থাকলে অবশ্য মেপে দেখা যেত কোন দলের ‘খুশি’ বেশি!
কোরবানির ঈদ যে আলাদা একটা তাৎপর্য বহন করে—এ কথা তো কারও অজানা নয়। শুধু প্রিয় পশু কোরবানি করাই এই ঈদের উদ্দেশ্য নয়, কোরবানি করতে হয় নিজেদের মনের ময়লা আর স্বার্থপরতা; সব হিংসা-বিদ্বেষ, আর যত নেতিবাচক দিক। আমরা কি পারি সেই সব ত্যাগ করতে? শুধু তো এই ঈদেই নয়, সারা বছরের জন্য এসব ত্যাগ করতে হয়, শুধু শুরুটা করে দেয় এই কোরবানির ঈদটা। আর এই ত্যাগের বিনিময়েই মেলে সত্যিকারের ‘খুশি’।
বছর ঘুরে আরেকখান কোরবানির ঈদ চলে এসেছে। আসুন না, আমরা প্রিয় পশুর সঙ্গে নিজেদের নেতিবাচক দিকগুলোও কোরবানি দিয়ে দিই, মনটাকে খুশি করি।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে