হাওরের গাছ কেটে বোরো চাষ

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮: ১০
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ৪৫

বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরে হিজল-করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ বৃক্ষ নিধনের পর সেই জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। আবার কোথাও বোরো ধান চাষের জন্য ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরির কাজ চলছে।

হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ পাশের ও সাতবিলার উত্তর পাশের প্রায় ৫ একর জমি থেকে এই গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা জানান, মালাম বিলের দক্ষিণ পাশের ও সাতবিলার উত্তর পাশের জমি থেকে প্রায় ৬০০ গাছ কাটা হয়েছে। এর আগে প্রায় ৭ মাস আগে হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমি থেকেও কয়েক হাজার গাছ কাটা হয়।

এদিকে গাছ কাটার ঘটনায় গত বুধবার বড়লেখা থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন হাল্লা ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা জুনিয়র ওয়াইল্ড লাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেবনাথ। এতে ৯ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযুক্তরা হলেন বড়লেখা উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের কাজিরবন্দ গ্রামের পারভেজ আহমদ, রিয়াজ আলী, নাজিম উদ্দিন, গফুর উদ্দিন, হান্নান, জয়নাল, মালেক ও সুরুজ আলী এবং কাজিরবন্দ গ্রামের মোশাইদ আলী।

এদিকে হাওরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যেখানে গাছ লাগানোর কথা, সেখানে সরকারি খাসজমি থেকে গাছ কেটে অবৈধ দখলদারেরা ধান চাষ করায় পরিবেশবিদসহ স্থানীয় বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে হাকালুকি হাওরে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে হিজল-করচসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ গাছ লাগানো হয়। এ ছাড়া এখানে প্রাকৃতিকভাবে বেশ কিছু গাছ বেড়ে উঠেছে। গত ৩০ নভেম্বর হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ পাশের ও সাতবিলার উত্তর পাশের প্রায় ৫ একর জমি থেকে জলজ বৃক্ষ কেটে ধান চাষের জন্য জমি তৈরি করার খবর পান হাল্লা ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাছ কেটে জমি তৈরি ও বোরো আবাদের প্রমাণ পেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এ ঘটনায় চার-পাঁচ লাখ টাকার গাছ ধ্বংস করা হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। প্রায় ৭ মাস আগে হাকালুকি হাওরের মালাম বিলের দক্ষিণ-পূর্ব পাশের খাসজমি থেকেও কয়েক হাজার গাছ কাটার ঘটনা ঘটেছিল।

এই ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ব্যবস্থাপনা বিধিমালায় সাতজনকে আসামি করে মামলা করা হয়। ওই মামলা এখন তদন্তাধীন রয়েছে।

তপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘চলতি বছরের মে মাসে কয়েক হাজার জলজ বৃক্ষ ধ্বংস করে ট্রাক্টর দিয়ে জমি তৈরি করা হয়। সেই জায়গার অন্য পাশের প্রায় ৫ একর ভূমিতে এবার চার-পাঁচ লাখ টাকার গাছ উপড়িয়ে বোরো ধান লাগানো হয়েছে। আগের ঘটনায় অভিযুক্ত কয়েকজন এবারও গাছ কাটায় জড়িত আছেন।’

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম রোববার দুপুরে বলেন, ‘গত শনিবার সরেজমিন পরিদর্শন (হাওরের যেখানে গাছ কাটা হয়েছে) করেছি। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এখানে প্রায় ৬০০ গাছ কাটা হয়েছে। ওই জায়গায় লাল ফ্ল্যাগ বসানো হয়েছে, যাতে আর কেউ এই এলাকায় ঢুকতে না পারে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা বলেন, ‘গাছ কাটার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বড়লেখা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতাউর রহমান বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। খাসজমির বনের ভেতরে জমি তৈরি করে বোরো ধানের চারা লাগানোর আলামত পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা যেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতাধীন, তারা নিয়মিত মামলা করবে। এর আগেও গাছ কাটার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছিল।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণের ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত