বিশ্বজুড়ে ফেসবুক ডাউন, নেপথ্যে কি হ্যাকারদের হামলা

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৬: ১১
Thumbnail image

হঠাৎ গতকাল মঙ্গলবার (৫ মার্চ) রাত ৯টার পর থেকে বিশ্বজুড়ে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ও ইনস্টাগ্রামের সার্ভার ডাউন হয়ে যায়। ব্যবহারকারীরা লগইন সমস্যাসহ সাইটগুলোতে ঢুকতে না পারার সমস্যার কথা জানান। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমগুলো পুনরায় সচল হয়। সচল হওয়ার পরই ফেসবুকে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়ে, ‘ফেসবুকে হ্যাকাররা হামলা চালায়। বিশ্বব্যাপী সব সার্ভার বন্ধ হয়ে গেছে। ১ হাজার টেরাবাইটেরও বেশি সংবেদনশীল হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইনস্টাগ্রাম, ম্যাসেঞ্জার ডেটা হ্যাক করেছে পিটুপি নেটওয়ার্কের হ্যাকাররা। সবাই সাবধানে থাকবেন।’ পোস্টগুলোতে সূত্র হিসেবে ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার ডেটা সেন্টারের উল্লেখ করা হয়েছে। 

আসলেই কি ফেসবুকে হ্যাকাররা হামলা চালিয়েছিল? কী বলছে মেটা কর্তৃপক্ষ? 

এই দাবির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএনে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে বিভ্রাট নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেখা যায়। তাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি অ্যাজেন্সির মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি মেটার পরিষেবাগুলোতে সেবা বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অবগত। তবে এর সঙ্গে সাইবার হামলার সম্পৃক্ততা নিয়ে কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই।

সিএনএনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ফেসবুকের মতো বড় বড় প্ল্যাটফর্মে বিভ্রাট তুলনামূলকভাবে খুব কমই ঘটে। তবে সাধারণত সফটওয়্যার আপডেটের সমস্যার কারণে এমন হতে পারে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ ২০২১ সালেও প্রায় ছয় ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়েছিল। ওই ঘটনার সঙ্গেও কোনো সন্দেহজনক সাইবার কার্যকলাপের সম্পৃক্ততা ছিল না বলেও প্রতিষ্ঠানটি জানায়। 

একই ঘটনা নিয়ে সাইবার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত সফটওয়্যার কোম্পানি ইসেটের বৈশ্বিক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জ্যাক মুর প্রভাবশালী মার্কিন সাময়িকী ফোর্বসকে বলেন, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের পরিষেবা ডাউনের সঙ্গে হ্যাকের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এসব পরিষেবায় কারিগরি ত্রুটি ঘটে থাকতে পারে। ফেসবুকের ডাউন হয়ে যাওয়ার ইতিহাস আছে, তবে এসব অন্য কারণে হয়ে থাকতে পারে। 

ফেসবুক ডাউন হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে মেটা যোগাযোগ প্রধান অ্যান্ডি স্টোনের টুইট। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার)এসব প্রতিবেদন থেকে ফেসবুকে হ্যাকারদের হামলা, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং ম্যাসেঞ্জারের ডেটা চুরির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অন্য কোনো সংবাদমাধ্যম সূত্রেও দাবিটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। 

কী বলছে মেটা কর্তৃপক্ষ
বিশ্বজুড়ে মেটার পরিষেবা বিঘ্নিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটির যোগাযোগ বিভাগের প্রধান অ্যান্ডি স্টোন এক্স পোস্টে বলেন, ‘আমাদের সেবা নিয়ে মানুষ অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন—এ ব্যাপারে আমরা সচেতন। আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি।’

ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ফিরে আসার পর রাত ১১টা ১৯ মিনিটে অ্যান্ডি স্টোন আরেক পোস্টে বলেন, ‘একটি কারিগরি ইস্যু আজ আমাদের পরিষেবাগুলোতে ব্যবহারকারীদের প্রবেশে সমস্যা সৃষ্টি করেছিল। সমস্যায় পড়েছিলেন, তাঁদের সবার জন্য যত দ্রুত সম্ভব আমরা ইস্যুটির সমাধান করতে পেরেছি। সমস্যার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’

মেটা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য থেকেও ফেসবুকে হ্যাকারদের হামলা ও ডেটা চুরির পক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ ফেসবুকে হ্যাকারদের হামলা, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম এবং ম্যাসেঞ্জারের ডেটা চুরির তথ্যটি কোনো মেটার সূত্রেই ভিত্তিহীনভাবে প্রচার করা হচ্ছে। 

মার্ক জাকারবার্গের নামে খোলা ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা হয় ‘চিল গায়েজ’। ছবি: এক্স (সাবেক টুইটার) প্রসঙ্গত, বিশ্বজুড়ে ফেসবুক ডাউন হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমে ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও মেটাপ্রধান মার্ক জাকারবার্গের এক টুইটের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, তিনি নিজের এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডেলে মেটার সেবা গ্রহণকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘চিল গাইজ, কয়েক মিনিট অপেক্ষা করুন, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

তবে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা যায়, দেশীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি করা এক্স হ্যান্ডলটি মার্ক জাকারবার্গের নয়। সেটি তাঁর নামে খোলা প্যারোডি বা ভুয়া অ্যাকাউন্ট। মার্ক জাকারবার্গের মূল অ্যাকাউন্টটি দেখুন এখানে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত