আব্দুর রাজ্জাক
বাংলাদেশে সম্প্রতি কয়েকটি উপনির্বাচনে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে। স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক, যিনি মানসিকভাবে সুস্থ এবং যাঁর বয়স ২৫ বছর, নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। আমাদের সংবিধান তাই বলে। যেহেতু উপনির্বাচনে রাজপথে থাকা প্রধান বিরোধী দল অংশ নেয়নি, তাই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের বিপরীতে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন।
যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের আশা ছিল, রাজপথের বিরোধী দল তাঁদেরই সমর্থন করবে, প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে-ভেতরে। আর তা না হলে নিদেনপক্ষে তাঁদের ভোট দেবে। এই সোজা ফর্মুলা খাটিয়ে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন।
গত কয়েক মাসে এসব দেখে দেখে নিজের মনের মধ্যে বিরক্তি প্রকাশ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তাই কয়েক দিন আগে আমি নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম এই বলে যে ‘নিজের সন্তানের প্রাইভেট টিউটর খোঁজেন বুয়েটের গ্র্যাজুয়েট অথবা ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট, জাতীয় পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে খোঁজেন নিম্নশ্রেণির কমেডিয়ানদের!’ এই পোস্ট দেওয়ার পরে লাইক পড়েছে ৭০ শতাংশ।
যে কয়টি মন্তব্য এসেছে এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মন্তব্যকারী আমার মতের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে মোটামুটি যে মতামত দিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়—‘কমেডিয়ান হোক আর যা-ই হোক, সে ঘুষ নেবে না, দুর্নীতি করবে না, সে বিদেশে টাকা পাচার করবে না। যেসব গণ্যমান্য নামীদামি ব্যক্তি সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দুর্নীতি করেন ও বিদেশে টাকা পাচার করেন। এই সব দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীর চেয়ে কমেডিয়ান অনেক ভালো!’ মোটের ওপর তাঁদের মন্তব্য এ রকমই ছিল।
তিন-চার দিন পরে যখন লাইক-ডিজলাইকের পালা শেষ, তখন আমি মন্তব্য করলাম—যাঁরা এ দেশের টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের বিপক্ষে কথা বলেছেন, আমি তাঁদের সঙ্গে একমত। তাই বলে আপনারা সবাই এই মন্তব্য কেন করেন না যে সব দলের মধ্য থেকেই ভালো, সৎ, নিষ্ঠাবান ও যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হোক? তাহলে তো সংসদ শক্তিশালী হবে, সংসদে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, জনবান্ধব আইন তৈরি হবে, সংসদ আসলেই কার্যকর হয়ে উঠবে। আমি এখনো মনে করি, সব দলের মধ্যেই যোগ্য, সৎ ও ভালো প্রার্থী আছেন।
এখানে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কাউকে ছোট করার জন্য না—মানুষ তাঁর কাজের যেন স্বীকৃতি পান, যে ব্যক্তি যে কাজ ভালো করেন, তাঁকে সে কাজটি করতে দেওয়া হোক। যিনি যে পেশায় থাকুন না কেন, তাঁর পেশাকে সম্মান করতে হবে, তাঁর কাজকে সম্মান করতে হবে, তাহলে তিনি সে ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করবেন, তাঁর কাজেরও মূল্যায়ন হবে। কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর কাজের মূল্যায়ন পান, তাহলে তাঁর কাজ করার স্পৃহা অনেক বেড়ে যায়, তিনি সে কাজটি আরও ভালো করে করতে চান। এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
এখন আসি মূল আলোচনায়। বঙ্গবন্ধু সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য নিজের দলের মধ্য থেকেই সবচেয়ে ভালো, কর্মদক্ষ ও সৎ ব্যক্তিকে বেছে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই ভালো, সৎ মানুষদের রাজনীতিতে আনার জন্য সেই সময় সৎ শিক্ষকদেরও জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শাহাদাতবরণ করার পরে এই ব্যবস্থার দিকে আর কেউ ফিরে তাকায়নি।
আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব বক্তৃতা-বিবৃতি শুনছি, তা দেখলে মনে হয় এক কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সংসদ সদস্য হওয়া উচিত ছিল। এখন কথা হলো, যদি মোটামুটি ৯০ শতাংশ আসনে কমেডিয়ান সাহেবদের মতো প্রার্থী নির্বাচিত হন, যেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, তাহলে সংসদের অবস্থা কী হতো?
এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, যে ব্যক্তি সুস্থ ধারায় কমেডি করতে পারেন, মানুষকে বিনোদন দিতে পারেন, মানুষকে হাসাতে পারেন তাঁকে আমরা সাধারণত কমেডিয়ান বলি। আমি এখানে কমেডিয়ান বলতে খারাপ কিছু বোঝাচ্ছি না। মানুষকে বিনোদন দেওয়া, হাসাতে পারা একটি বিরাট গুণ। তাই দয়া করে ‘কমেডিয়ান’ শব্দটাকে নেতিবাচক হিসেবে নেবেন না। শুধু বলতে চাইছি, যে যার কাজটা ঠিকভাবে করলে রাজনীতিটা এ রকম জায়গায় এসে দাঁড়াত না।
সুস্থ ও মুক্তবুদ্ধির চিন্তার মানুষ একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন তো, সংসদ সদস্য হতে হলে কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়? সবাই বলতে পারেন—যিনি দুর্নীতি করবেন না, বিদেশে টাকা পাচার করবেন না। তিনি যে দুর্নীতি করবেন না, তা কিন্তু প্রমাণিত না, সেই সুযোগ পাননি, পেলে কী করতেন, তা এখনো আমরা দেখিনি।
সংস্কৃতিজগতে স্থুল রুচির প্রকাশ দেখে আমাদের দেশের স্বনামধন্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ মন্তব্য করেছিলেন, ‘রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে’। আহা, আমাদের দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, কলাম লেখক, বুদ্ধিজীবী, প্রতি-বুদ্ধিজীবী, গণতান্ত্রিক সচেতনতার লোক একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়লেন একজন মুক্তবুদ্ধি চিন্তার মানুষের ওপরে। মামুনুর রশীদ সাহেব এর প্রতিবাদ করার রুচিবোধও হারিয়ে ফেললেন, বেচারা এ ব্যাপারে একেবারে চুপ হয়ে গেলেন!
সবাই একটু চিন্তা করে দেখুন, যদি আমাদের সংসদে ৩০০ জন রাজনীতির বাইরের মানুষ নির্বাচিত হন, তাহলে সংসদের অবস্থা কী হবে! বর্তমান সংবিধান অনুসারে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেই প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও সদস্য হওয়ার কথা। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারও সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে হতে হবে। কাল্পনিক অর্থে মনে করুন, যদি রাজনীতির ‘অ আ ক খ’ না জানা সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে উল্লিখিত পদে কয়েকজন আসীন হন, তাহলে রাষ্ট্র ও সমাজের কী অবস্থা হবে? এখনও সংসদে ব্যবসায়ীদের আধিক্য দেখি, সেটাও কোনো কাজের কথা নয়।
মোটের ওপর কথা হলো, সবারই গণতান্ত্রিক অধিকার আছে—নির্বাচন করার, ভোট দেওয়ার, ভোট না দেওয়ার, কথা বলার, মত প্রকাশ করার, মত প্রকাশ না করার। এই সবই হলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বা গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার পদ্ধতি। কিন্তু এই গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে গিয়ে নিজেকে নিজের প্রশ্ন করা দরকার, আমি কোন কাজের উপযুক্ত, আমি কোন কাজটি ভালো করতে পারি।
আমার গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে গিয়ে দেশের যেন ক্ষতি না করি, মানুষের জন্য বিরক্তির উদ্রেক না করি। আমার চেয়ে ভালো যদি কেউ ওই কাজটি করতে পারেন, তাহলে কেন আমি তাঁকে ওই কাজটি করার অধিকার দিই না? এই বোধটুকু যদি মানুষের মনে থাকে, তাহলেই গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকবে।
২০০৭ সালের দিকে আমি একবার উচ্চতর ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিংয়ের জন্য জাপানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের যে কথাটির ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল সেটা হলো, জাপানি ভাষায় ‘খাইজান’। বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, বর্তমান অবস্থান থেকে ভালোর দিকে কিছুটা পরিবর্তন। বর্তমান ব্যবস্থায় কোনো কলাকৌশল যে অবস্থায় আছে, তা সামান্য একটু ভালোর দিকে পরিবর্তন করতে পারলেই কাজটা সার্থকভাবে সম্পন্ন হয়। যদি বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে সমাজব্যবস্থার ভালোর দিকে কিছু পরিবর্তন করা যায়, তাহলেই সার্থক হয় পরিবর্তনের।
সৎ বুদ্ধি উদয়ের মাধ্যমে যদি গণতান্ত্রিক চর্চা হয়, তাহলেই সমাজ এগিয়ে যাবে। ওই যে বললাম, বর্তমান অবস্থা থেকে ভালোর দিকে পরিবর্তন; এই একবিংশ শতাব্দীর যুগে আমরা আমাদের সমাজকে ভালোর দিকে পরিবর্তন করতে চাই, পেছনের দিকে তাকাতে চাই না।
লেখক: প্রকৌশলী
বাংলাদেশে সম্প্রতি কয়েকটি উপনির্বাচনে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে। স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিক, যিনি মানসিকভাবে সুস্থ এবং যাঁর বয়স ২৫ বছর, নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। আমাদের সংবিধান তাই বলে। যেহেতু উপনির্বাচনে রাজপথে থাকা প্রধান বিরোধী দল অংশ নেয়নি, তাই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের বিপরীতে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন।
যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের আশা ছিল, রাজপথের বিরোধী দল তাঁদেরই সমর্থন করবে, প্রকাশ্যে না হলেও ভেতরে-ভেতরে। আর তা না হলে নিদেনপক্ষে তাঁদের ভোট দেবে। এই সোজা ফর্মুলা খাটিয়ে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন।
গত কয়েক মাসে এসব দেখে দেখে নিজের মনের মধ্যে বিরক্তি প্রকাশ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তাই কয়েক দিন আগে আমি নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলাম এই বলে যে ‘নিজের সন্তানের প্রাইভেট টিউটর খোঁজেন বুয়েটের গ্র্যাজুয়েট অথবা ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট, জাতীয় পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে খোঁজেন নিম্নশ্রেণির কমেডিয়ানদের!’ এই পোস্ট দেওয়ার পরে লাইক পড়েছে ৭০ শতাংশ।
যে কয়টি মন্তব্য এসেছে এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মন্তব্যকারী আমার মতের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে মোটামুটি যে মতামত দিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়—‘কমেডিয়ান হোক আর যা-ই হোক, সে ঘুষ নেবে না, দুর্নীতি করবে না, সে বিদেশে টাকা পাচার করবে না। যেসব গণ্যমান্য নামীদামি ব্যক্তি সংসদ সদস্য হিসেবে আছেন, তাঁদের বেশির ভাগই দুর্নীতি করেন ও বিদেশে টাকা পাচার করেন। এই সব দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীর চেয়ে কমেডিয়ান অনেক ভালো!’ মোটের ওপর তাঁদের মন্তব্য এ রকমই ছিল।
তিন-চার দিন পরে যখন লাইক-ডিজলাইকের পালা শেষ, তখন আমি মন্তব্য করলাম—যাঁরা এ দেশের টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজদের বিপক্ষে কথা বলেছেন, আমি তাঁদের সঙ্গে একমত। তাই বলে আপনারা সবাই এই মন্তব্য কেন করেন না যে সব দলের মধ্য থেকেই ভালো, সৎ, নিষ্ঠাবান ও যোগ্য ব্যক্তিকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হোক? তাহলে তো সংসদ শক্তিশালী হবে, সংসদে জাতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, জনবান্ধব আইন তৈরি হবে, সংসদ আসলেই কার্যকর হয়ে উঠবে। আমি এখনো মনে করি, সব দলের মধ্যেই যোগ্য, সৎ ও ভালো প্রার্থী আছেন।
এখানে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কাউকে ছোট করার জন্য না—মানুষ তাঁর কাজের যেন স্বীকৃতি পান, যে ব্যক্তি যে কাজ ভালো করেন, তাঁকে সে কাজটি করতে দেওয়া হোক। যিনি যে পেশায় থাকুন না কেন, তাঁর পেশাকে সম্মান করতে হবে, তাঁর কাজকে সম্মান করতে হবে, তাহলে তিনি সে ক্ষেত্রে উন্নতি লাভ করবেন, তাঁর কাজেরও মূল্যায়ন হবে। কোনো ব্যক্তি যদি তাঁর কাজের মূল্যায়ন পান, তাহলে তাঁর কাজ করার স্পৃহা অনেক বেড়ে যায়, তিনি সে কাজটি আরও ভালো করে করতে চান। এটা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।
এখন আসি মূল আলোচনায়। বঙ্গবন্ধু সমাজব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য নিজের দলের মধ্য থেকেই সবচেয়ে ভালো, কর্মদক্ষ ও সৎ ব্যক্তিকে বেছে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। এই ভালো, সৎ মানুষদের রাজনীতিতে আনার জন্য সেই সময় সৎ শিক্ষকদেরও জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু শাহাদাতবরণ করার পরে এই ব্যবস্থার দিকে আর কেউ ফিরে তাকায়নি।
আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব বক্তৃতা-বিবৃতি শুনছি, তা দেখলে মনে হয় এক কনটেন্ট ক্রিয়েটরের সংসদ সদস্য হওয়া উচিত ছিল। এখন কথা হলো, যদি মোটামুটি ৯০ শতাংশ আসনে কমেডিয়ান সাহেবদের মতো প্রার্থী নির্বাচিত হন, যেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়, তাহলে সংসদের অবস্থা কী হতো?
এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো, যে ব্যক্তি সুস্থ ধারায় কমেডি করতে পারেন, মানুষকে বিনোদন দিতে পারেন, মানুষকে হাসাতে পারেন তাঁকে আমরা সাধারণত কমেডিয়ান বলি। আমি এখানে কমেডিয়ান বলতে খারাপ কিছু বোঝাচ্ছি না। মানুষকে বিনোদন দেওয়া, হাসাতে পারা একটি বিরাট গুণ। তাই দয়া করে ‘কমেডিয়ান’ শব্দটাকে নেতিবাচক হিসেবে নেবেন না। শুধু বলতে চাইছি, যে যার কাজটা ঠিকভাবে করলে রাজনীতিটা এ রকম জায়গায় এসে দাঁড়াত না।
সুস্থ ও মুক্তবুদ্ধির চিন্তার মানুষ একবার চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখুন তো, সংসদ সদস্য হতে হলে কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়? সবাই বলতে পারেন—যিনি দুর্নীতি করবেন না, বিদেশে টাকা পাচার করবেন না। তিনি যে দুর্নীতি করবেন না, তা কিন্তু প্রমাণিত না, সেই সুযোগ পাননি, পেলে কী করতেন, তা এখনো আমরা দেখিনি।
সংস্কৃতিজগতে স্থুল রুচির প্রকাশ দেখে আমাদের দেশের স্বনামধন্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ মন্তব্য করেছিলেন, ‘রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে’। আহা, আমাদের দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, কলাম লেখক, বুদ্ধিজীবী, প্রতি-বুদ্ধিজীবী, গণতান্ত্রিক সচেতনতার লোক একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়লেন একজন মুক্তবুদ্ধি চিন্তার মানুষের ওপরে। মামুনুর রশীদ সাহেব এর প্রতিবাদ করার রুচিবোধও হারিয়ে ফেললেন, বেচারা এ ব্যাপারে একেবারে চুপ হয়ে গেলেন!
সবাই একটু চিন্তা করে দেখুন, যদি আমাদের সংসদে ৩০০ জন রাজনীতির বাইরের মানুষ নির্বাচিত হন, তাহলে সংসদের অবস্থা কী হবে! বর্তমান সংবিধান অনুসারে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেই প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও সদস্য হওয়ার কথা। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারও সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে হতে হবে। কাল্পনিক অর্থে মনে করুন, যদি রাজনীতির ‘অ আ ক খ’ না জানা সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে উল্লিখিত পদে কয়েকজন আসীন হন, তাহলে রাষ্ট্র ও সমাজের কী অবস্থা হবে? এখনও সংসদে ব্যবসায়ীদের আধিক্য দেখি, সেটাও কোনো কাজের কথা নয়।
মোটের ওপর কথা হলো, সবারই গণতান্ত্রিক অধিকার আছে—নির্বাচন করার, ভোট দেওয়ার, ভোট না দেওয়ার, কথা বলার, মত প্রকাশ করার, মত প্রকাশ না করার। এই সবই হলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বা গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার পদ্ধতি। কিন্তু এই গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে গিয়ে নিজেকে নিজের প্রশ্ন করা দরকার, আমি কোন কাজের উপযুক্ত, আমি কোন কাজটি ভালো করতে পারি।
আমার গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করতে গিয়ে দেশের যেন ক্ষতি না করি, মানুষের জন্য বিরক্তির উদ্রেক না করি। আমার চেয়ে ভালো যদি কেউ ওই কাজটি করতে পারেন, তাহলে কেন আমি তাঁকে ওই কাজটি করার অধিকার দিই না? এই বোধটুকু যদি মানুষের মনে থাকে, তাহলেই গণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত থাকবে।
২০০৭ সালের দিকে আমি একবার উচ্চতর ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিংয়ের জন্য জাপানে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের যে কথাটির ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল সেটা হলো, জাপানি ভাষায় ‘খাইজান’। বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায়, বর্তমান অবস্থান থেকে ভালোর দিকে কিছুটা পরিবর্তন। বর্তমান ব্যবস্থায় কোনো কলাকৌশল যে অবস্থায় আছে, তা সামান্য একটু ভালোর দিকে পরিবর্তন করতে পারলেই কাজটা সার্থকভাবে সম্পন্ন হয়। যদি বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে সমাজব্যবস্থার ভালোর দিকে কিছু পরিবর্তন করা যায়, তাহলেই সার্থক হয় পরিবর্তনের।
সৎ বুদ্ধি উদয়ের মাধ্যমে যদি গণতান্ত্রিক চর্চা হয়, তাহলেই সমাজ এগিয়ে যাবে। ওই যে বললাম, বর্তমান অবস্থা থেকে ভালোর দিকে পরিবর্তন; এই একবিংশ শতাব্দীর যুগে আমরা আমাদের সমাজকে ভালোর দিকে পরিবর্তন করতে চাই, পেছনের দিকে তাকাতে চাই না।
লেখক: প্রকৌশলী
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে