কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের ১৪ ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) নির্বাচন ২৮ নভেম্বর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একই দলের আরও ২৩ জন। সাংগঠনিকভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ না নেওয়া বিএনপি নেতারাও পিছিয়ে নেই। স্বতন্ত্র প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাঁরা। ভোটের মাঠে সরব জাতীয় পার্টি, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। জানা গেছে, উপজেলার ১৪ ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী আছেন ৮৯ জন।

বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বৃদ্ধ ভোটার আজগর আলী বলেন, ‘প্রতীক না, আমরা ব্যক্তিকে ভোট দেব। অতীতের সব হিসেব করে যোগ্যকে ভোট দেব।’ একই মতামত দৌতপুরের হাফিজুর মালিথার। অনেকেই আবার অপেক্ষায় আছেন পছন্দের প্রতীকে ভোটাধিকার প্রয়োগের।

জানা গেছে, ১৪টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকে মাঠে আছেন ১৪ জন। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিদ্রোহী প্রার্থী ২৩ জন। কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের গোপন সমর্থন দিচ্ছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলও। অধিকাংশ ইউনিয়নে বিদ্রোহীদের সঙ্গে আছেন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়া অন্যান্যরা। পরিস্থিতিতে ভোটের হাওয়ায় খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না আওয়ামী লীগের মনোনীত বা বিদ্রোহীদের কেউই। এই অঞ্চলের রাজনীতিতে নিজেদের হারানো জৌলুশ ফেরাতে ভোটের আনুষ্ঠানিকতায় সরব জাসদ ও জাতীয় পার্টি। যদিও সবগুলো ইউনিয়নে প্রার্থী দেয়নি মহাজোটের এই দুই দল। মশাল প্রতীক নিয়ে জাসদের প্রার্থী আছে ৭ ইউনিয়নে, লাঙল প্রতীক নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থী আছে ৫ ইউনিয়নে। নির্বাচনে না আসার দলীয় সিদ্ধান্ত বহাল থাকলেও স্বতন্ত্র প্রতীকে ১৩ ইউনিয়নে প্রার্থী আছে বিএনপির। দলমত-নির্বিশেষে তাঁরা ভোট চাইছেন নিজেদের স্বতন্ত্র প্রতীকে।

উপজেলা বিএনপি নেতা ও দৌলতপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রতীকে ভোট করতে আমাদের সাংগঠনিক কোনো নিষেধাজ্ঞা নাই। জনগণের স্বার্থে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা ভোটে অংশ নিচ্ছি।’

খলিশকুন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সিরাজুল বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের বিভক্তির সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বিএনপি।

দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন রিমন জানান, গত সোমবার রাত পর্যন্ত ২৩ জন প্রার্থীর কাছে বহিষ্কারের সুপারিশের চিঠি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে,, তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ উপজেলার ১৪টি ইউপির সব কটিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। তবে এসব ইউপিতে আওয়ামী লীগের ১৮ জন ও সহযোগী সংগঠন থেকে আরও ৫ জন নেতা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। পরে ৮ নভেম্বর দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে বহিষ্কারের সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর সোমবার সুপারিশের চিঠি জেলা কমিটি ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের কাছে পাঠানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌকা প্রতীকের একাধিক প্রার্থী জানান, ভোটের মাঠে নিজ দলের বিরোধিতায় বিপাকে রয়েছেন তাঁরা। শঙ্কা করছেন কোনো কোনো ইউনিয়নে বিএনপি সুযোগ নিতে পারে আওয়ামী লীগের এমন বিভক্তিতে। তাঁরা বলছেন, স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগ মনোনীত অধিকাংশ প্রার্থীই। পরিচয় প্রকাশে দ্বিধা থাকলেও নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বা অন্যান্য অপ্রীতিকর ঘটনার শঙ্কা জানিয়েছেন অনেকেই।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) ইয়াছির আরাফাত জানান, সবকিছু বিবেচনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ কোনো কেন্দ্র থাকলে বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুই একটি ছোটখাটো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ সুন্দর রয়েছে। দৌলতপুর থানা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ইউপি নির্বাচনের মোট ১৫১টি কেন্দ্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কেন্দ্র পাওয়া যায়নি।

নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী করতে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে লাগাতার কাজ করছে দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সরওয়ার জাহান বাদশাহ এবং সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমনের উপস্থিতিতে এ সংক্রান্ত বৈঠক হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মী সবাইকেই আহ্বান জানানো হয়েছে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ভুলে নৌকাকে বিজয়ী করার।

এবার দৌলতপুর উপজেলার ১৫১টি কেন্দ্র ভোটগ্রহণ হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা গোলাম আজম।