সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের দুটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে মালবাহী কনটেইনার ট্রেনের ধাক্কায়। দুর্ঘটনার বিভীষিকাময় ভিডিও মিডিয়ায় দেখা গেছে। একজন যাত্রী ট্রেনের ছাদ থেকে এই ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। মনে হচ্ছিল, মালবাহী কনটেইনার ট্রেন ও এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ে কোনো শিশু হয়তো খেলা করতে করতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিয়ে তা উপভোগ করছে। খেলনাপ্রিয় শিশুদের এমন খেলা খেলতে দেখা যায় বেশ আনন্দের সঙ্গে। হাতে দুটি খেলনা গাড়ি পেলে তারা গাড়ি দুটির রেস করিয়ে একটা গাড়ি দিয়ে আরেকটা গাড়িকে ধাক্কা মেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ভিডিও ক্লিপ দেখে তেমনই মনে হচ্ছিল। দুর্ঘটনাটিকে সত্য বলে মনে হচ্ছিল না।
যা হোক, এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে রেলওয়ে সূত্র বলেছে, এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস গোধূলি ট্রেনটি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব স্টেশন থেকে ছাড়ার পর আউটার পয়েন্ট এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আরেক লাইনে মালবাহী কনটেইনার ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনে ঢুকছিল। তখনো এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইন পরিবর্তনের ক্রসিং পয়েন্ট অতিক্রম করা বাকি ছিল। তার আগেই ক্রসিং পয়েন্টে ঢুকে পড়ে মালবাহী কনটেইনার ট্রেনটি এবং এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের শেষ দিক থেকে ৩ নম্বর বগিতে মালবাহী ট্রেনটি প্রচণ্ড ধাক্কা মারে। এতে পুরো এগারসিন্দুর কেঁপে ওঠে এবং তার দুটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, সংকেত অমান্য করে মালবাহী কনটেইনার ট্রেনটি স্টেশনে ঢুকে পড়ে। এ কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও ট্রেনের পরিচালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, সিগন্যাল না মানার মতো ঘটনা চালকেরা ইচ্ছে করলেই ঘটাতে পারেন। আর এ ঘটনা আগে থেকে দেখার বা বোঝার কেউ থাকে না। যখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তখন সবাই জানতে পারে যে, সিগন্যাল বা সংকেত মানা হয়নি, তাই দুর্ঘটনা ঘটেছে! আবার এই সিগন্যাল সিস্টেম ম্যানুয়াল হওয়ায় চালকের সিগন্যাল না দেখার বিষয় এবং চালককে যথাযথ সময়ে সঠিক নিয়মে সিগন্যাল না দেখানোর বিষয়টিও কারণ হিসেবে আসতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, যেকোনো দুর্ঘটনার পেছনে বড় পদের দায়িত্বশীলদের কখনো সেই অর্থে দায়বদ্ধ করা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। জবাবদিহিও নেওয়া হয় না। সব স্টাফ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন কি না, সেটা দেখা ও নিশ্চিত করার জন্য তাঁদের মাথার ওপর থাকেন আরও অনেকেই। যাঁরা বড় পদের, তাঁরা করেন কী যোগাযোগ নিরাপদ করবার জন্য? যাত্রীদের নিরাপত্তা কোথায়, যদি একজন চালক সংকেত না মানেন?
মালবাহী ট্রেনের চালক সংকেত মানেননি—তদন্তে এমন বিষয় বেরিয়ে এলে কেন চালক সংকেত মানেননি, সেই জবাব তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও দিতে হবে। একজন চালকের সঠিক দায়িত্ব পালন না করার জন্য তাঁর ঊর্ধ্বতনও দায়ী। চালকের সংকেত না মানার প্রবণতা তো এক দিনের নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রেল চলে ব্যক্তির ইচ্ছেমতো। এই মনে হওয়াটা আরও স্বচ্ছ হয় কর্তৃপক্ষের কথাবার্তায়। কিছুদিন আগেই এমন একটি সংবাদ মিডিয়ায় আসে যে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনলাইন বৃষ্টির পানিতে বেঁকে গেছে এবং সেটা উদ্বোধনের আগেই। ১৮ হাজার কোটি টাকার এই কাজে বৃষ্টির পানিতে বাঁকা হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বললেন, এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মাত্র ১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তাঁর কথায় মনে হলো, ১ কোটি টাকা অতি সামান্য এবং সেটা এমন কিছুই না। ১৮ হাজার কোটি টাকার কাছে ১ কোটি টাকা কিছুই নয়, কথাটা সত্যি। কিন্তু এই টাকাটা কার, তা প্রকল্পের লোকজন জানে? নিশ্চয়ই জানে। জেনেবুঝেই তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এবং প্রকল্পে অবস্থানের আগ্রহ প্রকাশ করে।
একজন সিনিয়র মন্ত্রী বেশ হতাশ হয়ে বলছিলেন, সাধারণত প্রকল্প অনুমোদনের পরপরই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি কেনা হয়। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং নিতে ব্যস্ত হন। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় অনেক পড়ে। যা হোক, সর্বত্র জবাবদিহি নিশ্চিত না করা গেলে দুর্ঘটনা ঘটবেই এবং দুর্ঘটনা ঘটার পরই কারণ জানা যাবে। এতে দুর্ঘটনা রোধ হবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে, কিন্তু যা হয়নি সেটা হলো পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাগত আধুনিকায়ন। অথচ এটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল। মফস্বলে গেলে সেই পুরোনো আমলের রেলওয়ের ব্যবস্থা চোখে পড়ে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের অভাব রেলওয়ের যোগাযোগব্যবস্থাকে নিরাপদ করতে পারছে না। সেই সঙ্গে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন। সনাতন নিয়মে আজও সংকেত দেওয়া হয়, যেটা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে এবং ঝুঁকি বাড়ায়।
যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের শেষের দুটি বগির যাত্রীরা মারাত্মক হতাহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ২৪ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। আর প্রশাসনের দাবিমতে ১৭ জন। আহত হয়েছে শতাধিক যাত্রী, যাদের বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী ও দুই সন্তান মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের বাড়িতে চলছে মাতম। পরিবারটি ভৈরবে এক আত্মীয়ের বিয়েতে অংশগ্রহণ শেষে ঢাকায় ফিরছিল। এমন দুর্ঘটনায় এ ধরনের করুণ কাহিনির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর রেললাইনের দুপাশে হতাহত মানুষ যেমন ছিটকে পড়েছিল, তেমনি বগির নিচে পড়ে ছিল অনেকেই। কেউ ছিল আহত, কেউ মৃত, কিউ নিথর। দুর্ঘটনার পরদিনও অনেকে গিয়ে মৃত স্বজনের জিনিসপত্র অশ্রুসিক্ত নয়নে খুঁজে ফিরেছে।
একটা কথা না বললেই নয়, দুর্ঘটনাকবলিত মানুষগুলো এই সমাজের ওপরতলার নয়। সাধারণ এবং অতিসাধারণ, যারা সামর্থ্যের ওপর ভর করে ট্রেনে চলাচল করে। ট্রেনই যাদের চলাচলের অন্যতম বাহন। আর দুর্ঘটনার পর রেললাইনের পাশে তাদেরই পরনের স্লিপার, স্যান্ডেল, কাপড়ের ব্যাগ এক মর্মান্তিক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকে। যদিও এই ইতিহাস স্বজনহারা ছাড়া আর কেউ মনে রাখে না। কেউ কেউ মনে করে, সম্ভবত এ কারণেই ট্রেনগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা যেনতেনভাবেই হয়ে থাকে। যখন লেখাটা লিখছি, তখন একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের সংবাদে দেখা গেল, জয়পুরহাটের রেলস্টেশনের ওয়েটিং রুম ভিআইপিদের জন্য—এই বলে রুম বন্ধ করে রেখেছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। নারী যাত্রীরা তাঁদের কোলের শিশুকে নিয়ে অরক্ষিত স্থানে অপেক্ষা করছেন। ভুক্তভোগী যাত্রীরা তাঁদের প্রাপ্ত সেবার মান নিয়ে অভিযোগ করছেন।কর্ণপাত নেই স্টেশন কর্তৃপক্ষের।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রেলযোগাযোগের পরিধি বাড়ানো দিয়ে যাত্রীদের চলাচলে নিরাপত্তা, স্বস্তি সম্ভব নয়। দক্ষ ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা অতীব জরুরি। প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল, প্রশিক্ষণ দরকার। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশের প্রাক্কালে রেলওয়ের কার্যক্রমকে ম্যানুয়ালের জাল থেকে বের করে আনতে হবে। এ কথা বলতেই হয় যে, এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস, গোধূলিসহ সব ট্রেনের নিরাপদ চলাচলই সবাই প্রত্যাশা করে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের দুটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে মালবাহী কনটেইনার ট্রেনের ধাক্কায়। দুর্ঘটনার বিভীষিকাময় ভিডিও মিডিয়ায় দেখা গেছে। একজন যাত্রী ট্রেনের ছাদ থেকে এই ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। মনে হচ্ছিল, মালবাহী কনটেইনার ট্রেন ও এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেন নিয়ে কোনো শিশু হয়তো খেলা করতে করতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে দিয়ে তা উপভোগ করছে। খেলনাপ্রিয় শিশুদের এমন খেলা খেলতে দেখা যায় বেশ আনন্দের সঙ্গে। হাতে দুটি খেলনা গাড়ি পেলে তারা গাড়ি দুটির রেস করিয়ে একটা গাড়ি দিয়ে আরেকটা গাড়িকে ধাক্কা মেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। মোবাইল ফোনে ধারণকৃত ভিডিও ক্লিপ দেখে তেমনই মনে হচ্ছিল। দুর্ঘটনাটিকে সত্য বলে মনে হচ্ছিল না।
যা হোক, এই দুর্ঘটনা সম্পর্কে রেলওয়ে সূত্র বলেছে, এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস গোধূলি ট্রেনটি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ভৈরব স্টেশন থেকে ছাড়ার পর আউটার পয়েন্ট এলাকা অতিক্রম করছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আরেক লাইনে মালবাহী কনটেইনার ট্রেনটি ভৈরব স্টেশনে ঢুকছিল। তখনো এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের কয়েকটি বগি লাইন পরিবর্তনের ক্রসিং পয়েন্ট অতিক্রম করা বাকি ছিল। তার আগেই ক্রসিং পয়েন্টে ঢুকে পড়ে মালবাহী কনটেইনার ট্রেনটি এবং এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের শেষ দিক থেকে ৩ নম্বর বগিতে মালবাহী ট্রেনটি প্রচণ্ড ধাক্কা মারে। এতে পুরো এগারসিন্দুর কেঁপে ওঠে এবং তার দুটি বগি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, সংকেত অমান্য করে মালবাহী কনটেইনার ট্রেনটি স্টেশনে ঢুকে পড়ে। এ কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও ট্রেনের পরিচালককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে ওঠে যে, সিগন্যাল না মানার মতো ঘটনা চালকেরা ইচ্ছে করলেই ঘটাতে পারেন। আর এ ঘটনা আগে থেকে দেখার বা বোঝার কেউ থাকে না। যখন দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তখন সবাই জানতে পারে যে, সিগন্যাল বা সংকেত মানা হয়নি, তাই দুর্ঘটনা ঘটেছে! আবার এই সিগন্যাল সিস্টেম ম্যানুয়াল হওয়ায় চালকের সিগন্যাল না দেখার বিষয় এবং চালককে যথাযথ সময়ে সঠিক নিয়মে সিগন্যাল না দেখানোর বিষয়টিও কারণ হিসেবে আসতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, যেকোনো দুর্ঘটনার পেছনে বড় পদের দায়িত্বশীলদের কখনো সেই অর্থে দায়বদ্ধ করা হয়েছে বলে মনে পড়ে না। জবাবদিহিও নেওয়া হয় না। সব স্টাফ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেন কি না, সেটা দেখা ও নিশ্চিত করার জন্য তাঁদের মাথার ওপর থাকেন আরও অনেকেই। যাঁরা বড় পদের, তাঁরা করেন কী যোগাযোগ নিরাপদ করবার জন্য? যাত্রীদের নিরাপত্তা কোথায়, যদি একজন চালক সংকেত না মানেন?
মালবাহী ট্রেনের চালক সংকেত মানেননি—তদন্তে এমন বিষয় বেরিয়ে এলে কেন চালক সংকেত মানেননি, সেই জবাব তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও দিতে হবে। একজন চালকের সঠিক দায়িত্ব পালন না করার জন্য তাঁর ঊর্ধ্বতনও দায়ী। চালকের সংকেত না মানার প্রবণতা তো এক দিনের নয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, রেল চলে ব্যক্তির ইচ্ছেমতো। এই মনে হওয়াটা আরও স্বচ্ছ হয় কর্তৃপক্ষের কথাবার্তায়। কিছুদিন আগেই এমন একটি সংবাদ মিডিয়ায় আসে যে, ঢাকা থেকে কক্সবাজার ট্রেনলাইন বৃষ্টির পানিতে বেঁকে গেছে এবং সেটা উদ্বোধনের আগেই। ১৮ হাজার কোটি টাকার এই কাজে বৃষ্টির পানিতে বাঁকা হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ বললেন, এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মাত্র ১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তাঁর কথায় মনে হলো, ১ কোটি টাকা অতি সামান্য এবং সেটা এমন কিছুই না। ১৮ হাজার কোটি টাকার কাছে ১ কোটি টাকা কিছুই নয়, কথাটা সত্যি। কিন্তু এই টাকাটা কার, তা প্রকল্পের লোকজন জানে? নিশ্চয়ই জানে। জেনেবুঝেই তারা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে এবং প্রকল্পে অবস্থানের আগ্রহ প্রকাশ করে।
একজন সিনিয়র মন্ত্রী বেশ হতাশ হয়ে বলছিলেন, সাধারণত প্রকল্প অনুমোদনের পরপরই প্রকল্পের কর্মকর্তাদের জন্য গাড়ি কেনা হয়। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বিদেশে গিয়ে ট্রেনিং নিতে ব্যস্ত হন। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় অনেক পড়ে। যা হোক, সর্বত্র জবাবদিহি নিশ্চিত না করা গেলে দুর্ঘটনা ঘটবেই এবং দুর্ঘটনা ঘটার পরই কারণ জানা যাবে। এতে দুর্ঘটনা রোধ হবে না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে, কিন্তু যা হয়নি সেটা হলো পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনাগত আধুনিকায়ন। অথচ এটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি ছিল। মফস্বলে গেলে সেই পুরোনো আমলের রেলওয়ের ব্যবস্থা চোখে পড়ে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবলের অভাব রেলওয়ের যোগাযোগব্যবস্থাকে নিরাপদ করতে পারছে না। সেই সঙ্গে রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন। সনাতন নিয়মে আজও সংকেত দেওয়া হয়, যেটা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে এবং ঝুঁকি বাড়ায়।
যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস ট্রেনের শেষের দুটি বগির যাত্রীরা মারাত্মক হতাহত হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ২৪ জন যাত্রী নিহত হয়েছে। আর প্রশাসনের দাবিমতে ১৭ জন। আহত হয়েছে শতাধিক যাত্রী, যাদের বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, একই পরিবারের স্বামী, স্ত্রী ও দুই সন্তান মর্মান্তিক মৃত্যুবরণ করেছে। তাদের বাড়িতে চলছে মাতম। পরিবারটি ভৈরবে এক আত্মীয়ের বিয়েতে অংশগ্রহণ শেষে ঢাকায় ফিরছিল। এমন দুর্ঘটনায় এ ধরনের করুণ কাহিনির সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর রেললাইনের দুপাশে হতাহত মানুষ যেমন ছিটকে পড়েছিল, তেমনি বগির নিচে পড়ে ছিল অনেকেই। কেউ ছিল আহত, কেউ মৃত, কিউ নিথর। দুর্ঘটনার পরদিনও অনেকে গিয়ে মৃত স্বজনের জিনিসপত্র অশ্রুসিক্ত নয়নে খুঁজে ফিরেছে।
একটা কথা না বললেই নয়, দুর্ঘটনাকবলিত মানুষগুলো এই সমাজের ওপরতলার নয়। সাধারণ এবং অতিসাধারণ, যারা সামর্থ্যের ওপর ভর করে ট্রেনে চলাচল করে। ট্রেনই যাদের চলাচলের অন্যতম বাহন। আর দুর্ঘটনার পর রেললাইনের পাশে তাদেরই পরনের স্লিপার, স্যান্ডেল, কাপড়ের ব্যাগ এক মর্মান্তিক ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকে। যদিও এই ইতিহাস স্বজনহারা ছাড়া আর কেউ মনে রাখে না। কেউ কেউ মনে করে, সম্ভবত এ কারণেই ট্রেনগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা যেনতেনভাবেই হয়ে থাকে। যখন লেখাটা লিখছি, তখন একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের সংবাদে দেখা গেল, জয়পুরহাটের রেলস্টেশনের ওয়েটিং রুম ভিআইপিদের জন্য—এই বলে রুম বন্ধ করে রেখেছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। নারী যাত্রীরা তাঁদের কোলের শিশুকে নিয়ে অরক্ষিত স্থানে অপেক্ষা করছেন। ভুক্তভোগী যাত্রীরা তাঁদের প্রাপ্ত সেবার মান নিয়ে অভিযোগ করছেন।কর্ণপাত নেই স্টেশন কর্তৃপক্ষের।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং রেলযোগাযোগের পরিধি বাড়ানো দিয়ে যাত্রীদের চলাচলে নিরাপত্তা, স্বস্তি সম্ভব নয়। দক্ষ ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা অতীব জরুরি। প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল, প্রশিক্ষণ দরকার। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রবেশের প্রাক্কালে রেলওয়ের কার্যক্রমকে ম্যানুয়ালের জাল থেকে বের করে আনতে হবে। এ কথা বলতেই হয় যে, এগারসিন্দুর এক্সপ্রেস, গোধূলিসহ সব ট্রেনের নিরাপদ চলাচলই সবাই প্রত্যাশা করে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে