ফেসবুকে ত্রাণের টাকা আত্মসাতের ভুয়া ফটোকার্ড, অডিট করাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩: ০২
Thumbnail image

গত আগস্টের শেষ দিকে ভয়াবহ বন্যায় পড়ে দেশের পূর্বাঞ্চলের সিংহভাগ এলাকা। ভারী বৃষ্টি আর ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দেয় এসব অঞ্চলে। বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গণত্রাণ সংগ্রহের কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র–শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ত্রাণ সামগ্রীসহ নগদ অর্থ নিয়ে আসেন হাজার হাজার মানুষ। গণত্রাণ কর্মসূচির প্রথম দিনেই ২৯ লাখ ৭৬ হাজার ১৭৩ টাকা এবং বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করা হয়। এ কার্যক্রম ২২ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে চলে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হচ্ছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম দুই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম যমুনা টিভির লোগো ও ডিজাইন সংবলিত ফটোকার্ডে ফেসবুকে এমন একটি দাবি ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাল ফটোকার্ডটি প্রকাশের তারিখ দেওয়া ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪। 

‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ নামের ফেসবুক গ্রুপে মুহাম্মদ আসিফ নামের অ্যাকাউন্ট থেকে ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘কথা আর কাজে শুরু থেকেই মিল নেই। তারা ত্রাণের টাকারও লোভ সামলাতে পারেনি, তারা নাকি আবার দেশ সংস্কার করবে। এদের ওপর এতগুলো ছাত্রছাত্রী কীভাবে আস্থা রাখে!’

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে যমুনা টিভির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ১৩ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এমন কোনো ফটোকার্ড পাওয়া যায়নি। অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমেও এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ভাইরাল ফটোকার্ডটিতেও ‘সম্বনয়ক’, ‘ত্রান’—এর বানান ভুল লক্ষ্য করা গেছে। সাধারণত প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যমে এ ধরনের বানান ভুল দেখা যায় না। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে টিএসসিতে গণত্রাণ কর্মসূচিতে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাঁদের ব্যানারে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ টাকা। গত ৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় টিএসসির মাঠে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য রেজওয়ান আহম্মেদ রিফাত এ তথ্য জানান। তিনি জানান, সংগৃহীত অর্থের মধ্যে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকা। 

ওই সময় তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের দেওয়া ত্রাণের পাশাপাশি সামঞ্জস্য আনতে আমাদের কয়েকটি পণ্য কিনতে হয়েছে। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবকদের দুপুরের খাবারসহ অন্যান্য খরচও রয়েছে। এসব ব্যয়ের পর আমাদের তহবিলে ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭৫ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে।’

সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে ত্রাণের টাকা আত্মসাতের ভুয়া দাবির ফটোকার্ডে অসংগতি। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়াএকই সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই টাকা সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের ফান্ড বা সেনাবাহিনীর ফান্ডে দেব এবং তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করব। আমরা ২১ আগস্ট উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচি ঘোষণা করি। এ পর্যন্ত বন্যাদুর্গত এলাকায় ১৯১ ট্রাক ত্রাণ পৌঁছানো হয়েছে।’

অর্থাৎ, সমন্বয়কদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী টিএসসিতে ত্রাণ বাবদ উঠেছে ১১ কোটি ১০ লাখ ১৩ হাজার ৫৬৯ টাকা এবং ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকা।  কিন্তু ভাইরাল ফটোকার্ডটিতে দাবি করা হয়েছে, সারজিস ও হাসনাত ত্রাণের ১২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন!

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমাধ্যম শাখার সদস্য রেজওয়ান আহম্মেদ রিফাত আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগকে বলেন, ‘টিএসসিতে গণত্রাণ কর্মসূচিতে সংগ্রহ করা অর্থ থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ৭৫ লাখ ১২ হাজার ৭৯৪ টাকা ব্যয় হয়েছে। অবশিষ্ট ৯ কোটি ৩৫ লাখ ৭৭৫ টাকা সোনালী, জনতা ও ইসলামী ব্যাংক এবং মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে আছে। সম্পূর্ণ অর্থ সংগ্রহ এবং ব্যয়ের অডিট (নিরীক্ষা) কার্যক্রম চলছে। একটি অডিট প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে এটি করানো হচ্ছে। অডিট শেষ হলেই গণমাধ্যমকে জানানো হবে। তিন–চার দিনের মধ্যেই অডিট শেষ হবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত