Ajker Patrika

ঈদে হৃদ্‌রোগীর খাবার কেমন হবে

মো. ইকবাল হোসেন
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫, ০৯: ৩০
ঈদে হৃদ্‌রোগীর খাবার কেমন হবে

পুরো রমজান মাস আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী বেশ কিছু অস্বাস্থ্যকর খাবার আমরা খেয়ে থাকি। তাই এ সময় আমাদের পরিপাকতন্ত্র বেশ নাজুক থাকে। বিশেষ করে যাদের হৃৎপিণ্ডের অসুখ আছে, তাদের জন্য ঈদের দিনগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

আপনার যদি হৃৎপিণ্ডের অসুখ না-ও থাকে, যদি বয়স ৪০-এর বেশি হয়, ওজন বেশি কিংবা রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকে, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকে, ধূমপানের অভ্যাস থাকে অথবা হৃদ্‌রোগের বংশগত ইতিহাস থাকে, তাহলেও আপনি হৃৎপিণ্ডের অসুখের ঝুঁকিতে আছেন। সে ক্ষেত্রে আপনাকেও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে।

হৃৎপিণ্ডের রোগীর জন্য সবচেয়ে খারাপ হচ্ছে তেল-চর্বিজাতীয় খাবার। এগুলো রক্তের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে শরীরে রক্তসঞ্চালনে হৃৎপিণ্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। এই চাপ দুর্বল হৃৎপিণ্ডকে আরও দুর্বল করে দেয়। এ ক্ষেত্রে হার্ট ফেইলিউরের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। তাই ঈদের দিনেও নিয়ম মেনেই খাবার খেতে হবে।

বিধি ও নিষেধ

গরু ও খাসির মাংস না খাওয়া উত্তম। চামড়া ছাড়া মুরগি বা হাঁসের মাংস খাওয়া যাবে। গরু বা খাসির মাংসের গায়ে যে সাদা চর্বি লেগে থাকে, সেটা বাদ দিয়ে রান্না করে ঝোল ছাড়া পরিমিত পরিমাণে খাওয়া যাবে। কলিজা, মগজ, পায়া বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খাবেন না। এসব উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার হার্টের জটিলতা বাড়াবে।

লবণে সতর্ক থাকুন

হার্টের রোগীদের জন্য খারাপ উপাদান হচ্ছে লবণ। তাই রান্নায় লবণের ব্যবহার কমাতে হবে। অতিরিক্ত লবণ খেলে রক্তে অতিরিক্ত পানি যোগ হয়। অর্থাৎ, পানিসহ রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শরীরে রক্ত সঞ্চালনের জন্য হার্টকে আরও জোরে জোরে পাম্প করতে হবে। এতে হার্টের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে এবং অসুখ আরও বেড়ে যাবে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত নয়। হার্টের রোগীর জন্য সেটা ৩ থেকে ৪ গ্রাম।

মাংস খেতে হবে পরিমিত

মাংস খাওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মাংসে খারাপ চর্বির পরিমাণ মাছ অপেক্ষা কিছুটা বেশি থাকে। একজন সুস্থ স্বাভাবিক ৭০ কেজি ওজনের পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি সারা দিনে ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম মাংস খেতে পারেন। তবে অন্য কোনো প্রোটিনের উৎস থাকলে মাংসের পরিমাণ কমাতে হবে। বেশি মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়া, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখ, পাইলস, ফিসার, ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদির সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

মিষ্টি

  • ঈদ আয়োজনের অন্যতম অংশ হচ্ছে দই-মিষ্টি, পায়েসসহ বিভিন্ন মিষ্টিজাতীয় খাবার। এগুলো বেশ ক্যালরিবহুল খাবার।
  • মিষ্টিজাতীয় খাবার রক্তের ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধির মাধ্যমে হার্টের ওপর চাপ তৈরি করে। তাই এগুলো খুবই অল্প পরিমাণে খেতে হবে।
  • এই খাবার কখনোই মূল খাবারের সঙ্গে খাবেন না।
  • মিষ্টি খাবার মধ্য সকাল বা বিকেলের নাশতা হিসেবে খান। বিকেলের পরে এই খাবারগুলো খাবেন না।
  • মিষ্টি দইয়ের পরিবর্তে টকদই খাওয়া ভালো।
  • আইসক্রিম কিংবা কোমল পানীয় না খাওয়াই উত্তম।
  • ডায়াবেটিস ও আইবিএসের মতো সমস্যা থাকলে দুধের তৈরি মিষ্টি খাবার এড়িয়ে যেতে হবে।
  • প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ মিনিট একটানা হাঁটুন অথবা ঘরে ব্যায়াম করুন। এতে খাবারের পরিমাণ কিছুটা বেশি হলেও সমন্বয় হয়ে যাবে।

ভালো থাকার টিপস

  • গরু-খাসির মাংসের গায়ে থাকা সাদা চর্বি রান্নার আগে ফেলে দিন।
  • রান্নায় সরিষার তেল বা সূর্যমুখী তেল ব্যবহার করুন।
  • হৃদ্‌রোগীরা খাওয়ার পরে কিছুটা বিশ্রামে থাকবেন।
  • রান্না মাংস না খেয়ে গ্রিল বা কাবাব করে খাওয়া যেতে পারে।
  • মাংস রান্নার সময় পটাশিয়াম-সমৃদ্ধ সবজি যোগ করুন। খাওয়ার সময় এক টুকরা লেবু নিন। এগুলো হার্টের অসুখ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
  • দিনে ১ কাপ টক দই ভরা পেটে খেতে চেষ্টা করুন।
  • প্রতি বেলা আঁশসমৃদ্ধ খাবার খেতে চেষ্টা করুন।
  • দিনে এক থেকে দুই চা-চামচ ইসবগুলের ভুসি খেতে চেষ্টা করবেন।
  • মিষ্টান্ন রান্নায় কাঠবাদাম দিয়ে রান্না করুন।
  • প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

মো. ইকবাল হোসেন, পুষ্টিবিদ, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চীন সফরে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্যে ভারতে তোলপাড়

বাংলাদেশের ১৮ বছরের সেই অপেক্ষা তবে ফুরোচ্ছে

খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে সিঁধ কেটে চুরির সময় গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ

জুলাই আন্দোলনের নারীদের সম্মাননা নিয়ে প্রশ্নে যা বলল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর

চোর সন্দেহে যুবককে পিটুনি, প্রতিবাদ করায় দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত