প্রতারণার টাকায় চেয়ারম্যান, অবশেষে কারাগারে রেজাউল

শাহরিয়ার হাসান, ঢাকা
প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ২০
আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৪৯

তিনজন যুবকের একটি দল। কোড নাম “নিউফুল”। তাদের সবার হাতে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের ১০ জন নতুন এজেন্টের একটি করে তালিকা। গ্রামে নির্জন ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি সেজে এবার একের পর এক ফোন করছেন তারা। এজেন্টদের বলছেন, প্রতিষ্ঠান থেকে আপনাদের কমিশন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাড়তি কমিশন পেতে অনুসরণ করতে হবে এসব পদ্ধতি। আসলে এর আড়ালে তারা প্রতারণার মাধ্যমে ওই এজেন্টের অ্যাকাউন্টের অর্থ আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি বলছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা নতুন না। ভুলিয়ে ভালিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন একশ্রেণির প্রতারক। তবে এজেন্টের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ধারণাটি প্রথম। আর এই প্রতারক চক্রের হোতা ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধার সদ্য নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল মাতুব্বর। সিআইডি অনুসন্ধান ও রেজাউলের স্বীকারোক্তিতে উঠে এসেছে, সম্প্রতি নির্বাচনে তিনি কোটি টাকা খরচ করেছেন। সেটাও এসেছে এই প্রতারণার অর্থ থেকে।

রেজাউলের হয়ে এ কাজ করেছেন এলাকারই অনন্ত অর্ধশতাধিক যুবক। গত ২৪ তারিখে গ্রেপ্তারের পর দুই দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তাঁকে। এর আগেও এ চক্রের ১০ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, ২০২০ সালে করোনাকালে তিনি বেকার হয়ে পড়েন। পরে তাঁর এক খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে রেজাউল মাতুব্বর সঙ্গে পরিচয়। রেজাউল তাঁকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার প্রস্তাব দেন। পরে এক হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁর কাছে থেকে সিম ও দশ হাজার টাকার বিনিময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নতুন এজেন্টদের ১০-১৫ জনের একটি তালিকা সংগ্রহ করেন। জাকির হোসেন তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা এভাবে প্রতারণা করা সম্ভব হতো। পাঁচ লাখ টাকা প্রতারণা করতে পারলে আড়াই লাখ টাকা দিতে হতো রেজাউলকে।

মামলাটির তদারক কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার কামরুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, রেজাউল এই অভিনব প্রতারণার হোতা। তাঁর অধীনে কাজ করেন অন্তত অর্ধশতাধিক যুবক। এই প্রতারণার মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়েছেন। সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে অনন্ত ৮–১০ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে।

সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরে মার্চে টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিকাশ এজেন্টের সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি ঘটনায় সখীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন রাসেল। তিনি সখীপুর থানার তক্তারচালা বাজারের মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ ব্যবসায়ী। বিকাশ এজেন্ট নম্বরে প্রতারকেরা ফোন দিয়ে নিজেদের বিকাশ কর্মকর্তা পরিচয়ে দিয়ে বিভিন্ন প্রলোভনে ওটিপি ও পিনকোড নম্বর নিয়ে মোট ৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়ন থেকে পাঁচজন যুবকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসে পুরো চক্রটি।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খান বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা এই চক্রের সঙ্গে বিকাশের এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। পরবর্তীতে তাঁদের কথার সূত্র ধরে গত নভেম্বরে গাজিপুর থেকে তানভীর সিরাজী ওরফে সিজার নামের (৩৮) বিকাশের সাবেক এই টেরিটরি ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেজাউল ২০১১ সালে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হন। ২০১৬ সালে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হারেন। কিন্তু ২০২১ সালে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচনে ঘোড়া মার্কা নিয়ে স্বাতন্ত্র্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। গত ৩ জানুয়ারি শপথের পরের দিন ঢাকায় অন্য একটি প্রতারণা মামলায় হাজিরা দিতে এলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণের ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত