নারীকে জুতার মালা পরিয়ে শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাস— তিনি হিন্দু শিক্ষিকা নন

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩: ১৯
Thumbnail image

হিন্দু শিক্ষিকাকে জুতার মালা পরিয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাস করছে ছাত্রছাত্রীরা—এমন দাবিতে একটি ভিডিও ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্সে (সাবেক টুইটার) ভাইরাল হয়েছে। ১৬ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায়, সেফটি ভেস্ট পরা একদল তরুণ–তরুণী এক নারীর গলায় জুতার মালা পরিয়ে সড়ক প্রদক্ষিণ করাচ্ছেন। এ সময় তাঁদের স্লোগান দিতেও শোনা যায়। তবে ভিডিওটিতে মিউজিক যুক্ত করায় স্লোগানটি স্পষ্ট শোনা যায়নি।

গত শনিবার (৩১ আগস্ট) জেবিএস টিভি নামের একটি ফেসবুক পেজে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ১৪ লাখ বার দেখা হয়েছে। শেয়ার হয়েছে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি। ভিডিওটিতে রিয়েকশন পড়েছে ৬ হাজার ২০০ টি। 

ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা নিয়ে গতকাল সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা ২০ মিনিটে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেন বার্তা সংস্থা এএফপির ফ্যাক্টচেক বাংলাদেশের এডিটর কদরুদ্দিন শিশির। পোস্টটিতে তিনি লেখেন, একজন হিন্দু শিক্ষিকাকে ছাত্র–ছাত্রীরা জুতার মালা পরিয়ে উচ্ছ্বাস করছে বলে সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। দাবিটি অসত্য। ভিডিওতে যেই নারীকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কোনো শিক্ষক নন। গাজীপুর মাওনা চৌরাস্তা হাইওয়ে রোডে উড়াল সেতুর নিচে শিক্ষার্থীদের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজির সময় ১৭ আগস্ট তাঁকেসহ আরও তিনজনকে হাতেনাতে ধরে শিক্ষার্থীরা। 

পোস্টটিতে তিনি প্রকৃত ঘটনার প্রমাণ হিসেবে মানিক মোড়ল নামে এক ব্যক্তির একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশটও যুক্ত করেন। ১৭ আগস্টে দেওয়া মানিক মোড়লের ওই পোস্টে ২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে হিন্দু শিক্ষিকা দাবিতে ভাইরাল ওই নারীসহ আরেকজন লোককে দেখা যায়। এর মধ্যে নারীটির গলায় জুতার মালাসহ ‘আমি নারী পাচারকারী, আমি দেহ ব্যবসায়ী’ এবং লোকটির গলায় জুতার মালাসহ ‘আমি চাঁদাবাজ, আমি নারী পাচারকারী’ লেখা কাগজ দেখা যায়। ভাইরাল ভিডিওটিতেও নারীটির গলায় এমন লেখা সংবলিত কাগজ দেখা যায়। মানিক মোড়লের ভিডিওটিতে উপস্থিত তরুণ–তরুণীকে ‘দুইশ, দুইশ’—এমন স্লোগান দিতে শোনা যায়।

হিন্দু শিক্ষিকাকে জুতার মালা পরিয়ে শিক্ষার্থীদের আনন্দোচ্ছ্বাস করার দাবিতে ভাইরাল ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার। ছবি: ফেসবুক পরে আরও খুঁজে একইদিনে জাহাঙ্গীর আলম নামের একটি ফেসবুক পেজে এই ঘটনার একটি লাইভ ভিডিও পাওয়া যায়। এই ভিডিওতেও একই নারীর উপস্থিতি দেখা যায়। সঙ্গে আরও দুজন লোককে দেখা যায়। তাঁদের গলাতেও জুতার মালা। ৪ মিনিট ১৯ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, তাঁরা ছিনতাইকারী ও দেহ ব্যবসায় জড়িত একটি চক্র। তাঁদের গণপিটুনি দিয়েছে ছাত্র–জনতা। ঘটনাটি গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার।

ভিডিও করা ব্যক্তিটি লাইভে জানান, এই নারীসহ তাঁর সঙ্গে থাকা দুই ব্যক্তিকে চাঁদাবাজির সময় আটক করে ছাত্র–জনতা। তবে নারীটির ধর্মীয় পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও ভিডিওগুলোতে ওই নারীকে বোরকা সদৃশ পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। 

সার্বিক বিশ্লেষণে এটি স্পষ্ট যে, হিন্দু শিক্ষিকাকে ছাত্র–ছাত্রীরা জুতার মালা পরিয়ে উচ্ছ্বাস করছে— ভিডিওটি সম্পর্কে ভাইরাল দাবিটি সঠিক নয়। 

নওগাঁয় জোরপূর্বক পদত্যাগের পর অসুস্থ শিক্ষকের মারা যাওয়ার দাবিতে পোস্ট। ছবি: ফেসবুক প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ ও হেনস্তার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। এসবের মধ্যে নওগাঁর হাঁপানিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল ইসলামকে পদত্যাগ করানোর একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ ঘটনার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁর মৃত্যুর দাবিও ছড়িয়ে পড়ে। তবে আজকের পত্রিকার মাগুরা প্রতিনিধি নুরুল ইসলামের বড় ভাইয়ের বরাত দিয়ে জানান, নুরুল ইসলামের বর্তমান শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে। তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত