আরিফুজ্জামান তুহিন, ঢাকা
জাপানের সরকারি সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা করা হয় ২০১০ সালে। সে পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়, যার অর্ধেকের বেশি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেয় সরকার। ব্যাপক আকারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ শুরুতেই দেশে ও বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে। তখন সরকারের প্রধান যুক্তি ছিল, কয়লার বিদ্যুৎ সব থেকে সস্তা। ১৩ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, কয়লা
কোনোভাবেই সস্তা না। স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত দিক বাদ দিলেও কয়লার বিদ্যুতে ইউনিটপ্রতি খরচ সৌরবিদ্যুৎকে ছাড়িয়ে গেছে।
কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে বিপুল উৎপাদন ব্যয়ের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। উচ্চমূল্যে কেনা বিদ্যুতের দাম দিতে গিয়ে গত বছর পিডিবির লোকসান হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পাওনা দিতে পারছে না। পিডিবির কাছে বেসরকারি এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় সম্পর্কে সরকার হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল। সে কারণে ১৭টি কেন্দ্রের অনুমতি দিলেও পরে সাতটি বাতিল করে দিয়েছে। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনার ছয়টি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র পুরোভাগে উৎপাদনে এসেছে। বাকি চারটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। উৎপাদনে আসা কেন্দ্রগুলোর গড় উৎপাদন ব্যয় ইউনিটপ্রতি প্রায় ১০ টাকা থেকে ২১ টাকা। অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুতে বর্তমানে উৎপাদন ব্যয় প্রতি ইউনিটে ১১ টাকার মতো।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ কী—এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল রোববার টেলিফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা যখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি করেছিলাম, তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ থেকে ৮২ টাকা। এখন সেটি সরকারি হিসাবে ১১০ টাকা, বাস্তবে আরও বেশি। ডলারের এই পার্থক্যর কারণেই দামটা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক জ্বালানির বাজারও বেশ অস্থির। সামনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ আরও কমবে।’
দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যয়বহুল প্রকল্প মাতারবাড়ী। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে রয়েছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধার কয়লাবন্দর। বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি হবে দুনিয়ার সব থেকে ব্যয়বহুল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটি গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি উৎপাদনে এসেছে। এই কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল এই কেন্দ্রের ব্যয় সবগুলো কেন্দ্রের রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ছয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এই কেন্দ্র এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। বাকি চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে হলো পটুয়াখালীর পায়রাতে বাংলাদেশ ও চীনের সমান মালিকানায় নির্মিত ১৩০০ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল ১৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, আদানি ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বরগুনার ৩০৭ মেগাওয়াট বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র।
পিডিবির প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করা হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ মাসে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি জ্বালানি ব্যয় পড়েছে গড়ে ৬ টাকা ৮২ পয়সা। এর সঙ্গে কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ২ টাকা ৮৩ পয়সা যোগ করলে এখানকার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়েছে ৯ টাকা ৬৫ পয়সা।
এরপরেই রয়েছে বাগেরহাটে সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির প্রতি ইউনিট কয়লার দাম পড়েছে ৭ টাকা ৮৭ পয়সা। এর সঙ্গে কেন্দ্রভাড়া ৫ টাকা ১৯ পয়সা যোগ করলে ইউনিট প্রতি ব্যয় দাঁড়ায় ১৩ টাকা ৬ পয়সা।
এদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম শিল্পগ্রুপের ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আংশিক চালু হয় গত বছরে। এই কেন্দ্রটির সব হিসাব পাওয়া যায়নি। গত বছরের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রটিতে ব্যবহৃত কয়লার দাম পড়েছে ইউনিটপ্রতি ৬ টাকা ৮৩ পয়সা। এর সঙ্গে কেন্দ্রটির ভাড়া যোগ করলে ওই মাসে গড় বিদ্যুতের মূল্য দাঁড়ায় ১১ টাকা ৫৫ পয়সা।
ইউনিটপ্রতি ব্যয়ে শীর্ষে আদানি ও বরিশাল
পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির খরচ সামাল দিতেই পিডিবি বিপদে পড়েছে। ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের কয়লার দাম গত ১০ মাসে গড়ে পড়েছে ইউনিটপ্রতি ১৫ টাকা ৬৯ পয়সা। কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ৫৫ পয়সা যোগ করলে উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ২০ টাকা ২৪ পয়সা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান আদানির নিজের কয়লাখনি থেকে কয়লা আনায় কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি। সে কারণে পিডিবির ক্ষতির পরিমাণও বেশি।
কয়লার বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশ দাম পড়ছে কেন, জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সস্তা ছিল না। এই কেন্দ্রগুলো পিডিবির জন্য এখনো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদানিকে কী প্রক্রিয়ায় কেন্দ্র দিয়েছে, তা প্রকাশ্য আনতে হবে। কারণ, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্য শ্বেতহস্তীতে পরিণত হয়েছে। এই কেন্দ্র একাই পিডিবির বড় দুঃখের কারণ হয়ে গেছে।
বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ব্যয় আদানি থেকেও ৬১ পয়সা বেশি। ৩০৭ মেগাওয়াটের এই কেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ থাকে। গত ১০ মাসের মধ্যে ৭ মাস চলেছে এটি। সাত মাসে গড়ে কেন্দ্রটির জ্বালানি ব্যয় হয়েছে প্রতি ইউনিট ১৬ টাকা ৯১ পয়সা। এর সঙ্গে কেন্দ্রের ভাড়া ৩ টাকা ৯৪ পয়সা যোগ করলে ইউনিটপ্রতি দাঁড়ায় ২০ টাকা ৮৫ পয়সা।
পিডিবির দুজন শীর্ষ প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লার অভাবে খুব বেশি উৎপাদনে থাকে না। এই কেন্দ্র ডলার-সংকটের কারণে এলসি বা আমদানি ঋণপত্র খুলতে পারে না। তারা বাংলাদেশের ভেতর থেকে ইটভাটায় আনা কয়লা বাংলাদেশি টাকা দিয়ে কিনে উৎপাদনে যায় মাঝেমধ্যে। কেন্দ্রটির পরিস্থিতি এতই করুণ যে তারা বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়ে কেন্দ্রটি বিক্রি করার প্রস্তাব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেন্দ্রটি কেনার বিষয়ে চীনা একটি কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক আলাপও হয়েছে। তবে এই কেন্দ্রটির জমি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় অনেকে কেনার ক্ষেত্রে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী আনু মুহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কখনোই সস্তা ছিল না। মূলত সরকার কিছু দেশ ও কোম্পানিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেবে; সে কারণে এসব প্রচার করেছিল। এটা লবিস্টদের চাপে করা হয়েছিল। এখন এসে এসব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সৌরবিদ্যুৎ থেকেও অনেক বেশি খরচ পড়ে।
জাপানের সরকারি সাহায্য সংস্থা জাইকার অর্থায়নে বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা করা হয় ২০১০ সালে। সে পরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়, যার অর্ধেকের বেশি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেয় সরকার। ব্যাপক আকারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ শুরুতেই দেশে ও বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে। তখন সরকারের প্রধান যুক্তি ছিল, কয়লার বিদ্যুৎ সব থেকে সস্তা। ১৩ বছর পর এসে দেখা যাচ্ছে, কয়লা
কোনোভাবেই সস্তা না। স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত দিক বাদ দিলেও কয়লার বিদ্যুতে ইউনিটপ্রতি খরচ সৌরবিদ্যুৎকে ছাড়িয়ে গেছে।
কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে বিপুল উৎপাদন ব্যয়ের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি)। উচ্চমূল্যে কেনা বিদ্যুতের দাম দিতে গিয়ে গত বছর পিডিবির লোকসান হয়েছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া পাওনা দিতে পারছে না। পিডিবির কাছে বেসরকারি এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পাওনা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় সম্পর্কে সরকার হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল। সে কারণে ১৭টি কেন্দ্রের অনুমতি দিলেও পরে সাতটি বাতিল করে দিয়েছে। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনার ছয়টি কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র পুরোভাগে উৎপাদনে এসেছে। বাকি চারটি উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। উৎপাদনে আসা কেন্দ্রগুলোর গড় উৎপাদন ব্যয় ইউনিটপ্রতি প্রায় ১০ টাকা থেকে ২১ টাকা। অন্যদিকে পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুতে বর্তমানে উৎপাদন ব্যয় প্রতি ইউনিটে ১১ টাকার মতো।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণ কী—এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল রোববার টেলিফোনে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা যখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি করেছিলাম, তখন ডলারের দাম ছিল ৮০ থেকে ৮২ টাকা। এখন সেটি সরকারি হিসাবে ১১০ টাকা, বাস্তবে আরও বেশি। ডলারের এই পার্থক্যর কারণেই দামটা বেড়ে গেছে। এ ছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক জ্বালানির বাজারও বেশ অস্থির। সামনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ আরও কমবে।’
দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যয়বহুল প্রকল্প মাতারবাড়ী। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ীতে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে রয়েছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর সুবিধার কয়লাবন্দর। বন্দর ও বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি হবে দুনিয়ার সব থেকে ব্যয়বহুল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটি গত বছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি উৎপাদনে এসেছে। এই কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয়ের তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল এই কেন্দ্রের ব্যয় সবগুলো কেন্দ্রের রেকর্ড ছাপিয়ে যাবে।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ছয়টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু আছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এই কেন্দ্র এখনো পুরোদমে চালু হয়নি। বাকি চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে হলো পটুয়াখালীর পায়রাতে বাংলাদেশ ও চীনের সমান মালিকানায় নির্মিত ১৩০০ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপাল ১৩৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, আদানি ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বরগুনার ৩০৭ মেগাওয়াট বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র।
পিডিবির প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে একটি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করা হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ মাসে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি জ্বালানি ব্যয় পড়েছে গড়ে ৬ টাকা ৮২ পয়সা। এর সঙ্গে কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ২ টাকা ৮৩ পয়সা যোগ করলে এখানকার প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়েছে ৯ টাকা ৬৫ পয়সা।
এরপরেই রয়েছে বাগেরহাটে সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। ১৩২০ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটির প্রতি ইউনিট কয়লার দাম পড়েছে ৭ টাকা ৮৭ পয়সা। এর সঙ্গে কেন্দ্রভাড়া ৫ টাকা ১৯ পয়সা যোগ করলে ইউনিট প্রতি ব্যয় দাঁড়ায় ১৩ টাকা ৬ পয়সা।
এদিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে এস আলম শিল্পগ্রুপের ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির আংশিক চালু হয় গত বছরে। এই কেন্দ্রটির সব হিসাব পাওয়া যায়নি। গত বছরের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রটিতে ব্যবহৃত কয়লার দাম পড়েছে ইউনিটপ্রতি ৬ টাকা ৮৩ পয়সা। এর সঙ্গে কেন্দ্রটির ভাড়া যোগ করলে ওই মাসে গড় বিদ্যুতের মূল্য দাঁড়ায় ১১ টাকা ৫৫ পয়সা।
ইউনিটপ্রতি ব্যয়ে শীর্ষে আদানি ও বরিশাল
পিডিবির প্রকৌশলীরা বলছেন, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটির খরচ সামাল দিতেই পিডিবি বিপদে পড়েছে। ২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের কয়লার দাম গত ১০ মাসে গড়ে পড়েছে ইউনিটপ্রতি ১৫ টাকা ৬৯ পয়সা। কেন্দ্রটির ক্যাপাসিটি চার্জ ইউনিটপ্রতি ৪ টাকা ৫৫ পয়সা যোগ করলে উৎপাদন ব্যয় দাঁড়ায় ২০ টাকা ২৪ পয়সা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভারতের বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠান আদানির নিজের কয়লাখনি থেকে কয়লা আনায় কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি। সে কারণে পিডিবির ক্ষতির পরিমাণও বেশি।
কয়লার বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশ দাম পড়ছে কেন, জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র সহসভাপতি ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সস্তা ছিল না। এই কেন্দ্রগুলো পিডিবির জন্য এখনো বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদানিকে কী প্রক্রিয়ায় কেন্দ্র দিয়েছে, তা প্রকাশ্য আনতে হবে। কারণ, আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বাংলাদেশের জন্য শ্বেতহস্তীতে পরিণত হয়েছে। এই কেন্দ্র একাই পিডিবির বড় দুঃখের কারণ হয়ে গেছে।
বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন ব্যয় আদানি থেকেও ৬১ পয়সা বেশি। ৩০৭ মেগাওয়াটের এই কেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ থাকে। গত ১০ মাসের মধ্যে ৭ মাস চলেছে এটি। সাত মাসে গড়ে কেন্দ্রটির জ্বালানি ব্যয় হয়েছে প্রতি ইউনিট ১৬ টাকা ৯১ পয়সা। এর সঙ্গে কেন্দ্রের ভাড়া ৩ টাকা ৯৪ পয়সা যোগ করলে ইউনিটপ্রতি দাঁড়ায় ২০ টাকা ৮৫ পয়সা।
পিডিবির দুজন শীর্ষ প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লার অভাবে খুব বেশি উৎপাদনে থাকে না। এই কেন্দ্র ডলার-সংকটের কারণে এলসি বা আমদানি ঋণপত্র খুলতে পারে না। তারা বাংলাদেশের ভেতর থেকে ইটভাটায় আনা কয়লা বাংলাদেশি টাকা দিয়ে কিনে উৎপাদনে যায় মাঝেমধ্যে। কেন্দ্রটির পরিস্থিতি এতই করুণ যে তারা বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়ে কেন্দ্রটি বিক্রি করার প্রস্তাব নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেন্দ্রটি কেনার বিষয়ে চীনা একটি কোম্পানির সঙ্গে প্রাথমিক আলাপও হয়েছে। তবে এই কেন্দ্রটির জমি নিয়ে আদালতে মামলা থাকায় অনেকে কেনার ক্ষেত্রে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মী আনু মুহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কখনোই সস্তা ছিল না। মূলত সরকার কিছু দেশ ও কোম্পানিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেবে; সে কারণে এসব প্রচার করেছিল। এটা লবিস্টদের চাপে করা হয়েছিল। এখন এসে এসব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সৌরবিদ্যুৎ থেকেও অনেক বেশি খরচ পড়ে।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
৪ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৮ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৮ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
১১ দিন আগে