আলম শাইন
নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। ধারণা নেই নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস সম্পর্কে। আর এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও জানা নেই অনেকের। অথচ বিষয়টি জানা উচিত প্রত্যেকেরই। সেই চিন্তাভাবনা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে সামান্য ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিষয়টি জানানোর আগে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস সম্পর্কে জেনে নিই আমরা।
যে শক্তির উৎস নিঃশেষ হয়ে যায় না, অল্প সময়ের মধ্যেই পুনরায় ব্যবহার করা যায়, তা-ই হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এই জ্বালানির উৎস হচ্ছে সৌরশক্তি, ভূ-তাপ, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, সমুদ্রের ঢেউ, সমুদ্রতাপ, জোয়ার-ভাটা, বায়োগ্যাস, বায়োফুয়েল, আবর্জনা ইত্যাদি।
এসব উৎস আমরা কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি অনায়াসেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেও। তাতে করে খনিজ জ্বালানির ওপর চাপ কমে আসছে অনেকটাই। উল্লেখ্য, বায়োগ্যাস ও আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। অনুমোদিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে, নচেৎ মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।
আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা করতে। পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য হিসেবে ঠিক রাখতে তারা কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টায় আন্দোলন করে যাচ্ছে। জীবাশ্মের জ্বালানি অথবা খনিজ জ্বালানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হতে পরামর্শ দিচ্ছে।
বলে রাখা ভালো, বিশ্বে খনিজ জ্বালানির অধিকাংশই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে প্রবল বেগে। তাতে জলবায়ুর ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়ছে। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। ঋতুবৈচিত্র্যে হেরফের দেখা দিয়েছে। নতুন রোগ-ব্যারামের আবির্ভাব ঘটছে।
এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে আমাদের।
প্রশংসার বিষয় হচ্ছে, ব্যাপকভাবে না হলেও বাংলাদেশ সৌরশক্তিকে ক্ষুদ্রভাবে কাজে লাগিয়েছে ইতিমধ্যে, যা ‘সোলার প্ল্যান্ট’ নামে পরিচিত। সোলার প্ল্যান্টের ব্যবহারে সফলতাও এসেছে ব্যাপক। দুর্গম অঞ্চলে কিংবা চরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সোলার প্ল্যান্ট।
ভারতেও সোলার প্ল্যান্ট ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার প্ল্যান্টের অবস্থান ভারতেই। প্রায় ৬৪৮ মেগাওয়াট (কম-বেশি হতে পারে) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে ভারত।
আমরা ইচ্ছে করলেই সোলার প্ল্যান্টের মতো অন্যান্য শক্তিও কাজে লাগাতে পারি। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা বায়ুপ্রবাহকে প্রাধান্য দিতে পারি। বিশ্বের কয়েকটি উন্নত রাষ্ট্র বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। বলা যায়, বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্বের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিদ্যুৎ। যেহেতু বিশ্বের প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার মজুত ফুরিয়ে আসছে, তাতে করে দেশগুলো বায়ুশক্তির ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। ফলে পরিবেশদূষণ থেকে যেমন রেহাই পাবে বিশ্ববাসী, তেমনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় দিকও আছে; বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২৪ কিলোমিটার। যেখানে অনবরত বায়ুপ্রবাহ থাকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই প্রবাহকে কাজে লাগাতে পারলে ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হতে পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বায়ুপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো হচ্ছে—হাতিয়া, সন্দ্বীপ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। এ ছাড়া পদ্মা-মেঘনা-যমুনার চরে বায়ুকল স্থাপন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে বায়ুপ্রবাহের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে হবে। অন্তত মাস তিনেকের বায়ুপ্রবাহের গতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে টারবাইন বসানোর উপযোগী কি না।
ভালো খবর হচ্ছে, সরকার বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের খুরুশকুলে দেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
শুধু বায়ুপ্রবাহ নয়; সমুদ্রের ঢেউ, সমুদ্রের তাপ, জোয়ার-ভাটার শক্তি কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার সম্ভব। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জলপ্রবাহকে (কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ) কাজে লাগিয়েছে। কাজে লাগিয়েছে বায়োগ্যাসকেও। এটিও বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়।
গ্রামাঞ্চলে এই গ্যাসের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। রান্নাবান্না এবং বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে ময়লা-আবর্জনা রিসাইকেল করে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মিথেন গ্যাস উৎপন্ন না হয়, তাহলে আবার হিতে বিপরীত ঘটবে।
আরেকটি শক্তি পাওয়া যাচ্ছে জৈব জ্বালানি থেকে। সেটাকে পরিবেশবিদেরা নিরুৎসাহিত করছেন বিভিন্ন কারণেই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, দরিদ্র দেশের মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে জৈব জ্বালানি। জৈব জ্বালানি সম্পর্কে বলতে গেলে বিষয়টির সামান্য ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি আমরা।
জৈব জ্বালানি সম্পর্কে সর্বসাধারণের তেমন একটা ধারণা নেই। জৈব জ্বালানি বা ‘বায়োফুয়েল’ হচ্ছে একধরনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিক চিন্তা করেই জৈব জ্বালানির সম্প্রসারণের সুপারিশ করেছিলেন একসময় পরিবেশবিদেরা। সেই পরামর্শ থেকে পরে সরে এসেছেন তাঁরা।
জৈব জ্বালানি হচ্ছে, ইথানল ও ডিজেলের সমন্বয়ে তৈরি নতুন ধরনের জ্বালানি। যার উপাদান চাল, ডাল, গম, ভুট্টা ও তেলবীজ-জাতীয় খাদ্যশস্য থেকে। এসব খাদ্যশস্য বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব জ্বালানি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর ভালো-মন্দ দুটি দিকই বিদ্যমান রয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় পরিলক্ষিত হচ্ছে, জৈব জ্বালানির ব্যবহার হিতের চেয়ে ক্ষতিই বেশি বয়ে আনছে। এটি বর্তমানে শুধু উন্নত বিশ্বেই ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের অনুসরণ করেছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। তারা তাদের দেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ পামবীজ দিয়ে জৈব জ্বালানি প্রস্তুত করছে।
এ ছাড়া তৃতীয় বিশ্বের অন্য কোনো দেশ দারিদ্র্যের জন্য অদ্যাবধি জৈব জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পায়নি। তার প্রধান কারণই হচ্ছে, এই জ্বালানি প্রস্তুত করা সহজসাধ্য নয়, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া। ফলে জৈব জ্বালানি পরিচিতি পেয়েছে ‘উন্নত বিশ্বের জ্বালানি’ নামে। দেখা যাচ্ছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলো দরিদ্র দেশের মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে যানবাহনের ট্যাংকে তুলে দিতে; যা অনায়াসে চরম মানবতাবিরোধী কাজের একটি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
আগেই জানানো হয়েছে, এই জ্বালানি প্রস্তুত করতে প্রয়োজন অধিক খাদ্যশস্যের। যার ব্যবহার হচ্ছে ডিজেল ও গ্যাসোলিনের পরিবর্তে। এতে করে কোনো ধরনের বায়ুদূষণ ঘটছে না সত্য এবং এ-ও সত্য যে জৈব জ্বালানি আবিষ্কার মানবজাতির জন্য সুখবর বটে। কিন্তু সেই সুখবরের আড়ালে রয়েছে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ ক্ষতির দিক। যার শিকার বিশ্বের নিম্ন আয়ের ৮২টি দেশ। এসব দেশ মানবকল্যাণের পরিপন্থী আবিষ্কার এই জৈব জ্বালানিকে নিরুৎসাহিত করে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা নেই। ধারণা নেই নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস সম্পর্কে। আর এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেও জানা নেই অনেকের। অথচ বিষয়টি জানা উচিত প্রত্যেকেরই। সেই চিন্তাভাবনা থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্পর্কে সামান্য ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি। বিষয়টি জানানোর আগে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস সম্পর্কে জেনে নিই আমরা।
যে শক্তির উৎস নিঃশেষ হয়ে যায় না, অল্প সময়ের মধ্যেই পুনরায় ব্যবহার করা যায়, তা-ই হচ্ছে নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এই জ্বালানির উৎস হচ্ছে সৌরশক্তি, ভূ-তাপ, বায়ুপ্রবাহ, জলপ্রবাহ, সমুদ্রের ঢেউ, সমুদ্রতাপ, জোয়ার-ভাটা, বায়োগ্যাস, বায়োফুয়েল, আবর্জনা ইত্যাদি।
এসব উৎস আমরা কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি অনায়াসেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেও। তাতে করে খনিজ জ্বালানির ওপর চাপ কমে আসছে অনেকটাই। উল্লেখ্য, বায়োগ্যাস ও আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে। অনুমোদিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন করতে হবে, নচেৎ মিথেন গ্যাস উৎপন্ন হয়ে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে।
আমরা জানি, বিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সোচ্চার হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তন মোকাবিলা করতে। পৃথিবীটাকে বাসযোগ্য হিসেবে ঠিক রাখতে তারা কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টায় আন্দোলন করে যাচ্ছে। জীবাশ্মের জ্বালানি অথবা খনিজ জ্বালানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হতে পরামর্শ দিচ্ছে।
বলে রাখা ভালো, বিশ্বে খনিজ জ্বালানির অধিকাংশই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে প্রবল বেগে। তাতে জলবায়ুর ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়ছে। দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। ঋতুবৈচিত্র্যে হেরফের দেখা দিয়েছে। নতুন রোগ-ব্যারামের আবির্ভাব ঘটছে।
এসব থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কমিয়ে আনতে হলে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল হতে হবে আমাদের।
প্রশংসার বিষয় হচ্ছে, ব্যাপকভাবে না হলেও বাংলাদেশ সৌরশক্তিকে ক্ষুদ্রভাবে কাজে লাগিয়েছে ইতিমধ্যে, যা ‘সোলার প্ল্যান্ট’ নামে পরিচিত। সোলার প্ল্যান্টের ব্যবহারে সফলতাও এসেছে ব্যাপক। দুর্গম অঞ্চলে কিংবা চরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে সোলার প্ল্যান্ট।
ভারতেও সোলার প্ল্যান্ট ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোলার প্ল্যান্টের অবস্থান ভারতেই। প্রায় ৬৪৮ মেগাওয়াট (কম-বেশি হতে পারে) বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে ভারত।
আমরা ইচ্ছে করলেই সোলার প্ল্যান্টের মতো অন্যান্য শক্তিও কাজে লাগাতে পারি। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা বায়ুপ্রবাহকে প্রাধান্য দিতে পারি। বিশ্বের কয়েকটি উন্নত রাষ্ট্র বায়ুপ্রবাহকে কাজে লাগিয়ে বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। বলা যায়, বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্বের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিদ্যুৎ। যেহেতু বিশ্বের প্রাকৃতিক গ্যাস এবং কয়লার মজুত ফুরিয়ে আসছে, তাতে করে দেশগুলো বায়ুশক্তির ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। ফলে পরিবেশদূষণ থেকে যেমন রেহাই পাবে বিশ্ববাসী, তেমনি নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবে।
বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় দিকও আছে; বিশেষ করে বাংলাদেশের উপকূলবর্তী এলাকার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২৪ কিলোমিটার। যেখানে অনবরত বায়ুপ্রবাহ থাকে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই প্রবাহকে কাজে লাগাতে পারলে ২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম হতে পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বায়ুপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো হচ্ছে—হাতিয়া, সন্দ্বীপ, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। এ ছাড়া পদ্মা-মেঘনা-যমুনার চরে বায়ুকল স্থাপন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে আগে বায়ুপ্রবাহের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে হবে। অন্তত মাস তিনেকের বায়ুপ্রবাহের গতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে টারবাইন বসানোর উপযোগী কি না।
ভালো খবর হচ্ছে, সরকার বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের খুরুশকুলে দেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
শুধু বায়ুপ্রবাহ নয়; সমুদ্রের ঢেউ, সমুদ্রের তাপ, জোয়ার-ভাটার শক্তি কাজে লাগিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার সম্ভব। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ জলপ্রবাহকে (কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ) কাজে লাগিয়েছে। কাজে লাগিয়েছে বায়োগ্যাসকেও। এটিও বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়।
গ্রামাঞ্চলে এই গ্যাসের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। রান্নাবান্না এবং বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে ময়লা-আবর্জনা রিসাইকেল করে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন করা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন মিথেন গ্যাস উৎপন্ন না হয়, তাহলে আবার হিতে বিপরীত ঘটবে।
আরেকটি শক্তি পাওয়া যাচ্ছে জৈব জ্বালানি থেকে। সেটাকে পরিবেশবিদেরা নিরুৎসাহিত করছেন বিভিন্ন কারণেই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, দরিদ্র দেশের মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে জৈব জ্বালানি। জৈব জ্বালানি সম্পর্কে বলতে গেলে বিষয়টির সামান্য ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি আমরা।
জৈব জ্বালানি সম্পর্কে সর্বসাধারণের তেমন একটা ধারণা নেই। জৈব জ্বালানি বা ‘বায়োফুয়েল’ হচ্ছে একধরনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর দিক চিন্তা করেই জৈব জ্বালানির সম্প্রসারণের সুপারিশ করেছিলেন একসময় পরিবেশবিদেরা। সেই পরামর্শ থেকে পরে সরে এসেছেন তাঁরা।
জৈব জ্বালানি হচ্ছে, ইথানল ও ডিজেলের সমন্বয়ে তৈরি নতুন ধরনের জ্বালানি। যার উপাদান চাল, ডাল, গম, ভুট্টা ও তেলবীজ-জাতীয় খাদ্যশস্য থেকে। এসব খাদ্যশস্য বিশেষ উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব জ্বালানি প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর ভালো-মন্দ দুটি দিকই বিদ্যমান রয়েছে। তবে সার্বিক বিবেচনায় পরিলক্ষিত হচ্ছে, জৈব জ্বালানির ব্যবহার হিতের চেয়ে ক্ষতিই বেশি বয়ে আনছে। এটি বর্তমানে শুধু উন্নত বিশ্বেই ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের অনুসরণ করেছে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া। তারা তাদের দেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ পামবীজ দিয়ে জৈব জ্বালানি প্রস্তুত করছে।
এ ছাড়া তৃতীয় বিশ্বের অন্য কোনো দেশ দারিদ্র্যের জন্য অদ্যাবধি জৈব জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ পায়নি। তার প্রধান কারণই হচ্ছে, এই জ্বালানি প্রস্তুত করা সহজসাধ্য নয়, এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া। ফলে জৈব জ্বালানি পরিচিতি পেয়েছে ‘উন্নত বিশ্বের জ্বালানি’ নামে। দেখা যাচ্ছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিল্পোন্নত দেশগুলো দরিদ্র দেশের মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে যানবাহনের ট্যাংকে তুলে দিতে; যা অনায়াসে চরম মানবতাবিরোধী কাজের একটি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
আগেই জানানো হয়েছে, এই জ্বালানি প্রস্তুত করতে প্রয়োজন অধিক খাদ্যশস্যের। যার ব্যবহার হচ্ছে ডিজেল ও গ্যাসোলিনের পরিবর্তে। এতে করে কোনো ধরনের বায়ুদূষণ ঘটছে না সত্য এবং এ-ও সত্য যে জৈব জ্বালানি আবিষ্কার মানবজাতির জন্য সুখবর বটে। কিন্তু সেই সুখবরের আড়ালে রয়েছে মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ ক্ষতির দিক। যার শিকার বিশ্বের নিম্ন আয়ের ৮২টি দেশ। এসব দেশ মানবকল্যাণের পরিপন্থী আবিষ্কার এই জৈব জ্বালানিকে নিরুৎসাহিত করে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও জলবায়ুবিষয়ক কলামিস্ট
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে