ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
নুডলস, চিপস, ফাস্টফুডসহ চাইনিজ খাবারে বহুল ব্যবহৃত একটি উপকরণ। টেস্টিং সল্ট নামে পরিচিত উপাদানটির রাসায়নিক নাম মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট, সংক্ষেপে এমএসজি। খাবার সুস্বাদু করতে উপাদানটির বহুল ব্যবহার রয়েছে। তবে এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েও আছে বিতর্ক। সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ লোক মুখে ছড়িয়েছে এ বিতর্ক।
রেস্টুরেন্টের খাবার, চিপস, নুডলস, বিস্কুটসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বিভিন্ন বেকারি আইটেমে ব্যবহার করা হয় টেস্টিং সল্ট। দাবি করা হয়, টেস্টিং সল্টের কারণে মাথাব্যথা, বুক জ্বালা, গ্যাস্ট্রাইটিস, গ্যাস্ট্রিক আলসার, কোলন ক্যানসার, রেক্টাল ক্যানসার ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের জনপ্রিয় কিছু নুডলস কোম্পানি ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে এমন বিজ্ঞাপনও চালায় যে, তাদের নুডলসে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়নি।
খাবারে টেস্টিং সল্ট ব্যবহারে আসলেই কি কোনো ক্ষতি আছে? টেস্টিং সল্ট নিয়ে বহুল প্রচলিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) বা টেস্টিং সল্ট কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অথোরিটি (এফডিএ) মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) বা টেস্টিং সল্ট সম্পর্কে জানায়, এমএসজি হচ্ছে গ্লুটামিক অ্যাসিড নামে নন–অ্যাসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের (খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করা ছাড়াও আমাদের দেহ যে অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদন করতে পারে) সোডিয়াম লবণ। বিভিন্ন খাবার যেমন: সামুদ্রিক শৈবাল, সয়া সস, পারমেসান পনির (ইতালীয় শক্ত দানাদার পনির), টমেটো এবং মাতৃদুগ্ধে প্রাকৃতিকভাবেই উচ্চমাত্রায় মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট থাকে।
মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটযুক্ত খাবারে যে স্বাদ পাওয়া যায় সেটিকে বলে উমামি। টক, মিষ্টি, তেতো ও নোনা স্বাদের পর বর্তমানে এটিকে পঞ্চম স্বাদ হিসেবে ধরা হয়। তবে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটের নিজস্ব কোনো স্বাদ নেই। উপকরণটিকে যখন কোনো খাবারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তখনই জিহ্বার স্বাদগ্রন্থি এই স্বাদের অনুভূতি দেয়।
স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) বা টেস্টিং সল্ট যুক্ত খাবার সম্পর্কে জানা যায়। সেগুলোর মধ্যে আছে:
ফাস্ট ফুড: টেস্টিং সল্টের বড় একটি উৎস টেস্টিং ফুড। রেস্টুরেন্টগুলোতেও ফ্রাইড রাইসসহ অনেক জনপ্রিয় খাবারে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়।
চিপস এবং স্ন্যাকসজাতীয় খাবার: অনেক খাদ্যপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান চিপসের স্বাদ বাড়াতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করে। চিপস ছাড়াও অনেক স্ন্যাকসজাতীয় খাবারে স্বাদ বাড়াতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়।
হিমায়িত খাবার: হিমায়িত খাবার উৎপাদনকারীরা খাবারের স্বাদ বাড়াতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করে। এর মধ্যে আছে হিমায়িত পিৎজা, পনির এবং হিমায়িত অন্যান্য সকালের নাশতা।
এ ছাড়া কৌটাজাত স্যুপ ও স্যুপ মিশ্রণ, শুষ্ক স্যুপ মিশ্রণ, প্রক্রিয়াজাত মাংস, বিভিন্ন মসলা, ইনস্ট্যান্ট নুডলসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়।
কীভাবে এলো টেস্টিং সল্ট
এফডিএর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা এমএসজির জন্মের ইতিহাস অনেক পুরোনো। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলে একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার গ্লুটামেট সমৃদ্ধ সামুদ্রিক শৈবালের ব্রোথ। ১৯০৮ সালে কিকুনা ইকেদা নামে একজন জাপানি অধ্যাপক এই ব্রোথ থেকে গ্লুটামেট নিষ্কাশন করতে সক্ষম হন এবং প্রমাণ করেন, গ্লুটামেট স্যুপের স্বাদ বাড়ায়।
অধ্যাপক ইকেদা তখন টেস্টিং সল্ট উৎপাদনের জন্য একটি পেটেন্ট দাখিল করেন। পরের বছর এটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। তবে বর্তমানে সামুদ্রিক শৈবালের ব্রোথ থেকে টেস্টিং সল্ট উৎপাদনের পরিবর্তে স্টার্চ, সুগার বিট, আখ বা গুড়ের গাঁজনের মাধ্যমে টেস্টিং সল্ট তৈরি করা হয়। এই গাঁজন প্রক্রিয়াটি দই, ভিনেগার এবং ওয়াইন তৈরির প্রক্রিয়ার মতোই।
টেস্টিং সল্ট কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
এ প্রশ্নের জবাবে ইন্টারন্যাশনাল গ্লুটামেট ইনফরমেশন সার্ভিস জানায়, শতাব্দীর বেশি সময় ধরে টেস্টিং সল্ট খাবারে নিরাপদে ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। খাদ্য উপকরণ হিসেবে গ্লুটামেটের ব্যবহার নিয়ে বিশ্বব্যাপী শত শত গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, খাদ্যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার নিরাপদ। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে টেস্টিং সল্টের ব্যবহার সরকারিভাবে অনুমোদিত।
দ্য ইউরোপিয়ান ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিলও টেস্টিং সল্টের ব্যবহার নিয়ে একই মত দিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, শত শত গবেষণা এবং অসংখ্য বৈজ্ঞানিক মূল্যায়নে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে, টেস্টিং সল্ট স্বাস্থ্যর জন্য নিরাপদ।
টেস্টিং সল্টকে ‘জেনারেলি রিকোগনাইজড অ্যাজ সেফ’ বা সাধারণভাবে স্বীকৃত নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অথোরিটি। যদিও অনেকে নিজেদের টেস্টিং সল্টের প্রতি সংবেদনশীল মনে করেন, তবে বিজ্ঞানীরা এর কোনো প্রমাণ পাননি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন খাবারে প্রোটিন থেকে প্রায় ১৩ গ্রাম গ্লুটামেট গ্রহণ করে, যেখানে খাবারে ফুড অ্যাডেটিভ হিসেবে যোগ করা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট খাওয়ার পরিমাণ প্রতিদিন মাত্র প্রায় দশমিক ৫৫ গ্রাম।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে টেস্টিং সল্টের ওপর গবেষণা হচ্ছে। এসব গবেষণায় টেস্টিং সল্টের সঙ্গে হাঁপানি বা ‘চায়নিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোমের’ কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
২০০৩ সালে ফুড স্ট্যান্ডার্ড অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ড (এফএসএএনজেড) টেস্টিং সল্টের নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণায় চালায়। গবেষণায় টেস্টিং সল্টের সঙ্গে অসুস্থতা বা মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে এফএসএএনজেডের অনুমতি ছাড়া কোনো ফুড অ্যাডেটিভ ব্যবহার করা যায় না। যদিও কিছু মানুষ বিভিন্ন খাদ্যের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখায়, বিশেষ করে হাঁপানির প্রতি। তারা সম্ভবত অন্যান্য গ্লুটামেটের প্রতি সংবেদনশীল।
টেস্টিং সল্ট কতটুকু নিরাপদ এ প্রসঙ্গে কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, অধিকাংশ মানুষই নিরাপদে উচ্চমাত্রার গ্লুটামেট গ্রহণ করতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, বুকব্যথা, বমি বমি ভাব, দুর্বল বোধ, ঘাড়ের পেছনে অসারতা যা হাত এবং পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে, ঘাড়, বাহু এবং বুকের পেছনে জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এসব উপসর্গ সাময়িক এবং স্বাস্থ্যে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলে না। এসব উপসর্গ দেখা যাওয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই ব্যক্তিরা খালি পেটে সরাসরি ৩ থেকে ৫ গ্রাম টেস্টিং সল্ট খেয়েছিল। সর্বোপরি, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর টেস্টিং সল্টের কোনো প্রভাব নেই।
টেস্টিং সল্টের সঙ্গে ক্যানসারের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে সিঙ্গাপুরের গ্লেনেয়াগ্লেস হসপিটাল জানায়, মাথাব্যথা থেকে ক্যানসারসহ নানা রোগের জন্য টেস্টিং সল্টকে দায়ী করা হয়। যদিও গবেষণায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, যার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় টেস্টিং সল্ট এসবের জন্য দায়ী।
এমএসজির নামে বদনামের সূচনা যেভাবে
বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের এসব সূত্রে এটি প্রমাণিত যে, টেস্টিং সল্টকে যেসব অপবাদ দেওয়া হয়, সেগুলো ভিত্তিহীন, বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ নেই। তাহলে রাসায়নিকটির বিরুদ্ধে এ বদনাম ছড়াল কীভাবে?
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালের ২ এপ্রিল ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল সোসাইটির সাপ্তাহিক মেডিকেল জার্নাল নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর রবার্ট হো ম্যান কউক ‘চায়নিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম’ নামে একটি খোলাচিঠি লেখেন। চিঠিতে কউক চীনা খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা জানান।
তিনি দাবি করেন, টেস্টিং সল্টের কারণে এটি হতে পারে। এরপরই বিভিন্ন জন দাবিটি প্রমাণ করার জন্য গবেষণা করতে উঠেপড়ে লাগেন। এসব গবেষণায় দাবিটিকে সঠিক বলেও প্রমাণ করা হয়। যেমন, ১৯৬৯ সালে বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ১৩ জনকে শিরায় প্রয়োগের মাধ্যমে এবং ৫৬ জনকে টেস্টিং সল্ট খাওয়ানোর মাধ্যমে প্রমাণ করা গেছে, ‘চায়নিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম’ সত্য।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোলগেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাইটিং অ্যান্ড রেটোরিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেনিফার লে মেশিউরে এক গবেষণায় জানান, এসব গবেষণা পদ্ধতিগতভাবে সঠিক ছিল না।
নুডলস, চিপস, ফাস্টফুডসহ চাইনিজ খাবারে বহুল ব্যবহৃত একটি উপকরণ। টেস্টিং সল্ট নামে পরিচিত উপাদানটির রাসায়নিক নাম মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট, সংক্ষেপে এমএসজি। খাবার সুস্বাদু করতে উপাদানটির বহুল ব্যবহার রয়েছে। তবে এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েও আছে বিতর্ক। সংবাদমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ লোক মুখে ছড়িয়েছে এ বিতর্ক।
রেস্টুরেন্টের খাবার, চিপস, নুডলস, বিস্কুটসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বিভিন্ন বেকারি আইটেমে ব্যবহার করা হয় টেস্টিং সল্ট। দাবি করা হয়, টেস্টিং সল্টের কারণে মাথাব্যথা, বুক জ্বালা, গ্যাস্ট্রাইটিস, গ্যাস্ট্রিক আলসার, কোলন ক্যানসার, রেক্টাল ক্যানসার ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের জনপ্রিয় কিছু নুডলস কোম্পানি ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে এমন বিজ্ঞাপনও চালায় যে, তাদের নুডলসে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়নি।
খাবারে টেস্টিং সল্ট ব্যবহারে আসলেই কি কোনো ক্ষতি আছে? টেস্টিং সল্ট নিয়ে বহুল প্রচলিত দাবিটির সত্যতা খুঁজে দেখেছে আজকের পত্রিকা ফ্যাক্টচেক বিভাগ।
মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) বা টেস্টিং সল্ট কী?
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অথোরিটি (এফডিএ) মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) বা টেস্টিং সল্ট সম্পর্কে জানায়, এমএসজি হচ্ছে গ্লুটামিক অ্যাসিড নামে নন–অ্যাসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিডের (খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করা ছাড়াও আমাদের দেহ যে অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদন করতে পারে) সোডিয়াম লবণ। বিভিন্ন খাবার যেমন: সামুদ্রিক শৈবাল, সয়া সস, পারমেসান পনির (ইতালীয় শক্ত দানাদার পনির), টমেটো এবং মাতৃদুগ্ধে প্রাকৃতিকভাবেই উচ্চমাত্রায় মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট থাকে।
মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটযুক্ত খাবারে যে স্বাদ পাওয়া যায় সেটিকে বলে উমামি। টক, মিষ্টি, তেতো ও নোনা স্বাদের পর বর্তমানে এটিকে পঞ্চম স্বাদ হিসেবে ধরা হয়। তবে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেটের নিজস্ব কোনো স্বাদ নেই। উপকরণটিকে যখন কোনো খাবারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তখনই জিহ্বার স্বাদগ্রন্থি এই স্বাদের অনুভূতি দেয়।
স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ লাইনে মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) বা টেস্টিং সল্ট যুক্ত খাবার সম্পর্কে জানা যায়। সেগুলোর মধ্যে আছে:
ফাস্ট ফুড: টেস্টিং সল্টের বড় একটি উৎস টেস্টিং ফুড। রেস্টুরেন্টগুলোতেও ফ্রাইড রাইসসহ অনেক জনপ্রিয় খাবারে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়।
চিপস এবং স্ন্যাকসজাতীয় খাবার: অনেক খাদ্যপ্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান চিপসের স্বাদ বাড়াতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করে। চিপস ছাড়াও অনেক স্ন্যাকসজাতীয় খাবারে স্বাদ বাড়াতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়।
হিমায়িত খাবার: হিমায়িত খাবার উৎপাদনকারীরা খাবারের স্বাদ বাড়াতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করে। এর মধ্যে আছে হিমায়িত পিৎজা, পনির এবং হিমায়িত অন্যান্য সকালের নাশতা।
এ ছাড়া কৌটাজাত স্যুপ ও স্যুপ মিশ্রণ, শুষ্ক স্যুপ মিশ্রণ, প্রক্রিয়াজাত মাংস, বিভিন্ন মসলা, ইনস্ট্যান্ট নুডলসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়।
কীভাবে এলো টেস্টিং সল্ট
এফডিএর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট বা এমএসজির জন্মের ইতিহাস অনেক পুরোনো। উদাহরণস্বরূপ, এশিয়ার কোনো কোনো অঞ্চলে একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার গ্লুটামেট সমৃদ্ধ সামুদ্রিক শৈবালের ব্রোথ। ১৯০৮ সালে কিকুনা ইকেদা নামে একজন জাপানি অধ্যাপক এই ব্রোথ থেকে গ্লুটামেট নিষ্কাশন করতে সক্ষম হন এবং প্রমাণ করেন, গ্লুটামেট স্যুপের স্বাদ বাড়ায়।
অধ্যাপক ইকেদা তখন টেস্টিং সল্ট উৎপাদনের জন্য একটি পেটেন্ট দাখিল করেন। পরের বছর এটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। তবে বর্তমানে সামুদ্রিক শৈবালের ব্রোথ থেকে টেস্টিং সল্ট উৎপাদনের পরিবর্তে স্টার্চ, সুগার বিট, আখ বা গুড়ের গাঁজনের মাধ্যমে টেস্টিং সল্ট তৈরি করা হয়। এই গাঁজন প্রক্রিয়াটি দই, ভিনেগার এবং ওয়াইন তৈরির প্রক্রিয়ার মতোই।
টেস্টিং সল্ট কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
এ প্রশ্নের জবাবে ইন্টারন্যাশনাল গ্লুটামেট ইনফরমেশন সার্ভিস জানায়, শতাব্দীর বেশি সময় ধরে টেস্টিং সল্ট খাবারে নিরাপদে ও কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। খাদ্য উপকরণ হিসেবে গ্লুটামেটের ব্যবহার নিয়ে বিশ্বব্যাপী শত শত গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, খাদ্যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার নিরাপদ। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে টেস্টিং সল্টের ব্যবহার সরকারিভাবে অনুমোদিত।
দ্য ইউরোপিয়ান ফুড ইনফরমেশন কাউন্সিলও টেস্টিং সল্টের ব্যবহার নিয়ে একই মত দিয়েছে। সংস্থাটি জানায়, শত শত গবেষণা এবং অসংখ্য বৈজ্ঞানিক মূল্যায়নে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় যে, টেস্টিং সল্ট স্বাস্থ্যর জন্য নিরাপদ।
টেস্টিং সল্টকে ‘জেনারেলি রিকোগনাইজড অ্যাজ সেফ’ বা সাধারণভাবে স্বীকৃত নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অথোরিটি। যদিও অনেকে নিজেদের টেস্টিং সল্টের প্রতি সংবেদনশীল মনে করেন, তবে বিজ্ঞানীরা এর কোনো প্রমাণ পাননি। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন খাবারে প্রোটিন থেকে প্রায় ১৩ গ্রাম গ্লুটামেট গ্রহণ করে, যেখানে খাবারে ফুড অ্যাডেটিভ হিসেবে যোগ করা মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট খাওয়ার পরিমাণ প্রতিদিন মাত্র প্রায় দশমিক ৫৫ গ্রাম।
অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের খাদ্য কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়েবসাইটে জানায়, ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে টেস্টিং সল্টের ওপর গবেষণা হচ্ছে। এসব গবেষণায় টেস্টিং সল্টের সঙ্গে হাঁপানি বা ‘চায়নিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোমের’ কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
২০০৩ সালে ফুড স্ট্যান্ডার্ড অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ড (এফএসএএনজেড) টেস্টিং সল্টের নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণায় চালায়। গবেষণায় টেস্টিং সল্টের সঙ্গে অসুস্থতা বা মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডে এফএসএএনজেডের অনুমতি ছাড়া কোনো ফুড অ্যাডেটিভ ব্যবহার করা যায় না। যদিও কিছু মানুষ বিভিন্ন খাদ্যের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখায়, বিশেষ করে হাঁপানির প্রতি। তারা সম্ভবত অন্যান্য গ্লুটামেটের প্রতি সংবেদনশীল।
টেস্টিং সল্ট কতটুকু নিরাপদ এ প্রসঙ্গে কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, অধিকাংশ মানুষই নিরাপদে উচ্চমাত্রার গ্লুটামেট গ্রহণ করতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে মাথাব্যথা, বুকব্যথা, বমি বমি ভাব, দুর্বল বোধ, ঘাড়ের পেছনে অসারতা যা হাত এবং পিঠে ছড়িয়ে পড়তে পারে, ঘাড়, বাহু এবং বুকের পেছনে জ্বালাপোড়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এসব উপসর্গ সাময়িক এবং স্বাস্থ্যে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলে না। এসব উপসর্গ দেখা যাওয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই ব্যক্তিরা খালি পেটে সরাসরি ৩ থেকে ৫ গ্রাম টেস্টিং সল্ট খেয়েছিল। সর্বোপরি, মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর টেস্টিং সল্টের কোনো প্রভাব নেই।
টেস্টিং সল্টের সঙ্গে ক্যানসারের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে সিঙ্গাপুরের গ্লেনেয়াগ্লেস হসপিটাল জানায়, মাথাব্যথা থেকে ক্যানসারসহ নানা রোগের জন্য টেস্টিং সল্টকে দায়ী করা হয়। যদিও গবেষণায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, যার মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় টেস্টিং সল্ট এসবের জন্য দায়ী।
এমএসজির নামে বদনামের সূচনা যেভাবে
বিভিন্ন দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের এসব সূত্রে এটি প্রমাণিত যে, টেস্টিং সল্টকে যেসব অপবাদ দেওয়া হয়, সেগুলো ভিত্তিহীন, বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ নেই। তাহলে রাসায়নিকটির বিরুদ্ধে এ বদনাম ছড়াল কীভাবে?
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালের ২ এপ্রিল ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল সোসাইটির সাপ্তাহিক মেডিকেল জার্নাল নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর রবার্ট হো ম্যান কউক ‘চায়নিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম’ নামে একটি খোলাচিঠি লেখেন। চিঠিতে কউক চীনা খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার কথা জানান।
তিনি দাবি করেন, টেস্টিং সল্টের কারণে এটি হতে পারে। এরপরই বিভিন্ন জন দাবিটি প্রমাণ করার জন্য গবেষণা করতে উঠেপড়ে লাগেন। এসব গবেষণায় দাবিটিকে সঠিক বলেও প্রমাণ করা হয়। যেমন, ১৯৬৯ সালে বিজ্ঞান সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ১৩ জনকে শিরায় প্রয়োগের মাধ্যমে এবং ৫৬ জনকে টেস্টিং সল্ট খাওয়ানোর মাধ্যমে প্রমাণ করা গেছে, ‘চায়নিজ রেস্টুরেন্ট সিনড্রোম’ সত্য।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কোলগেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাইটিং অ্যান্ড রেটোরিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জেনিফার লে মেশিউরে এক গবেষণায় জানান, এসব গবেষণা পদ্ধতিগতভাবে সঠিক ছিল না।
ফ্যাক্টচেক, সোশ্যাল মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ভাইরাল, ভুয়া পোস্ট, সংঘর্ষ, রাজধানী, সেনাবাহিনী, বিক্ষোভ, রিকশা
৪ ঘণ্টা আগেদীপ্তির বক্তব্য দাবিতে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নাম ও লোগোযুক্ত একটি ফটোকার্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। দীপ্তি চৌধুরীর ছবিযুক্ত ফটোকার্ডটিতে লেখা, ‘আমার নানীর ফুফাতো বোনের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।’
৮ ঘণ্টা আগেআজ শনিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ড প্রচার করা হয়েছে। তাতে হাসিনাকে কথা বলতে শোনা যায়, গুলি খাওয়ার পর আবু সাঈদকে চার–পাঁচ ঘণ্টা পরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
১ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদকও। সম্প্রতি সারজিস শিশু মডেল অভিনেত্রী সিমরিন লুবাবাকে ফেসবুকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন দাবিতে একটি ফটোকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
১ দিন আগে