মৃত্যুঞ্জয় রায়
এবার রিমালের থাবা থেকেও আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন। না হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ত। একইভাবে ২০০৭ সালের সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলার মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড়েও সুন্দরবন প্রাকৃতিক ঢাল হয়ে আমাদের অনেক জীবন ও সম্পদ বাঁচিয়ে দিয়েছে। সুন্দরবন থাকায় সে সময় আইলার বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার এবং জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ৪ ফুট কমে গিয়েছিল। সিডরের কারণে তখন সুন্দরবনের প্রায় ২১ শতাংশ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, সুন্দরবনের এই ক্ষতি সহজে পূরণ হবে না। কিন্তু সুন্দরবনকে সুন্দরবনের মতো থাকতে দেওয়ায় শিগগিরই সেই ক্ষতি কাটিয়ে সুন্দরবন আবার আগের রূপে ফিরে আসতে পেরেছিল।
এটাই প্রকৃতির শক্তি। বরং ঝড়ে সুন্দরবনের উপকারই হয়েছিল। এক প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল, ঝড়ের পর সুন্দরবনে চারা গজানো এবং তা থেকে পরিণত বৃক্ষে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, সিডর ও আইলার আঘাতে অনেক পুরোনো ও বড় বড় গাছ ভেঙে গিয়েছিল। এতে আলো-বাতাস পেয়ে ছোট ছোট নতুন গাছের দ্রুত বেড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। ভাঙা গাছপালা কেটে না সরানোর ফলে সেগুলো পচে মাটিতে পুষ্টি যোগ করেছিল। তা ছাড়া সেগুলো কেটে সরাতে গেলে মানুষের পদচারণায় ছোট ছোট চারা ও সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের যে ব্যাঘাত ঘটত, তা হয়নি। ফলে সুন্দরবনের পুনরুজ্জীবন আশাতীতভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই সম্ভব হয়েছিল। এখান থেকে আমাদের শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। সুন্দরবনের যা ক্ষতি করার তার অধিকাংশই মানুষ করছে, প্রকৃতি সেসব ক্ষতিপূরণের চেষ্টা নিজেরাই করছে, মানুষদের যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ২ কোটি মানুষ নানাভাবে সুন্দরবনের কাছে ঋণী। সুন্দরবন নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যুগ যুগ ধরে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নানাভাবে সাহায্য করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রাকৃতিক কারণের চেয়ে মনুষ্যসৃষ্ট কারণেই সুন্দরবন তথা ম্যানগ্রোভের বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
দিনে দিনে সুন্দরবনের আয়তন কমছে। শুধু যে বনের আয়তন কমছে তা নয়, বনের ভেতরে থাকা গাছের ঘনত্বও কমছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৫৯ সালে যেখানে সুন্দরবনে প্রতি হেক্টরে গাছের ঘনত্ব ছিল ২৬০টি, সেখানে ১৯৯৬ সালে হয়েছে ১৪৪টি। গাছের ঘনত্ব হ্রাসের পাশাপাশি লম্বা গাছের পরিমাণও কমছে। সুন্দরীগাছ এগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে দীর্ঘদেহী গাছ কমে যাচ্ছে, গাছে রোগ দেখা দেওয়ায় বয়স্ক গাছ মরে যাচ্ছে। ম্যানগ্রোভ বন হ্রাসের কারণগুলোর মধ্যে গবেষকেরা কয়েকটি কারণকে প্রধান বলে চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো—সুন্দরবনের জমি কৃষিজমিতে রূপান্তরিত হওয়া, বিশেষ করে ফসল চাষ, চিংড়ি চাষ, মানুষের ঘরবাড়ি ও রাস্তার জন্য বনের জমি চলে যাওয়া, সুন্দরবন থেকে নানা প্রয়োজনে গাছপালা কাটা, গবাদিপশু চারণ করা, মাছ ধরা ইত্যাদি। মনুষ্যসৃষ্ট এসব কর্মকাণ্ড আগের তুলনায় বর্তমানে বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পরিবেশদূষণ বেড়েছে, স্বাদু পানির লভ্যতা কমেছে, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে, পলি সঞ্চয়ন কমেছে, উপকূলীয় ভূমিক্ষয় বেড়েছে।
এসব কারণের মধ্যে সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে স্বাদু পানির প্রাপ্যতা কমে যাওয়া এবং পলি মাটি কম জমা হওয়া। ১৯৭৫ সালে ভারতে পদ্মা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার কারণে এ ঘটনা শুরু হয়েছে। ফলে নদীতে স্বাদু পানির প্রবাহ বা প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা বাড়ছে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রতিবছর গড়ে ১ শতাংশ হারে সুন্দরবনের আয়তন কমছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, যেভাবে এবং যে হারে সুন্দরবন কমছে বা ছোট হচ্ছে, সেই ধারা ও হ্রাসের হার অব্যাহত থাকলে আগামী ১০০ বছর পর সুন্দরবন হয়তো নিঃশেষ হয়ে যাবে।
ম্যানগ্রোভ বন আমাদের পরিবেশ রক্ষা, সেবা ও দরকারি বনজ সম্পদ সরবরাহে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের সমগ্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মিলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বছরে প্রায় ২৬ মিলিয়ন টন কার্বন পরিশোষণ করে, যা আমাদের পরিবেশকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। সাধারণ বনের চেয়ে ম্যানগ্রোভ বনের কার্বন পরিশোষণের হার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। শুধু বায়ু শোধন নয়, পানি শোধনেও ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ভূমিকা রাখে। মানুষের ক্রিয়াকর্মের দ্বারা ইতিমধ্যে আমরা বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ হারিয়ে ফেলেছি।
সুন্দরবনের মতো একটি বনের সৃষ্টি কোনো মানুষ করতে পারে না, একমাত্র প্রকৃতিই তা করতে পারে। তাই সুন্দরবন ধ্বংস হয় বা সুন্দরবনের ক্ষতি হয় এরূপ কোনো কাজ মানুষের আদৌ করা উচিত নয়। জলবায়ুর পরিবর্তনে সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যেরও পরিবর্তন ঘটছে। সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা দুরূহ। তবে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে সুন্দরবনের যে বিনাশ ঘটছে, তা আমরা প্রতিহত করতে পারি। তথাকথিত উন্নয়নের নামে অযথা সুন্দরবনের গাছ কাটা বন্ধ করতে পারি, হেক্টরপ্রতি প্রজাতি ও গাছের ঘনত্ব ঠিক রাখতে পুনর্বনায়ন করতে পারি, খাল ও নদীর পাড়ে গাছের সঙ্গে নৌকা বাঁধা বন্ধ করে সেই সব গাছের ক্ষতি রোধ করতে পারি। সরকারের বন বিভাগ প্রতি দুই বছর পরপর ম্যানগ্রোভ বনে গাছের ঘনত্ব জরিপ করে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বাড়াতে পারে। আমরা সুন্দরবনে পর্যটকদের গমন সীমিত করতে পারি, মাত্র একটি রুটকে পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত রেখে বাকি সব রুটে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিতে পারি। বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন রক্ষার জন্য প্রতিবছর জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাস পর্যটক ও জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এই নিষেধাজ্ঞা চিরকালের জন্য জারি করলে বরং তা সুন্দরবনের জন্য বেশি মঙ্গলজনক হবে।
সুন্দরবনে মানুষের চলাচল ও পর্যটনের কারণে যেসব দূষণ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে, সে ব্যাপারে বনজীবী ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের আগে অবশ্য পালনীয় ও করণীয় বিষয় সম্পর্কে নিয়মিতভাবে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা রাখা দরকার। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষিত করে তাদের দ্বারা স্থানীয় জনসাধারণকে সুন্দরবন রক্ষায় সচেতন করা দরকার। বনগামী ও বাদাবনের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৭৫ হাজার জীবিকা অন্বেষণকারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে গাছ কাটা অনেক বন্ধ হবে। অবাধে সুন্দরবনে লোক চলাচলের কারণে অনেক ছোট ছোট চারা মারা পড়ছে, এমনকি অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটছে। গত দুই দশকে সুন্দরবনে অন্তত ২৫ বার আগুন লেগেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্টে কারণ হিসেবে উঠেছে সুন্দরবনে যাওয়া মানুষের মাছ শিকারের জন্য জায়গা তৈরি, নাশকতা, মৌয়ালদের অসচেতনতায় ফেলে রাখা আগুন, বনজীবীদের বিড়ি-সিগারেটের আগুন ইত্যাদি বিষয়। সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে বন বিভাগের একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তিদের লোভ-লালসাও বন্ধ করতে হবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
এবার রিমালের থাবা থেকেও আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে সুন্দরবন। না হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়ত। একইভাবে ২০০৭ সালের সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলার মতো বড় বড় ঘূর্ণিঝড়েও সুন্দরবন প্রাকৃতিক ঢাল হয়ে আমাদের অনেক জীবন ও সম্পদ বাঁচিয়ে দিয়েছে। সুন্দরবন থাকায় সে সময় আইলার বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার এবং জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা ৪ ফুট কমে গিয়েছিল। সিডরের কারণে তখন সুন্দরবনের প্রায় ২১ শতাংশ এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, সুন্দরবনের এই ক্ষতি সহজে পূরণ হবে না। কিন্তু সুন্দরবনকে সুন্দরবনের মতো থাকতে দেওয়ায় শিগগিরই সেই ক্ষতি কাটিয়ে সুন্দরবন আবার আগের রূপে ফিরে আসতে পেরেছিল।
এটাই প্রকৃতির শক্তি। বরং ঝড়ে সুন্দরবনের উপকারই হয়েছিল। এক প্রতিবেদনে তখন বলা হয়েছিল, ঝড়ের পর সুন্দরবনে চারা গজানো এবং তা থেকে পরিণত বৃক্ষে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, সিডর ও আইলার আঘাতে অনেক পুরোনো ও বড় বড় গাছ ভেঙে গিয়েছিল। এতে আলো-বাতাস পেয়ে ছোট ছোট নতুন গাছের দ্রুত বেড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। ভাঙা গাছপালা কেটে না সরানোর ফলে সেগুলো পচে মাটিতে পুষ্টি যোগ করেছিল। তা ছাড়া সেগুলো কেটে সরাতে গেলে মানুষের পদচারণায় ছোট ছোট চারা ও সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশের যে ব্যাঘাত ঘটত, তা হয়নি। ফলে সুন্দরবনের পুনরুজ্জীবন আশাতীতভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই সম্ভব হয়েছিল। এখান থেকে আমাদের শিক্ষণীয় অনেক বিষয় রয়েছে। সুন্দরবনের যা ক্ষতি করার তার অধিকাংশই মানুষ করছে, প্রকৃতি সেসব ক্ষতিপূরণের চেষ্টা নিজেরাই করছে, মানুষদের যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য। উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাসরত প্রায় ২ কোটি মানুষ নানাভাবে সুন্দরবনের কাছে ঋণী। সুন্দরবন নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যুগ যুগ ধরে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নানাভাবে সাহায্য করে আসছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রাকৃতিক কারণের চেয়ে মনুষ্যসৃষ্ট কারণেই সুন্দরবন তথা ম্যানগ্রোভের বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
দিনে দিনে সুন্দরবনের আয়তন কমছে। শুধু যে বনের আয়তন কমছে তা নয়, বনের ভেতরে থাকা গাছের ঘনত্বও কমছে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৯৫৯ সালে যেখানে সুন্দরবনে প্রতি হেক্টরে গাছের ঘনত্ব ছিল ২৬০টি, সেখানে ১৯৯৬ সালে হয়েছে ১৪৪টি। গাছের ঘনত্ব হ্রাসের পাশাপাশি লম্বা গাছের পরিমাণও কমছে। সুন্দরীগাছ এগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে দীর্ঘদেহী গাছ কমে যাচ্ছে, গাছে রোগ দেখা দেওয়ায় বয়স্ক গাছ মরে যাচ্ছে। ম্যানগ্রোভ বন হ্রাসের কারণগুলোর মধ্যে গবেষকেরা কয়েকটি কারণকে প্রধান বলে চিহ্নিত করেছেন। এগুলো হলো—সুন্দরবনের জমি কৃষিজমিতে রূপান্তরিত হওয়া, বিশেষ করে ফসল চাষ, চিংড়ি চাষ, মানুষের ঘরবাড়ি ও রাস্তার জন্য বনের জমি চলে যাওয়া, সুন্দরবন থেকে নানা প্রয়োজনে গাছপালা কাটা, গবাদিপশু চারণ করা, মাছ ধরা ইত্যাদি। মনুষ্যসৃষ্ট এসব কর্মকাণ্ড আগের তুলনায় বর্তমানে বেড়ে গেছে। এ ছাড়া পরিবেশদূষণ বেড়েছে, স্বাদু পানির লভ্যতা কমেছে, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে, পলি সঞ্চয়ন কমেছে, উপকূলীয় ভূমিক্ষয় বেড়েছে।
এসব কারণের মধ্যে সুন্দরবনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে স্বাদু পানির প্রাপ্যতা কমে যাওয়া এবং পলি মাটি কম জমা হওয়া। ১৯৭৫ সালে ভারতে পদ্মা নদীর উজানে ফারাক্কা বাঁধ দেওয়ার কারণে এ ঘটনা শুরু হয়েছে। ফলে নদীতে স্বাদু পানির প্রবাহ বা প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় লবণাক্ততা বাড়ছে। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রতিবছর গড়ে ১ শতাংশ হারে সুন্দরবনের আয়তন কমছে। বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, যেভাবে এবং যে হারে সুন্দরবন কমছে বা ছোট হচ্ছে, সেই ধারা ও হ্রাসের হার অব্যাহত থাকলে আগামী ১০০ বছর পর সুন্দরবন হয়তো নিঃশেষ হয়ে যাবে।
ম্যানগ্রোভ বন আমাদের পরিবেশ রক্ষা, সেবা ও দরকারি বনজ সম্পদ সরবরাহে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্বের সমগ্র ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল মিলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে বছরে প্রায় ২৬ মিলিয়ন টন কার্বন পরিশোষণ করে, যা আমাদের পরিবেশকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। সাধারণ বনের চেয়ে ম্যানগ্রোভ বনের কার্বন পরিশোষণের হার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। শুধু বায়ু শোধন নয়, পানি শোধনেও ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ভূমিকা রাখে। মানুষের ক্রিয়াকর্মের দ্বারা ইতিমধ্যে আমরা বিশ্বের প্রায় ৫০ শতাংশ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ হারিয়ে ফেলেছি।
সুন্দরবনের মতো একটি বনের সৃষ্টি কোনো মানুষ করতে পারে না, একমাত্র প্রকৃতিই তা করতে পারে। তাই সুন্দরবন ধ্বংস হয় বা সুন্দরবনের ক্ষতি হয় এরূপ কোনো কাজ মানুষের আদৌ করা উচিত নয়। জলবায়ুর পরিবর্তনে সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যেরও পরিবর্তন ঘটছে। সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করা দুরূহ। তবে মনুষ্যসৃষ্ট কারণে সুন্দরবনের যে বিনাশ ঘটছে, তা আমরা প্রতিহত করতে পারি। তথাকথিত উন্নয়নের নামে অযথা সুন্দরবনের গাছ কাটা বন্ধ করতে পারি, হেক্টরপ্রতি প্রজাতি ও গাছের ঘনত্ব ঠিক রাখতে পুনর্বনায়ন করতে পারি, খাল ও নদীর পাড়ে গাছের সঙ্গে নৌকা বাঁধা বন্ধ করে সেই সব গাছের ক্ষতি রোধ করতে পারি। সরকারের বন বিভাগ প্রতি দুই বছর পরপর ম্যানগ্রোভ বনে গাছের ঘনত্ব জরিপ করে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়ে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বাড়াতে পারে। আমরা সুন্দরবনে পর্যটকদের গমন সীমিত করতে পারি, মাত্র একটি রুটকে পর্যটনের জন্য উন্মুক্ত রেখে বাকি সব রুটে মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিতে পারি। বাংলাদেশ সরকার সুন্দরবন রক্ষার জন্য প্রতিবছর জুন থেকে আগস্ট—এই তিন মাস পর্যটক ও জেলেদের সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বনজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে এই নিষেধাজ্ঞা চিরকালের জন্য জারি করলে বরং তা সুন্দরবনের জন্য বেশি মঙ্গলজনক হবে।
সুন্দরবনে মানুষের চলাচল ও পর্যটনের কারণে যেসব দূষণ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে, সে ব্যাপারে বনজীবী ও পর্যটকদের সুন্দরবনে প্রবেশের আগে অবশ্য পালনীয় ও করণীয় বিষয় সম্পর্কে নিয়মিতভাবে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা রাখা দরকার। পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষিত করে তাদের দ্বারা স্থানীয় জনসাধারণকে সুন্দরবন রক্ষায় সচেতন করা দরকার। বনগামী ও বাদাবনের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৭৫ হাজার জীবিকা অন্বেষণকারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে গাছ কাটা অনেক বন্ধ হবে। অবাধে সুন্দরবনে লোক চলাচলের কারণে অনেক ছোট ছোট চারা মারা পড়ছে, এমনকি অগ্নিকাণ্ডের মতো ঘটনাও ঘটছে। গত দুই দশকে সুন্দরবনে অন্তত ২৫ বার আগুন লেগেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিগুলোর রিপোর্টে কারণ হিসেবে উঠেছে সুন্দরবনে যাওয়া মানুষের মাছ শিকারের জন্য জায়গা তৈরি, নাশকতা, মৌয়ালদের অসচেতনতায় ফেলে রাখা আগুন, বনজীবীদের বিড়ি-সিগারেটের আগুন ইত্যাদি বিষয়। সুন্দরবনকে বাঁচাতে হলে বন বিভাগের একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তিদের লোভ-লালসাও বন্ধ করতে হবে।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে