মড়কে বিপর্যস্ত চিংড়িচাষিরা

সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট)
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ১৩: ৪০
Thumbnail image

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিংড়িঘেরগুলোতে দুই মাস ধরে বিভিন্ন কারণে ব্যাপক হারে বাগদা চিংড়ি মারা যাচ্ছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন উপজেলার চিংড়িচাষিরা। চাষিরা বলছেন মড়কে আক্রান্ত হয়ে চিংড়ি মারা যাচ্ছে। তবে উপজেলা মৎস্য অফিস বলছে জীবাণুযুক্ত পোনা, ঘেরে পানি কম ও চাষিদের সঠিক পরিচর্যার অভাবে চিংড়ি মরছে।

মোংলা উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় তিন যুগ আগ থেকে ধানের পরিবর্তে বছরের প্রায় ৮ মাসই বাগদা চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। মোংলা উপজেলার ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর কৃষি জমির মধ্যে ১০ হাজার ৮৫৮ হেক্টর জমিতেই বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়ে থাকে। আর এ পরিমাণ জমির মধ্যে ছোট বড় মিলিয়ে ঘেরের সংখ্যা হচ্ছে ৫ হাজার ৫৫০ টি।

মোংলা উপজেলার চিলা, আন্ধারিয়া, বুড়বুড়িয়া, জয়খা গ্রামের বাসিন্দা ওহিদ, কায়কোবাদ, সেকেন্দারসহ আরও কয়েকজন ঘের ব্যবসায়ী জানান, ফেব্রুয়ারি মাসে ঘেরে পোনা মাছ ছাড়ার পর এপ্রিল মাস থেকে বিরতিহীন ভাবে মাছ মরছে। অধিকাংশ ঘেরেই হোয়াইট স্পট ভাইরাসের আক্রমণে মাছ মরে ভেসে উঠছে। ঘেরের ভেড়ির পাশে লালচে আকার ধারণ করে মরা মাছ পড়ে থাকছে। আবার যে সামান্য পরিমাণ জীবিত মাছ পাওয়া যাচ্ছে তার অধিকাংশই দুর্বল। এগুলো নড়াচড়া করতে না পেরে মাটির সঙ্গে মিশে থাকছে। বর্তমান অমাবস্যার গোনে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ ঘেরই মাছ শূন্য।

মোংলা উপজেলার প্রায় বিশজন চিংড়ি চাষি এই প্রতিবেদককে জানান, সরকার চিংড়ি মাছ রপ্তানি করে শত শত কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় করলেও চিংড়ি উৎপাদনকারীদের সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। উপজেলা মৎস্য অফিসও চিংড়ি চাষিদের সচেতন করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এ পর্যন্ত কোনো ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ি ঘেরে গিয়ে কি কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বা আমাদের কি করা উচিত সে বিষয়ে তাঁদের কোনো দিক নির্দেশনা তাঁরা পাননি। ফলে তাঁদের একমাত্র জীবিকার মাধ্যম চিংড়ি চাষ নিয়ে খুবই সমস্যার মধ্যে আছেন।

উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের মিঠাখালী গ্রামের চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী মাহমুদ হাসান ছোটমণি বলেন, ‘আমার ৬০ বিঘা জমিতে এবার বাগদা চাষে প্রায় ১২ লাখ টাকা লগ্নি করেছি। চলতি মৌসুমের মাঝামাঝি এ ঘের থেকে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার আশা ছিল তাতে আমারর এ খাতের লগ্নি উঠে আসার কথা। কিন্তু মড়কের কারণে মাছ মরে যাওয়ায় এখন পর্যন্ত এক লাখ টাকার বেশি মাছ পাইনি। আমাদের অবস্থা খুব খারাপ।’

মড়কের কারণে উপজেলার চিংড়ি উৎপাদন গতবারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক বলে দাবি করেছেন চিংড়ি চাষি ও ডিপো মালিকেরা। উপজেলা চিংড়ি বণিক সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি ওলিয়ার খাঁ জানান, এবারে মড়কের কারণে মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। গতবারের তুলনায় মোংলার মাছের আড়তগুলোতে মাছের আনা-গোনা প্রায় অর্ধেক।

মোংলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এজেডএম তৌহিদুর রহমান মাছের মড়কের কথা স্বীকার করে বলেন, মড়কসহ বিভিন্ন কারণে বাগদা চিংড়ি মারা যায়। হ্যাচারি থেকে চাষিরা যে পোনা সংগ্রহ করে তাতে জীবাণু থাকতে পারে। ঘেরগুলোতে কমপক্ষে তিন ফুট পানি থাকার কথা। কিন্তু অধিকাংশ ঘেরেই সেই পরিমাণ পানি নেই। মৌসুমের শুরুতে ঘের প্রস্তুত করার সময় চাষিরা ঘেরের মাটির সঠিক পরিচর্যা করে না, জমির ব্যাকটেরিয়া মারার জন্য যে পরিমাণ চুন ব্যবহার করার দরকার তাও ঠিকমতো করে না।

তৌহিদুর রহমান আরও বলেন, এ ছাড়া নিয়মিত ফরমুলেটেড খাদ্য সরবরাহ না করা, পানি পরিবর্তন ও বায়ু সঞ্চালনের ব্যবস্থা না করার কারণেও মাছ মারা যাচ্ছে। চিংড়ি চাষিদের সচেতনতা তৈরিতে কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছেন তার জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা চিংড়ি চাষিদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছি ও সেমিনারের মাধ্যমে তাঁদের সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আর কোনো এলাকায় মড়ক লাগার খবর পেলে আমরা সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে সেবা দিতে কিছু সমস্যা হয় বলে তিনি জানান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত