ভাইরাল ‘ভয়ংকর সুন্দর’ ছবিগুলো ঘূর্ণিঝড় রিমালের নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ২২: ২৫
আপডেট : ২৬ মে ২০২৪, ২২: ৪২

বাংলাদেশ সংলগ্ন দক্ষিণ–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম–মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ইতিমধ্যে ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হয়ে উপকূল অতিক্রম করছে। আজ রোববার (২৬ মে) রাত সাড়ে ৮টায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম করে পরবর্তী পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার মধ্যে সমস্ত উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।

এই ঘূর্ণিঝড়কে ঘিরে সাগরের ঢেউ, মেঘ ও রংধনু মিলিয়ে প্রকৃতি ‘ভয়ংকর সুন্দর’ দাবিতে বেশ কিছু ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে। ফেসবুকের বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে ছবিগুলো শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে ছবিগুলো তোলা হয়েছে। আবার কোনো পোস্টে ঘূর্ণিঝড়টির বিভিন্ন তথ্য দিতে গিয়ে ছবিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। 

যেমন, ‘Zubair’s GK’ নামের ৪ লাখ ২৫ হাজার ফলোয়ারের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ঘূর্ণিঝড় রিমালের আপডেট দিয়ে ছবিগুলো ব্যবহার করে লেখা হয়েছে, ‘ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল, ভারতের চার রাজ্যে (নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম এবং ত্রিপুরা) রেড অ্যালার্ট জারি। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল রোববার সকালে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেবে। এরপর এদিন মধ্যরাত থেকে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই এটি তাণ্ডব চালানো শুরু করবে।’ 

ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। 

রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো ‘OBX LIVE’ নামের একটি ফেসবুক পেজে পাওয়া যায়। এটি অনুসন্ধানে পাওয়া সম্ভাব্য প্রথম পোস্ট। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত পেজটিতে ছবিগুলো পোস্ট করা হয় গত ১৮ মে। পোস্টটির ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা হয়, ঝড়ও তৈরি করতে পারে মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য! ছবিগুলোর স্থান, চিত্রগ্রাহক সম্পর্কে পোস্টটিতে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

একই ছবিগুলো গত ১৯ মে ‘Chas Rolf Andino’ নামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত আরেকটি পেজ থেকেও ভাইরাল হয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে শুধু রংধনু ও টর্নেডোর ইমোজি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মেটার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম থ্রেডে গত ২১ মে ‘Alia Khan’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিগুলো পোস্ট করা হয়েছে। পোস্টের ক্যাপশনে ইংরেজিতে লেখা, ‘রংধনু টর্নেডো।’ এসব পোস্টে ছবিগুলো সম্পর্কে কোনো বিস্তারিত তথ্য নেই।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো পুরোনো। ছবি: ফেসবুক প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত বুধবারের (২২ মে) সামুদ্রিক সতর্কবার্তায় জানানো হয়, বাংলাদেশ সংলগ্ন দক্ষিণ–পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম–মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের এই লঘুচাপ নিম্নচাপের পর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে সেটির নাম রিমাল রাখা হবে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, লঘুচাপটি গত শুক্রবার (২৪ মে) নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং গতকাল শনিবার (২৫ মে) ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হয়।

সে হিসাবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো যখন পোস্ট করা হয়েছে তখনো সাগরের গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়নি।

ছবিগুলো কী বাস্তব?
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা দাবিতে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো নিয়ে কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, এসব ছবি বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি। এমন দাবির সত্যতা যাচাইয়ে এআই শনাক্তকারী একাধিক ওয়েবসাইট দিয়ে ছবিগুলো যাচাই করে দেখা হয়। 

এআই শনাক্তকারী ওয়েবসাইট হাইভের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ছবিগুলো এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরির সম্ভাবনা ৯৪ শতাংশ থেকে শতভাগ। এআই শনাক্তকারী আরেকটি ওয়েবসাইট ইজ ইট এআইয়ের বিশ্লেষণে ছবিগুলো এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরির সম্ভাবনা ৯০ থেকে ৯৯ শতাংশ দেখানো হয়েছে।

তবে এআই শনাক্তকারী ওয়েবসাইট হাগিং ফেইস ও এআই অর নট, ছবিগুলোর বাস্তব বা মানুষের তোলা এমন ফল দিয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। ছবি: হাইভ এআই শনাক্তকারী ওয়েবসাইটগুলোর এমন বিপরীত ফলাফলের কারণে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ ছবিগুলোর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করে। তবে অনুসন্ধানে ছবিগুলোর কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। ইন্টারনেটে ছবিগুলোর উৎস না পাওয়াও এগুলো এআই দিয়ে তৈরির একটি প্রমাণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপস এআই দিয়ে তৈরি ছবি শনাক্ত করার যে চারটি উপায় বর্ণনা করেছে, তার একটি হলো সন্দেহযুক্ত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করা। রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে ছবির মূল সূত্র খুঁজে পাওয়া না গেলে বা কোনো ফলাফল না পেলে, সেটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে বলে মত দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। 

সার্বিক বিশ্লেষণে বলা যেতে পারে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে তোলা দাবিতে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকতে পারে। তবে প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ ছবিগুলো সম্পর্কে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না।

আরও পড়ুন:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

ভারতের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা অস্ট্রেলিয়া

ঢাকা কলেজে সংঘর্ষকালে বোমা বিস্ফোরণের ছিটকে পড়েন সেনাসদস্য—ভাইরাল ভিডিওটির প্রকৃত ঘটনা

ঐশ্বরিয়ার বিচ্ছেদের খবরে মুখ খুললেন অমিতাভ

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত