মানুষের মতো দেখতে বিরল প্রাণী নয়, এটি ভাস্কর্য  

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২১, ১৫: ১৬
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২: ০৬

ফেসবুকে একটি ছবি ও ভিডিও দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, মানুষের মতো দেখতে এক বিরল প্রাণীর দেখা মিলেছে। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গিরগিটির মতো দেহ বিশিষ্ট চার পেয়ে প্রাণীর মুখটি মানুষের মুখের সঙ্গে অনেকাংশে মিলে যায়। ফেসবুকে কয়েকটি পোস্টে ‘মানুষের মতো দেখতে বিরল প্রাণী’ দাবি করে একটি ভিডিও পোস্ট করতেও দেখা গেছে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, মাটির ওপর প্রাণীটি সামান্য নড়ছেও। 

পথিক টিভি নামের একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি আপলোড করে ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘অদ্ভুত দেখতে এক প্রাণীর কিছু ছবি, যার মুখটা মানুষের মতো, গায়ে আরমাডিলোর মতো বর্ম, আঙুলগুলো ব্যাঙের মতো। বিরল ওই প্রাণীর হামলায় আহত হচ্ছেন অনেকেই। আনন্দবাজার পত্রিকায় বলা হয়েছে, ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোর কোথাও বলা হচ্ছে, ভারতের পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে ওই প্রাণীটিকে দেখা গিয়েছে।’

মন্তব্যের ঘরে কেউ কেউ জানতে চেয়েছেন, এটি এলিয়েনের (ভিন গ্রহের প্রাণী) ছবি কি না। 

মানবতা টেলিভিশন নামের একটি ফেসবুক পেজে ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘ভারতের পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে ওই প্রাণীটিকে দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ আবার লিখেছেন, রাজস্থান ও গুজরাটে এই জীবটির দেখা মিলেছে। অস্ত্র নিয়ে চাষ করতে যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এক জায়গায় বলা হয়েছে, প্রাণীটির নাম কুইয়া বাঘ।’

বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমেও ‘দেখা মিলল মানুষের মতো এক বিরল প্রাণীর!’- এই শিরোনামে একই ছবি ব্যবহার করে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

ফ্যাক্টচেক
ফেসবুকে প্রচারিত ছবিটি গুগলের রিভার্স ইমেজ সার্চে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়, এটি মূলত একটি ভাস্কর্য। এটি ইতালির ভাস্কর লাইরা মাগানুকোর সৃষ্টি এক কাল্পনিক প্রাণীর ভাস্কর্য। এটি তিনি সিলিকন দিয়ে তৈরি করেছেন।

হস্তশিল্প বেচাকেনার মার্কিন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ইটসি ডটকমে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। পণ্যের বর্ণনা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, ছবিটি ভাস্কর লাইরা মাগানুকোর হাতে তৈরি।

ভাস্কর লাইরা মাগানুকোর ফেসবুক আইডিতে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এই ভাস্কর্যের ছবি ও ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর তাঁর ফেসবুক আইডিতে ভাস্কর্যটির মোট ১৬টি ছবি ও একটি ভিডিও আপলোড করা হয়।

লাইরা মাগানুকোর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তিনি একজন স্বশিক্ষিত ভাস্কর। শুরুতে বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী দিয়ে ভাস্কর্য বানাতেন তিনি। এখন শুধু সিলিকন ব্যবহার করেন। পরাবাস্তব মোটিফ নিয়েই তাঁর কাজ।

ইটসির ওয়েবসাইটে বেবিক্রিয়েচার নামের ক্যাটাগরিতে মাগানুকোর ভাস্কর্যের গ্যালারি আছে। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে এযাবত তাঁর ১ হাজার ২৪৯টি ভাস্কর্য বিক্রি হয়েছে।

দেশে ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার যে প্রতিবেদনটিকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি মূলত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন। ওই প্রতিবেদনের শুরুতে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর দাবিগুলো উল্লেখ করা হয়েছিল। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টগুলোতে আনন্দবাজারে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের শুরুর অংশগুলো উল্লেখ করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

বাংলাদেশি কিছু সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম করা হয়েছে- ‘দেখা মিলল মানুষের মতো এক বিরল প্রাণীর!’ একুশে টিভি, মানবকন্ঠ, ভোরের পাতাসহ বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে আনন্দবাজারের ওই ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন থেকেই তথ্য নিয়েছে যা পুরো প্রতিবেদন থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়। তবে শিরোনামে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক পাঠক ফেসবুকে প্রকাশিত তথ্যটিই বিশ্বাস করছেন এবং শেয়ার করছেন। 

সিদ্ধান্ত
কোনো রূপ তথ্য যাচাই ছাড়াই একটি ভাস্কর্যের ছবিকে বিরল প্রাণী বলে প্রচার করা হচ্ছে। মানুষের মতো দেখতে বিরল প্রাণী বলে যেটিকে দাবি করা হচ্ছে সেটি মূলত একটি ভাস্কর্য। ইতালির ভাস্কর লাইরা মাগানুকোর হাতে তৈরি সিলিকনের ভাস্কর্য এটি। এ ধরনের কাল্পনিক প্রাণীর ভাস্কর্য তৈরি করাই তাঁর পেশা।

 

 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত