হাসান মামুন
এপ্রিলের শুরু থেকে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বাইরেও এসি বিক্রি বেড়ে গেছে। মিডিয়াও ভালো বিজ্ঞাপন পাচ্ছে এর বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। তবে গ্রামের দিকেও যাঁরা এসি কিনছেন, তাঁরা সেটা চালাতে পারছেন কতক্ষণ? বিদ্যুৎ কতক্ষণ পাচ্ছেন? এ ক্ষেত্রে এমন প্রশ্ন তোলা জরুরি যে, সাধারণ ওষুধের দোকানগুলোয় এসি সংযোজিত হচ্ছে কি না। তার সুযোগও আছে কত শতাংশ দোকানে!
দুই লাখের বেশি ওষুধের দোকান রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, যেগুলো নিবন্ধিত। রাজধানীতেও অনেক অনিবন্ধিত ওষুধের দোকান রয়েছে। প্রশ্ন হলো, এমনকি নিবন্ধিত কত শতাংশ দোকানে তাপমাত্রা কাম্য পর্যায়ে রেখে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে? এ বিষয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি; যদিও উচ্চ তাপমাত্রার সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। এবার এ ক্ষেত্রে নাকি ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এপ্রিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের সিংহভাগ অঞ্চলের ওপর দিয়েই বয়ে গেছে তাপপ্রবাহ—মৃদু থেকে মাঝারি, মাঝারি থেকে তীব্র, তীব্র থেকে অতি তীব্র। এই মুহূর্তে এটা অবশ্য কিছুটা কমে আসছে বৃষ্টিপাত শুরুর কারণে। তবে তাপপ্রবাহ আবার বাড়বে; এমনকি আগের জায়গায় ফিরে যাওয়ার পূর্বাভাসও রয়েছে।
এবারের তাপপ্রবাহে ওষুধের গুণমান রক্ষা নিয়ে মিডিয়া তৎপর হয়ে উঠেছে আরও। তাতে নড়েচড়ে বসেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও।তারা বিক্রেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, কত তাপমাত্রায় ওষুধ রাখতে হবে! এই নির্দেশনা অবশ্য ওষুধের প্যাকেটের গায়েই লেখা থাকে।প্যাকেটের ভেতরে থাকা লিফলেটেও থাকে। সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রশাসনের কাজ বরং নির্দেশনা মানতে বাধ্য করা।
দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তাদের মনিটরিংও খুব দুর্বল। সে বিষয়ে প্রশ্ন তুললে অবশ্য বলা হবে আমাদের লোকবলের অভাব! জরুরি অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে লোকবলের অভাব রয়েছে বৈকি। আবার দেখা যাবে, অনেক জায়গায় আছে অতিরিক্ত কিংবা অপ্রয়োজনীয় লোকবল।
তাদের পোষা হচ্ছে জনগণের অর্থে। এটা সেই অর্থ, সরকার যা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আহরণ করতে পারছে না। তার মানে, সরকারের জন্যও এটা কষ্টার্জিত অর্থ। সেই অর্থে জরুরি কাজগুলো সম্পন্ন করা নিশ্চয়ই বেশি প্রয়োজন।
এসিও বেশি করে লাগানো দরকার ওষুধের দোকানগুলোয়, যেখানে অনেক স্পর্শকাতর ওষুধ থাকে। জেলা বা উপজেলা সদরে যার একটা জনপ্রিয় ওষুধের দোকান আছে, হয়তো দেখা যাবে এই গরমে তিনি বাসায় নতুন এসি কিনে লাগিয়েছেন। কিন্তু তার দোকানে চলছে আগের মতোই একটা বা দুটো সিলিং ফ্যান। তিনি হয়তো জানেনই না, উচ্চ তাপমাত্রা চলতে থাকলে ওষুধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে মেয়াদেরও আগে।
জানাশোনা ও জানতে চাওয়ার জায়গাটায় আমাদের ঘাটতি অনেক; এমনকি সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে করা কোনো কোনো রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ওষুধের দোকানে ফ্রিজ থাকলেও তাতে কত তাপমাত্রায় কী কী ওষুধ রাখতে হবে, সে বিষয়েও অনেকেরই সঠিক জ্ঞান নেই। ফ্রিজের বাইরে যেসব ওষুধ রাখা হয়, সেগুলোর কাম্য তাপমাত্রাও যে বিভিন্ন, সেটা জানা তো আরও পরের কথা।
মানার প্রশ্ন আসে তারও পরে। ওষুধ বিক্রেতাদের বরং বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে ক্রেতাদের এর সংরক্ষণ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার। ওষুধের দোকানে অন্তত একজন উপযুক্ত ফার্মাসিস্ট থাকার কথা, ক্রেতারা যার পরামর্শ নেবেন। যেমন—কোনো ওষুধ চট করে পাওয়া না গেলে একই গ্রুপের কোনটি খাওয়া যেতে পারে ইত্যাদি বিষয়ে।
এখানে যে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে, সেটা অবশ্য পূরণ করতে পারে কেবল ‘মডেল ফার্মেসি’। রাজধানীসহ বড় বড় শহরে এ ধরনের কিছু ফার্মেসি গড়ে উঠেছে বটে। তবে সেগুলোর সংখ্যা এখনো হাজার পেরোয়নি। কোনো কোনো রিপোর্ট বলছে, ৫০০-এর বেশি হবে না। অথচ মডেল ফার্মেসি নিয়ে কত কথাবার্তা হচ্ছে! বলা হচ্ছে, যেখানে-সেখানে যেনতেনভাবে ওষুধের দোকান দেওয়া যাবে না। ওষুধের জন্য কাম্য পর্যায়ে তাপমাত্রা রেখে তবেই ব্যবসাটা করতে হবে।
ওষুধ তো আর দশটা পণ্যের মতো নয়। এর ব্যবসাও সবার করার কথা নয়। ওষুধের দোকান খুলে বসা প্রতিটি লোকের তাই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। লাগবে মোটিভেশনও। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কাঁচাবাজারে অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা দোকানের একাংশেও বিক্রি হচ্ছে ওষুধ। ওপরে টিনের চালা। তার ওপরে গাছের ছায়াও নেই। তার ওপরে আছে মেঘমুক্ত আকাশ থেকে আগুন ঢালা একটা গ্রীষ্মের সূর্য!
শুধু ওষুধের দোকান তো নয়; কোম্পানির যে গাড়ি বা যাদের হাতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রেও কি কাম্য তাপমাত্রা বজায় রাখা হচ্ছে? সব ওষুধ হয়তো অল্প সময়ের উচ্চ তাপমাত্রায় নষ্ট হবে না। তবে কিছু ওষুধ অবশ্যই এ অবস্থায় গুণমান হারাবে। বিশেষজ্ঞরা এমনটাই বলছেন। ইনসুলিন, চোখের ড্রপ ইত্যাদি খুবই স্পর্শকাতর।
ওষুধ কোম্পানির গুদামে আর পরিবহনের সময় এর তাপমাত্রা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। এ অবস্থায় ‘কোল্ড চেইন’ নিয়ে আলোচনা স্বভাবতই বাড়ছে। বলা হচ্ছে, এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে সুফল মিলবে শুধু ওষুধে নয়; খাদ্যপণ্য সংরক্ষণেও। আমরা তো উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের অনেকটাই হারাই তা সঠিকভাবে সংরক্ষণে ব্যর্থ বলে। যেমন—প্রয়োজন অনুযায়ী পেঁয়াজ উৎপাদন করেও এর প্রায় এক-চতুর্থাংশ হারিয়ে আবার তা আমদানি করি কষ্টার্জিত বিদেশি মুদ্রায়। আমরা কিন্তু এখনো রয়েছি বিদেশি মুদ্রার সংকটে!
অন্যান্য খাদ্যপণ্যে কোল্ড চেইন দেরিতে গড়ে তোলা গেলেও আমাদের চলবে মনে হয়। কিন্তু একেবারেই চলবে না ওষুধ সংরক্ষণে এটা দ্রুত গড়ে না তুললে। আমরা ওষুধ উৎপাদনে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ হয়েছি। বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যাপকভাবে কাঁচামাল এনে হলেও চাহিদার ৯৫ শতাংশ ওষুধ দেশেই তৈরি করছি। এখানে উৎপাদিত ওষুধ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত বাজারের দেশগুলোয়ও হচ্ছে রপ্তানি। বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দেশীয় ওষুধ কোম্পানির প্ল্যান্ট। কিন্তু দেশের রোগী ও ক্রেতারা যেসব দোকান থেকে ওষুধ কিনছেন, সেগুলোর সিংহভাগে নেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এর গুণমান রক্ষার ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে এমনটা বলার সুযোগ কিন্তু নেই যে, মানুষকে কি ‘করে খেতে’ দেবেন না?
এর জবাবে সাফ বলে দিতে হবে, ওষুধের ব্যবসাটা ‘করে খাওয়ার’ নয়। জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে এই অনিয়ম ‘অ্যাফোর্ড’ করা যাবে না। সরকারি হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও যথাযথ তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। বিশেষত টিকাদান কার্যক্রমে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর কোল্ড চেইন ঠিকঠাক থাকা জরুরি। করোনা মোকাবিলায় টিকাদান কার্যক্রমে আমরা সাফল্য দেখিয়েছি বলে দাবি করা হয়। সেটা আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এটা অটুট থাকবে না বছরের পর বছর চলমান তাপপ্রবাহে প্রত্যন্ত এলাকার ওষুধের দোকানসহ সব ক্ষেত্রে এর গুণমান রক্ষার ব্যবস্থা করা না গেলে। বিশ্বজুড়েই তাপমাত্রা বাড়ছে সন্দেহ নেই। আর এটা বাড়ছে মূলত শিল্পোন্নত দেশগুলোর কর্মকাণ্ডে। তবে এসব বলে স্থানীয় কর্তব্য উপেক্ষা করে চলা আর যাবে না।
দেশে তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে এবং বছরের সুদীর্ঘ সময় ধরে ও দিনের লম্বা সময় যে উচ্চ তাপমাত্রা থাকছে, তাতে ফার্মেসিগুলোকে মানসম্মত করে তুলতে উদ্যোগ নেওয়ার সময় কিন্তু পেরিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। প্রয়োজনে এই খাতে স্বল্প সুদে ঋণ জোগাতে হবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বলে এ কাজে বিদেশি সহায়তাও মিলতে পারে। সেই চেষ্টা করা দরকার এবং এর সদ্ব্যবহার জরুরি।
ওষুধ উৎপাদকেরাও কি এ কাজে সহায়তা জোগাতে পারেন না? তাঁদের উৎপাদিত ওষুধ কীভাবে কোথায় বিক্রি হয়, সে বিষয়ে তারাও কি উদাসীন থাকতে পারেন? প্রেসক্রিপশন প্রদানকারীদের সঙ্গে ওষুধ বিক্রেতাদেরও তাঁরা নানান ‘প্রণোদনা’ জুগিয়ে থাকেন। আর এর সবই গিয়ে ঢোকে ওষুধের দামে। হালে বেশ কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে নতুন করে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের একটি রুলও প্রণিধানযোগ্য।
এ অবস্থায় তাঁদের নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে বলেই মনে হচ্ছে। আর যাঁরা ওষুধ ক্রেতা ও সেবনকারী, তাঁদেরও উদাসীনতা পরিহারের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কেমন দোকান থেকে ওষুধ কিনবেন এবং ঘরে কীভাবে সংরক্ষণ করবেন, সেটা তাঁদের নিজ দায়িত্বে বুঝে নিতে হবে। কেউ তো তাঁদের দায়িত্ব নিচ্ছে না! তাপমাত্রা কাম্য পর্যায়ে আসার আগপর্যন্ত অন্তত তাদের কড়া সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।
দেশে কত হৃদ্রোগী! ডায়াবেটিসের রোগী! কিডনি সমস্যায় জর্জরিত কত মানুষ! অনেকে ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছে! কত শিশু ও প্রবীণ এই গরমে ভুগছে মৌসুমি রোগব্যাধিতে। এবারও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। এ অবস্থায় এসির মতো ওষুধের ব্যবসাও জমজমাট। শুধু নেই তাপপ্রবাহে এর গুণমান রক্ষার জোরালো উদ্যোগ!
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
এপ্রিলের শুরু থেকে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বাইরেও এসি বিক্রি বেড়ে গেছে। মিডিয়াও ভালো বিজ্ঞাপন পাচ্ছে এর বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। তবে গ্রামের দিকেও যাঁরা এসি কিনছেন, তাঁরা সেটা চালাতে পারছেন কতক্ষণ? বিদ্যুৎ কতক্ষণ পাচ্ছেন? এ ক্ষেত্রে এমন প্রশ্ন তোলা জরুরি যে, সাধারণ ওষুধের দোকানগুলোয় এসি সংযোজিত হচ্ছে কি না। তার সুযোগও আছে কত শতাংশ দোকানে!
দুই লাখের বেশি ওষুধের দোকান রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে, যেগুলো নিবন্ধিত। রাজধানীতেও অনেক অনিবন্ধিত ওষুধের দোকান রয়েছে। প্রশ্ন হলো, এমনকি নিবন্ধিত কত শতাংশ দোকানে তাপমাত্রা কাম্য পর্যায়ে রেখে ওষুধ বিক্রি হচ্ছে? এ বিষয়ে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি; যদিও উচ্চ তাপমাত্রার সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। এবার এ ক্ষেত্রে নাকি ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এপ্রিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেশের সিংহভাগ অঞ্চলের ওপর দিয়েই বয়ে গেছে তাপপ্রবাহ—মৃদু থেকে মাঝারি, মাঝারি থেকে তীব্র, তীব্র থেকে অতি তীব্র। এই মুহূর্তে এটা অবশ্য কিছুটা কমে আসছে বৃষ্টিপাত শুরুর কারণে। তবে তাপপ্রবাহ আবার বাড়বে; এমনকি আগের জায়গায় ফিরে যাওয়ার পূর্বাভাসও রয়েছে।
এবারের তাপপ্রবাহে ওষুধের গুণমান রক্ষা নিয়ে মিডিয়া তৎপর হয়ে উঠেছে আরও। তাতে নড়েচড়ে বসেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও।তারা বিক্রেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন, কত তাপমাত্রায় ওষুধ রাখতে হবে! এই নির্দেশনা অবশ্য ওষুধের প্যাকেটের গায়েই লেখা থাকে।প্যাকেটের ভেতরে থাকা লিফলেটেও থাকে। সেটা নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রশাসনের কাজ বরং নির্দেশনা মানতে বাধ্য করা।
দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তাদের মনিটরিংও খুব দুর্বল। সে বিষয়ে প্রশ্ন তুললে অবশ্য বলা হবে আমাদের লোকবলের অভাব! জরুরি অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে লোকবলের অভাব রয়েছে বৈকি। আবার দেখা যাবে, অনেক জায়গায় আছে অতিরিক্ত কিংবা অপ্রয়োজনীয় লোকবল।
তাদের পোষা হচ্ছে জনগণের অর্থে। এটা সেই অর্থ, সরকার যা লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আহরণ করতে পারছে না। তার মানে, সরকারের জন্যও এটা কষ্টার্জিত অর্থ। সেই অর্থে জরুরি কাজগুলো সম্পন্ন করা নিশ্চয়ই বেশি প্রয়োজন।
এসিও বেশি করে লাগানো দরকার ওষুধের দোকানগুলোয়, যেখানে অনেক স্পর্শকাতর ওষুধ থাকে। জেলা বা উপজেলা সদরে যার একটা জনপ্রিয় ওষুধের দোকান আছে, হয়তো দেখা যাবে এই গরমে তিনি বাসায় নতুন এসি কিনে লাগিয়েছেন। কিন্তু তার দোকানে চলছে আগের মতোই একটা বা দুটো সিলিং ফ্যান। তিনি হয়তো জানেনই না, উচ্চ তাপমাত্রা চলতে থাকলে ওষুধ নষ্ট হয়ে যেতে পারে মেয়াদেরও আগে।
জানাশোনা ও জানতে চাওয়ার জায়গাটায় আমাদের ঘাটতি অনেক; এমনকি সংশ্লিষ্টদের। এ বিষয়ে করা কোনো কোনো রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, ওষুধের দোকানে ফ্রিজ থাকলেও তাতে কত তাপমাত্রায় কী কী ওষুধ রাখতে হবে, সে বিষয়েও অনেকেরই সঠিক জ্ঞান নেই। ফ্রিজের বাইরে যেসব ওষুধ রাখা হয়, সেগুলোর কাম্য তাপমাত্রাও যে বিভিন্ন, সেটা জানা তো আরও পরের কথা।
মানার প্রশ্ন আসে তারও পরে। ওষুধ বিক্রেতাদের বরং বাড়তি দায়িত্ব রয়েছে ক্রেতাদের এর সংরক্ষণ বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা দেওয়ার। ওষুধের দোকানে অন্তত একজন উপযুক্ত ফার্মাসিস্ট থাকার কথা, ক্রেতারা যার পরামর্শ নেবেন। যেমন—কোনো ওষুধ চট করে পাওয়া না গেলে একই গ্রুপের কোনটি খাওয়া যেতে পারে ইত্যাদি বিষয়ে।
এখানে যে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হচ্ছে, সেটা অবশ্য পূরণ করতে পারে কেবল ‘মডেল ফার্মেসি’। রাজধানীসহ বড় বড় শহরে এ ধরনের কিছু ফার্মেসি গড়ে উঠেছে বটে। তবে সেগুলোর সংখ্যা এখনো হাজার পেরোয়নি। কোনো কোনো রিপোর্ট বলছে, ৫০০-এর বেশি হবে না। অথচ মডেল ফার্মেসি নিয়ে কত কথাবার্তা হচ্ছে! বলা হচ্ছে, যেখানে-সেখানে যেনতেনভাবে ওষুধের দোকান দেওয়া যাবে না। ওষুধের জন্য কাম্য পর্যায়ে তাপমাত্রা রেখে তবেই ব্যবসাটা করতে হবে।
ওষুধ তো আর দশটা পণ্যের মতো নয়। এর ব্যবসাও সবার করার কথা নয়। ওষুধের দোকান খুলে বসা প্রতিটি লোকের তাই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। লাগবে মোটিভেশনও। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কাঁচাবাজারে অন্যান্য পণ্য বিক্রি করা দোকানের একাংশেও বিক্রি হচ্ছে ওষুধ। ওপরে টিনের চালা। তার ওপরে গাছের ছায়াও নেই। তার ওপরে আছে মেঘমুক্ত আকাশ থেকে আগুন ঢালা একটা গ্রীষ্মের সূর্য!
শুধু ওষুধের দোকান তো নয়; কোম্পানির যে গাড়ি বা যাদের হাতে ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রেও কি কাম্য তাপমাত্রা বজায় রাখা হচ্ছে? সব ওষুধ হয়তো অল্প সময়ের উচ্চ তাপমাত্রায় নষ্ট হবে না। তবে কিছু ওষুধ অবশ্যই এ অবস্থায় গুণমান হারাবে। বিশেষজ্ঞরা এমনটাই বলছেন। ইনসুলিন, চোখের ড্রপ ইত্যাদি খুবই স্পর্শকাতর।
ওষুধ কোম্পানির গুদামে আর পরিবহনের সময় এর তাপমাত্রা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। এ অবস্থায় ‘কোল্ড চেইন’ নিয়ে আলোচনা স্বভাবতই বাড়ছে। বলা হচ্ছে, এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে সুফল মিলবে শুধু ওষুধে নয়; খাদ্যপণ্য সংরক্ষণেও। আমরা তো উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের অনেকটাই হারাই তা সঠিকভাবে সংরক্ষণে ব্যর্থ বলে। যেমন—প্রয়োজন অনুযায়ী পেঁয়াজ উৎপাদন করেও এর প্রায় এক-চতুর্থাংশ হারিয়ে আবার তা আমদানি করি কষ্টার্জিত বিদেশি মুদ্রায়। আমরা কিন্তু এখনো রয়েছি বিদেশি মুদ্রার সংকটে!
অন্যান্য খাদ্যপণ্যে কোল্ড চেইন দেরিতে গড়ে তোলা গেলেও আমাদের চলবে মনে হয়। কিন্তু একেবারেই চলবে না ওষুধ সংরক্ষণে এটা দ্রুত গড়ে না তুললে। আমরা ওষুধ উৎপাদনে ‘স্বয়ংসম্পূর্ণ’ হয়েছি। বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকে ব্যাপকভাবে কাঁচামাল এনে হলেও চাহিদার ৯৫ শতাংশ ওষুধ দেশেই তৈরি করছি। এখানে উৎপাদিত ওষুধ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত বাজারের দেশগুলোয়ও হচ্ছে রপ্তানি। বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে দেশীয় ওষুধ কোম্পানির প্ল্যান্ট। কিন্তু দেশের রোগী ও ক্রেতারা যেসব দোকান থেকে ওষুধ কিনছেন, সেগুলোর সিংহভাগে নেই নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় এর গুণমান রক্ষার ব্যবস্থা। এ ক্ষেত্রে এমনটা বলার সুযোগ কিন্তু নেই যে, মানুষকে কি ‘করে খেতে’ দেবেন না?
এর জবাবে সাফ বলে দিতে হবে, ওষুধের ব্যবসাটা ‘করে খাওয়ার’ নয়। জনস্বাস্থ্যের দিক থেকে এই অনিয়ম ‘অ্যাফোর্ড’ করা যাবে না। সরকারি হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও যথাযথ তাপমাত্রায় ওষুধ সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। বিশেষত টিকাদান কার্যক্রমে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর কোল্ড চেইন ঠিকঠাক থাকা জরুরি। করোনা মোকাবিলায় টিকাদান কার্যক্রমে আমরা সাফল্য দেখিয়েছি বলে দাবি করা হয়। সেটা আন্তর্জাতিকভাবেও প্রশংসিত হয়েছে। কিন্তু এটা অটুট থাকবে না বছরের পর বছর চলমান তাপপ্রবাহে প্রত্যন্ত এলাকার ওষুধের দোকানসহ সব ক্ষেত্রে এর গুণমান রক্ষার ব্যবস্থা করা না গেলে। বিশ্বজুড়েই তাপমাত্রা বাড়ছে সন্দেহ নেই। আর এটা বাড়ছে মূলত শিল্পোন্নত দেশগুলোর কর্মকাণ্ডে। তবে এসব বলে স্থানীয় কর্তব্য উপেক্ষা করে চলা আর যাবে না।
দেশে তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে এবং বছরের সুদীর্ঘ সময় ধরে ও দিনের লম্বা সময় যে উচ্চ তাপমাত্রা থাকছে, তাতে ফার্মেসিগুলোকে মানসম্মত করে তুলতে উদ্যোগ নেওয়ার সময় কিন্তু পেরিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। প্রয়োজনে এই খাতে স্বল্প সুদে ঋণ জোগাতে হবে। জনস্বাস্থ্য রক্ষার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত বলে এ কাজে বিদেশি সহায়তাও মিলতে পারে। সেই চেষ্টা করা দরকার এবং এর সদ্ব্যবহার জরুরি।
ওষুধ উৎপাদকেরাও কি এ কাজে সহায়তা জোগাতে পারেন না? তাঁদের উৎপাদিত ওষুধ কীভাবে কোথায় বিক্রি হয়, সে বিষয়ে তারাও কি উদাসীন থাকতে পারেন? প্রেসক্রিপশন প্রদানকারীদের সঙ্গে ওষুধ বিক্রেতাদেরও তাঁরা নানান ‘প্রণোদনা’ জুগিয়ে থাকেন। আর এর সবই গিয়ে ঢোকে ওষুধের দামে। হালে বেশ কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে নতুন করে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের একটি রুলও প্রণিধানযোগ্য।
এ অবস্থায় তাঁদের নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে বলেই মনে হচ্ছে। আর যাঁরা ওষুধ ক্রেতা ও সেবনকারী, তাঁদেরও উদাসীনতা পরিহারের সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কেমন দোকান থেকে ওষুধ কিনবেন এবং ঘরে কীভাবে সংরক্ষণ করবেন, সেটা তাঁদের নিজ দায়িত্বে বুঝে নিতে হবে। কেউ তো তাঁদের দায়িত্ব নিচ্ছে না! তাপমাত্রা কাম্য পর্যায়ে আসার আগপর্যন্ত অন্তত তাদের কড়া সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।
দেশে কত হৃদ্রোগী! ডায়াবেটিসের রোগী! কিডনি সমস্যায় জর্জরিত কত মানুষ! অনেকে ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছে! কত শিশু ও প্রবীণ এই গরমে ভুগছে মৌসুমি রোগব্যাধিতে। এবারও চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। এ অবস্থায় এসির মতো ওষুধের ব্যবসাও জমজমাট। শুধু নেই তাপপ্রবাহে এর গুণমান রক্ষার জোরালো উদ্যোগ!
লেখক: সাংবাদিক, বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে