শাইখ সিরাজ
বর্তমান সময়ে এসে অনলাইন শিখন পদ্ধতি বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। একই সময়ে অডিও, ভিডিও ও টেক্সট একই জায়গায় পাওয়া যায়। কৃষির প্রতি তরুণেরা যেভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, তাঁদের কাছে উপযুক্ত কৃষি প্রশিক্ষণ পৌঁছে দেওয়া জরুরি। আমার কাছে প্রতিদিনই অসংখ্য চিঠি, ই-মেইল ও ফোন আসে। তরুণেরা কৃষিবিষয়ক নানান পরামর্শ ও চাষপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান, শিখতে চান। বাংলাদেশের কৃষি যতটা এগিয়েছে, কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলো মনে হয় ততটা এগোতে পারেনি। ফেসবুক, ইউটিউবের এই সময়ে শিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা খুব একটা কঠিন বিষয় না। মনে পড়ছে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে আমিও দূরশিক্ষণ প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম, তখন তো আর অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা ছিল না।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে তখন ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানটি দর্শকপ্রিয়তার তুঙ্গে। প্রচার হয় প্রতি শনিবার রাত সাড়ে ৮টায়, ঠিক বাংলা সংবাদের পর। এই অনুষ্ঠানের কল্যাণে তরুণদের মাঝে হাঁস-মুরগি পালন, খাঁচায় মুরগির চাষ, মাছের খামার খুব ব্যাপক প্রসার ঘটে। সে সময় অপরিহার্য হয়ে পড়ে কৃষি জ্ঞানটাকে আরও নিবিড়ভাবে পৌঁছে দেওয়া, অর্থাৎ কৃষি প্রশিক্ষণ। তরুণেরা খামার গড়তে আগ্রহী কিন্তু খামার গড়ার প্রায়োগিক কারিগরি কোনো জ্ঞান নেই। মুরগির খামার, মাছের খামার, গরু মোটাতাজাকরণ কিংবা নার্সারি যা-ই হোক। সবখানেই কারিগরি জ্ঞান প্রয়োজন। তখন দেশের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো উপলব্ধি করল, আগ্রহী তরুণদের প্রশিক্ষণ দরকার। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোয় হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ও বনায়নের নতুন কিছু কোর্স শুরু হলো। তরুণেরা তুমুল আগ্রহ নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোয় যাওয়া শুরু করলেন। এই প্রশিক্ষণের প্রসারও দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তখন প্রতিদিন বিকেলে প্রচারিত হতো উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রযোজিত ‘দূরশিক্ষণ’ নামে একটি অনুষ্ঠান। কোনো দিন ইংরেজি, কোনো দিন গণিত, কোনো দিন ইতিহাস, কোনো দিন বিজ্ঞান, কোনো দিন ভূগোল, কোনো দিন কৃষি সম্পর্কে অনুষ্ঠান। খুব সম্ভবত ১৯৯৩-৯৪ সালের কথা। তখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসটা ছিল ঢাকা কলেজ চত্বরের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ভবনে। উপাচার্য ছিলেন ড. শমসের আলী। তিনি একদিন আমাকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, যেসব বিষয় আমি বিটিভির ‘মাটি ও মানুষ’-এ দেখাই, সেগুলোকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রশিক্ষণের মতো করে দেখানো যায় কি না। যেমন মাছ কীভাবে চাষ করতে হয়, গরু লালনপালনের পদ্ধতিটা কী? গরু মোটাতাজাকরণের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো। খড় দিয়ে কীভাবে ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক বানাবে? এগুলো একেবারে নিবিড়ভাবে বোধগম্য উপায়ে প্রশিক্ষণ সিরিজ করা যায় কি না। এটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তরুণ প্রজন্মের অনেক উপকার হবে। আমি বেশ আগ্রহী হলাম। কারণ, এর উপযোগিতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত ছিলাম। শুধু তরুণ প্রজন্মই নয়, সব ধরনের দর্শকের কাছে কৃষির এই শিক্ষা জরুরি।
অনুষ্ঠানটির নাম ঠিক করলাম ‘কৃষি কৌশল’। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি কোর্সের সঙ্গে যুক্ত করা হলো ‘কৃষি কৌশল’। এই অনুষ্ঠান প্রযোজনার জন্য বহিরাগত হলেও আমাকে ‘গেস্ট প্রোডিউসার’ হিসেবে নিয়োগ করা হলো। ড. শমসের আলী সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রথম গেস্ট প্রোডিউসার হিসেবে আমাকে নিয়োগ দিলেন।
আমার মহল্লার আরেক বন্ধু মোসাদ্দেক হাসান (বর্তমানে চ্যানেল আইয়ের নির্বাহী পরিচালক, কারিগরি) তখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভিডিও এডিটর ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের এডিটরের চাকরি ছেড়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। মোসাদ্দেক, আমি আর ক্যামেরাম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন মিলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিষয়ক কোর্স কারিকুলাম শুরু করলাম ভিডিওতে। ‘মাটি ও মানুষ’-এর প্রতিটি অনুষ্ঠানের বিষয়কে নিবিড় ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরার কাজ শুরু হলো। পদ্ধতিগত বিষয়গুলো ভিডিও ও বর্ণনায় তুলে আনা হলো। মাছ চাষের কথা যদি বলি, পুকুরের আকার কেমন হবে, কীভাবে খনন করতে হবে, কখন চুন দিতে হবে, কখন পানি ছাড়তে হবে, মাছের পোনা কখন ছাড়তে হবে, পোনার বয়স কত হবে, কী খাবার দিতে হবে—এসব কারিগরি বিষয় সবিস্তারে উঠে আসতে থাকল। আমি ব্যক্তিগতভাবে টেলিভিশনকে সব সময়ই একটি শিক্ষার জায়গা হিসেবে বিবেচনা করে আসছি। আমাদের মতো দেশের টেলিভিশন বিনোদনের পাশাপাশি মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষিত করবে—এটিই স্বাভাবিক। কাজ করতে গিয়ে বারবারই মনে হয়েছে ক্যামেরার চোখে টেলিভিশনের পর্দায় যা দেখাব তার সঙ্গে মিলিয়ে শব্দ বা ধারাবর্ণনা দিয়ে কানে শোনাব। একজন মানুষ খুব সহজেই তা বুঝতে পারবে। এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, টেলিভিশনে ‘কৃষি কৌশল’ শুরুর সময় একই সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারে শুরু হলো ‘মাটির কাছে মানুষের কাছে’। বহুমুখী গণমাধ্যম প্রয়াস। তার আগে রেডিওতে স্থানীয় সংবাদ ও কৃষি খবর পড়ার অভিজ্ঞতা ছিল। আর মনে ছিল রেডিওর ‘দেশ আমার মাটি আমার’ কার্যক্রমটির কথা। যেখানে ‘মজিদের মা’ নামে একটি জনপ্রিয় চরিত্র ছিল। টেলিভিশনে আমাদের কৃষি কৌশলের চেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল রেডিওর অনুষ্ঠান। তার মানে শ্রোতা এখানে দেখতে পাচ্ছে না তাকে শব্দ দিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি সবই বোঝাতে হচ্ছে। আমি অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা বুঝেই মাইক্রোফোন ও রেকর্ডার নিয়ে গ্রামে গেলাম। পোলট্রির এক দিনের বাচ্চার অনুষ্ঠান ধারণের সময় মনে হলো এখানে বাচ্চার কিচিরমিচির আওয়াজটা যদি শ্রোতার কানে না পৌঁছায় তাহলে অনুষ্ঠান প্রাণ পাবে না। আবার যখন পোলট্রি খামারে ডিম সংগ্রহ করার কথা বলছি, সেখানকার ভিন্ন শব্দও অতীব প্রয়োজনীয়। একইভাবে গ্রামে সেচনালার পাশে দাঁড়িয়ে যখন কথা বলছি, তখন কলকল ধ্বনিটা যদি না শোনানো যায়, তাহলে মানুষের মনে দৃশ্যপটতা তৈরি হয় না। একই সঙ্গে সীমাবদ্ধতাটাও বুঝেছি। নিজের কাছেই স্পষ্ট হয়েছে কেন রেডিওতে কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান সফল হয়নি। এ কাজগুলো করতে করতেই প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছি। একই সঙ্গে টেলিভিশন এবং অডিও মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতাটা রপ্ত করা সম্ভব হয়েছে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘কৃষি কৌশল’ করতে গিয়ে নতুন একটি মডেল তৈরির সুযোগ পেলাম। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ ছিল মূলত উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠান। কৃষির ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতাম। নতুন চাষব্যবস্থা, নতুন কৌশল, নতুন ফসল, নতুন বীজ—এসব বিষয় দেখে কৃষক দারুণ উদ্বুদ্ধ হতেন। তাঁরা নতুন কিছু করে পয়সা উপার্জন করছেন। এসব দেখে দর্শক হিসেবে আরেকজন কৃষকও চাইতেন সেটা করতে। কিন্তু তাঁর কাছে কৌশলটা ছিল না। কীভাবে করবেন তা তিনি জানতেন না। বাউবি দূরশিক্ষণের কৃষি কৌশলটা ছিল সে রকম একটা বিষয়। ‘মাটি ও মানুষ’ প্রচার হতো শনিবার। মাটি ও মানুষের শেষে দর্শকদের আমি বলতাম, এ বিষয়ের বিস্তারিত যদি হাতে-কলমে পেতে চান, আগামী বৃহস্পতিবারের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কৃষি কৌশল’ দেখুন। একই টেলিভিশনে ঠিক চার দিন পর দর্শক অপেক্ষা করে অনুষ্ঠানটি দেখতেন। দেখে তিনি আরও সমৃদ্ধ হতেন। কৌশলটা শিখতেন। টেলিভিশনে দেখে যখন তিনি হাতে-কলমে করতে যেতেন অনেক সময় হিসাব বা তথ্য ভুলে যেতেন। তখন সেই দর্শককে আমি টেনে নিয়ে এলাম পত্রিকায়। তখন দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ খুব দাপটের সঙ্গে চলছে। সেখানে ‘চাষবাস’ নামে একটা কলাম লিখতাম আমি। ‘চাষবাস’ কলামে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যা দেখালাম, সেই তথ্যগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরতাম। এতে প্রথম মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান দেখে কৃষক উদ্বুদ্ধ হতেন, তিনি হাতে-কলমে কৌশল জানার জন্য দেখতেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কৃষি কৌশল’। আর তথ্যগুলো কাগজে নিশ্চিতভাবে পাওয়ার জন্য তাঁরা পড়তে শুরু করলেন জনকণ্ঠের চাষবাস কলাম। এটি হয়ে উঠল তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটা ত্রিমুখী মডেল। তখনকার কৃষির উত্তরণে এই ত্রিমুখী কার্যক্রমের বড় একটি অবদান ছিল। দে
অগণিত সফল খামারি রয়েছেন, যাঁরা সে সময়ের এই ত্রিমুখী সম্প্রসারণ কার্যক্রমের কল্যাণে কৃষিতে আসেন এবং উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জন করেন।
বর্তমান সময়ে এসে অনলাইন শিখন পদ্ধতি বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। একই সময়ে অডিও, ভিডিও ও টেক্সট একই জায়গায় পাওয়া যায়। কৃষির প্রতি তরুণেরা যেভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, তাঁদের কাছে উপযুক্ত কৃষি প্রশিক্ষণ পৌঁছে দেওয়া জরুরি। বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষা ইনস্টিটিউটগুলো এ ধরনের প্রশিক্ষণ পরিচালনায় উদ্যোগী হতে পারে। ঠিক তথ্য ও পদ্ধতি তরুণ আগ্রহীদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে তাঁদের অংশগ্রহণে কৃষি অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।
শাইখ সিরাজ, কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
বর্তমান সময়ে এসে অনলাইন শিখন পদ্ধতি বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। একই সময়ে অডিও, ভিডিও ও টেক্সট একই জায়গায় পাওয়া যায়। কৃষির প্রতি তরুণেরা যেভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, তাঁদের কাছে উপযুক্ত কৃষি প্রশিক্ষণ পৌঁছে দেওয়া জরুরি। আমার কাছে প্রতিদিনই অসংখ্য চিঠি, ই-মেইল ও ফোন আসে। তরুণেরা কৃষিবিষয়ক নানান পরামর্শ ও চাষপদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চান, শিখতে চান। বাংলাদেশের কৃষি যতটা এগিয়েছে, কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমগুলো মনে হয় ততটা এগোতে পারেনি। ফেসবুক, ইউটিউবের এই সময়ে শিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা খুব একটা কঠিন বিষয় না। মনে পড়ছে গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে আমিও দূরশিক্ষণ প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলাম, তখন তো আর অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা ছিল না।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে তখন ‘মাটি ও মানুষ’ অনুষ্ঠানটি দর্শকপ্রিয়তার তুঙ্গে। প্রচার হয় প্রতি শনিবার রাত সাড়ে ৮টায়, ঠিক বাংলা সংবাদের পর। এই অনুষ্ঠানের কল্যাণে তরুণদের মাঝে হাঁস-মুরগি পালন, খাঁচায় মুরগির চাষ, মাছের খামার খুব ব্যাপক প্রসার ঘটে। সে সময় অপরিহার্য হয়ে পড়ে কৃষি জ্ঞানটাকে আরও নিবিড়ভাবে পৌঁছে দেওয়া, অর্থাৎ কৃষি প্রশিক্ষণ। তরুণেরা খামার গড়তে আগ্রহী কিন্তু খামার গড়ার প্রায়োগিক কারিগরি কোনো জ্ঞান নেই। মুরগির খামার, মাছের খামার, গরু মোটাতাজাকরণ কিংবা নার্সারি যা-ই হোক। সবখানেই কারিগরি জ্ঞান প্রয়োজন। তখন দেশের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো উপলব্ধি করল, আগ্রহী তরুণদের প্রশিক্ষণ দরকার। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোয় হাঁস-মুরগি পালন, মাছ চাষ ও বনায়নের নতুন কিছু কোর্স শুরু হলো। তরুণেরা তুমুল আগ্রহ নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোয় যাওয়া শুরু করলেন। এই প্রশিক্ষণের প্রসারও দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তখন প্রতিদিন বিকেলে প্রচারিত হতো উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রযোজিত ‘দূরশিক্ষণ’ নামে একটি অনুষ্ঠান। কোনো দিন ইংরেজি, কোনো দিন গণিত, কোনো দিন ইতিহাস, কোনো দিন বিজ্ঞান, কোনো দিন ভূগোল, কোনো দিন কৃষি সম্পর্কে অনুষ্ঠান। খুব সম্ভবত ১৯৯৩-৯৪ সালের কথা। তখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসটা ছিল ঢাকা কলেজ চত্বরের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ভবনে। উপাচার্য ছিলেন ড. শমসের আলী। তিনি একদিন আমাকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, যেসব বিষয় আমি বিটিভির ‘মাটি ও মানুষ’-এ দেখাই, সেগুলোকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রশিক্ষণের মতো করে দেখানো যায় কি না। যেমন মাছ কীভাবে চাষ করতে হয়, গরু লালনপালনের পদ্ধতিটা কী? গরু মোটাতাজাকরণের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো। খড় দিয়ে কীভাবে ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক বানাবে? এগুলো একেবারে নিবিড়ভাবে বোধগম্য উপায়ে প্রশিক্ষণ সিরিজ করা যায় কি না। এটি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তরুণ প্রজন্মের অনেক উপকার হবে। আমি বেশ আগ্রহী হলাম। কারণ, এর উপযোগিতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত ছিলাম। শুধু তরুণ প্রজন্মই নয়, সব ধরনের দর্শকের কাছে কৃষির এই শিক্ষা জরুরি।
অনুষ্ঠানটির নাম ঠিক করলাম ‘কৃষি কৌশল’। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি কোর্সের সঙ্গে যুক্ত করা হলো ‘কৃষি কৌশল’। এই অনুষ্ঠান প্রযোজনার জন্য বহিরাগত হলেও আমাকে ‘গেস্ট প্রোডিউসার’ হিসেবে নিয়োগ করা হলো। ড. শমসের আলী সরকারি গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রথম গেস্ট প্রোডিউসার হিসেবে আমাকে নিয়োগ দিলেন।
আমার মহল্লার আরেক বন্ধু মোসাদ্দেক হাসান (বর্তমানে চ্যানেল আইয়ের নির্বাহী পরিচালক, কারিগরি) তখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের ভিডিও এডিটর ছিলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনের এডিটরের চাকরি ছেড়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন। মোসাদ্দেক, আমি আর ক্যামেরাম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন মিলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিষয়ক কোর্স কারিকুলাম শুরু করলাম ভিডিওতে। ‘মাটি ও মানুষ’-এর প্রতিটি অনুষ্ঠানের বিষয়কে নিবিড় ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তুলে ধরার কাজ শুরু হলো। পদ্ধতিগত বিষয়গুলো ভিডিও ও বর্ণনায় তুলে আনা হলো। মাছ চাষের কথা যদি বলি, পুকুরের আকার কেমন হবে, কীভাবে খনন করতে হবে, কখন চুন দিতে হবে, কখন পানি ছাড়তে হবে, মাছের পোনা কখন ছাড়তে হবে, পোনার বয়স কত হবে, কী খাবার দিতে হবে—এসব কারিগরি বিষয় সবিস্তারে উঠে আসতে থাকল। আমি ব্যক্তিগতভাবে টেলিভিশনকে সব সময়ই একটি শিক্ষার জায়গা হিসেবে বিবেচনা করে আসছি। আমাদের মতো দেশের টেলিভিশন বিনোদনের পাশাপাশি মানুষকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষিত করবে—এটিই স্বাভাবিক। কাজ করতে গিয়ে বারবারই মনে হয়েছে ক্যামেরার চোখে টেলিভিশনের পর্দায় যা দেখাব তার সঙ্গে মিলিয়ে শব্দ বা ধারাবর্ণনা দিয়ে কানে শোনাব। একজন মানুষ খুব সহজেই তা বুঝতে পারবে। এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, টেলিভিশনে ‘কৃষি কৌশল’ শুরুর সময় একই সঙ্গে বাংলাদেশ বেতারে শুরু হলো ‘মাটির কাছে মানুষের কাছে’। বহুমুখী গণমাধ্যম প্রয়াস। তার আগে রেডিওতে স্থানীয় সংবাদ ও কৃষি খবর পড়ার অভিজ্ঞতা ছিল। আর মনে ছিল রেডিওর ‘দেশ আমার মাটি আমার’ কার্যক্রমটির কথা। যেখানে ‘মজিদের মা’ নামে একটি জনপ্রিয় চরিত্র ছিল। টেলিভিশনে আমাদের কৃষি কৌশলের চেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল রেডিওর অনুষ্ঠান। তার মানে শ্রোতা এখানে দেখতে পাচ্ছে না তাকে শব্দ দিয়ে পরিবেশ-পরিস্থিতি সবই বোঝাতে হচ্ছে। আমি অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা বুঝেই মাইক্রোফোন ও রেকর্ডার নিয়ে গ্রামে গেলাম। পোলট্রির এক দিনের বাচ্চার অনুষ্ঠান ধারণের সময় মনে হলো এখানে বাচ্চার কিচিরমিচির আওয়াজটা যদি শ্রোতার কানে না পৌঁছায় তাহলে অনুষ্ঠান প্রাণ পাবে না। আবার যখন পোলট্রি খামারে ডিম সংগ্রহ করার কথা বলছি, সেখানকার ভিন্ন শব্দও অতীব প্রয়োজনীয়। একইভাবে গ্রামে সেচনালার পাশে দাঁড়িয়ে যখন কথা বলছি, তখন কলকল ধ্বনিটা যদি না শোনানো যায়, তাহলে মানুষের মনে দৃশ্যপটতা তৈরি হয় না। একই সঙ্গে সীমাবদ্ধতাটাও বুঝেছি। নিজের কাছেই স্পষ্ট হয়েছে কেন রেডিওতে কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান সফল হয়নি। এ কাজগুলো করতে করতেই প্রতিনিয়ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পেয়েছি। একই সঙ্গে টেলিভিশন এবং অডিও মাধ্যমে কাজের অভিজ্ঞতাটা রপ্ত করা সম্ভব হয়েছে।
উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ‘কৃষি কৌশল’ করতে গিয়ে নতুন একটি মডেল তৈরির সুযোগ পেলাম। বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাটি ও মানুষ ছিল মূলত উদ্বুদ্ধকরণ অনুষ্ঠান। কৃষির ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতাম। নতুন চাষব্যবস্থা, নতুন কৌশল, নতুন ফসল, নতুন বীজ—এসব বিষয় দেখে কৃষক দারুণ উদ্বুদ্ধ হতেন। তাঁরা নতুন কিছু করে পয়সা উপার্জন করছেন। এসব দেখে দর্শক হিসেবে আরেকজন কৃষকও চাইতেন সেটা করতে। কিন্তু তাঁর কাছে কৌশলটা ছিল না। কীভাবে করবেন তা তিনি জানতেন না। বাউবি দূরশিক্ষণের কৃষি কৌশলটা ছিল সে রকম একটা বিষয়। ‘মাটি ও মানুষ’ প্রচার হতো শনিবার। মাটি ও মানুষের শেষে দর্শকদের আমি বলতাম, এ বিষয়ের বিস্তারিত যদি হাতে-কলমে পেতে চান, আগামী বৃহস্পতিবারের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কৃষি কৌশল’ দেখুন। একই টেলিভিশনে ঠিক চার দিন পর দর্শক অপেক্ষা করে অনুষ্ঠানটি দেখতেন। দেখে তিনি আরও সমৃদ্ধ হতেন। কৌশলটা শিখতেন। টেলিভিশনে দেখে যখন তিনি হাতে-কলমে করতে যেতেন অনেক সময় হিসাব বা তথ্য ভুলে যেতেন। তখন সেই দর্শককে আমি টেনে নিয়ে এলাম পত্রিকায়। তখন দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ খুব দাপটের সঙ্গে চলছে। সেখানে ‘চাষবাস’ নামে একটা কলাম লিখতাম আমি। ‘চাষবাস’ কলামে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যা দেখালাম, সেই তথ্যগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরতাম। এতে প্রথম মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠান দেখে কৃষক উদ্বুদ্ধ হতেন, তিনি হাতে-কলমে কৌশল জানার জন্য দেখতেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কৃষি কৌশল’। আর তথ্যগুলো কাগজে নিশ্চিতভাবে পাওয়ার জন্য তাঁরা পড়তে শুরু করলেন জনকণ্ঠের চাষবাস কলাম। এটি হয়ে উঠল তথ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটা ত্রিমুখী মডেল। তখনকার কৃষির উত্তরণে এই ত্রিমুখী কার্যক্রমের বড় একটি অবদান ছিল। দে
অগণিত সফল খামারি রয়েছেন, যাঁরা সে সময়ের এই ত্রিমুখী সম্প্রসারণ কার্যক্রমের কল্যাণে কৃষিতে আসেন এবং উত্তরোত্তর সাফল্য অর্জন করেন।
বর্তমান সময়ে এসে অনলাইন শিখন পদ্ধতি বেশ সমৃদ্ধ হয়েছে। একই সময়ে অডিও, ভিডিও ও টেক্সট একই জায়গায় পাওয়া যায়। কৃষির প্রতি তরুণেরা যেভাবে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, তাঁদের কাছে উপযুক্ত কৃষি প্রশিক্ষণ পৌঁছে দেওয়া জরুরি। বাংলাদেশের কৃষি শিক্ষা ইনস্টিটিউটগুলো এ ধরনের প্রশিক্ষণ পরিচালনায় উদ্যোগী হতে পারে। ঠিক তথ্য ও পদ্ধতি তরুণ আগ্রহীদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলে তাঁদের অংশগ্রহণে কৃষি অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।
শাইখ সিরাজ, কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৫ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৯ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৯ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৯ দিন আগে