ড. এম আবদুল আলীম
কালজয়ী সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-এর রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ২৮ মে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। এদিনই তাঁর মরদেহ লন্ডন থেকে ঢাকা এসে পৌঁছেছিল। ১৯ মে তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে নিয়ে লেখার অনেক কিছুই আছে। আমরা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর কর্মসাধনার সামান্য কিছু তুলে ধরছি।
বাঙালির জাতীয় জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দুদিক থেকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। প্রথমত, মিছিল-সমাবেশে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ; দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একুশের চেতনার লালন ও বিস্তারে ভূমিকা পালন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি কীর্তিমান হয়েছেন একুশের চেতনার অগ্নিমন্ত্রধারী একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’ রচনার কারণে।
সাতচল্লিশের দেশভাগের পর মুসলিম লীগ সরকার বাংলা ভাষাকে বর্জনের নানা অপকৌশল নিলে বুদ্ধিজীবীদের অনেকে লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন। এরপর পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষাবিষয়ক সংশোধনী প্রস্তাব অগ্রাহ্য হলে রাজপথে আন্দোলন শুরু হয়। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ববঙ্গ সফরে এসে প্রকাশ্য সভায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায়। ১৯৪৮ সালে বরিশালের এ কে ইনস্টিটিউশনের ছাত্র হিসেবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন। ১১ মার্চ ধর্মঘটের পিকেটিং করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন এবং কারাভোগ করেন। প্রথম পর্বের ভাষা আন্দোলন ক্রমে স্তিমিত হয়ে গেলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে দাবানলের মতো আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। ওই সময় তিনি ও তাঁর সহপাঠীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আয়োজিত মিছিল-সমাবেশ ও ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেন। একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার সমাবেশে উপস্থিত হন এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান তোলেন। শহীদদের স্মরণে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন এবং শোক-শোভাযাত্রা থেকে পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত হন। তিনি ১৯৫৫ সালের শহীদ দিবস পালন করতে গিয়েও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন এবং গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ হন।
তাঁর সবচেয়ে বড় দান একুশের গান রচনার ক্ষেত্রে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে মাথার খুলি উড়ে যাওয়া ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিনের রক্তাক্ত দেহ দেখে তাঁর স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে রচনা করেছিলেন একুশের অমর সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’, যেটি স্বীকৃতি পেয়েছে প্রভাতফেরির অমর সংগীত হিসেবে। গানটি প্রথমে আব্দুল লতিফ কর্তৃক সুরারোপ করা হলেও পরে আলতাফ মাহমুদের সুরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাংলা ভাষাভাষী তো বটেই, অন্যান্য ভাষার মানুষদের কাছেও এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৫৩ সালে কবিতাটি প্রথমে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের দ্বারা প্রকাশিত ইশতেহারে এবং পরে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে স্থান পায়। ১৯৫৩ সালে গুলিস্তানের ব্রিটানিয়া সিনেমা হলে ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠানে গানটি প্রথম গাওয়া হয়। ১৯৫৪ সাল থেকে এটি লাভ করে প্রভাতফেরির গানের মর্যাদা। ১৯৭০ সালে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় গানটি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে এই গানের মোহনীয় সুর ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। এটি কেবল একুশের গান হিসেবে নয়, বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয় নির্ধারণ এবং স্বতন্ত্র অস্তিত্বের স্মারক হিসেবেও লাভ করে গুরুত্ব। বিবিসির শ্রোতা জরিপে গানটি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থান লাভ করে। বর্তমানে হিন্দি, মালয়, ইংরেজি, ফরাসি, সুইডিশসহ পনেরোটি ভাষায় এ গান গাওয়া হয়। এটি ছাড়াও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একুশের চেতনার স্মারকবাহী আরও কয়েকটি গান রচনা করেন। উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো—‘রক্তে আমার আবার প্রলয় দোলা/ ফাল্গুন আজ চিত্ত আত্মভোলা/ আমি কি ভুলিতে পারি/ একুশে ফেব্রুয়ারি?...’ ‘শহীদ মিনার ভেঙেছ আমার ভাইয়ের রক্তে গড়া/ দ্যাখো বাংলার হৃদয় এখন শহীদ মিনারে ভরা।...’
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী হঠাৎ করে ভাষার লড়াইয়ে শামিল হননি। গ্রামের মাদ্রাসায় পড়ার সময় অল্প বয়সেই তাঁর মধ্যে দেশপ্রেম ও সংগ্রামী চেতনা জাগ্রত হয়। উলানিয়া গ্রামের মৌলভী আহমদের দেওয়া মানবতা ও দেশপ্রেমের শিক্ষার পাশাপাশি পিতার কাছে পেয়েছিলেন অহিংসা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং স্বদেশি আন্দোলনের দীক্ষা। পিতার প্রভাবে শৈশবে নাম লিখিয়েছিলেন ছাত্র কংগ্রেসে, পরে বরিশালে এসে যুক্ত হন ছাত্র ফেডারেশন ও কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে, পরে ঢাকায় পড়তে গিয়ে যুক্ত হন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। লাভ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য। আইনসভার সদস্য চৌধুরী মোহাম্মদ আরিফ (আসাদ চৌধুরীর পিতা), স্বদেশি কর্মী আবদুল খালেক খান, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা স্বদেশ বসু, মহারাজ প্রমুখ তাঁর কিশোরমনে গভীর প্রভাব ফেলেন। ১৯৪৬ সালে পিতৃবিয়োগের পর গ্রামের মাদ্রাসার পাট চুকিয়ে বরিশাল শহরের আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে পড়তে গিয়ে অল্প বয়সেই ঝুঁকে পড়েন রাজনীতি ও লেখালেখির দিকে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পড়েন কলকাতা ন্যাশনাল বুক এজেন্সির ‘ছোটদের রাজনীতি’, ‘ছোটদের অর্থনীতি’, ‘মার্ক্সবাদের অ আ ক খ’। সবচেয়ে প্রভাবিত হন নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় অনূদিত ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাস দ্বারা। লেনিন, স্তালিন, টিটোর জীবনীও পড়া হয়ে যায়। সুযোগ পেলেই লাল টুপি মাথায় আর লাল ঝান্ডা হাতে শামিল হতেন ছাত্র ফেডারেশনের মিছিলে। স্লোগান তুলতেন, ‘মন্দির মসজিদ এক আওয়াজ, খতম কর ব্রিটিশ রাজ’, ‘শহীদ লাখো ভাই কেয়া পুকার, ইনকিলাব জিন্দবাদ’। ওই সময় যোগ দেন পটুয়াখালীতে অনুষ্ঠিত কৃষক সম্মেলনে। সেখানে গিয়ে কমরেড মুজাফ্ফর আহমদের দেখা পান। এই রাজনৈতিক চেতনাই তাঁকে ভাষার লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রেরণা জোগায়।
১৯৫৫ সালে যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে। এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ছিলেন ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সদস্য। পরে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ষাটের দশকের স্বাধিকার-সংগ্রাম এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে সাপ্তাহিক জয় বাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। লেখক ও কলামিস্ট হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেন। কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সব কর্ম ছাপিয়ে উঠেছে তাঁর একুশের গান। বস্তুত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন তাঁকে নিয়ে আসে পাদপ্রদীপের আলোয়। ভাষার লড়াইয়ে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং একুশের চেতনা লালন ও বিস্তারে তাঁর যে অবদান, তা তাঁকে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।
কালজয়ী সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’-এর রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীকে ২৮ মে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে। এদিনই তাঁর মরদেহ লন্ডন থেকে ঢাকা এসে পৌঁছেছিল। ১৯ মে তিনি লন্ডনের একটি হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁকে নিয়ে লেখার অনেক কিছুই আছে। আমরা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর কর্মসাধনার সামান্য কিছু তুলে ধরছি।
বাঙালির জাতীয় জীবনের তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনের শুরু থেকেই আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দুদিক থেকে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। প্রথমত, মিছিল-সমাবেশে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ; দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একুশের চেতনার লালন ও বিস্তারে ভূমিকা পালন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিনি কীর্তিমান হয়েছেন একুশের চেতনার অগ্নিমন্ত্রধারী একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’ রচনার কারণে।
সাতচল্লিশের দেশভাগের পর মুসলিম লীগ সরকার বাংলা ভাষাকে বর্জনের নানা অপকৌশল নিলে বুদ্ধিজীবীদের অনেকে লেখনীর মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন। এরপর পাকিস্তান গণপরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের ভাষাবিষয়ক সংশোধনী প্রস্তাব অগ্রাহ্য হলে রাজপথে আন্দোলন শুরু হয়। পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ববঙ্গ সফরে এসে প্রকাশ্য সভায় উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায়। ১৯৪৮ সালে বরিশালের এ কে ইনস্টিটিউশনের ছাত্র হিসেবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন। ১১ মার্চ ধর্মঘটের পিকেটিং করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হন এবং কারাভোগ করেন। প্রথম পর্বের ভাষা আন্দোলন ক্রমে স্তিমিত হয়ে গেলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দীন ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানের জনসভায় উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দিলে দাবানলের মতো আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। ওই সময় তিনি ও তাঁর সহপাঠীরা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আয়োজিত মিছিল-সমাবেশ ও ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করেন। একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার সমাবেশে উপস্থিত হন এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান তোলেন। শহীদদের স্মরণে ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে আয়োজিত গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন এবং শোক-শোভাযাত্রা থেকে পুলিশের হামলায় গুরুতর আহত হন। তিনি ১৯৫৫ সালের শহীদ দিবস পালন করতে গিয়েও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন এবং গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ হন।
তাঁর সবচেয়ে বড় দান একুশের গান রচনার ক্ষেত্রে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে মাথার খুলি উড়ে যাওয়া ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিনের রক্তাক্ত দেহ দেখে তাঁর স্মৃতি স্মরণীয় করে রাখতে রচনা করেছিলেন একুশের অমর সংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’, যেটি স্বীকৃতি পেয়েছে প্রভাতফেরির অমর সংগীত হিসেবে। গানটি প্রথমে আব্দুল লতিফ কর্তৃক সুরারোপ করা হলেও পরে আলতাফ মাহমুদের সুরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। বাংলা ভাষাভাষী তো বটেই, অন্যান্য ভাষার মানুষদের কাছেও এটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯৫৩ সালে কবিতাটি প্রথমে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের দ্বারা প্রকাশিত ইশতেহারে এবং পরে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’ সংকলনে স্থান পায়। ১৯৫৩ সালে গুলিস্তানের ব্রিটানিয়া সিনেমা হলে ঢাকা কলেজের ছাত্র সংসদের অভিষেক অনুষ্ঠানে গানটি প্রথম গাওয়া হয়। ১৯৫৪ সাল থেকে এটি লাভ করে প্রভাতফেরির গানের মর্যাদা। ১৯৭০ সালে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমায় গানটি ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে এই গানের মোহনীয় সুর ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। এটি কেবল একুশের গান হিসেবে নয়, বাঙালি জাতিসত্তার পরিচয় নির্ধারণ এবং স্বতন্ত্র অস্তিত্বের স্মারক হিসেবেও লাভ করে গুরুত্ব। বিবিসির শ্রোতা জরিপে গানটি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানগুলোর মধ্যে তৃতীয় স্থান লাভ করে। বর্তমানে হিন্দি, মালয়, ইংরেজি, ফরাসি, সুইডিশসহ পনেরোটি ভাষায় এ গান গাওয়া হয়। এটি ছাড়াও আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী একুশের চেতনার স্মারকবাহী আরও কয়েকটি গান রচনা করেন। উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো—‘রক্তে আমার আবার প্রলয় দোলা/ ফাল্গুন আজ চিত্ত আত্মভোলা/ আমি কি ভুলিতে পারি/ একুশে ফেব্রুয়ারি?...’ ‘শহীদ মিনার ভেঙেছ আমার ভাইয়ের রক্তে গড়া/ দ্যাখো বাংলার হৃদয় এখন শহীদ মিনারে ভরা।...’
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী হঠাৎ করে ভাষার লড়াইয়ে শামিল হননি। গ্রামের মাদ্রাসায় পড়ার সময় অল্প বয়সেই তাঁর মধ্যে দেশপ্রেম ও সংগ্রামী চেতনা জাগ্রত হয়। উলানিয়া গ্রামের মৌলভী আহমদের দেওয়া মানবতা ও দেশপ্রেমের শিক্ষার পাশাপাশি পিতার কাছে পেয়েছিলেন অহিংসা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং স্বদেশি আন্দোলনের দীক্ষা। পিতার প্রভাবে শৈশবে নাম লিখিয়েছিলেন ছাত্র কংগ্রেসে, পরে বরিশালে এসে যুক্ত হন ছাত্র ফেডারেশন ও কমিউনিস্ট পার্টির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে, পরে ঢাকায় পড়তে গিয়ে যুক্ত হন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে। লাভ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য। আইনসভার সদস্য চৌধুরী মোহাম্মদ আরিফ (আসাদ চৌধুরীর পিতা), স্বদেশি কর্মী আবদুল খালেক খান, কমিউনিস্ট পার্টির নেতা স্বদেশ বসু, মহারাজ প্রমুখ তাঁর কিশোরমনে গভীর প্রভাব ফেলেন। ১৯৪৬ সালে পিতৃবিয়োগের পর গ্রামের মাদ্রাসার পাট চুকিয়ে বরিশাল শহরের আসমত আলী খান ইনস্টিটিউটে পড়তে গিয়ে অল্প বয়সেই ঝুঁকে পড়েন রাজনীতি ও লেখালেখির দিকে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পড়েন কলকাতা ন্যাশনাল বুক এজেন্সির ‘ছোটদের রাজনীতি’, ‘ছোটদের অর্থনীতি’, ‘মার্ক্সবাদের অ আ ক খ’। সবচেয়ে প্রভাবিত হন নৃপেন্দ্র কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় অনূদিত ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ উপন্যাস দ্বারা। লেনিন, স্তালিন, টিটোর জীবনীও পড়া হয়ে যায়। সুযোগ পেলেই লাল টুপি মাথায় আর লাল ঝান্ডা হাতে শামিল হতেন ছাত্র ফেডারেশনের মিছিলে। স্লোগান তুলতেন, ‘মন্দির মসজিদ এক আওয়াজ, খতম কর ব্রিটিশ রাজ’, ‘শহীদ লাখো ভাই কেয়া পুকার, ইনকিলাব জিন্দবাদ’। ওই সময় যোগ দেন পটুয়াখালীতে অনুষ্ঠিত কৃষক সম্মেলনে। সেখানে গিয়ে কমরেড মুজাফ্ফর আহমদের দেখা পান। এই রাজনৈতিক চেতনাই তাঁকে ভাষার লড়াইয়ে সম্পৃক্ত হওয়ার প্রেরণা জোগায়।
১৯৫৫ সালে যোগ দেন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে। এই সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ছিলেন ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের সদস্য। পরে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ষাটের দশকের স্বাধিকার-সংগ্রাম এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে সাপ্তাহিক জয় বাংলা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। লেখক ও কলামিস্ট হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেন। কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সব কর্ম ছাপিয়ে উঠেছে তাঁর একুশের গান। বস্তুত বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন তাঁকে নিয়ে আসে পাদপ্রদীপের আলোয়। ভাষার লড়াইয়ে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং একুশের চেতনা লালন ও বিস্তারে তাঁর যে অবদান, তা তাঁকে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে রাখবে।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে