কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের প্রচার শেষ হচ্ছে আজ সোমবার মধ্যরাতে। শেষ মুহূর্তে ভোট গ্রহণের দিন বহিরাগতদের দিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা। তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বলছেন, এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই, নির্বাচনের দিন এমন কোনো কিছুই ঘটবে না।

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সারের দাবি, সদর আসনের সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দিন বাহার নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচনের দিন বহিরাগতদের জড়ো করার পরিকল্পনা করেছেন।

এদিকে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত বলছেন, ‘দুই স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর সংসদ সদস্য বাহার কোনো নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি।

নির্বাচনের শেষ সময়ে বিরামহীন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন পাঁচ মেয়র প্রার্থীসহ সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দ্বারে দ্বারে ছুটছেন ভোটের জন্য, দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। এদিকে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু গতকাল রোববার ১৮টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহার ঘোষণা করেন। এর আগে শনিবার ১৩টি প্রতিশ্রুতি সংবলিত ইশতেহার ঘোষণা করেন ঘোড়া প্রতীকের আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার।

নৌকা প্রতীকের আরফানুল হক রিফাত প্রচারের শুরু থেকেই মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গড়া, যানজট-জলাবদ্ধতা নিরসনসহ ১১ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। এ ১১টি প্রতিশ্রুতিই তাঁর ইশতেহার বলে জানান নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আহাম্মেদ নিয়াজ পাভেল।

গতকালের গণসংযোগ ও পথসভায় মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় আমি প্রচার শেষ করেছি। আমার সঙ্গে প্রচারে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের দিন বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন থেকে বহিরাগতদের জড়ো করার পরিকল্পনা করেছেন বলে জানতে পেরেছি। তাঁরা ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে দেবেন না।’

মনিরুল হক সাক্কু আরও বলেন, ‘সদর আসনের সংসদ সদস্য আকম বাহাউদ্দিন বাহার বহিরাগতদের জড়ো করার জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। নির্বাচনের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

আরেক স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ এখনো সুন্দর রয়েছে, কিন্তু আকম বাহাউদ্দিন বাহার তাঁর সংসদীয় আসনের সব ইউনিয়ন থেকে বহিরাগতদের জড়ো করার পরিকল্পনা করছেন। একজন প্রার্থী দুর্বৃত্ত ও হত্যা মামলার আসামিদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন। তাঁর এমন প্রচারে কুমিল্লার মানুষের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।’

এদিকে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত গতকাল প্রচারকালে বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা-কর্মীরা নালিশ ছাড়া আর কিছু করতে পারেন না। প্রচারকালে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো ঝামেলা হয়েছে? তাঁরা বলতে পারবেন না যে, আমি তাঁদের প্রচারে বাধা দিয়েছি। নির্বাচনের দিন জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মাঠে থাকবেন। প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। সুষ্ঠু, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে বলে আশা করছি।

কুসিক নির্বাচনে পাঁচ মেয়রসহ ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১১০ জন এবং সংরক্ষিত আসনের ৯টি ওয়ার্ডে ৩৬ জন প্রার্থী লড়ছেন। ১৫ জুন ভোট গ্রহণ হবে।