গাফ্ফার চৌধুরীর শতায়ু কামনা

বিভুরঞ্জন সরকার
প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ২৮
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ১৫

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জন্মদিন ১২ ডিসেম্বর। ১৯৩৪ সালে বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থানার চৌধুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ওয়াহেদ রেজা চৌধুরী কংগ্রেসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গাফ্ফার চৌধুরীও ছাত্রজীবনে বাম ধারার ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত হলেও পরে তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে এসে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যব্রতী হন।

কলেজের ছাত্র থাকতেই তিনি ১৯৫২ সালে ভাষাশহীদদের স্মরণে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ কবিতাটি লেখেন। যেটা পরে শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুরে একুশের গান হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এই গানের জন্য গাফ্ফার চৌধুরী বাঙালির হৃদয়ে অমলিন স্থায়ী আসন করে নিয়েছিলেন।

ছাত্রজীবনেই তিনি সাংবাদিকতা শুরু করেছিলেন দৈনিক ইনসাফ পত্রিকায়। তারপর সংবাদ, ইত্তেফাক, আজাদ, জেহাদসহ বিভিন্ন কাগজে তিনি কাজ করেছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ‘জয় বাংলা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

স্বাধীনতার পর ঢাকা থেকে দৈনিক ‘জনপদ’ নামের একটি পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৪ সালে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানেই তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অত্যন্ত স্নেহধন্য ছিলেন। পঁচাত্তরে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হলে হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে জনমত গড়ে তুলতে কলমযোদ্ধার ভূমিকা পালন করেন গাফ্ফার চৌধুরী। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ‘পলাশী থেকে ধানমন্ডি’ নামে একটি ডকু-ফিল্মও তৈরি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার পরম হিতৈষী গাফ্ফার চৌধুরী। শেখ রেহানাকে তিনি ‘মা’ বলে সম্বোধন করেন।

সাংবাদিকতা না করে সাহিত্যচর্চা করলেও তিনি খ্যাতির শিখরে পৌঁছাতে পারতেন বলে অনেকেই মনে করেন। কথাসাহিত্যিক হিসেবে তিনি যথেষ্ট পরিচিতি পেয়েছিলেন। তাঁর কয়েকটি উপন্যাস বেশ পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল। তবে সাংবাদিক-কলামিস্ট হিসেবেই তিনি এখন সবার কাছে বেশি পরিচিত এবং স্বীকৃত।

উপন্যাস, ছোটগল্প এবং রাজনৈতিক প্রবন্ধ মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা অর্ধ শতের কাছাকাছি। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ হলো: চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান, নাম না জানা ভোর, নীল যমুনা, শেষ রজনীর চাঁদ, কৃষ্ণপক্ষ, সম্রাটের ছবি, সুন্দর হে সুন্দর। ১৯৭২ সালে ‘বাংলাদেশ কথা কয়’ নামে একটি গ্রন্থের সম্পাদনাও করেছেন তিনি। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে তিনি লিখে চলেছেন অবিরাম। তাঁর লেখা যে কত মানুষকে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা জোগায়, তা হয়তো পরিমাপযোগ্য নয়।

তাঁর স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর। তাঁকে অনেকে তথ্যের ভান্ডার বলে মনে করেন। তাঁর লেখা তথ্যবহুল, বিশ্লেষণধর্মী। তাঁর সব লেখাই অত্যন্ত সুখপাঠ্য। সমসাময়িক ঘটনা ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে তাঁর লেখা পাঠকপ্রিয়। গাফ্ফার ভাইয়ের লেখা পড়া শুরু করলে শেষ না করে পারা যায় না। তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে একমত না হলেও লেখার প্রসাদগুণ কেউ অস্বীকার করতে পারবে না।

তাঁর সান্নিধ্যে যাঁরা এসেছেন তাঁরা সবাই জানেন যে তিনি কতটা আমুদে স্বভাবের। তিনি একজন সরস গল্প বলিয়েও। আড্ডার মধ্যমণি হয়ে আসর মাত করতে তাঁর জুড়ি নেই।

গত কিছুদিন ধরে তিনি অসুস্থ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এখন বাসায় থাকলেও পুরো সচল নন। ৮৭তম জন্মদিনে গাফ্ফার ভাইয়ের সুস্থতা ও শতায়ু কামনা করছি। তাঁর কলম সচল থাক। তিনি আরও অনেক দিন পাঠকদের চাহিদা পূরণ করুন বিবেকের কণ্ঠস্বর হয়ে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

বিভুরঞ্জন সরকার: সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত