ইমতিয়াজ মাহমুদ
হিন্দু মহাসভার কথা তো আমরা জানি—ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠন। ভারতের স্বাধীনতার আগে থেকেই এরা হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধারণাটা জনপ্রিয় করে। ১৯৪৭-এর আগে আমাদের এই ভূখণ্ডে, যেটা আজকের বাংলাদেশ, এখানে হিন্দু মহাসভার কার্যক্রম ছিল। পাকিস্তানের সময়ও ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেও আছে। হিন্দু মহাসভার রাজনৈতিক মত, পথ ও কাজের ধারা নিয়ে বলার কিছু নেই, আপনারা সবাই জানেন। ভারতে বর্তমানে ওদেরই ‘পরিবার’ এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়—ওরা এটাকে বলে সংঘ পরিবার।
বাংলাদেশে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক নামে এক ভদ্রলোক আছেন, তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশে হিন্দু মহাসভার সাধারণ সম্পাদক। এই সংগঠনের কার্যক্রম বা অন্য কোনো নেতার কথা বা কাজ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না, কিন্তু প্রামাণিক সাহেব, তাঁর কথা, মতামত ইত্যাদির জন্য সব সময়ই আলোচিত। প্রামাণিকের রয়েছে একঝাঁক অনুসারী বা বাংলায় যাকে আমরা বলি চ্যালা।
গোবিন্দ প্রামাণিকের এই চ্যালারা বর্তমানে হিন্দু পারিবারিক আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনের বিরোধিতায় নেমেছে, বিশেষ করে অনলাইনে এ লক্ষ্যে তারা নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অফলাইনেও তাদের কার্যক্রম নিতান্ত কম নয়, মিটিং-মিছিল, শোভাযাত্রাও করেছে। তাদের একটা ছাত্র যুব সংগঠন আছে। সেই সংগঠন একটি বিশাল পোস্টার প্রকাশ করেছিল বছরখানেক আগে, যেখানে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের বিপক্ষে নানা ধরনের কৌতুককর তর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। গোবিন্দ প্রামাণিক এবং তাঁর এই চ্যালারা আইনের সব দিক নিয়ে আগ্রহী নন—একটা জায়গায় তাঁরা প্রামাণিকের সঙ্গে একমত এবং সবাই মিলে সেটারই বিরোধ করছেন।
নারীদের কোনো উত্তরাধিকার তাঁরা দিতে রাজি নন। নারীরা পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন, সেটা কোনো অবস্থাতেই তাঁরা মানবেন না। পিতার সম্পত্তি এই ভাইয়েরা নিজেরা একা একা খাবেন, বোনকে এক কণামাত্র দিতে রাজি নন। এ জন্য তাঁরা এই আইনের পরিবর্তনের পক্ষে সদ্যই কেউ কিছু বললে তাঁর বিরুদ্ধে হামলে পড়েন আর তাঁকে অনলাইনে নানাভাবে আক্রমণ করেন।
আমাদের দেশে হিন্দু পারিবারিক আইন যেটা চালু আছে, এর অধীনে কন্যারা পিতার সম্পত্তিতে কোনো উত্তরাধিকার পায় না। পিতা যতই বিত্তবান হোন, যতই থাকুক তাঁর সম্পদের পরিমাণ, মৃত্যুর পর পিতার ত্যাজ্যবিত্তে কন্যাদের কণামাত্র অধিকার নেই—সব সম্পত্তি পাবে পুত্র, কন্যার ভাগে শূন্য। এটা তো দৃশ্যতই একটা অন্যায় আইন। নারী-পুরুষভেদে বা লৈঙ্গিক পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে তো বৈষম্য করা যায় না। এটা সাংবিধানিকভাবেই নিষিদ্ধ। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনে সন্তানের লৈঙ্গিক পরিচয় যদি পুরুষ ও নারীর বাইরে অন্য কিছু হয়, তাহলে সে-ও কোনো সম্পদ পাবে না। এই আইন যে বর্তমান যুগে অচল, সে কথা তো বলাই বাহুল্য। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশই এই পরিবর্তনের পক্ষে। পরিবর্তনটা হলে কন্যারা পিতার সম্পত্তিতে খানিকটা উত্তরাধিকার পাবে।
গোবিন্দ প্রামাণিক এবং তাঁর চ্যালারা এর বিরোধিতা করছেন। করতে পারেন, আমি যদিও কোনো যুক্তি দেখি না, তথাপি তাঁদের পক্ষে কিছু যুক্তি থাকলেও থাকতে পারে। বিরোধিতা তো বৈধ আছে আরকি। বিরোধিতা হলে কী করতে হয়, দুই পক্ষ পরস্পরের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করবে, উন্মুক্ত আলোচনা হবে সমাজের সর্বত্র এবং এসব আলোচনা থেকে সঠিক একটা পথ বেরিয়ে এলেও আসতে পারে। কিন্তু গোবিন্দ প্রামাণিকের চ্যালারা সভ্য যুক্তি-তর্কের মধ্যে নিজেদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবেন না, তাঁরা পরিবর্তনের পক্ষের সবাইকে নির্বিচারে গালাগালি করবেন আর চেষ্টা করবেন কত রকমভাবে তাঁদের হেনস্তা করা যায়; বিশেষ করে অনলাইনে তাঁরা যে কত প্রকার গালাগাল ও বাচিক আক্রমণ করেন, সেটার ছোটখাটো কিছু নমুনা আপনি দেখতে পাবেন পরিবর্তনের পক্ষের কারও ফেসবুকে গেলেই। শুধু তা-ই নয়, বিশেষ করে নারীদের হয়রানি ও স্ক্যান্ডালাইজ করার নানা প্রকার কায়দা তাঁরা বের করেছেন। যদি কোনো নারী এই পরিবর্তনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন তো সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ওপর তাঁরা হামলে পড়বেন। তার ব্যক্তিগত জীবন, আচরণ থেকে শুরু করে ওই নারী সম্পর্কে যত রকমভাবে পারেন গালাগাল করতে থাকেন।
গোবিন্দ প্রামাণিক ও তাঁর চ্যালাদের একটা তর্ক হচ্ছে যে বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের যদি পৈতৃক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার থাকে, তাহলে নারীরা সবাই বিধর্মীদের বিবাহ করে স্বধর্ম ত্যাগ করবে এবং এতে করে সম্পত্তি সব চলে যাবে মুসলমানদের হাতে। এটা অতি বাজে যুক্তি। কারণ, হিন্দু আইনে কেউ ধর্ম ত্যাগ করলে তার পৈতৃক সম্পত্তিতে আর কোনো উত্তরাধিকার থাকে না। সুতরাং কোনো মেয়ের পিতার সম্পত্তির লোভে মুসলমানরা দলে দলে হিন্দু মেয়েদের পটিয়ে বিবাহ করবে, সেটার তো কোনো ভিত্তিই নেই। তা ছাড়া এই বিষয়টা আইন কমিশনে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তিত্বরা এসব তর্ক উড়িয়ে দিয়েছেন। বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেছেন, এ রকম ঘটনা কদাচিৎ ঘটে এবং এগুলোর সংখ্যা কোনোভাবেই উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু প্রামাণিক এবং তাঁর চ্যালারা এসব যুক্তি মানবেন না। ভারতে বিজেপি ও তাদের অনুগত ছোটখাটো নানা সংগঠন মিলে ‘লাভ জিহাদ’ বলে একটা কথা চালু করেছে। আমাদের দেশে প্রামাণিক গং সেটিকে সূত্র করে একই ধরনের বিদ্বেষমূলক কথা বলতে থাকে।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, যেসব হিন্দু পুরুষ অহিন্দু নারীকে বিবাহ করেছেন, তাঁদের এরা হয়রানি করবে না। হয়রানি করবে কেবল নারীদের। তাদের যত ক্রোধ, যত ক্ষোভ—সব হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে।
গোবিন্দ প্রামাণিক বা তাঁর অনুসারীদের এসব আচরণ কিন্তু অভিনব কিছু নয়। বাংলাদেশে এই সময় তাঁরা হিন্দু নারীদের পেছনে লেগেছে বটে, কিন্তু একই রকম ঘটনা পৃথিবীর নানা দেশে নানা ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে ঘটেছে। নারীকে আক্রমণ করতে হবে, নারীকে কোনো অবস্থাতেই, কোনো মাপেই, কোনো স্তরেই পুরুষের সমকক্ষ বলা যাবে না—এটা সব ধর্মেরই অন্যতম মূল কথা। আর এই যে হয়রানিমূলক আচরণ, এগুলো হচ্ছে হাজার বছরের পুরোনো পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীর প্রতি যে অন্তর্নিহিত বিদ্বেষ থাকে, যেটাকে অনেকে নারীর প্রতি ঘৃণা হিসেবেও চিহ্নিত করেন, প্রামাণিকদের এসব আচরণ হচ্ছে সেই পিতৃতান্ত্রিক নারীবিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
প্রতিটি ধর্মই কোনো না কোনোভাবে পিতৃতন্ত্র বা প্যাট্রিয়ার্কির পাহারাদার। আর পিতৃতন্ত্রের বিকাশই হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণাটির বিকাশের সঙ্গে।
যেহেতু প্রস্তাবিত পরিবর্তনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সম্পদে নারীর মালিকানা নিশ্চিত করা, ধর্ম ও পিতৃতন্ত্র সব তো একসঙ্গে গর্জে উঠবেই। পিতৃতন্ত্র ভেঙে পড়লে তো ধর্মের সাঁড়াশি আলগা হয়ে যাবে। আর প্রস্তাবিত পরিবর্তন হলে তো সম্পদে পুরুষের একচেটিয়া কর্তৃত্ব আর থাকছে না। ফলে স্বার্থপর পুরুষের দল আর ধর্মের বড় বড় পান্ডারা একসঙ্গে হয়ে এখন নারীদের বিপক্ষে নেমেছে।
নারীর মুক্তির লড়াই এত সহজ নয়। পিতৃতন্ত্রকে আঘাত করা খুব সহজ কাজ নয়। ধর্মের কথা আর কী বলব! আমি সালাম জানাই সেই সব নারীকে, যাঁরা এরূপ ঘৃণ্য আক্রমণ উপেক্ষা করে লড়াইটা জারি রেখেছেন ব্যক্তিগত জীবনে এবং সামাজিক পর্যায়েও।
হিন্দু মহাসভার কথা তো আমরা জানি—ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক সংগঠন। ভারতের স্বাধীনতার আগে থেকেই এরা হিন্দু জাতীয়তাবাদী ধারণাটা জনপ্রিয় করে। ১৯৪৭-এর আগে আমাদের এই ভূখণ্ডে, যেটা আজকের বাংলাদেশ, এখানে হিন্দু মহাসভার কার্যক্রম ছিল। পাকিস্তানের সময়ও ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেও আছে। হিন্দু মহাসভার রাজনৈতিক মত, পথ ও কাজের ধারা নিয়ে বলার কিছু নেই, আপনারা সবাই জানেন। ভারতে বর্তমানে ওদেরই ‘পরিবার’ এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়—ওরা এটাকে বলে সংঘ পরিবার।
বাংলাদেশে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক নামে এক ভদ্রলোক আছেন, তিনি হচ্ছেন বাংলাদেশে হিন্দু মহাসভার সাধারণ সম্পাদক। এই সংগঠনের কার্যক্রম বা অন্য কোনো নেতার কথা বা কাজ নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না, কিন্তু প্রামাণিক সাহেব, তাঁর কথা, মতামত ইত্যাদির জন্য সব সময়ই আলোচিত। প্রামাণিকের রয়েছে একঝাঁক অনুসারী বা বাংলায় যাকে আমরা বলি চ্যালা।
গোবিন্দ প্রামাণিকের এই চ্যালারা বর্তমানে হিন্দু পারিবারিক আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনের বিরোধিতায় নেমেছে, বিশেষ করে অনলাইনে এ লক্ষ্যে তারা নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অফলাইনেও তাদের কার্যক্রম নিতান্ত কম নয়, মিটিং-মিছিল, শোভাযাত্রাও করেছে। তাদের একটা ছাত্র যুব সংগঠন আছে। সেই সংগঠন একটি বিশাল পোস্টার প্রকাশ করেছিল বছরখানেক আগে, যেখানে হিন্দু উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তনের বিপক্ষে নানা ধরনের কৌতুককর তর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। গোবিন্দ প্রামাণিক এবং তাঁর এই চ্যালারা আইনের সব দিক নিয়ে আগ্রহী নন—একটা জায়গায় তাঁরা প্রামাণিকের সঙ্গে একমত এবং সবাই মিলে সেটারই বিরোধ করছেন।
নারীদের কোনো উত্তরাধিকার তাঁরা দিতে রাজি নন। নারীরা পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবেন, সেটা কোনো অবস্থাতেই তাঁরা মানবেন না। পিতার সম্পত্তি এই ভাইয়েরা নিজেরা একা একা খাবেন, বোনকে এক কণামাত্র দিতে রাজি নন। এ জন্য তাঁরা এই আইনের পরিবর্তনের পক্ষে সদ্যই কেউ কিছু বললে তাঁর বিরুদ্ধে হামলে পড়েন আর তাঁকে অনলাইনে নানাভাবে আক্রমণ করেন।
আমাদের দেশে হিন্দু পারিবারিক আইন যেটা চালু আছে, এর অধীনে কন্যারা পিতার সম্পত্তিতে কোনো উত্তরাধিকার পায় না। পিতা যতই বিত্তবান হোন, যতই থাকুক তাঁর সম্পদের পরিমাণ, মৃত্যুর পর পিতার ত্যাজ্যবিত্তে কন্যাদের কণামাত্র অধিকার নেই—সব সম্পত্তি পাবে পুত্র, কন্যার ভাগে শূন্য। এটা তো দৃশ্যতই একটা অন্যায় আইন। নারী-পুরুষভেদে বা লৈঙ্গিক পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকদের মধ্যে তো বৈষম্য করা যায় না। এটা সাংবিধানিকভাবেই নিষিদ্ধ। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনে সন্তানের লৈঙ্গিক পরিচয় যদি পুরুষ ও নারীর বাইরে অন্য কিছু হয়, তাহলে সে-ও কোনো সম্পদ পাবে না। এই আইন যে বর্তমান যুগে অচল, সে কথা তো বলাই বাহুল্য। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য অংশই এই পরিবর্তনের পক্ষে। পরিবর্তনটা হলে কন্যারা পিতার সম্পত্তিতে খানিকটা উত্তরাধিকার পাবে।
গোবিন্দ প্রামাণিক এবং তাঁর চ্যালারা এর বিরোধিতা করছেন। করতে পারেন, আমি যদিও কোনো যুক্তি দেখি না, তথাপি তাঁদের পক্ষে কিছু যুক্তি থাকলেও থাকতে পারে। বিরোধিতা তো বৈধ আছে আরকি। বিরোধিতা হলে কী করতে হয়, দুই পক্ষ পরস্পরের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করবে, উন্মুক্ত আলোচনা হবে সমাজের সর্বত্র এবং এসব আলোচনা থেকে সঠিক একটা পথ বেরিয়ে এলেও আসতে পারে। কিন্তু গোবিন্দ প্রামাণিকের চ্যালারা সভ্য যুক্তি-তর্কের মধ্যে নিজেদের আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখবেন না, তাঁরা পরিবর্তনের পক্ষের সবাইকে নির্বিচারে গালাগালি করবেন আর চেষ্টা করবেন কত রকমভাবে তাঁদের হেনস্তা করা যায়; বিশেষ করে অনলাইনে তাঁরা যে কত প্রকার গালাগাল ও বাচিক আক্রমণ করেন, সেটার ছোটখাটো কিছু নমুনা আপনি দেখতে পাবেন পরিবর্তনের পক্ষের কারও ফেসবুকে গেলেই। শুধু তা-ই নয়, বিশেষ করে নারীদের হয়রানি ও স্ক্যান্ডালাইজ করার নানা প্রকার কায়দা তাঁরা বের করেছেন। যদি কোনো নারী এই পরিবর্তনের পক্ষে মতামত দিয়েছেন তো সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ওপর তাঁরা হামলে পড়বেন। তার ব্যক্তিগত জীবন, আচরণ থেকে শুরু করে ওই নারী সম্পর্কে যত রকমভাবে পারেন গালাগাল করতে থাকেন।
গোবিন্দ প্রামাণিক ও তাঁর চ্যালাদের একটা তর্ক হচ্ছে যে বাংলাদেশে হিন্দু নারীদের যদি পৈতৃক সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার থাকে, তাহলে নারীরা সবাই বিধর্মীদের বিবাহ করে স্বধর্ম ত্যাগ করবে এবং এতে করে সম্পত্তি সব চলে যাবে মুসলমানদের হাতে। এটা অতি বাজে যুক্তি। কারণ, হিন্দু আইনে কেউ ধর্ম ত্যাগ করলে তার পৈতৃক সম্পত্তিতে আর কোনো উত্তরাধিকার থাকে না। সুতরাং কোনো মেয়ের পিতার সম্পত্তির লোভে মুসলমানরা দলে দলে হিন্দু মেয়েদের পটিয়ে বিবাহ করবে, সেটার তো কোনো ভিত্তিই নেই। তা ছাড়া এই বিষয়টা আইন কমিশনে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্যের মতো ব্যক্তিত্বরা এসব তর্ক উড়িয়ে দিয়েছেন। বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেছেন, এ রকম ঘটনা কদাচিৎ ঘটে এবং এগুলোর সংখ্যা কোনোভাবেই উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু প্রামাণিক এবং তাঁর চ্যালারা এসব যুক্তি মানবেন না। ভারতে বিজেপি ও তাদের অনুগত ছোটখাটো নানা সংগঠন মিলে ‘লাভ জিহাদ’ বলে একটা কথা চালু করেছে। আমাদের দেশে প্রামাণিক গং সেটিকে সূত্র করে একই ধরনের বিদ্বেষমূলক কথা বলতে থাকে।
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে, যেসব হিন্দু পুরুষ অহিন্দু নারীকে বিবাহ করেছেন, তাঁদের এরা হয়রানি করবে না। হয়রানি করবে কেবল নারীদের। তাদের যত ক্রোধ, যত ক্ষোভ—সব হচ্ছে নারীর বিরুদ্ধে।
গোবিন্দ প্রামাণিক বা তাঁর অনুসারীদের এসব আচরণ কিন্তু অভিনব কিছু নয়। বাংলাদেশে এই সময় তাঁরা হিন্দু নারীদের পেছনে লেগেছে বটে, কিন্তু একই রকম ঘটনা পৃথিবীর নানা দেশে নানা ধর্মাবলম্বী মানুষের মধ্যে ঘটেছে। নারীকে আক্রমণ করতে হবে, নারীকে কোনো অবস্থাতেই, কোনো মাপেই, কোনো স্তরেই পুরুষের সমকক্ষ বলা যাবে না—এটা সব ধর্মেরই অন্যতম মূল কথা। আর এই যে হয়রানিমূলক আচরণ, এগুলো হচ্ছে হাজার বছরের পুরোনো পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীর প্রতি যে অন্তর্নিহিত বিদ্বেষ থাকে, যেটাকে অনেকে নারীর প্রতি ঘৃণা হিসেবেও চিহ্নিত করেন, প্রামাণিকদের এসব আচরণ হচ্ছে সেই পিতৃতান্ত্রিক নারীবিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
প্রতিটি ধর্মই কোনো না কোনোভাবে পিতৃতন্ত্র বা প্যাট্রিয়ার্কির পাহারাদার। আর পিতৃতন্ত্রের বিকাশই হয়েছে ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণাটির বিকাশের সঙ্গে।
যেহেতু প্রস্তাবিত পরিবর্তনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সম্পদে নারীর মালিকানা নিশ্চিত করা, ধর্ম ও পিতৃতন্ত্র সব তো একসঙ্গে গর্জে উঠবেই। পিতৃতন্ত্র ভেঙে পড়লে তো ধর্মের সাঁড়াশি আলগা হয়ে যাবে। আর প্রস্তাবিত পরিবর্তন হলে তো সম্পদে পুরুষের একচেটিয়া কর্তৃত্ব আর থাকছে না। ফলে স্বার্থপর পুরুষের দল আর ধর্মের বড় বড় পান্ডারা একসঙ্গে হয়ে এখন নারীদের বিপক্ষে নেমেছে।
নারীর মুক্তির লড়াই এত সহজ নয়। পিতৃতন্ত্রকে আঘাত করা খুব সহজ কাজ নয়। ধর্মের কথা আর কী বলব! আমি সালাম জানাই সেই সব নারীকে, যাঁরা এরূপ ঘৃণ্য আক্রমণ উপেক্ষা করে লড়াইটা জারি রেখেছেন ব্যক্তিগত জীবনে এবং সামাজিক পর্যায়েও।
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১৪ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে