নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এক মাসের কম সময়ের ব্যবধানে সরকার দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করেছে। হঠাৎ করেই আসে এ সিদ্ধান্ত। জোর গুঞ্জন, শিগগিরই আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড পুনর্গঠন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এরই মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এতে নর্থ সাউথের নতুন বোর্ডে আগের বোর্ডের অধিকাংশ এবং মানারাতের বোর্ডের সব সদস্যকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই কুমিল্লায় ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির বিষয়েও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে, তাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের কাছে একটি ‘ভুল বার্তা’ যাচ্ছে। অনেকেই এখন রীতিমতো আতঙ্ক বোধ করছেন। তাঁদের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে বর্তমান ট্রাস্টিদের বাদ দেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় অন্যরা (প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিরা) যেন আতঙ্কিত বোধ না করেন, এ জন্য খুব শিগগির সমিতিতে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সমিতির পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ করব, যাতে এ ধরনের কাজ করার আগে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়। যাতে কোনো ভুল- ত্রুটি থাকলে আমরা আগে শোধরানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারি।’ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে (অধ্যাপক আতিকুল ইসলামকে) ট্রাস্টি বোর্ডে ‘শিক্ষাবিদ’ হিসেবে রাখা আইনসম্মত হয়নি উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘উপাচার্য পদাধিকারবলে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তাঁকে কেন শিক্ষাবিদ হিসেবে রাখতে হবে?’
নর্থ সাউথে বোর্ড বদল
গত ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে ১২ সদস্যের নতুন বোর্ড গঠন করে সরকার। পুরোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সাতজনকে নতুন বোর্ডে রাখা হয়নি। যাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে চারজন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় কারাগারে আছেন।
এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কয়েকজন সদস্য এবং অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ, জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, যা দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ...এই অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টে অন্তর্ভুক্ত থাকা সমীচীন নয়।
ভেঙে দেওয়া বোর্ডের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত আর্থিক খাতের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য এম কাশেমের [ব্যবসায়িক] দ্বন্দ্বের কারণে নর্থ সাউথের বিষয়ে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের এক সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে আজিম উদ্দিন আহমেদ ও এম কাশেমের দ্বন্দ্বের শুরু। এর আগে থেকেই তাঁদের ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এসব থেকে গোলমালের সূত্রপাত।
ওই সদস্যরা বলছেন, শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বোর্ড পুনর্গঠন করা হলে বিষয়টি আইনসম্মত হতো। দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়াও সরকার যাঁদের নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শের লোক মনে করেনি, তাঁদের বাদ দিয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে। শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হলে বিষয়টি আইনগত কারণে হয়েছে বলে মনে করা যেত।
মানারাতের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ
গত ৮ সেপ্টেম্বর মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করে সরকার। পুনর্গঠিত ১৩ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে। এতে আগের কমিটির সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেবল পদাধিকারবলে উপাচার্যকে রাখা হয়েছে।
এ-বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ তদন্তে দেখা যায়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘যেসব অভিযোগে ট্রাস্টি বোর্ড ভাঙা হয়েছে, সে রকম কোনো বিষয় আমাদের জানা নেই। শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রতিষ্ঠান গড়েছি। এর বাইরে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
অতীশ দীপঙ্করও হাতবদল
অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে কয়েক বছর আগে প্রশ্ন উঠেছিল। দুটি আলাদা বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠিত হওয়ায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের নেতৃত্বাধীন বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছিল ইউজিসি। ২০১১ সালের ২৭ জুন আনোয়ারা বেগমকে চেয়ারম্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন করা হয়। ওই ১১ জনের মধ্যে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইসরাফিল আলমও ছিলেন। পরে বোর্ডে আরও তিনজন সদস্য যুক্ত হন। কিন্তু ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর ইসরাফিল আলমকে চেয়ারম্যান করে আরেকটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন ও নিবন্ধন করা হয়। ওই বোর্ডে স্থান পান ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন, গোলাম সারোয়ার কবীর, হেমায়েত উদ্দিন ও সহ-উপাচার্য আবুল হোসেন সিকদার। এই বোর্ডই এখন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউজিসি থেকে চিঠি দিয়ে আনোয়ারা বেগমের নেতৃত্বাধীন বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু আনোয়ারা বেগমের নেতৃত্বাধীন বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সঙ্গে সমঝোতা করেন আনোয়ারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত শিকদার বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ডে কোনো ঝামেলা নাই। সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে আছি। প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড মেম্বারসহ সবাই এখানে আছেন। আর যে বিষয়টা আপনি জানতে চেয়েছেন, সেটা অনেক আগের ঘটনা। এখন ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চলছে।’
ইউজিসিকে অন্ধকারে রাখার অভিযোগ
ইউজিসির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুনর্গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডে কারা থাকবেন, এ বিষয়ে ইউজিসির কোনো পরামর্শ বা মতামত নেয়নি সরকার। বিষয়গুলো নিয়ে ইউজিসিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। আর নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ হিসেবে উপাচার্যকে রাখা আইনসম্মত হয়নি।
তবে সবকিছু আইন অনুযায়ী হয়েছে বলে দাবি ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগমের। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘কোথাও আইনের ব্যত্যয় হয়নি। এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। এ জন্য সরকার ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করেছে। আর অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি তো অনেক আগের ঘটনা। ওই সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না।’
কর্তৃপক্ষ যা বলল
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক দাবি করেন, ‘সবকিছু আইন অনুযায়ীই করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যেকোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করতে পারেন।’ আর এ ঘটনায় কেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিরা আতঙ্কিত হবেন—এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তাঁরা যদি আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেন, তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। খারাপ কাজ করলে আতঙ্কিত বোধ করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক।
এক মাসের কম সময়ের ব্যবধানে সরকার দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করেছে। হঠাৎ করেই আসে এ সিদ্ধান্ত। জোর গুঞ্জন, শিগগিরই আরও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড পুনর্গঠন করা হবে। বিষয়টি নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এরই মধ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ পুনর্গঠন করা হয়েছে। এতে নর্থ সাউথের নতুন বোর্ডে আগের বোর্ডের অধিকাংশ এবং মানারাতের বোর্ডের সব সদস্যকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই কুমিল্লায় ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির বিষয়েও একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে প্রক্রিয়ায় সম্প্রতি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে, তাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টিদের কাছে একটি ‘ভুল বার্তা’ যাচ্ছে। অনেকেই এখন রীতিমতো আতঙ্ক বোধ করছেন। তাঁদের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকলে বর্তমান ট্রাস্টিদের বাদ দেওয়া উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় অন্যরা (প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিরা) যেন আতঙ্কিত বোধ না করেন, এ জন্য খুব শিগগির সমিতিতে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সমিতির পক্ষ থেকে সরকারকে অনুরোধ করব, যাতে এ ধরনের কাজ করার আগে আমাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হয়। যাতে কোনো ভুল- ত্রুটি থাকলে আমরা আগে শোধরানোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারি।’ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে (অধ্যাপক আতিকুল ইসলামকে) ট্রাস্টি বোর্ডে ‘শিক্ষাবিদ’ হিসেবে রাখা আইনসম্মত হয়নি উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘উপাচার্য পদাধিকারবলে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। তাঁকে কেন শিক্ষাবিদ হিসেবে রাখতে হবে?’
নর্থ সাউথে বোর্ড বদল
গত ১৬ আগস্ট নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ভেঙে দিয়ে ১২ সদস্যের নতুন বোর্ড গঠন করে সরকার। পুরোনো ট্রাস্টি বোর্ডের সাতজনকে নতুন বোর্ডে রাখা হয়নি। যাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে চারজন আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় কারাগারে আছেন।
এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কয়েকজন সদস্য এবং অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ, জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, যা দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ...এই অবস্থায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টে অন্তর্ভুক্ত থাকা সমীচীন নয়।
ভেঙে দেওয়া বোর্ডের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মূলত আর্থিক খাতের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ীর সঙ্গে বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ ও সদস্য এম কাশেমের [ব্যবসায়িক] দ্বন্দ্বের কারণে নর্থ সাউথের বিষয়ে এমন কঠোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের এক সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে আজিম উদ্দিন আহমেদ ও এম কাশেমের দ্বন্দ্বের শুরু। এর আগে থেকেই তাঁদের ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এসব থেকে গোলমালের সূত্রপাত।
ওই সদস্যরা বলছেন, শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বোর্ড পুনর্গঠন করা হলে বিষয়টি আইনসম্মত হতো। দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়াও সরকার যাঁদের নিজেদের রাজনৈতিক মতাদর্শের লোক মনে করেনি, তাঁদের বাদ দিয়েছে। ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়াবে। শুধু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হলে বিষয়টি আইনগত কারণে হয়েছে বলে মনে করা যেত।
মানারাতের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ
গত ৮ সেপ্টেম্বর মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করে সরকার। পুনর্গঠিত ১৩ সদস্যের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে। এতে আগের কমিটির সবাইকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেবল পদাধিকারবলে উপাচার্যকে রাখা হয়েছে।
এ-বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সরকারের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ তদন্তে দেখা যায়, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘যেসব অভিযোগে ট্রাস্টি বোর্ড ভাঙা হয়েছে, সে রকম কোনো বিষয় আমাদের জানা নেই। শিক্ষার্থীদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা প্রতিষ্ঠান গড়েছি। এর বাইরে আমার কোনো মন্তব্য নেই।’
অতীশ দীপঙ্করও হাতবদল
অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে কয়েক বছর আগে প্রশ্ন উঠেছিল। দুটি আলাদা বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠিত হওয়ায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমের নেতৃত্বাধীন বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে বৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছিল ইউজিসি। ২০১১ সালের ২৭ জুন আনোয়ারা বেগমকে চেয়ারম্যান করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন করা হয়। ওই ১১ জনের মধ্যে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ইসরাফিল আলমও ছিলেন। পরে বোর্ডে আরও তিনজন সদস্য যুক্ত হন। কিন্তু ২০১২ সালের ৪ ডিসেম্বর ইসরাফিল আলমকে চেয়ারম্যান করে আরেকটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ গঠন ও নিবন্ধন করা হয়। ওই বোর্ডে স্থান পান ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন, গোলাম সারোয়ার কবীর, হেমায়েত উদ্দিন ও সহ-উপাচার্য আবুল হোসেন সিকদার। এই বোর্ডই এখন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউজিসির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইউজিসি থেকে চিঠি দিয়ে আনোয়ারা বেগমের নেতৃত্বাধীন বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে বৈধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু আনোয়ারা বেগমের নেতৃত্বাধীন বোর্ড অব ট্রাস্টিজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে বর্তমান বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সঙ্গে সমঝোতা করেন আনোয়ারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান লিয়াকত শিকদার বলেন, ‘এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাস্টি বোর্ডে কোনো ঝামেলা নাই। সবাই মিলেমিশে একসঙ্গে আছি। প্রতিষ্ঠাতা বোর্ড মেম্বারসহ সবাই এখানে আছেন। আর যে বিষয়টা আপনি জানতে চেয়েছেন, সেটা অনেক আগের ঘটনা। এখন ভালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চলছে।’
ইউজিসিকে অন্ধকারে রাখার অভিযোগ
ইউজিসির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুনর্গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডে কারা থাকবেন, এ বিষয়ে ইউজিসির কোনো পরামর্শ বা মতামত নেয়নি সরকার। বিষয়গুলো নিয়ে ইউজিসিকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। আর নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ডে শিক্ষাবিদ হিসেবে উপাচার্যকে রাখা আইনসম্মত হয়নি।
তবে সবকিছু আইন অনুযায়ী হয়েছে বলে দাবি ইউজিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগমের। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘কোথাও আইনের ব্যত্যয় হয়নি। এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। এ জন্য সরকার ট্রাস্টি বোর্ড পরিবর্তন করেছে। আর অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টি তো অনেক আগের ঘটনা। ওই সময় আমি দায়িত্বে ছিলাম না।’
কর্তৃপক্ষ যা বলল
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক দাবি করেন, ‘সবকিছু আইন অনুযায়ীই করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যেকোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন করতে পারেন।’ আর এ ঘটনায় কেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টিরা আতঙ্কিত হবেন—এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, তাঁরা যদি আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করেন, তাহলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। খারাপ কাজ করলে আতঙ্কিত বোধ করবেন, এটাই তো স্বাভাবিক।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে