ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী
প্রজননের দৃষ্টিভঙ্গিতে নারী জীবন তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়:
শৈশব পর্ব
শৈশব থেকে বয়ঃসন্ধিক্ষণে মাসিক শুরু হওয়া পর্যন্ত একজন মেয়ের নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য থাকে না। এরপর ধীরে ধীরে তার শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন শুরু হয়। জীবনে প্রথম ঋতুস্রাব হওয়ার গড় বয়স ১৩ বছর।
ঋতুস্রাব পর্ব
সাধারণত ১৪ থেকে ৪৬ বছর বয়স পর্যন্ত নারী প্রজননক্ষম থাকেন এবং নিয়মিত রজঃস্রাব হয়।
মেনোপজ
মাসিক যখন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে নারীদের মেনোপজ হয়।
কোনো নারীর এই বয়সে পুরোপুরি এক বছর ঋতুস্রাব বন্ধ থাকলে তাঁর মেনোপজ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে কোনো কারণে অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু কেটে ফেলে দিলেও স্থায়ীভাবে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। একে বলে সার্জিক্যাল মেনোপজ।
নারীর প্রজননতন্ত্রে জরায়ুর দুই পাশে দুটো ডিম্বাশয় থাকে। ডিম্বাশয়ের প্রধান দুটো কাজ হচ্ছে ডিম্বাণু নিঃসরণ ও হরমোন তৈরি করা। বিভিন্ন হরমোনের মধ্যে ইস্ট্রোজেন হরমোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত চল্লিশ বছর বয়সের পর থেকে ডিম্বাশয়ের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে নারীদেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণও কমতে থাকে। ফলে মেনোপজের আশপাশে বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়।
উপসর্গ
সব নারীরই যে উপসর্গগুলো দেখা যাবে, তা নয়। তবে সাধারণত মেনোপজের কিছু উপসর্গ থাকে।
হট ফ্ল্যাশ: মাঝে মাঝে হঠাৎ করে শরীরে, বিশেষ করে মুখমণ্ডলে গরম ভাপের অনুভূতি হওয়া। এরপর সারা শরীরে প্রচণ্ড ঘাম হয়ে শীতল হয়ে যাওয়া। অনেকে এর পাশাপাশি শারীরিক অবসন্নতা, দুর্বলতা বোধ করে, এমনকি কারও বুক ধড়ফড় করে।
জননপথ শুষ্ক হওয়া: নারীর জননপথ স্বাভাবিকভাবে ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে আর্দ্র থাকে। মেনোপজ হলে জননপথ শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে অল্প আঘাতে রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে জননপথে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। যৌন মিলনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
প্রস্রাবজনিত সমস্যা: প্রস্রাবের থলিতে সংক্রমণ, বারবার প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, প্রস্রাব অল্প সময় ধরে রাখতে পারা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া: জননপথের শুষ্কতা ও মানসিক অবস্থা পরিবর্তনের প্রভাবে যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে।
ত্বক ও চুলের পরিবর্তন: ত্বক পাতলা হওয়া, ত্বকের প্রসারণ ক্ষমতা কমা, মাথার চুল কমা, মুখমণ্ডলে, বিশেষ করে ওপরের ঠোঁটে চুল গজানো।
মানসিক পরিবর্তন: এ সময় নারীদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া ঘুম কমে যাওয়া, উদ্বিগ্নতা, হতাশা, স্মৃতি ভ্রষ্টতা এবং মনোযোগহীনতাও হতে পারে।
হাড় নরম ও দুর্বল হওয়া: এ সময় শরীরের হাড় নরম বা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে সামান্য আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়া: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, উদ্বিগ্নতা, হতাশা ইত্যাদি কারণে এ সময় হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
খাদ্যে অরুচি বা অতিরিক্ত খাওয়া: এ সময় খাদ্যে অরুচি অথবা খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যেতে পারে। কখনো কখনো বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
করণীয়
মেনোপজকালীন উপসর্গগুলোর ধরন এবং তীব্রতা নির্ভর করে নারীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক অবস্থা ও আবেগপ্রবণতার ওপর।
সাধারণ উপশম
নারীকে বোঝাতে হবে যে মেনোপজ নারী জীবনের পর্ব পরিবর্তনের একটি ধাপ। এটা সব নারীর জীবনেই ঘটে থাকে। সুতরাং এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ওষুধ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোন, হাড়ের ক্ষয়রোধ করে এমন ওষুধ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ট্যাবলেট, ভিটামিন বি, ই ও সি খেতে হবে।
নারী জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটে ইস্ট্রোজেন হরমোনবিহীন নানা ঘাত-প্রতিঘাতে। মেনোপজে শুধু চিকিৎসকের পরামর্শই যথেষ্ট নয়। এগিয়ে আসতে হবে পরিবারের সবাইকে।
লেখক: ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ
প্রজননের দৃষ্টিভঙ্গিতে নারী জীবন তিনটি পর্বে ভাগ করা যায়:
শৈশব পর্ব
শৈশব থেকে বয়ঃসন্ধিক্ষণে মাসিক শুরু হওয়া পর্যন্ত একজন মেয়ের নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য থাকে না। এরপর ধীরে ধীরে তার শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন শুরু হয়। জীবনে প্রথম ঋতুস্রাব হওয়ার গড় বয়স ১৩ বছর।
ঋতুস্রাব পর্ব
সাধারণত ১৪ থেকে ৪৬ বছর বয়স পর্যন্ত নারী প্রজননক্ষম থাকেন এবং নিয়মিত রজঃস্রাব হয়।
মেনোপজ
মাসিক যখন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে নারীদের মেনোপজ হয়।
কোনো নারীর এই বয়সে পুরোপুরি এক বছর ঋতুস্রাব বন্ধ থাকলে তাঁর মেনোপজ হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে কোনো কারণে অপারেশনের মাধ্যমে জরায়ু কেটে ফেলে দিলেও স্থায়ীভাবে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায়। একে বলে সার্জিক্যাল মেনোপজ।
নারীর প্রজননতন্ত্রে জরায়ুর দুই পাশে দুটো ডিম্বাশয় থাকে। ডিম্বাশয়ের প্রধান দুটো কাজ হচ্ছে ডিম্বাণু নিঃসরণ ও হরমোন তৈরি করা। বিভিন্ন হরমোনের মধ্যে ইস্ট্রোজেন হরমোন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত চল্লিশ বছর বয়সের পর থেকে ডিম্বাশয়ের কার্যক্ষমতা কমতে থাকে। ফলে নারীদেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণও কমতে থাকে। ফলে মেনোপজের আশপাশে বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ দেখা যায়।
উপসর্গ
সব নারীরই যে উপসর্গগুলো দেখা যাবে, তা নয়। তবে সাধারণত মেনোপজের কিছু উপসর্গ থাকে।
হট ফ্ল্যাশ: মাঝে মাঝে হঠাৎ করে শরীরে, বিশেষ করে মুখমণ্ডলে গরম ভাপের অনুভূতি হওয়া। এরপর সারা শরীরে প্রচণ্ড ঘাম হয়ে শীতল হয়ে যাওয়া। অনেকে এর পাশাপাশি শারীরিক অবসন্নতা, দুর্বলতা বোধ করে, এমনকি কারও বুক ধড়ফড় করে।
জননপথ শুষ্ক হওয়া: নারীর জননপথ স্বাভাবিকভাবে ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে আর্দ্র থাকে। মেনোপজ হলে জননপথ শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে অল্প আঘাতে রক্তক্ষরণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে জননপথে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। যৌন মিলনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
প্রস্রাবজনিত সমস্যা: প্রস্রাবের থলিতে সংক্রমণ, বারবার প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, প্রস্রাব অল্প সময় ধরে রাখতে পারা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া: জননপথের শুষ্কতা ও মানসিক অবস্থা পরিবর্তনের প্রভাবে যৌন ইচ্ছা কমে যেতে পারে।
ত্বক ও চুলের পরিবর্তন: ত্বক পাতলা হওয়া, ত্বকের প্রসারণ ক্ষমতা কমা, মাথার চুল কমা, মুখমণ্ডলে, বিশেষ করে ওপরের ঠোঁটে চুল গজানো।
মানসিক পরিবর্তন: এ সময় নারীদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া ঘুম কমে যাওয়া, উদ্বিগ্নতা, হতাশা, স্মৃতি ভ্রষ্টতা এবং মনোযোগহীনতাও হতে পারে।
হাড় নরম ও দুর্বল হওয়া: এ সময় শরীরের হাড় নরম বা দুর্বল হয়ে যায়। ফলে সামান্য আঘাতে হাড় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়া: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, উদ্বিগ্নতা, হতাশা ইত্যাদি কারণে এ সময় হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
খাদ্যে অরুচি বা অতিরিক্ত খাওয়া: এ সময় খাদ্যে অরুচি অথবা খাওয়ার ইচ্ছে বেড়ে যেতে পারে। কখনো কখনো বদহজম বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
করণীয়
মেনোপজকালীন উপসর্গগুলোর ধরন এবং তীব্রতা নির্ভর করে নারীর শারীরিক, মানসিক, সামাজিক অবস্থা ও আবেগপ্রবণতার ওপর।
সাধারণ উপশম
নারীকে বোঝাতে হবে যে মেনোপজ নারী জীবনের পর্ব পরিবর্তনের একটি ধাপ। এটা সব নারীর জীবনেই ঘটে থাকে। সুতরাং এই প্রাকৃতিক পরিবর্তনকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ওষুধ
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হরমোন, হাড়ের ক্ষয়রোধ করে এমন ওষুধ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ট্যাবলেট, ভিটামিন বি, ই ও সি খেতে হবে।
নারী জীবনের এক-তৃতীয়াংশ সময় কাটে ইস্ট্রোজেন হরমোনবিহীন নানা ঘাত-প্রতিঘাতে। মেনোপজে শুধু চিকিৎসকের পরামর্শই যথেষ্ট নয়। এগিয়ে আসতে হবে পরিবারের সবাইকে।
লেখক: ডা. বিলকিস বেগম চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ
সুস্থভাবে জীবনযাপন করার জন্য দেহের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে হয়। সাধারণত পুষ্টির কথা ভাবলে মনে করি সবটুকুই আমার খাদ্য থেকেই অর্জন করি। তবে এই ধারণাটি ভুল বললেন বিজ্ঞানীরা। নতুন গবেষণায় বলা যায়, মানুষ কিছু পুষ্টি বায়ু থেকেও শোষণ করতে পারে!
৩ দিন আগেবিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন। হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনির ক্ষতি এবং দৃষ্টি শক্তিসহ বেশ কিছু গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার প্রধান ঝুঁকির কারণ এটি। এই ধরনের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ
৪ দিন আগেডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ১ হাজার ৩৮৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরে আজ রোববার পর্যন্ত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো ৭৯ হাজার ৯৮৪ জন। মারা গেছে আরও আটজন।
৪ দিন আগেএমন সময়ে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হলো, যখন ইংল্যান্ডে একটি লক্ষ্যভিত্তিক ফুসফুস স্বাস্থ্য পরীক্ষা কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির লক্ষ্য ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে সম্ভাব্য ৪০ শতাংশ ব্যক্তিকে স্ক্রিনিং করা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে সবাইকে এর আওতায় আনা।
৫ দিন আগে